তথ্য অধিকারবিষয়ক আমার অভিনীত প্রথম নাটিকা ”তথ্য পেলেন কাশেম চাচা”

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ০১:১৪:৩০ দুপুর



তথ্য অধিকার আইন জারী হয় বা কার্যকর করা হয় ২০০৯ সালের পয়লা জুলাই। এমনকি একই দিনে গঠন করা হয় তিনসদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশন। একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং সচিব মর্যাদার দু’জন তথ্য কমিশনার এর মধ্যে একজন নারী কমিশনার নিয়ে মূলতঃ তথ্য কমিশন।

এই আইনে বলা আছে, প্রতি স্বতন্ত্র অফিস এই আইন জারীর ৬০ দিনের মধ্যেই তাদের অফিসের একজন অফিসারকে তথ্য প্রদানকারী হিসেবে ”দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” নামে নিয়োগ দেবে। নতুন সৃষ্ট অফিসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম! তারা আবেদনকারীকে প্রার্থিত তথ্য ২০/৩০ কার্যদিবসে বা ক্ষেত্রমতে মৃত্যু বা কারাগারে আটকসংক্রান্ত বিষয় হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই লিখিতভাবে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন।”দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” তথ্য দিতে আইনত বাধ্য না থাকলে ১০ দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে প্রার্থীকে জানাতেও বাধ্য বা অহেতুক তথ্য না দিলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা অফিস প্রধানের কাছে আপীল করতে পারবেন সেই প্রার্থী। আপীল কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে হয় তথ্য দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন বা আপীল খারীজ করতে পারবেন।

এতে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী তাদের বিরুদ্ধে তথ্য না দেয়ার অভিযোগে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করতে পারবেন এবং কমিশন তা আমলে নিলে উভয়পক্ষকে সমন দেবেন নির্দিষ্ট দিনে তথ্য কমিশন আদালতে হাজির হতে।এরপর শুনানীশেষে তথ্য কমিশন প্রার্থীকে তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন বা আইনতঃ তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য পাবার অধিকারী না হলে তার অভিযোগ খারীজ করে দেবেন। আর তথ্য দিতে গড়িমসি বা ইচ্ছেকৃত অবহেলা থাকলে অপরাধীকে তথ্য দিতে বিলম্বের দরুণ প্রতিদিনের জন্য ৫০টাকা হারে সরবোচ্চ ৫০০০/=টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন। প্রয়োজনে বিভাগীয় মামলা চালুর জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারবেন। তিরস্কারও করতে পারে তথ্য কমিশন। একজন সরকারি চাকরিজীবীর জন্য এধরণের শাস্তি কতোটা ক্ষতিকর, তা সহজেই অনুমেয়!

এখানে বলাবাহুল্য যে, তথ্য দেয়া বা না দেয়ার জন্য সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই প্রধানতঃ দায়ী এবং শাস্তি হলে সাধারনতঃ তারই হয়ে থাকে। অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভাবেন– তথ্য কেউ চাইলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চাইব এবং তিনি না দিলে বা দিতে বারণ করলে প্রার্থীকে তথ্য দেবোনা। এতে আমার কী দায়দায়িত্ব? এটা মারাত্মক ভুলধারণা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তথ্য গচ্ছিত থাকলে তা অবশ্যই লিখিতভাবে বা ফাইলের মাধ্যমেই তা চাইতে হবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সে তথ্য সরবরাহ না করলে বা তা না পেলেই শুধু তিনি শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবেন, অন্যথায় নয়। কারণ তথ্য দিতে তিনিই মূলতঃ বাধ্য, সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়।

যদিও তথ্যপ্রার্থীকে তথ্যবঞ্চিত কিংবা হয়রানীকরণের ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আপীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নিতেই পারে; ক্ষেত্রবিশেষে আইনের ধারা ২৪(৪) অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনুরূপ শাস্তি আরোপ করতে পারবেন।

আবার আইনে ”তৃতীয়পক্ষ” বলে একটা বিষয় আছে, তথ্যপ্রার্থীর প্রার্থিত তথ্যযোগাড়ের ক্ষেত্রে; মানে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আপীল কর্মকর্তার অফিসে কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য অফিসে সেই তথ্য থাকলে সেখানে লিখিতভাবে তা চাইতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই এবং তথ্যপ্রার্থী কর্তৃক অনুরোধপ্রাপ্তির ৫ কার্যদিবসের মধ্যেই লিখিত বা মৌখিক নোটিশের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে তা জানাতে হবে। এক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষ তথ্যসরবরাহ বা মতামত প্রদান না করলে দায়িত্বনির্ধারণের ক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য হবেন এবং তিনিও সমান দায়ী হবেন। ফলে মুল দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রমাণসাপেক্ষে শাস্তি থেকে তথ্য কমিশনের আদালতে হাজির হয়ে তবেই বাঁচতে পারবেন মাত্র।

এ হলো সংক্ষেপ কথা–তবে যারা এখনো আইনানুযায়ী ৬০দিনের মধ্যে তাদের অফিসে ডিও বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেননি, তারা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেই বসে আছেন! কমিশন যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে করার কিছু থাকবেনা।

উল্লেখ্য যে, এই আইনে আরো বলা হয়েছে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ কার্যত ১৯২৩ সালের ''সরকারি গোপনীয় আইন'' বা সেক্রেসী আইনের ওপরে প্রাধান্য পাবে। তাই যারা তথ্য দিতে চান না তারা কতবড় বিপদে আছেন–ভাবুন তো?

ইতোমধ্যে দু’জন সরকারী অফিসারের যথাক্রমে ১০০০/= ও ৫০০/= টাকা জরিমানা হয়েছে তথ্য না দেয়ার অপরাধে। এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার একজন ডাক্তারের রীট করেও লাভ হয়নি। রীটের রায় কমিশনের অনুকুলে যাওয়ায় তিনি হেরে গিয়েছেন। আর এটা কতবড় অপমান এবং সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কী ঝুঁকিপূর্ণ তাকি ভেবে দেখেছেন? এমনকি আইনে এও আছে যে, তথ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে রীট ছাড়া কোনো আদালতে মামলা, আপীল বা রিভিউ পর্যন্ত করা যাবেনা। তথ্য কমিশনের রায়ই সংশ্লিষ্ট সবার জন্য চূড়ান্ত।

সেই ঘটনার ভিত্তিতে শিশুসাহিত্যিক শাহ আলম বাদশা রচিত ও অভিনীত তথ্য কমিশনের তথ্য অধিকারবিষয়ক প্রথম নাটিকা ”তথ্য পেলেন কাশেম চাচা” সম্প্রতি নির্মিত এবং তথ্য কমিশনের অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে।

সরকারের জারিকৃত তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ওপর ভিত্তি করে রচিত নাটিকাটির ভিডিও লিঙ্কটি ইউটিউব থেকে আপনাদের জন্য এখানে দেয়া হলো;

দেখুন তাহলে–তথ্য পেলেন কাশেম চাচা

উল্লেখ্য যে, আগামী ২৬ ও ২৭ আগস্ট যথাক্রমে ৮ ও ৭টি করে মোট ১৫ মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হবে তথ্য মিশন ট্রাইব্যুনালে। আপনারা আমন্ত্রিত।

বিষয়: বিবিধ

৮৪৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

251901
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:০৪
196082
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : কমিশনে দুষ্টুমীর আমন্ত্রণ
251916
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২১
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৪০
196090
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
252053
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:১৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : মাবরুক! বাদশা ভাই অভিনেতাও হলেন। এগিয়ে যান।
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৯
196211
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : এর আগেও মল্লিক আর মিঠুন ভাইর টেলিফিল্মেও অভিনয় করেছি ভাই--
252204
০৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
মাহমুদ নাইস লিখেছেন : শাহ আলম বাদশা ভাই, আসসালামু আলাইকুম। জানি আপনি আমার উপর মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। আমি দুঃখিত। কিন্তু আমি তখন মোবাইলে ছিলাম। আমি ক্লিক করেছি প্রিয়তে রাখতে। কিন্তু ব্লগ হয়ে গেছেন। আমি আর আনব্লক করতে পারি নি। পদ্ধতি জানি না। চেষ্টা করছি। আপনাকে আমি ব্লক করতে যাব কেন? সেই এসবি ব্লগ থেকেই তো আমরা বন্ধু! প্লীজ মাইন্ড করবেন না। আমি এই ব্যাপারে একটা পোস্টও দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাকে তার সমাধান দিল না। দূঃখ পেয়ে দুই দিন পর সেই পোস্টটা ডিলিট দিয়ে দিলাম। আমাকে যদি আনব্লক করার নিয়মটা বলে দিতেন। শুভ কামনা রইল।
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:১১
196371
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমরা যা ধারণা করেছিলাম তাই হয়েছে।
০৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২০
196375
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আনব্লগ করার নিয়মতো ২বার দিয়েছি এসংক্রান্ত আপনার ২টি মন্তব্যে ভাই; খুজে দেখেন।

তবু আবার বলি--আপনার পাতায় গেলে দেখবেন এমন--''ব্লককৃত ব্লগার'' অপশন এর নিচে বা শেষে লেখা আছে ''পরিবর্তন করুন;
গ্রামের পথে পথে
সমালোচক
অপ্রিয় সত্য কথা
চুতিয়া খেলাঘর বাধঁতে এসেছি

পরিবর্তন করুন করুন বাটনে ক্লিক করলেই যাকে খুশি ডিলিত করতে পারবেন ব্লক থেকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File