সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ- উদযাপন না তামাশা?
লিখেছেন লিখেছেন জুলকারনাইন সাবাহ ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৫৯:৪৯ রাত
বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় আজ সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবার কথা । বেশ কয়েক বছর ধরেই শুরু হওয়া বিষয়টি এখন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে , এমন কি সম্ভবত ছোঁয়াচে ব্যাধির মত খোদ রাজধানী ঢাকা শহরের দু একটি এলাকায় শাওয়াল মাসের এক তারিখ ঈদ উদযাপন না করে রমজান মাসের ২৯ বা ত্রিশ তারিখেই ওরা সকাল বেলা ঈদের নামাজ পড়ে হাস্যকর ভাবে কোলাকুলি শুরু করে দেয় । ওরা ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ীতে এস দেখে বাড়ীর অন্য কোন সদস্য হয়তো ত্রিশ তম রোজা পালন করছে ।
বিষয়টি হচ্ছে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা শুরু করা এবং রোজা শেষে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন না করলে ওদের মতে কোন কিছুই শুদ্ধ হবেনা । বাংলাদেশের মানুষের ধর্মপ্রাণ হবার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর পীর নামধারি ধর্ম ব্যবসায়ি গোষ্ঠী মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করাকে বিতর্কিত রুপ দিচ্ছে ।
আজ সোমবার যেহেতু সৌদি আরবে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে , তাই বরাবরের মত এবারও দক্ষিন চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার ৩০ টি গ্রামে আজ ঈদ উদযাপিত হবে । পটুয়াখালির ২২টি গ্রামের ৫০০ এর অধিক পরিবার এবং শরিয়ত পুরের ডামুড্যা উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে আজ সোমবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে । চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ সহ চারটি উপজেলার মট ৪০ টি গ্রামে আজ সোমবার ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে । এর বাইরেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পীর-আক্রান্ত অনেক এলাকার শত শত পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছে ।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনকারিদের আজকের সংখ্যাটি কিন্তু আজ থেকে দশ পনেরো বছর আগে এক দশমাংশের বেশী ছিলনা । সচেতনতার অভাবে আজ এ সমস্যা এভাবে মহামারির রুপ ধারন করেছে ।
এভাবে চলতে থাকলে , দেশে যে হারে পীর – কামেলের সংখ্যা এবং মতলববাজ অনুসারির সংখ্যা বেড়ে চলেছে অচিরেই দেশে ঈদ উদযাপনের তারিখ নিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ শুরু হওয়া বিচিত্র নয় ।
এ বিষয়ে সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের ঘুম কবে ভাঙ্গবে ? দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসার আলেম সম্প্রদায় মুখে কেন কুলুপ এঁটে আছে , চিন্তার বিষয় । কথায় কথায় ফতোয়া জারি করা ইসলামি চিন্তাবিদ , আল্লামা শায়েখ খেতাব বহনকারি ওস্তাদদের মুখেও বোধগম্য কারনেই কুলুপ এঁটে দেওয়া আছে ।
এ সমস্ত পীর কামেল নামধারি ধর্ম ব্যবসায়িরা ইসলাম ধর্ম অনুসারি বিপুল জনগোষ্ঠীর এদেশে ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত করে যাচ্ছে , এদের সুপথে ফিরিয়ে আনা এখন আর সহজ কাজটি নয় । সরকার যদি এখন ই উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টির সমাধান না করে তবে এমন সময় আসবে ঈদ উদযাপন নিয়ে এদশের মুসলমানরা ইরাক ইরানের শিয়া সুন্নি বিভেদের মত অবস্থায় উপনীত হতে বেশী সময় লাগবেনা ।
আমার প্রশ্ন,
(১) সৌদি আরবে ইফতার হয় আমাদের দেশে যখন রাত ১০টা । সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনকারীরা রাত ১০টায় ইফতার করেন না কেন ? মাগরিব নামাজ কেন রাত ১০ টায় পড়েন না ?
(২) সৌদি আরবে ফজরের ওয়াক্ত হয় তখন, যখন আমাদের দেশে সকাল ৮টা , তাহলে সকাল ৮টায় ফজর নামাজ আদায় করা হয় না কেন? ?
(৩) আমাদের দেশে যখন সকাল ৭টা বাজে তখন সৌদি আরবের সেহেরির সময়, তাহলে কি আমরা সকাল ৭টায় সেহেরি কবর?
মিডিয়ার কথা একটু বলে শেষ করি । টক শো করে প্রতিটা চ্যানেল বহু স্বঘোষিত আতেল দেশবাসিকে উপহার দিয়েছে । আমরা দেশবাসী এই বিষয়টির উপর ধারাবাহিক টক শো দেখতে চাই । পীর উপদ্রুত এলাকার সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলো কে সত্য জানানো যায় এমন ব্যবস্থা টিভি চ্যানেল গুলোর করা উচিত ।
সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নিয়ে এর সুরাহা করা উচিত । ইসলাম ধর্মের লোকাল এজেন্ট , বেহেশতের টিকিট বিক্রয়ের ডিলার অনেক পীর কামেল বুজুর্গ এমনকি নিজেদেরকে দেশের মুরুব্বি বলে জাহির করতে লজ্জা পায়না এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের টিভিতে টক শো করতে দেওয়া হোক এ বিষয়ের উপর । দেখি তিনারা কি বলেন এ ব্যপারে ।
সবাইকে আমার তরফ থেকে অগ্রীম ঈদ মোবারক
সুত্র
বিষয়: বিবিধ
৪৯৪৮ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কথিত ঐক্যের খোলে বিভক্তির খঞ্জর।
একই দিনে রোজা ও ঈদের প্রবক্তা ভাইদের সংখ্যা যদি দেখা হয়, তা বাংলাদেশের মুসলমানদের শতকরা ৩% ও না, তাহলে এই হাদীস অনুযায়ী আমরা কি উপলব্ধি করতে পারি?
এ ব্যাপারে আমাদের এখানে হামজা ভাই একটা সিরিজ দিয়েছেন, আমি পড়েছি সেগুলো; সেখানে উনি কিছু প্রশ্ন রেখেছেন (হুবহু মনে নাই) এটা খন্ডন করা উচিৎ, যেমনঃ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম হলে, সৌদি-র ঈদের দিনে অন্যদের রোযা থাকাটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। অথবা সৌদীতে যেই দিন ঈদুল-আজহা ঐদিন-ই কেন আমরাও ঈদুল-আজহা পালন করি, একদিন পরে পালন না করে?
এসব বিষইয়ে আলেমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
আর ঈদুল আজহার তারিখ নিরধারিত যা হজ্জের সাথেই শর্তযুক্ত। কাজেই দুটো গুলিয়ে ফেলে তুলনা করা অযৌক্তিক ও হাস্যকর।
@জুলকারনাইন সাবাহ : শিরোনামে "সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে" এবং "তামাশা" শব্দ দুটির ব্যবহার অনুচিত হয়েছে মনে করি!
কারণ (১)এটি শরয়ী ইখতিলাফী বিষয় বিধায় "তামাশা" বলা শুধু অনুচিতই নয়- বরং গুনাহের কাজও হতে পারে!
এবং
(২)বিষয়টি "সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে"এর সাথে সম্পর্কিত নয়,
বরং "পৃথিবীর যেকোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে তা পৃথিবীর সবদেশের জন্য প্রযোজ্য হওয়া" সম্পর্কিত!
****
আমি আলিম নই! কিন্তু ঘাঁটাঘাঁটি করে বিষয়টি অনুধাবনের চেষ্টা করছি অনেকদিন ধরে!
বিশেষজ্ঞদের কাছে বিনীত আবেদন- জনাব আমীর হামজার এ লেখাটির তথ্য/দলিলভিত্তিক জবাব আসা দরকার!
http://moonsighting.ucoz.com/Global_Moon_Sighting_by_Amir_Hamza_.pdf
****
এ বিষয়ে এসবিব্লগে আমি কিছু লিখেছিলাম এবং পক্ষে-বিপক্ষে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছিল! আরো বেশী অনুসন্ধান ও অনুধাবনের স্বার্থে সেসব পোস্টের মন্তব্য ও যুক্তি-পাল্টাযুক্তিগুলো নিয়ে ব্লগের বাইরে আলোচনাচক্র ও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন আলিমের সাথে আলোচনা করে চলেছি!
আমার কাছে এখনও মনে হচ্ছে যে, বিশ্বজোড়া একদিনে(বার) একই তারিখ হওয়াটাই যথার্থতার অধিক নিকটবর্তী!
যেমন তারিখরেখার ভিত্তিতে উভয়পাশের তারিখ ও বারের তফাত ১(এক), কিন্তু কখনো একপাশে সোমবার ১২তারিখ এবং অপরপাশে সোমবার ১১ বা ১৩ তারিখ হয়না!
বরং একপাশে সোমবার ১২তারিখ এবং অপরপাশে রবিবার ১১তারিখ বা মঙ্গলবার ১৩তারিখ হয়!
অর্থাত "সোমবার" ও "১২তারিখ" কখনো বিচ্ছিন্ন হয়না!
চান্দ্রক্যালেন্ডারেও ঠিক তেমনটাই হওয়া উচিত!
****
কোন ব্যক্তিই নির্ভুল নন! কিন্তু অসংখ্য ভুলে নিমজ্জিত ব্যক্তিরও কোন কথা সত্য ও যথার্থ হতে পারে, এবং সেটি সত্যপন্থী সত্যানুসন্ধানীদের জন্য গ্রহনযোগ্য বা বিবেচনাযোগ্য হওয়াটাই সত্যের দাবী!
যেমন ইবলিশ মিথ্যাবাদী হওয়া সত্বেও আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কিত তার বক্তব্যটি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সত্যায়ন করেছেন!
তেমনি অন্য অনেক বিষয়ে তাঁর সাথে ভিন্নমত থাকলেও এ লেখাটি বিবেচনার দাবী রাখে![জনাব আমির হামজা (ব্লগার 'হামজা' http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/bloglist/9430/Hamza)
*****
আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়!
যুক্তিতর্ক করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা নিজের সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধির উপর জুলুম করে বসি!
যদি প্রশ্ন করা হয়-এক কেজি চাল ও এক মিটার কাপড়, এদুটির কোনটি বড়/ছোট??
উত্তর কারো জন্য কঠিন আর কারো জন্য সহজ!
আসলে তো দুটি আলাদা জিনিস/একক!
ঠিক তেমনি সময় ও তারিখ দুটি আলাদা জিনিস!
সময় নির্ধারণের ভিত্তিমান সূর্য
তারিখ নির্ধারণের ভিত্তিমান চন্দ্র
ঠিক যেমন
চাল(ওজন) মাপার ভিত্তিমান কেজি
কাপড়(দৈর্ঘ) মাপার ভিত্তিমান মিটার
সময়ের ব্যবধানের কারণে কোথাও শণিবারে জুমআ হয়না- তারিখ যা-ই হোক!
যখন জাপানে জুমআর নামাজ তখন বাংলাদেশে সকাল এবং ইউরোপে শেষরাত কিন্তু সবখানেই শুক্র(জুমআ)বার! ওদিকে আমেরিকায় তখনো বৃহস্পতিবার- রাত পেরিয়ে দুপুরে জুমআ হবে!
একইভাবে সময়ের ব্যবধান অবশ্যই থাকবে, কিন্তু তারিখের ব্যবধান হবে ১(এক) এবং মাত্রই ১!
এবং সেটি তারিখরেখার কারণে- অন্য কোন কারণে নয়!!
(১)আপনি যদি আলিম না হন তাহলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে কিভাবে আসতে পারেন? শরীআ কোন খেলনা না। শরীআর প্রতিটি বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হলে পূববর্তী সমস্ত বিষয়গুলোতে সম্মক ধারনা নিয়ে অতঃপরই বিশ্লেষণে যেতে হবে। বিজ্ঞানের গবেষনার জন্য যেমন বিজ্ঞানী হতে হয়, আইন নিয়ে কিছু করতে গেলে যেমন আইনজ্ঞ হতে হয় তেমনি শরীআ বিষয়ে কোন নতুন সিদ্ধান্তে যেতে চাইলে তাকে আলিম বা বিশেষজ্ঞ হতে হয়।
(২) সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে বলাটারও যৌক্তিক কারণ রয়েছে কেননা আজ পর্যন্ত এনাদের কে শুধু মাত্র সৌদির সাথে মিল রেখেই রমাদ্বান ও ঈদাইন পালন করতে দেখা গেছে (উনারা কিন্তু বলেন বিশ্বের যে কোন ১দেশে চাঁদ দেখা গেলে সারা বিশ্বে ঈদ)। যদিও অন্য দেশে আগে চাঁদ দেখা যায়, উনারা কখনোই সেটার অনুসরণ করেনণি। উদাহরণ স্বরূপ- ২০১৩ সালে ঈদুল ফিতরের চাঁদ সৌদি আরবে দেখা যায় ৮ই আগস্ট সন্ধায়। সেমতে সেখানে ঈদ পালিত হয় ৯ই আগস্ট। আর বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যায় ৯ই আগস্ট সন্ধ্যায়, ঈদ পালিত হয় ১০ই আগস্ট। সে হিসেবে উক্ত মতাদর্শী ভাইয়েরা বাংলাদেশে ৯ই আগস্টেই ঈদ পালন করেন। মজার ব্যাপার হলো, সে বছরেই অর্থা ২০১৩তে কানাডা, আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের কিছু রাজ্যে ও আরো কিছু স্থানে চাঁদ দেখা গিয়েছিলো ৭ই আগস্ট সন্ধ্যায়, ঈদ পালিত হয়েছিলো ৮ই আগস্ট। উক্ত মতাদর্শী ভাইয়েরা কিন্তু ৮ই আগস্ট ঈদ পালন করেন নি, করেছেন ৯ই আগস্টে; যদিও তারা বিশ্বের যে কোন স্থানে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ পালনের পক্ষপাতী। তাহলে তারা ৮ই আগস্ট কেন ঈদ পালন করেননি? একারণেই বলা হয় তারা সৌদির সাথে সমন্বয় রেখেই ঈদ ও রমাদ্বান পালন করেন।
(৩) এবার ঈদ ও রমাদ্বানের সিদ্ধান্তের বিষয় সরাসরি দলীল কিছু সহীহ হাদীস ও আসার দিচ্ছি-
(৪)হামজা সহ উক্ত মতাদর্শী যে দু'তিনজন কে এই ব্লগে পেয়েছি তারা সবাই যুক্তি দেন- আরাফার দিনে মর্যাদা কি একেক দেশের জন্য একেক দিন, লাইলাতুল কদর কি দেশ ভেদে পৃথক দিনে হয় ইত্যাদি। তাদের প্রশ্নের ভিত্তিতে সবাইকে এই প্রশ্ন গুলি করেছিলাম, তারা এ পর্যন্ত কেউ কোন উত্তর বা মন্তব্য করেননি। আশা করি আপনি উত্তর গুলো দিবেন।
ক. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- থেকে কি এমন কোন হাদীস বর্ণিত আছে যাতে তিনি সাওম, ঈদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিজ এলাকা বা নিকটতম এলাকায় চাঁদ দেখা অথবা চাঁদ দেখার গ্রহনযোগ্য সাক্ষ্য ব্যতিত অন্য কোন বিষয়ে ফায়সালা করেছিলেন? অথবা দূরতম কোন এলাকার চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহন করে তদ্বনুযায়ী আমল করেছেন? এসংক্রান্ত কোন যঈফ হাদীসও কি আছে?
খ. সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) থেকে কি তদ্রুপ কোন আসার বর্ণিত আছে?
গ. তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ সহ খইরে কুরুন এবং পরবর্তী ৫০০ বছর পর্যন্ত কোন মুহাদ্দিস, মুহাক্কিক, মুজতাহিদ থেকে কি অনুরূপ কিছু বর্ণিত আছে? (যেহেতু খইরে কুরুন জামানায় উলামাগন ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলোও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে স্বীয় কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন, সুতরাং এত বড় একটা বিষয় তো তারা এড়িয়ে যাবেন বলে বিশ্বাসযোগ্য হয় না। আর ততদিনে ইসলামী রাষ্ট্রও তো এত বড় হয়ে গেছে যে, এই বিষয়ে কিছু না কিছু তো অবশ্যই থাকবে।)
ঘ. বৈজ্ঞানীক ভাবে কি এটা প্রমাণিত যে সারা বিশ্বে একই দিনে নতুন চাঁদ উদয় হওয়া সম্ভব?
ঙ. হাদীসে বর্ণিত আছে “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [মুত্তাফাকু আলাইহি, বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮]
তো, যখন আমাদের বাংলাদেশে রাতের শেষাংশ, তখন সৌদি ভাইয়েরা মধ্যরাতের নিদ্রায় শায়িত, নিউ ইয়র্কের ভাইয়েরা তখন ব্যস্ত মাগরিবের প্রস্তুতিতে, আবার জাপানের ভাইয়েরা তখন সকালের প্রাত্যাহিক কাজে ব্যস্ত। আবার যখন সৌদি ভাইয়েরা রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদে মশগুল আমরা তখন ফজর পরবর্তী কাজে মশগুল। অর্থাৎ, সময় পরিক্রমাটা এমন যে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সবসময়ই রাতের শেষাংশ বিরাজমান।
এখন আমি প্রশ্ন করি, আল্লাহ কি কোথাও বলেছেন যে আমি ভিন্ন ভিন্ন স্থানের জন্য বার বার আসতে থাকবো? নাকি আল্লাহ সবসময়ই পৃথিবীর নিকটতম আসমানে তশরিফ নিয়ে থাকেন? তাহলে আর ভিন্ন সময়ের দরকার কি? যে কোন একদেশের রাতের শেষাংশের সাথে মিলিয়ে দুআ করলেই তো হলো, তাই না?
চ. অনেকেই আবার যুক্তি দেখান সারা বিশ্বে একটি তারিখ ও বারই চলে। যেমন বাংলাদেশে শুক্রবার ভোর হলে জাপাানে শুক্রবার প্রায় দুপুর, অন্যদিকে বাংলাদেশে শুক্রবার দুপুর হলে সৌদি আরবে শুক্রবার সকাল। আবার বাংলাদেশে শুক্রবার রাত হলে নিউ ইয়র্কে শুক্রবার সকাল। তাদের এহেন অসাঢ় যুক্তির প্রেক্ষিতে জানতে চাই- চাঁদ ও সূর্যের পর্যায়বৃত্ত গতির হার কি এক? আরবী দিন কি রাত ১২টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ধরে নাকি সূর্যাস্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ধরে? যদি আরবী দিনের হিসাব ধরি তাহলে এবার হিসাবটায় কতটুকু পার্থক্য হয়? দিবারাত্রির হিসাব কি আমার সূর্যের সাথে করি না চাঁদের সাথে? চান্দ্র ক্যালেন্ডার কি সৌর ক্যালেন্ডারের সমান সংখ্যক দিন বিশিষ্ট?
আশা করি অন্তত আপনার কাছে উত্তরগুলো পাবো।
সর্বশেষ: একই দিনে ঈদ পালনের পক্ষের যুক্তিগুলোকে শরীআর আলোকে বিচার করে এর খন্ডন ও চাঁদ দেখে ঈদ পালনের উপর মাওলানা আবদুল মালেক (দা:বা ১৫ খন্ডের একটি বিশাল গবেষনামূলক লেখা প্রকাশ করেছেন, যা মাসিক আল কাউসারে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমিও তার প্রথম ৬ খন্ড আমার ব্লগে দিয়েছি। উক্ত লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে এই বিষয়ে যাবতীয় প্রশ্নের সমাধান মিলবে ইনশাআল্লাহ।
আপনি যত কথা বলেছেন তার পয়েন্টভিত্তিক জবাব লেখা আমার জন্য সময়াভাবে অসম্ভব বলতে হয়!
আপনার কথার প্রেক্ষিতে আমি এই একটি বিষয়ে একমত
ভূগোল, বিজ্ঞান ও শরীআ - এ তিনটি বিষয়ই এই একটি প্রশ্নে নিহিত! এর যেকোন একটিতে দুর্বলতা থাকলে তাঁর অভিমত নির্ভুল হবার সম্ভাবনা কম!
যাইহোক আপনি এই লেখাটি দয়া করে পড়ুন। আমি বলছিনা, আপনি কোনো দিকে ছুকে পড়ুন, বরং একটু দেখুন।
ইসলামের উৎপত্তিস্থল পবিত্র হারাম শরীফ থেকে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান তিন ঘন্টা। যে সব এবাদত সুর্যের গতিবিধি তথা সময়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত সে সব এবাদত আমরা আমাদের ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে সুর্যের গতির সাথে টাইম সিডিউল মিলিয়ে পালন করে থাকি। যার ফলে জাজিরাতুল আরবের অধিকাংশ দেশের সাথে তিন ঘন্টার ব্যবধান হয়ে থাকে। কিন্তু রমজান মাসের রোজা শুরু করা এবং ঈদ পালন করার ক্ষেত্রে আমরা ২৩ ঘন্টার ব্যবধান কোন যুক্তির আদলে কিংবা শরীয়তের কোন মাসআলার আলোকে নির্ধারণ করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। বিশেষ করে রেডিও টিভি এবং সেটেলাইট মিডিয়ার উদ্ভাবনের এই আধুনিক উন্নত যোগাযোগের যুগে নতনভাবে ইজতিহাদ করার প্রয়জনীয়তা আশ্বীকার করার যৌক্তিকতা কোথায়? এটাতো শুধু একটা রাষ্ট্রীয় সার্কলারের বিষয়!
আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টির অবতারনা করার জন্য।
ক। নিজে চাঁদ দেখে নেয়া বা নিকটস্ত/স্থানীয় জনপদের কেউ চাঁদ দেখে থাকলে তার স্বাক্ষের উপর নির্ভর করা এবং তা প্রচার পূর্বক অনুসরন করা।
খ। মক্কা/মদীনায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে এবং তার নির্ভরযোগ্য খবর জানা গেলে তা অনুসরন করা।
গ। রাষ্ট্র তার ভৌগোলিক সীমানায় চাঁদ দেখার ব্যবস্থা করা ও গণমাধ্যমে তা প্রচার করা। রাষ্ট্রের জনগন সরকারী ঘোষনা অনুসরন করা।
এসব মতামতের প্রতিটির পক্ষে যুক্তি রয়েছে। তবে সবযুক্তির ওজন বা মান একই রকম নয়। কোনটাতে আছে বিজ্ঞতার ছাপ ও গ্রহণযোগ্যতার উপাদান। আবার কোনটাতে দেখা যায় রাষ্ট্রপ্রধানের ফরমান বা আদেশ পালনের বাধ্যবাধকতা। এনিয়ে আলেমসমাজও বহুধাবিভক্ত। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে নিজেদের অবস্থানে অনঢ় থাকার মানসিকতা। এজন্য কোন কোন আলেম ভিন্নমতের বক্তব্যকে খন্ডন করতে গিয়ে অদ্ভুত সব আচরন করেন। গভীর পর্যবেক্ষন মূলক দৃষ্টিভংগী না নিয়ে বরং বাজে ভাষায় আক্রমন করে বসেন। প্রত্যেক মতের প্রবক্তারা আবার নিজেদেরকে সহি এবং অন্যদেরকে গলদ মনে করেন। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়না। বরং লাভের চেয়ে লোকসানই হয় বেশী। ফলে সাধারন জনগন বিভক্ত হয়ে নিজেদের পছন্দসই মতকে অনুসরন করতে থাকে।
এক সময় যখন যোগাযোগ মাধ্যম অনুন্নত ছিল তখন কেবল প্রাথমিক মতামতটি অনুসরনযোগ্য ছিল। রসুল (সঃ) ও সাহাবাদের যুগে কেউ চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার স্বাক্ষী পেলে মুসলমানরা বিভিন্ন পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতো। সেই আগুন দেখে দূরবর্তি পাহাড়েও আগুন জ্বালানো হতো। এভাবে ধীরে ধীরে সকল এলাকায়, সব মুসলমান আগুন জ্বালানো দেখে চাঁদ দেখার খবর পেত। আবার কখনো ঘোড়ায় চড়ে চাঁদ দেখার খবর বিভিন্ন স্থানে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হতো। সারকথা, ইসলামের একদম শুরু থেকেই চাঁদ দেখা প্রচারে কোন রকম কার্পণ্য করা হতো না। বর্তমানেও কোন কোন অঞ্চলে বা জনপদে এরকম নিজেদের এলাকার কারও চাঁদ দেখার খবর পেলে তা অনুসরন করা হয়। বিশেষ করে কোন স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসুবিধা পরিলক্ষিত হলে অথবা আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বঞ্চিত থাকলে সেখানে প্রাগৈতিহাসিক হলেও এই পদ্ধতি অনুসরণীয় এবং সেটাই অধিকতর যুক্তিসংগত। তবে যেখানে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং কোনরকম অসুবিধাই নেই সেখানে এই প্রাথমিক পদ্ধতিটি প্রযোজ্য নয়।
পরবর্তী যুগে, আরও উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম সরূপ কোনো বিশেষ বাতি জ্বালিয়ে বা শব্দ শুনিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হতো যে নতুন মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। সে সময়ে সমুদ্রবক্ষে জাহাজের নিরাপদে চলাচলের সুবিধার্থে যে সকল লাইট হাউস বা বাতিঘর ছিল, আকাশে চাঁদ দেখা গেলে সেগুলিতে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত। একটি লাইট হাউসে আলো জ্বললে সে খবর যখন অন্যটিতে পৌঁছাত, তখন অন্যটিতেও আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত। এভাবে জনতা আলো জ্বলতে দেখে চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত। এ প্রক্রিয়ায় যে সকল এলাকার মানুষ চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত, সে সকল এলাকার মানুষেরা রোজা, ঈদ একসাথে পালন করত।
এখানে আমরা একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব যে, আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, এ সংবাদটি পায়ে হেটে অন্যদেরকে জানানো, ঘোড়ায় চড়ে জানানো, লাইট হাউসের মাধ্যমে জানানোর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক কোনো পার্থক্য নেই। বরং প্রযুক্তিগত পার্থক্য রয়েছে, যা প্রথম যুগ থেকেই গ্রহন করা হয়েছে। বেশী সংখ্যক মানুষকে দ্রুততার সাথে জানানোর জন্যে এ মাধ্যমগুলি প্রযুক্তি বিশেষ, যা সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে উক্ত প্রযুক্তির একটিই উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো-দ্রুততার সাথে অন্যদেরকে চাঁদ দেখার সংবাদটি জানানো।
আজকের এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে যদি কেউ এক এলাকাতে চাঁদ দেখতে পায় এবং তা অন্য এলাকার লোকদেরকে টেলিফোনে, ইন্টারনেটে, টেলিভিশনে, রেডিওর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, তাহলে তা পূর্ববর্তী সময়ের পায়ে হাটা, ঘোড়ায় চড়া, লাইট হাউসের মাধ্যমে ঘটিত প্রচারণার সমপর্যায়েরই হবে। কারণ, এখানে উদ্দেশ্য একই। তাই একই সাথে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে দ্বিতীয় মতামতটির বিষয়ও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। এপ্রসংগে উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন দেশ যেমনঃ অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলমেনিয়া, আযারবাইজান, আয়ারল্যান্ড, বলিভিয়া, বাহরাইন, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, জর্জিয়া, চেচনিয়া, ডেনমার্ক, হাঙ্গেরী, আইচল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, ইতালি, ইয়েমেন, কাতার, কাযাখিস্তান, কুয়েত, জর্দান, লিবিয়া, মালয়শিয়া, মৌরিতানিয়া, নেদারল্যান্ড, ফিলিপিন, ফিলিস্তিন, রুমানিয়া, রাসিয়া, সুদান, সোমালিয়া, সুইডেন, সিরিয়া, স্পেন, তাজাকিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ইত্যাদি দেশসমূহ মক্কা-মদীনায় নতুন চাঁদ দেখার খবর জেনে তা অনুসরন করে। এছাড়া বাংলাদেশের একটি ক্ষদ্র অংশ এবং চীনের কিছু স্থানে মক্কা-মদীনার সাথে মিলিয়ে চলতে দেখা যায়।
একই দিনে সারাবিশ্বে ইউনিভার্সাল হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরনের প্রবক্তাদের কেউ কেউ মক্কা/মদীনায় চাঁদের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ ও সাওম পালনের মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেন যে, সৌদী আরবের অবস্থান পৃথিবীর মাঝখান বরাবর। বিখ্যাত ‘গোল্ডেন রেশিও’ অনুযায়ী মক্কা পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দু। মক্কা ইসলামের কেন্দ্র বিন্ধু। কা’বা মুসলমানদের সর্বোচ্চ সম্মানিত তীর্থস্থান। কা’বা শরীফের ঠিক উপরে বায়তুল মামুর, যার নিচ বরাবর আদম (আ কা’বা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকেই আল্লাহর বাণী সমগ্র বিশ্বে প্রচার শুরু করেছেন। মক্কার সাথে পৃথিবীর যে কোন স্থানের সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার মধ্যে। কোন স্থানের সাথে সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার নিচে থাকলে ঐ স্থান অনুসারে মাস শুরু করা যায় ইত্যাদি।
একই দিনে সারা বিশ্বে ইউনিভার্সাল হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরনের প্রবক্তাদের অপর একটি অংশ একটু ভিন্নভাবে সমাধান দিতে চান। তাঁরা বলেন যে, মাসের প্রথম দিনের নতুন চাঁদ (হিলাল) পশ্চিম আকাশে উদিত হয়। তাই সৌদির পশ্চিমের দেশগুলোতে সবচেয়ে আগে চাঁদ দেখা যাওয়া সম্ভব। আবার মক্কা/মদীনার সাথে কখনও একই দিনে হতে পারে। পৃথিবীর আকাশে প্রথম চাঁদ যে দেশ থেকেই দেখা যাবে তাদের সাথে এক হওয়া উচিত। অর্থ্যাৎ লক্ষ্য হলো পৃথিবীর আকাশের প্রথম চাঁদ। কোন বিশেষ দেশের বা সীমানার আকাশের চাঁদ নয়। সুতরাং বিষয়টি নিরীক্ষা ও পর্যালোচনার দাবি রাখে। বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ থেকে সহিহ শরীয়া জ্ঞানের অধিকারী একজনকে খলিফা বা নেতা মনোনীত করে তার কেন্দ্রীয় কার্যালয় মক্কা/ মদীনায় (ইসলামের কেন্দ্র হিসাবে)স্থাপন করা যেতে পারে। তাঁর সহযোগীতার জন্য বিভিন্ন দেশের গভর্ণর বা নেতা বা প্রতিনিধি (প্রত্যেক দেশে একজন) নির্বাচিত করা যেতে পারে। বিশ্বের যে দেশে প্রথম চাঁদ দেখা যাবে ঐ দেশের প্রতিনিধি খলিফাকে জানাবে। খলিফা অধুনিক প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম চাঁদ দেখার খবর বিশ্ব বাসীর নিকট প্রচার করবে। এভাবে মাসের শুরু সমগ্র বিশ্বে এক সাথে করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় মতামতের বিষয়ে আরও গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে।
আর হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরনের তৃতীয় মতামতটি কেবল রাষ্ট্রকে প্রধান্য দিতে অনুসৃত হয়। ভূ-রাজনৈতিক সীমানায় শাসকের শক্তিমত্তার প্রতি আনুগত্যের বহিপ্রকাশ করতে এটি হয়ে থাকে। সাধারনত বর্তমান শাসকদেরই এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনা করা হয়। তবে কোন কোন দেশ ঐপনাবেশিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাইতো বসনিয়া, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া ইত্যাদি দেশ অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য সরূপ আজও তুরস্কের সাথে মিলিয়ে হিজরী তারিখ অনুসরন করে। এধরনের ভিন্ন ভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে হিজরী মাস শুরু করায় মুসলিম বিশ্বে বিচ্ছিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো সার্বজনীনতা ও তাৎপর্য হারাচ্ছে।
রাষ্ট্র ভিত্তিক হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী এবং সে অনুযায়ী দিন নির্ধারন করাতে অনুশাসনগত কিছু সুবিধা আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে ইবাদতের দিন ঠিক করতে বিদ্যমান সমস্যা অনেক। ধর্মীয় মৌলিক সিদ্ধান্ত রাষ্ট্র কাঠামোতে আবদ্ধ থাকায় এমনটা হয়ে থাকে। এ রকম কয়েকটি সমস্যা নিম্নে সন্নিবেশিত হলঃ
১। রমজান: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) থেকে বর্ণিত - "চাঁদ দেখে রোজা রেখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাংগো এবং মেঘের কারনে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাসের ৩০ পূর্ণ কর" - হাদিসটি কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখায় বদ্ধ করার সুযোগ নেই। তারপরও রাষ্ট্র কাঠামোতে একে আবদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে দুনিয়ার সব মুসলমান একই দিন জুমা পড়লেও একই দিনে রোজা রাখে না। কেউ কেউ বিভিন্ন স্থানের সময়ের ব্যবধানকে এর কারন হিসেবে দেখেন। এক্ষেত্রে উল্লেক্ষ্য যে, একসময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল। তখন ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই রোযা ও ঈদ পালন করা হতো । ৪৭ এর পর পাক-ভারত আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকে দু’দেশের আকাশও আলাদা হয়ে গেল । ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তখন থেকে ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নামে একটি আকাশেরও জন্ম হয়েছে। মহান আল্লাহ কি এভাবে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের জন্য পৃথক আকাশ তৈরি করেছেন? পাকিস্তান আমলের কথা যাদের স্মরণে আছে তারা জানেন যে, পিন্ডি বা বেলুচে চাঁদ দেখে পূর্ব পাকিস্তানে রোজা রাখা হতো। অথচ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সময়ের ব্যবধান একঘন্টা। আবার একই জনপদ দুই রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে গেলে (যেমন, দিনাজপুর বাংলাদেশ ও ভারতে বিভক্ত হয়ে আছে) সময়ের ব্যবধান না থাকা সত্বেও রোজা শুরু হয় ভিন্ন দিন। এ বিষয়টিও বিবেচনার দাবী রাখে। তাই সময়ের ব্যবধানের জন্য তারিখ ব্যবধান সঠিক কিনা তা নিজের অন্তরকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পেতে হবে। রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে কেবল ক্ষমতার কুক্ষিগত অবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে, সার্বজনীন ইসলাম কায়েম হওয়া সম্ভব নয়।
২। লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত এ রাতে কুরআন নাজিল হয়। তাই লাইলাতুল কদর পেতে হলে কুরআন নাজিলের রাতকে খোঁজ করা দরকার। এর সাথে সম্পর্কিত রয়েছে নাজিলের স্থান। তাছাড়া সেই মহিমান্বিত রজনীতে জিব্রাইল (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে রহমত মেলে ধরবেন বলে জানা যায়। জিব্রাইল (আঃ) তো অবতীর্ণ হবেন কেবল এক রাতে। সেই রাতটি সমগ্র দুনিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। এক এক দেশের আলাদা আলাদা রাতে নয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমযানের শেষ দশ তারিখের বেজোড় রাতসমুহে লাইলাতুল কদরকে তালাশ কর [সূত্রঃ সহিহ আল বুখারী ২/২৮৪ হাদিস নং ১৮৭৪]। হাদিস মোতাবেক রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে সেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে কোন হিসেব গন্য হবে? কেননা রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে প্রায় বছরই যখন মক্কায় জোড় রাত তখন বাংলাদেশে বেজোড় রাত তালাশ করা হয়।
৩। ঈদ: ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। তিনি বলছেন, এ দুই দিনের রোজা রাখা থেকে নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। প্রথম দিন হলো, যখন তোমরা রোযা শেষ কর, আর দ্বিতীয় দিন হলো, যখন তোমরা কোরবানীর গোস্ত খাবে [সহিহ আল বুখারী ২/২৭২ হাদিস নং ১৮৫১]। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ)রোজার ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন [সূত্র: সহীহ সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড/১৮৬৭, ১৮৬৮ ও সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৫৩৭-২৫৪২]। রাষ্ট্রীয় সীমানার বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে যখন মক্কায় ঈদ তখন বাংলাদেশে রোজা। শুধু পশ্চিমের মক্কায় কেন আমাদের পূর্ব দিকের দেশ জাপান, ইন্দোনেসিয়া ইত্যাদি দেশের মানুষ ঐদিন ঈদ পালন করছে। তখন আমরা রোজা রেখে হারাম কাজ করছি কিনা তা নিখুতভাবে নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ রহমানুর রাহিম বিধায় আমাদেরকে মাফ করে দিতে পরেন। তারপরও ভয়তো ঠিকই থেকে যায়।
৪। হজ্ব: হিজরী ৯ই জিলহজ্ব সারা দুনিয়া থেকে মুসলমানরা এসে আরফাত ময়দানে হাজির হন। এদিনে রোজা রাখার গুরুত্ব ও সওয়াব অনেক। কিন্তু বাংলাদেশের ৯ই জিলহজ্ব আরফাত ময়দানে কেউ অবস্থান করে না। কেননা মক্কার হিসেবে সেদিন ১০ই জিলহজ্ব। ঐ তারিখে আমরা রোজা রেখে আসলে কাদের সাথে একাত্মতা করছি? তাছাড়া মীনার দিবস অর্থ্যাৎ ০৮ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়ার মুমিনগন তাকবীরে তাসরীক (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ) পাঠ করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করার ফলে তা হতেও বঞ্চিত হন অনেক মুমিন।
৫। আশুরা: ঐতিহাসিকভাবে এ দিবসে আল্লাহর কুদরতের হাজার নিদর্শন রয়েছে। যেমন, মুসা (আঃ) লোহিত সাগর পাড় হন, নুহ (আঃ) এর নৌকা মহাপ্লাবন শেষে পাহাড়ে মাটির নাগাল পায়, ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে বের হন, ইউসুফ (আঃ) কুয়ার ভেতর থেকে উদ্ধার হন। হযরত আবু কাতাদাহ থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আরাফার রোযা আগের পরের দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয় এবং আশুরার রোযা বিগত এক বৎসরের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয় [আহমাদ, আবুদাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসলিম শরীফ]। সেজন্য আশুরার রোজা রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট তগিদ রয়েছে। কিস্তু রাষ্ট্রীয় হিজরী ক্যালেন্ডারের কারনে তা হারিয়ে ফেলি। আশুরার রোজা রাখি ভিন্ন দিনে।
৬। কিয়ামতঃ হাদীস থেকে যতদুর জানা যায় কিয়ামত হতে পারে মহররম মাসের ১০ তারিখ। রাষ্ট্রীয় সীমানার হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ তারিখটিও বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে আসবে। তাহলে কী এক এক দেশে কিয়ামত এক এক দিন হবে?
৭। মাসের দিন সংখ্যাঃ কোন একটি দেশে ২৯ বা ৩০ দিনে মাস শেষ, আবার অন্য দেশে আর ১ দিন বা ২ দিন পরে মাস শেষ হয়। অর্থাৎ উক্ত দুই দেশ একত্র করলে মাসের দিন হয় ৩১ বা ৩২ যা শরীয়ায় কোন দলিলে পাওয়া যায় না। সর্বজন স্বীকৃত যে, আরবী মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হবে। চান্দ্র মাস ৩০ দিনের বেশী হওয়া বাস্তব সম্মত নয়।
এর দ্বারা কি স্থানভেদে আপেক্ষিকতার কথায় বলা হয়নি? সব জায়গায় একসাথে সবকিছু করার কি সুযোগ রাখা হয়েছে এ হাদীসে?
আপনি যদি বিদ্যমান ধারণার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে একটু কষ্ট করে আরেকবার এ লেখাদুটো কোন লাইন বাদ না দিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে পড়তেন-
http://moonsighting.ucoz.com/Global_Moon_Sighting_by_Amir_Hamza_.pdf
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/5982/banda/21350#.U9hiA-NdU50
আপনাকে যতটুকু জানি তাতে আমার বিশ্বাস, তারিখ ও সময় এর একক এবং ভৌগলিক সীমানা বিষয়ে আপনার ধারণা পাল্টে যাবে
যাহোক, মানুষ তার নিজ যোগ্যতায় কিছুই বুঝতে সক্ষম নয় যতক্ষণ আল্লাহতায়ালা কারো জন্য সে জ্ঞান মঞ্জুর করেন।
দোয়া করি
আরেকটা বিষয় আমাদের দেশের হিজরী ক্যালেন্ডার আর সৌদীর হিজরী ক্যালেন্ডার এর সময়ের পার্থক্য পুরা ১ দিন। ঈদুল-আজহা এর তারিখ ১০ জিলহাজ্জ্ব, ঐদিন বাংলাদেশে দেখা চাদের হিসেবে বরাবর-ই তারিখ হয় ৯ জিলহাজ্জ্ব; চাঁদ দেখে হজ্জ্ব নির্ণয় একদম কুরানের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত – এবং সেটা জিলহাজ্জ্ব এর ১০ তারিখ। আমাদের দেশে কিসের ভিত্তিতে চাঁদ ফেলে দিয়ে সৌদীর দেখাদেখি ৯ তারিখে পালন করা হয়? সৌদীতো চাঁদ দেখে, উক্ত চাদের ১০ম দিনে ইদুল-আজহা পালন করে এবং এটাই নিয়ম, আমাদেরও তো নিয়ম অনুযায়ী আমাদের চাদের ১০ম দিনেই হওয়ার কথা – এটা করা হয় না করে ৯ তারিখে কেন? তাই আমি উপরে জিজ্ঞেস করেছিলাম?
আর চাঁদ এবং টাইমিং নিয়ে আপনার যে প্রশ্ন, আশা করি হামজা ভাইয়ের এ বিষয়ের সকল পোষ্ট পড়লে পুরোপুরি ক্লীয়ার হয়ে যাবে।
আমি যে প্রশ্ন করেছি সেটা চাদের হিসাব বা টাইমিং এর জন্য না, আমি জানতে চেয়েছি – হামজা ভাই যে হাদীসগুলো দিয়ে এ বিষয়টা প্রমাণ করেছে এবং ইবনে আব্বাস(রা) এর যে হাদীসের ভিত্তিতে আমরা এখানে সৌদীর একদিন পর ঈদ করি – তার যে জবাব দিয়েছে, সেটা কি ভুল করেছে? আর হামজা ভাই কি রোযা, ঈদ এর বিষয়ে কোন হাদীস গোপন করেছে?
এটার জবাব আপনি দিতে চাইলে উপরে আমার মন্তব্যের নীচে কইরেন, প্রতিমন্তব্যের কোন নোটিফিকেশন এখানে আসে না, তাই জানতে পারবো না কিছু বলেছেন কি-না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন