"শবে বরাত" ও আমাদের আবেগ
লিখেছেন লিখেছেন সিংহ শাবক ১৪ জুন, ২০১৪, ০১:১৭:২৫ রাত
মেনে নিলাম শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনের কোন আয়াত নেই। এ সম্পর্কে শক্তিশালী কোন হাদীসও নেই । এটাও মেনে নিলাম কুরআন হাদীস সম্পর্কে আপনাদের জ্ঞান অনেক বেশি । কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুক সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এই রাতকে নিয়ে নানা ধরনের ইতিবাচক নেতিবাচক বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। কেউ কেউ এটাকে বিদয়াত থেকে হারাম পর্যন্ত বলছেন । আবার অনেকে বলছেন এটা পালন করা কবীরা গুনাহ। কিন্তু আমাদের এ কথা মনে রাখা দরকার ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে একটি পবিত্র আবেগ রয়েছে । এ অঞ্চলের মানুষ গুলো এমন যে, তারা নামাজ পড়বে না, রোজা রাখবে না কিন্তু ইসলাম নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে এর প্রতিবাদে নিজের জীবন দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না। এ কথা বাস্তব যে আজকে আসল নামাজীরা মসজিদে জায়গা পায়নি। তাঁরা নামাজ পড়েছেন রাস্তায় । তবুও ঐ মানুষ গুলোর আবেগের দিকে লক্ষ্য রেখে এতটা কঠোর হওয়া মনে হয় উচিৎ নয় । এই রাতের অতিরঞ্জিত দিক গুলোর বিরুদ্ধে কথা বলা যেতে পারে কিন্তু শবে বরাত নামটাকেই ইসলামের পাতা থেকে মুছে ফেলা উচিৎ হবে না।
আমরা একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে পারি। এই রাতের অসিলায় হয়ত কিছু গরীব মানুষ ভালো খাবার খেতে পারছে । প্রতিবেশীরা একে অপরকে খাবার আদান প্রদানের মাধ্যমে তাদের মাঝে সৌহার্দ্য সম্প্রিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিছু গরীবকে দান সদকা করার মাধ্যমে তারা হয়ত কিছুটা হলেও উপকৃতও হচ্ছে । সারা বছর না হলেও এই রাতের অসিলায় ব্যস্ত কর্পোরেট দুনিয়ার মানুষ গুলো গোরস্থানে গিয়ে মা বাবার জন্য দু ফোঁটা চোখের পানি ফেলে দুয়া করছে । গুনায় ডুবে থাকা মানুষ গুলো একটি রাত হলেওতো তাদের গুনাহের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে ধরনা দিচ্ছে । আর আল্লাহ তো রাহমানুর রাহিমিন । ঐ ব্যক্তির চোখের পানিতে খুশি হয়ে তাকেতো পূর্ণ হিদায়াত দিয়েও দিতে পারেন । এ রাতে আমাদের প্রচলিত আনুষাংগিক কার্যাবলি বহু দিনের নষ্ট হয়ে যাওয়া আত্মিয়তার সম্পর্কও জোড়া লাগতে পারে। আমি নিজে সাক্ষী, আমার এলাকায় দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে দাকুমড়ার সম্পর্ক ছিল । কোন এক শবে বরাতের রাতে বড় ভাইয়ের ছোট্ট মেয়েটি হালুয়া আর রুটি নিয়ে ছোট ভাইয়ের বাসায় গিয়ে বলল, কাকু, বাবা তোমার জন্য হালুয়া রুটি পাঠিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। এরপর বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তার হাত ধরে ক্ষমা চাইল এবং এমনি ভাবে দু পরিবারের মধ্য সুসম্পর্ক গড়ে উঠল।
সুতরাং মূল ব্যাপারটি হল বিষয়টিকে আমি আপনি কিভাবে দেখছি। ইসলাম কখনই কঠোরতাকে সমর্থন করেনি । ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলো বাদ দিলে যা খারাপ এবং অতিরঞ্জিত তা সবই আমাদের তৈরী করা । তাহলে খারাপ ও অতিরঞ্জিত বিষয় গুলো বাদ দিলেইতো সমস্যা সমাধান হয়ে যায় । এর জন্যতো মূল বিধানকে বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই । মাথা ব্যথা বলেতো মাথাকে কেটে ফেলা যায় না। লোকজন মাজার পূজা করে বলে আমরা আমাদের লাশকেতো পানিতেও ফেলতে পারি না । কাজেই শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন হাদীসে কি আছে অথবা এসম্পর্কের হাদীসটি সবল নাকি দুর্বল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার কোন মানে হয় না ।
শত বছরের ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে হঠাৎ একটা ফতোয়া দিয়ে বন্ধ করা যায় না । যে জিনিস মূলে হালাল তাকে নিয়ে কেন এত জটিলতা ? একটি ডায়রীতে অনেক গুলো পাতা থাকে এবং প্রত্যেকটি পাতা নিয়েই এক একটি ডায়রী । যদি একটি পাতা ছিড়ে বলা হয় ডায়রীতে আরো অনেক পাতা আছে; তাতে ডায়রীর কিছু আসে যায় না । কিন্তু এভাবে প্রত্যেকটি পাতা ছিড়ে ফেললে এক সময় ডায়রীর অস্তিস্ত্বই থাকবে না । তাই ইসলামের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব পূর্ণ বিধান গুলোকে শরিয়তি মারপ্যাচে একে একে যদি বাদ দিয়ে দেয়া হয় তাহলে এক সময় সমস্যা আরো বাড়বে বৈ কমবেনা । ইসলামের ইবাদত প্রথাকে এতটা প্রান্তিক সীমায় নিয়ে যাওয়া বোধ করি ঠিক হবে না । আমাদের যেমন ইসলামের মৌলিকত্বও টিকিয়ে রাখতে হবে তেমনি ঐ সাধারণ মানুষ গুলোর নিষ্পাপ আবেগকেও সম্মান দিতে হবে ।
তাই শবে বরাত নিয়ে অযথা বিতর্ক নয়, বরং অতিরঞ্জিত ও ক্ষতিকর বিষয় গুলোকে দূর করে মানুষকে ইসলামের সঠিক বিধানকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে তাদেরকে ইবাদত করার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ।
বিষয়: বিবিধ
১১১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন