সিসির যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব : “গরু মেরে জুতা দান” …!!!

লিখেছেন লিখেছেন সিংহ শাবক ১৬ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৩৮:৪৫ রাত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর সন্ত্রাসী হামলায় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ প্রায় শতাধিক নিরপরাধ মানুষ নিহত ও স্কুল মসজিদসহ হাজারেরও বেশী ঘর-বাড়ী ধ্বংস এবং প্রায় দশ হাজারের মত মানুষকে বাস্তুহারা করার পর নব্য ফারাও সিসির মিশর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। আর এ প্রস্তাব ইসরাইল অত্যন্ত খুশি হয়ে মেনে নিয়ে খুনি থেকে সাধু সাজার চেষ্টা করছে। ২০১২ সালে মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নিলেও এবার তা মানছে না হামাস । তাহলে আপাত দৃষ্টিতে বর্তমান সহিংসতার জন্য হামসই দায়ী ?

ইখওয়ানুল মুসলিমিনের আদর্শের উপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালে শাইখ আহমদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগঠন হামাস প্রতিষ্ঠিত হয় । তাই মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনিনের সাথে হামাসের সখ্যতার কথা সবাই জানে । ২০১২ সালে মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি মেনে নেয় হামাস । তখন মিশরের ক্ষমতায় ছিল ইখওয়ানুল মুসলিমিন । কিন্তু বর্তমানে ইহুদী চর সিসির মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নেয়া কতটুকু যুক্তিসংগত ?

জেনারেল সিসি ক্ষমতায় আসার পর মুরসির বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয় এর একটি ছিল তিনি হামাসের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন। সিসির সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং দলটিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাথে হামাসকেও তারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পতনের কারণের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে, সিসির সাথে ইসরাইলের এই বিষয়ে অনেক আগে থেকেই প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। মুরসিকে অপসারণের পর ইসরাইল সিসিকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। এছাড়া মুরসির পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে পুরো দেশে জালানি তেল এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয় , যেটা মিলিটারি ক্যু এর মাধ্যমে মুরসিকে অপসারণের এক দিনের মধ্যেই মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। আসলে এটা ছিল সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে তৈরি একটি কৃত্তিম সংকট। এটা ওপেন সিক্রেট যে মিশরের অর্থনীতির প্রায় ৪০ ভাগ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই কর্মকান্ডের ব্যপারে কেউ তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার জবাবদিহিতা চাইতে পারে না। মিশর হুসনি মোবারকের সময়ে করা চুক্তি অনুসারে ২০০৮-২০১২ সাল পর্যন্ত ইসরাইলকে ইন্টারন্যাশনাল দামের চেয়ে ৮০% কম দামে গ্যাস সরবরাহ করে দেশের অনেক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করেছে। এ চুক্তিতে অনেক প্রকার অস্বচ্ছতা ছিল যেটা মুরসি আসার পর বাতিল করার চেষ্টা করেন। ইসরাইলের জন্য এটা ছিল একটা বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ।

এছাড়াও ইখওয়ানের ক্ষমতায় আসা মানে মধ্যপ্রাচ্যে হামাস সহ বিশ্বব্যাপী ইসলামিক দলগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া যেটা ইসরাইলের জন্য চিন্তার কারণ। ইখওয়ানুল মুসলিমিন মুরসির সময়ে রাফা বর্ডার খুলে দেয় যেটা দিয়ে গাজায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী প্রবেশ করত। এছাড়াও মিশর এবং গাজার মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গগুলো খুলে দেয়। কার্যত সে এক বছর ছিল গাজার মানুষের জন্য “লাকি ইয়ার” । সিসি ক্ষমতায় আসার পর এসব সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেয়। গাজায় সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওষুধের মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের আমদানি বন্ধ হয়ে যায় এবং এবারে মিশর ইসরাইল থেকে গ্যস কেনা শুরু করে কিন্ত সেটা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও বেশী দামে যেটি ইসরাইলের জন্য বিরাট অর্থনৈতিক অর্জন।

কয়েকদিন আগে একটি অপহরনের বিষয়ে হামাসকে ব্লেম করা হয়, কিন্তু হামাস তা অস্বীকার করে । যদিও হামাস এর আগে এক ইসরাইলি সেনা গিলাত শালিতকে অপহরণ করেছিল এবং বিনিময়ে তারা অনেক বন্দি বিনিময় করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি অপহরনের ব্যাপারে হামাস জড়িত কিনা এ ব্যপারে ইসরাইলের অভিযোগ ছাড়া অন্য কোন শক্তিশালী প্রমাণ নাই । পক্ষান্তরে ইসরাইল হামলা করে গাজার তিন ভাগের এক ভাগ দখল করে নিতে পারে এ খবর মিশরের কাছে ছিল এবং চুক্তির মধ্যস্থতাকারি হিসেবে সিসি সরকার এই ব্যপারে কোন ভূমিকা পালন করেনি । এমনকি যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পর পরই গাযার সাথে মিশরের যোগাযোগের ২৯ টি সুড়ঙ্গ গুড়িয়ে দেয়া হয়।

সিসি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ইসরাইলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং ইসরাইলের সাথে মিলে মুরসিকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র , প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইসরাইলের উল্লাস এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি , হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে গাজার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হামাসের বর্তমান অবস্থানের কারণ । হামাসের জন্য বর্তমান মিশরের মধ্যস্থতা মেনে নেয়া আর ইসরাইলের কথা শুনা একই কথা।

এক কথায় বলা যায়, মুরসির মিশর আর সিসির মিশর কখনোই এক নয় । সিসি সরাসরি ইসরাইলের প্রডাক্ট । ইসরাইলের স্বার্থেই সিসি জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত মুরসি সরকারকে উৎখাত করে। রাফা বর্ডার বন্ধ করে দিয়ে মিশর থেকে গাজায় সব ধরণের পন্য সরবরাহ বন্ধ করে দেন সিসি। ফলের গাজায় সকল পন্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। মুরসি দীর্ঘ দিন ধরে অবরুদ্ধ থাকা গাজাকে আরও যে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছিলেন সিসি কেবলমাত্র ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার্থেই সেসব বন্ধ করে দেন। মুরসির মিশর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অবৈধ অবরোধের ঘোর বিরোধী ছিলেন। পক্ষান্তরে সিসির মিশর এ ব্যাপারে ইহুদিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সুতরাং এ মুহুর্তে সিসির মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি মেনে নিলে তা হবে ইসরাইলি আগ্রাসনকে মেনে নেয়া এবং ইসরাইলকে তার খুনের বৈধতা দেয়া । কারণ ২০১২ সালের মুরসী কর্তৃক যুদ্ধ বিরতির কোন শর্ত মানেনি ইসরাইল ও সিসি সরকার । তবে হামাসের আন্তর্জাতিক অ্যাফেয়ার্স প্রধান বলেন, হামাসও যুদ্ধ বিরতি চায় , কিন্তু তা হতে হবে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় এবং গাযার বিরুদ্ধে ইসরাইলি সকল অবরোধ তুলে নিতে হবে। তবে একটি বাস্তব কথা হল, যতই যুদ্ধ বিরতি করা হোক না কেন, গাজা থেকে ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্ব তুলে না নেয়া পর্যন্ত গাজা বাসীর জন্য অদূর ভবিষ্যতেও কোন সুখবর নেই । কাজেই এখন সিসির যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব গাজাবাসীর জন্য “গরু মেরে জুতা দান” ছাড়া অন্য কিছু নয় ।

তথ্যসূত্রঃ আলজাজিরা, মিডিলইস্ট মিরর

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

245083
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:০৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : অনেক ভাল লিখেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লিখা আমাদের চোখ কান খুলে দিয়েছে, আমরা সচরাচর এতো গভীর ভাবে চিন্তা করিনা। ছি ছির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই!
245086
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:১৯
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : বেশ হয়েছে। আন্তর্জাতিক ইস্যু বাদ রেখে একটু নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন।
245093
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:৩৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : এক্কেবারে আমার প্রাণের কথাটি বলেছেন ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো খুব লিখাটি।
245124
১৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৪৬
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : এককথায় চমৎকার!! আমার মনের কথাই লিখেছেন!
245146
১৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:০২
আহমদ মুসা লিখেছেন : বেশ কিছুদিন পূর্বে কোন এক অনলাইন নিউজ পোর্টালে পড়েছিলাম মিশরের নব্য ফেরাউন জেনালেল সিসি একজন ইয়াহুদী নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া পাক্কা ইয়াহুদী। সে ইস্রাইলের একজন একনিষ্ট গুপ্তচর হিসেবে দীর্ঘদিন মিশরীয় সেনাবাহিনীতে মোনাফিকিতে ঈমানদারীর সাথে ইস্রাইলের দেয়া এসাইনমেন্ট অনুযায়ী কাজ করে আসছিল। আরব বসন্তের জোয়ারে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর মিশরীয় রাজনৈতিক আবহাওয়া বুঝে ইস্রাইলী পরামর্শে জেনারেল সিসি ইখওয়ানুল মুসলিমিন এবং ড. মুরসির গনিষ্ঠতা ও বিশ্বস্ততা অর্জনের কৌশল গ্রহণ করে। প্রায় একাশি বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে নিস্পেষিত একটি দল ইখওয়ানুল মুসলেমিন এবং ড. মুরসি ইসলামের মহান ও শ্বাস্বত মহিমায় উদারতা দেখাতে গিয়ে চির অভিসপ্ত শয়তানের প্রতিনিধি ইয়াহুদীর বাচ্চা জেনারেল সিসির আসল মতলব বুঝতে না পারার কারণেই বাংলার দ্বিতীয় মীর জাফর জেনারেল মইন ইউ আহমদের মত ধুর্ত মোনাফিককে চিনতে ভুল করে।
আজ তারই মাশূল দিতে হচ্ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদেরকে। অপর দিকে আমাদের বাংলাদেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
245271
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:৫১
মুসাফির মাহফুজ লিখেছেন : বিড়ালের মত ৫০০০ বছর বাচার চেয়ে সিংহের মত ১ দিন বাচা অনেক ভাল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File