কালেমা তাইয়্যেবার দাওয়াত
লিখেছেন লিখেছেন সিংহ শাবক ০৪ মে, ২০১৪, ০৫:৫৪:৫৭ বিকাল
ইমাম হাসানুল বান্না তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, “তোমার উপর যখন অত্যাচারের স্ট্রীমরোলার চালানো হবে, তোমার জন্য যখন কারাগারের অন্ধকার প্রকষ্ঠগুলো তৈরী হবে এবং ফাঁসির মঞ্চও হবে প্রস্তুত তখন বুঝবে তোমার দাওয়াত ফলপ্রসূ হচ্ছে।”
হযরত ওমর (রা) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হে আমিরুল মুমিনিন, আমি কিভাবে বুঝব আমি সঠিক পথে আছি ? হযরত ওমর বলেছিলেন, “তুমি যখন দেখবে তোমার কাজে বাঁধা আসছে তখন বুঝবে তুমি সঠিক পথে আছ ।” আমরা রাসূল(স) এর নবুওয়তের ২৩টি বছর যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখব তাঁর দাওয়াতের সূচনাই হয়েছিল নির্যাতনের মধ্য দিয়ে এবং দীর্ঘ সফর হয়েছে এক রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে । তিনি মক্কার অভিজাত শ্রেণীর নিকট যখন কালেমা তাইয়্যেবার বিপ্লবী দাওয়াত প্রচার করলেন এবং বললেন তোমরা ঘোষনা দাও , “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” । এই বিপ্লবী আহবান জানানোর সাথে সাথেই মক্কার সমাজপতিরা সর্ব শক্তি দিয়ে রাসূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। তারা বলল, “হে মুহাম্মদ ! তুমি আমাদের কাছে কি চাও ? আমরা সব দিতে রাজি আছি এমনকি আমরা আল্লাহকেও বিশ্বাস করি কিন্তু তাকে আমরা ‘ইলাহ’ মানতে পারবনা” । সমাজপতিরা এই দাওয়াত মানতে পারেনি বলেই তাদের দ্বারা রাসূল(স) এবং তাঁর সাহাবীরা নির্যাতিত হয়েছেন । নিজেদের বাড়িঘর, ধন সম্পদ সব ছেড়ে দূর পরদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। উদ্দ্যেশ্য একটাই কালেমা তাইয়্যেবার বিপ্লবী আওয়াজকে জমিনে বুলন্দ করা । বর্তমানে বিশ্বের নানা জায়গায় নানা পন্থায় ইসলাম প্রচারের কাজ হচ্ছে । আলহামদুলিল্লাহ মুহাম্মদ(স) এর অনুসারীরা এখনও কালেমার দাওয়াতকে অব্যাহত রেখেছে । কিন্তু বর্তমানে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে রাসূল(স) ও তাঁর সম্মানিত সাহাবীরা যে বলিষ্ঠ কন্ঠে কালেমার দাওয়াত দিয়েছিলেন সেই তুলনায় বর্তমানে আওয়াজ অতি ক্ষীণ । এর কারণ হতে পারে এমন, যে সকল সম্মানিত দায়ী দাওয়াত দিচ্ছেন অথবা যারা শুধুমাত্র এই কালেমাকে জিকিরের খোরাক বানিয়েছেন তাদের অধিকাংশই হয়ত কালেমায়ে তাইয়্যেবার গূঢ় রহস্য সঠিক ভাবে উপলব্ধি না করেই তা প্রচার করছেন । ফলে আজ বেশীর ভাগ দাওয়াত ফলপ্রসূ হচ্ছে না । আর যারা সামান্য বুঝে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তাদের উপর নেমে আসছে ভয়াবহ নির্যাতন ।
আমরা যারা সাধারণ মুসলমান তারা প্রতিনিয়তই কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করি। ভয় পেলে , তাবিজের লেখনিতে অথবা কোন হলকায়ে জিকিরের আসরে উক্ত কালেমাকে চরম ভক্তি সহকারে তেলাওয়াত করি । কোন ফকির ভিক্ষা চাইলে তার উপর রাগ করে কালেমা পড়তে বলি । একজন অপর কোন মানুষকে মুসলমান প্রমাণ করতেও এই কালেমার ব্যবহার করি । মজার ব্যপার হল যারা এই কালেমা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছেন, এর জন্য নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের বিরোধিতাও করি এই কালেমার মাধ্যমে । আমাদের যুক্তি হল রাসূল (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল সে জান্নাতী” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)। তাই এত কষ্ট করার কি দরকার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে এই কালেমার ব্যবহার আমরা হরহামেশাই করছি । কিন্তু কখনও কি আমরা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেছি এই কালেমার আসল অর্থ কি ? কেন এই কালেমার দাওয়াত দিতে গিয়ে রাসূল(স) কে রক্তাক্ত হতে হয়েছে ? কেনইবা রাসূল সহ তাঁর সাহাবীরা সকল কিছুকে ত্যাগ করে দূর পরদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন এমনকি নিজের মহা মূল্যবান জীবন পর্যন্ত অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন ?
আমরা কত বোকা মুসলমান ! আমরা কালেমার সঠিক অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র একে জিকিরের খোরাক বানিয়েছি এবং যারা এই কালেমাকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদেরকে বাঁকা চোখে দেখে নিজেকে সকল কিছু থেকে মুক্ত রেখে সারা জীবন আরাম আয়েশে কাটিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ্জ করে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি । একজন মুসলমান হিসেবে এর চেয়ে কৌ্তুক আর কি হতে পারে !
আল কুরআনের প্রথম শব্দ হল ‘পড়’ । এই ছোট্ট শব্দের মাধ্যমেই আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটি বিষয়কে চিন্তা, গবেষণা ও উপলব্ধির নির্দেশ দিয়েছেন । রাসূল(স) এর ‘সামি’না ওয়তা’না’ হাদিসটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানেও শুনে ও বুঝে আমল করার দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । না বুঝে বেশি আমল করার চেয়ে বুঝে কম আমল করার গুরুত্ব অনেক বেশি । রাসূল (স) কালেমায়ে তাইয়্যেবার যে বিপ্লবী দাওয়াত পেশ করেছিলেন তা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব । অর্থাৎ ক্ষমতা । ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার অর্থই হল আল্লাহ ছাড়া কোন বিধান দাতা নাই, আইন দাতা নাই সকল সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ তা’য়ালা যিনি এই বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন । এই ঘোষনা যখন একজন মানুষ দেয় তখন সে সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র আল্লাহর দিকেই নিজেকে সপে দেয়। এই কথাকে কুরআনে চমৎকার ভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, “আমি তো একমুখি হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি এই যমীন ও আসমান সমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কাস্মিনকালেও অংশীদারকারীদের মধ্যে শামিল নই” (আনআম-৭৯)। এ কথার অর্থই হল দুনিয়ার নগণ্য মানুষের তৈ্রী করা সকল মতবাদ যেমন জাতীয়তাবাদ, পুজিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র সহ সকল কিছুকে দূরে ঠেলে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর দেয়া বৈপ্লবিক মতবাদ ইসলামের মধ্যে নিজেকে পূর্ণভাবে সপে দেয়া । এটাই কালেমা তাইয়্যেবার মূল আহবান । কুরআন ঘোষণা করছে, “হে ইমানদারগ তোমরা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন” (বাকারা-২০৮)। অর্থাৎ কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে এবং কিছু অংশকে গোপন না রেখে বরং জীবনের সমগ্র পরিসরটাই ইসলামী মতবাদের আওতাধীন করা । এই কালেমা পড়ার সাথে সাথেই একজন মানুষ তার চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবণ, লেনদেন এবং কর্মের সমগ্র পরিসরটাই ইসলাম নামক মতাদর্শের কর্তৃত্বাধীন করে দেয় । একটি পশু যেমন অন্য একটি পশুর আইন মানে না, একটি পাখি যেমন অন্য একটি পাখির আইন মানে না, চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র কেউ অন্য কোন গ্রহের আইন মানে না। তাহলে একজন মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে কিভাবে অন্য একটি মানুষের তৈরী করা আইন মানতে পারে ? সুতরাং কালেমায়ে তাইয়্যেবা হল ঐ বিপ্লবী মতবাদের মূলমন্ত্র যার দ্বারা একটি সমাজ রাষ্ট্রের সমগ্র কিছু পরিচালিত হবে।
কালেমায়ে তাইয়্যেবার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এখানে ‘ইলাহ’ শব্দের ব্যবহার। আমরা যারা অনারবী তারা হয়ত অধিকাংশই ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ বুঝি না । কিন্তু রাজতন্ত্রের যাতাকলে নিষ্পেসিত আরব বিশ্ব এর অর্থ খুব ভালোভাবেই বুঝে । আর তাই লাশের পর লাশের মিছিল আর রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করেও একদল বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে এবং ঐ বাতিল শক্তি মুষ্টিমেয় লোকদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে । আমার বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয় তবে হয়ত কিছুটা কম। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ যদি আমার দেশের তাগুতি শাসকদের বুঝানো যায় তাহলে এই অত্যাচার নির্যাতন আরো ভয়াবহ থেকে ভয়াবহ হবে ।
‘ইলাহ’ শব্দটির সহজ অর্থ হল আশ্রয় দাতা, বিধান দাতা, সকল ক্ষমতার আধার । আরবী ভাষায় ইলাহ শব্দকে আশ্রয় দাতা এবং ক্ষমতা অর্থেই ব্যবহার করা হয় । মানুষ যখন অস্থির মন নিয়ে দিগভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়ায়, পৃথুবীর সকল দরজায় কড়া নেড়েও কোন উপায় খুজে পায় না তখন মসজিদের সামান্য কয়েক ডেসিমল জায়গায় দুচোখের পানি ফেলে যার কাছে আশ্রয় খুঁজে পায় তিনিই হলেন ‘ইলাহ’ ।
বিভিন্ন ধর্মে মানুষ ইবাদত করে, পূজা করে অথবা প্রার্থনা করে । মানুষের এই ইবাদত বা পূজা করার মানসিকতা সৃষ্টি হয় কয়েকটি কারণে । প্রথমত, মানষ মনে করে যে তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে, বিপদাপদে তাকে আশ্রয় দিতে পারবে, অস্থির সময় তাকে শান্তি দিতে পারবে, ভয় পেলে তাকে অভয় দিতে পারবে এমন ধারণার কারণে এবং এ বিষয় গুলো সংঘঠিত হওয়ার সময় যার উপর আস্থা রাখতে পারে সে কেবল তারই ইবাদত করে । দ্বিতীয়ত, মানুষ যার ইবাদত করবে সে তার উপর তাকে উন্নত মনে করে । শুধুমাত্র পদ মর্যাদা নয় বরং সকল প্রকার শক্তি-সামর্থ প্রতাপ প্রতিপত্তির দিক থেকেও তাকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তৃতীয়ত কারণ এই হতে পারে যে, যার কাছে গেলে মানুষ তার সকল অভাব পূরণ করতে পারবে এবং তা হতে হবে তার জ্ঞান বা পঞ্চ ইন্দ্রিয় সীমার বাইরে। অর্থাৎ তার কাছে গেলে অভাব পূরণ হবেই এবং তার অভাব পূরণ এমন ভাবে হবে যা সে কখনও কল্পনাও করতে পারে নাই । সুতরাং ইলাহ হচ্ছে আল্লাহর ঐ সকল গুলাবলীর সমষ্টি যা দ্বারা প্রামাণ করে আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা, আশ্রয় দান করা, শান্তি ও শস্তি দান করা উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী হওয়া, প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক হওয়া। যে সকল ক্ষমতা ও অধিকারের ভিত্তিতে এমন আশা করা যায় যে, আল্লাহ অভাব পূরণকারী ও আশ্রয় দানকারী হতে পারে এমন সব ক্ষমতার মালিক হওয়া, তাঁর ব্যক্তিত্ব রহস্যাবৃত হওয়া বা সাধারণ দৃশ্যপটে না থেকে বিশ্ব ভ্রমান্ডের সকল কিছুকে পরিচালনা করা । এই গুনাবলীই মূলত আল্লাহ তায়া’লার ইলাহিয়াতের পরিচয় বহন করে । ইলাহিয়াতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ক্ষমতা । যে ব্যক্তি অতিপ্রাকৃতিক অর্থে কাউকে সাহায্যকারী, সহযোগী, দোয়া শ্রবণকারী, কল্যাণ ও অকল্যাণ সাধনকারী হিসেবে মেনে নিল, উক্ত ব্যক্তি অবশ্যই এই ধারণাই পোষণ করে যে, সে বিশ্ব জাহান পরিচালনায় সকল ক্ষমতার অধিকারী । এর উদাহরণ এভাবে দেয়া যেতে পারে যে, পৃথিবীর গরীব দেশগুলো ধনী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের অর্থনৈ্তিক উন্নয়নের জন্য এবং ঐ ধনী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করারও চেষ্টা করে । সে মনে করে তার মত অনুযায়ী না চললে সে অসস্তুষ্ট হবে । তার সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টির উপর নির্ভর করছে তার কল্যাণ বা অকল্যাণের । তাহলে ঐ ছোট দেশটি ভয় করছে বড় দেশের শক্তি বা ক্ষমতাকে এবং ঐ ক্ষমতার কাছেই সে নতি স্বীকার করছে ।
ঠিক এমনি ভাবে মানুষ যখন কালেমা তাইয়্যেবার দাওয়াত গ্রহন করে মুখে উচ্চারণ করে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই’ কিন্তু যখনই সে অভাবে পড়ল তখন সে অন্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করল। পৃথিবীতে চলতে যখন আইনের প্রয়োজন হল তখন সে মানুষের তৈ্রী করা মতবাদের দিকে চলতে শুরু করল । তাহলে সে কালেমা গ্রহণ করেও অন্য কোন শক্তিকে আল্লাহর সাথে অংশীদার করল । এখানে হয় সে কালেমাকে সঠিক ভাবে বুঝে নাই অথবা সে একথা মনে করল যে আল্লাহ সকল ক্ষমতার অধিকারী নন (নাউযুবিল্লাহ) । সুতরাং বলা যায় ইলাহিয়াতের মূল স্পিরিট হল ক্ষমতা ।
এই কালেমার ইলাহিয়াতের দাওয়াত যখন সমাজপতিদের সামনে পেশ করে বলা হয়, তোমার তৈ্রী করা মতবাদ অনুযায়ী যে সার্বভৌমত্ব তৈ্রী করেছ সে সার্বভৌমত্ব আমি মানিনা। কেননা আমি একমাত্র আমার প্রভূর সার্বভৌমত্বের আনুগত্য করি । সমাজপতি তখন বুঝতে পারে এই কালেমার দরাজ আওয়াজ যদি আরো উচু স্বরে গর্জন করে তাহলে তার মসনদ বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে যাবে । এভাবে যখন দুনিয়াবী সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করা হয় তখনই শুরু হয় হক বাতিলের দ্বন্দ । বাতিল তার মসনদ টিকিয়ে রাখতে নানা রকম ভয়ানক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । ফলশ্রুতিতে কালেমার দায়ীদের উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।
আবু জেহেলের নাম ছিল আবুল হাকাম । সে ছিল তার যুগের মস্তবড় জ্ঞানী ব্যক্তি । সে ঠিকই বুঝতে পেরেছিল মুহাম্মদের দ্বীন সত্য কিন্তু তা গ্রহণ করলে তার ক্ষমতা থকবে না, সমাজপতির আসন থেকে তাকে ছিটকে পড়তে হবে । পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী, রাসূলের (স) যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যারাই কালেমা তাইয়্যেবার এই সঠিক দাওয়াত তুলে ধরতে চেয়েছেন তাদের পথ ফুল বিছানো হয়নি বরং তাদের পথ হয়েছে রক্ত পিচ্ছিল। গোটা সমাজ তাদের বিরুদ্ধাচারণ করেছে, তাদের কন্ঠ রোধ করতে কত ষড়যন্ত্রই না করেছে। নিরপরাধ কালেমার দায়ীদের কারাগারের অন্ধকার প্রকষ্ঠে নিক্ষেপ করা হয়েছে, ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে । রাজপথে কালেমার শ্লোগান দিতে গেলে তাদের রক্তে রাজপথ প্লাবিত করা হয়েছে ।
আফসোস মুসলিম জাতির জন্য ! নিজেদের দ্বীন সম্পর্কে তারা কত বেখবর ! তাগুতি শক্তি তাদের যা বুঝচ্ছে তারা অন্ধের মত তাই অনুসরণ করছে । ইসলামের মূল বিধানকে দূরে ঠেলে তাগুতি বিধানকে তারা চলার পথ প্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং কালেমায়ে তাইয়্যেবার যে বিপ্লবী দাওয়াত ছিল তারা তা প্রত্যাখ্যান করে কালেমাকে শুধু হলকায়ে জিকিরের উপাদেনে পরিনত করেছে । অথচ এই কালেমাই মুসলমানের একমাত্র আদর্শিক চেতনার মূলমন্ত্র। আজ মুসলমানদের ঘোরতর দূর্দিনে কালেমায়ে তাইয়্যেবার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত একদল মানুষের খুবই প্রয়োজন যারা বিপ্লবী কন্ঠে ঘোষণা করবে
মুসলিম আমি সংগ্রামী আমি
আমি চির রণবীর,
আল্লাহকে ছাড়া কাউকে মানিনা
নারায়ে তাকবীর ।।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৬০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আশা করি আপনি আপনার ভাল ভাল লিখা আমাদের দিয়ে যাবেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন