পুচকা চোর এবং আমাদের নেতারা।
লিখেছেন লিখেছেন টুটুল মাহমুদ ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৫৯:০০ বিকাল
পুচকা চোরের আসল নাম কি ছিল জানিনা। আমাদের এলাকার ছোট খাট একটা ছেলে। ছোট কাল থেকেই চুরির অভ্যাস গড়ে ওঠে তার। শুরুতে এ বাড়ী সে বাড়ির বারান্দায় রাখা জুতা স্যান্ডেল, বদনা, বালতি দিয়ে শুরু। ধরা পড়লে দুই চার চর থাপ্পর খাইতো। এরপর শুরু করলো কলের মথা চুরি। সে এক মহা বিপদ। সকালে কল পারে যেয়ে দেখবেন আপনার কলের মাথা নাই। পাবলিক ধইরা আইনা দেখি পিডানি দেয়, সে আর করবো না, আর করবো না বলে কান্না কাটি করে ছাড়া পায় এবং আবার নতুন উদ্যমে চুরি করা শুরু করে। দিন যায় চুরির ধরন চেঞ্জ হতে থাকে। দেখা যায় এলাকাবাসীকে কথা দেয় আর কলের মাথা চুরি করবেনা, তারপরের দিন থেকে জানালার শিক কাটা শুরু করে। জানালা কাটবেনা কথা দিলে বারান্দার গ্রীল কেটে মোটর সাইকেল চুরি করে। বিয়ের পর চুরি ছেড়ে দিল।
ভোর রাত্রে কেউ এলাকায় ঢুকতে ভয় পায়। পুচকা চোর যদি সমানে পড়ে তাহলে বিপদ হয়ে যাবে। সে এখন চুরি ছেড়ে ছিন্তাই শুরু করেছে। ঠাশ কইরা ছুরি মাইরা দেয়, ক্ষুরের হাত অনেক ভালো। পুচকা চোরের একটা ফুটফটে ছেলে হলো কিছুদিন পর। আমরা সবাই দেখতে গেলাম। সে চুরি ছেড়ে দিলেও পুচকা চোর নামটা তখনও থেকে গেল। ছেলে হবার পর সে কান ধরে মসজিদে যেয়ে তওবা পড়লো আর কোন দিন চুরি ছিন্তাই করবে না।
এলাকায় কেউ নতুন জমি কেনতে বা নতুন বাড়ি বানাতে পারেনা। তার মহা বিপদে পড়তে হয়। মোটা অংকের চাদা দিতে হয় মুচকে চোরা আর তার বাহিনীকে। জি, তিনি এখন আর ছিন্তাই করেনা, এখন সে বিশাল টেরর, নিজের নামে বাহিনী আছে। মনিহার বাস স্ট্যান্ড, আশেপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবাইকে পুচকা চোরকে চাঁদা দিতে হয়। আগে কয়েকবার পুলিশ ধরলেও এখন তেমন আর ধরেনা। পুলিশের সাথেও মাসিক ব্যবস্থা আছে। সবচেয়ে বেশি সময় জেলে কাটিয়েছিল এক বি.ডি.আর সদস্য হত্যা মামলায়। একদিন সে তার বাহিনীর কিছু পুলাপাইনকে মারধর করলো এলাকার বাসীন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা নেবার জন্য। সবার কাছে মাপ চেয়ে বলল আমার নাম নিয়ে যদি কেউ এইকাজ করে তাকে বেঁধে রেখে আমাকে খবর দিবেন। মুটামুটি বন্ধ হল এলাকার চাঁদাবাজি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেবার বিষয়টা আলাদা। ওটা মাসিক হিসাব, অন্য মাস্তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুচকা চোর ভালো। অন্তত এলাকার সন্তান।
যশোর শহর পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে এলাকার সূর্য সন্তন, এলাকার রক্ষক, সুখ দুঃখের ভাগীদার আনিসুর রহমান (পুচকা) আপনাদের দোয়া চায়। এই প্রথম জানতে পারলাম পুচকা চোরের অন্য নাম আছে। পুচকা চোর যদি না বিজয় হয় তাহলে এলাকার আগের বন্ধ হওয়া বিষয় গুলো আবার ফিরে আসবে। সারা এলাকায় এমন একটা ছড়িয়ে দিল। বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পুচকা পরাজিত করলো। কারন প্রতিপক্ষ ছিল এলাকার এক গাঞ্জা খোর রিক্সা চালক। এই লোক পুচকা চোরের নিজের লোক। এছাড়া আর যে কয়জন নমিনেশন পেপার কিনেছিল তাঁরা সবাই পুচকে চোরকে সমর্থন দিয়ে নমিনেশন পেপার প্রত্যাহার করে নিল। এর ভিতর একজন সাহসী প্রার্থী খাটের উপর থেকে নিচে পড়ে হাত পা ভেঙ্গে হাঁসপাতালে ভর্তি থাকায় সেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেনি। অবশ্য ঐ ব্যাক্তির খাটের থেকে পড়া নিয়ে নিন্দুকেরা সেসময় অনেক কথা রটিয়েছিল। ভালো লোকের পিছনে পাবলিক একটু বেশি লাগে, পুচকা চোরের পিছনে কেন লাগবে না!!
এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী সেরা কমিশনার হিসাবে একদিন আনিসুর রহমানের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিল। পুচকা চোর থুক্কু আনিস সাহেব বিরোধী দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় নিজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে তাকে সরকারী দলে ভিড়িয়েছেন। আজ ছিল তার সরকারি দলে যোগদান অনুষ্ঠান, একই সাথে মন্ত্রী মহোদয় আনিস ভাইকে সেরা কমিশনারের ক্রেস্ট তুলে দিল। সাথে এটাও ঘোষণা করা হলো যশোর বাসীর বৃহত্তর উন্নয়নে আগামীবার আনিস ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন। এলাকাবাসী এলাকার সন্তানের গর্বে গর্ভবতী হয়ে গেল।
বিশিষ্ট নেতা আনিস ভাই এখন আর এলাকায় তেমন আসতে পারেনা। এক চালা টিনের ঘরটা এখন বিশাল ডুপ্লেক্স প্রাসাদ হলেও আনিস সাহেব সময় পায়না বাড়িতে ফেরার। পৌরসভা চেয়ারম্যান হবার পর উনার কাজ অনেক বেড়ে গেছে। আসলে কাজের মানুষ কাজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। তবে নিন্দুকেরাও তার পিছু ছাড়লোনা। অনেক চেষ্টা করেছিল এমন একটা মানুষকে উদিচী হত্যা মামলায় জড়াতে। শেষ পর্যন্ত পারেনি শুধুমাত্র আনিস সাহেবের ভাগ্যের জোড়ে। ভাগ্যই বলতে হয়। আনিস ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে সাক্ষী দিতে চেয়েছিল হটাত করে একদিন কি হল, নিজ পত্রিকা অফিসে বসে থাকা অবস্থায় কে বা কারা গুলি করে হত্যা করে। উদিচী থেকে আনিস ভাই রক্ষা পেয়ে যায়। অবশ্য কিছু কিছু পত্রিকা চেষ্টা করেছিল এই রানার পত্রিকার সম্পাদক মুকুল হত্যা মামলায় জড়াতে। ওহ, আগে বলা হয়নি। যশোর থেকে প্রকাশিত রানার পত্রিকার সম্পাদক মুকুল ছিলেন উদিচী হত্যা মামলার সাক্ষী। আনিস ভাইয়ের বিরুদ্ধে তিনিই স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন।
রানার পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আনিস সাহেবের প্রিয় একজন মানুষ। উনার শক্তির প্রেরনা। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে যাবার আগে মুকুল সাহেবের কবরে ফুল দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেদিন যশোর বাসী জানতে পারলেন মুকুল ছিল আনিস ভাইয়ের প্রেরনা। মুকুল হত্যা মামলায় আনিস ভাইয়ের দিকে অনেকে আঙ্গুল তুললেও সরকারকে কেউ বেশ্বাস করাতে পারেনি। সরকার নিশ্চয় গাঁজা খাওয়া কথা বিশ্বাস করেনা। এ কারনে আনিস ভাই সে যাত্রায় আরো একবার বেঁচে যায়। আসলে ভালো মানুষের পিছনে খারাপ মানুষ একটু লাগেই কিন্তু তার তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
এমপি হিসাবে শপথ নিয়ে এলাকার মাটিতে পা দিয়েই সরাসরি চলে যায় ভৈরব নদীর তীরে। ওখানে নাকি আজ জেলেরা মাছ ধরার সময় একজন মানুষের মৃতদেহ পেয়েছে। নিহতের পরিবার তাকে সন্তাক্ত করেছেন, ইনি হলেন আনিস সাহেবের বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। নির্বাচনের আগে আগে হটাত করে তিনি উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বিরোধী দলের হলেও এলাকার বাসিনন্দা। সে কারনে তিনি বিমান থেকে নেমে খবর পেয়েই কোথাও না যেয়ে সরাসরি এখানে চলে এসেছেন। আনিস সাহেব অনেক চেষ্টা করেও নিজের কান্নার বাধ আটকাতে পারেন নি। অঝরে শুধুই কেদেছেন। হাজার হলেও যোশর বাসী একজন বুদ্ধিজিবী হারালেন। হারালেন একজন নাম করা শিক্ষাবিদকে। অসংখ্য স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকে। এমন একজন মানুষের জন্য শুধু এলাকাবাসী কান্না করবে কেন? আনিস সাহেবরাও কান্না রোধ করতে পারেন না, যতই নিন্দুকেরা তার দিকে আঙ্গুলী তুলে রাখুক ...
পুচকা চোরের কাহিনী কেন যেন হানিফ চোরের সাথে পুরাপুরি মিইল্লা যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন