প্রসঙ্গ জালহাদীসঃ ইসলাম বিবেকের বিরুদ্ধে যেতেই পারেনা!!

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ২১ জুন, ২০১৪, ০৯:৫৬:০০ সকাল

ভণ্ড নবী ও জালহাদীস

পৃথিবীতে বহুলপ্রচারিত এবং জনপ্রিয় জিনিসের নকল বের হয়েই থাকে। ইসলামের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নকল নবীদাবীর ঘটনা নবীর সাঃ যুগেই শুরু হয়। নবুয়তের জনপ্রিয়তায় উদ্দীপ্ত হয়ে তার জীবিত অবস্থাতেই কাফের এবং মুনাফিকদের অনেকেই নবী হবার দাবী করে বসতে থাকে আর নবীও সাঃ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ভণ্ডামী খতম করে দেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ভণ্ড নবী দেখা গেছে। সর্বশেষে দেখা গেছে পাকিস্তানের কাদিয়ান শহরের মির্জা গোলাম আহাম্মদকে।

তবে নবীর নামে জালহাদীস প্রচারের বিষয়টা কিন্তু নবীর আমলে তৈরি হয়নি। এটা শুরু হয় নবী এবং সাহাবারা বিগত হবার পরই। আমি সে ইতিহাসে যাবোনা।

আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, ইসলাম হচ্ছে মানবতা এবং বিবেকের দীন, যা কখনোই প্রকৃতিবিরোধী হতেই পারেনা। পবিত্র কুরআর-হাদীসেও আল্লাহ-রাসুল এমন কোনো কথা বলেননি বা করতে বলেননি যা মানবতাবিরোধী ও বিবেকবিরোধী হতে পারে। এমনকি নবীর সাহাবারাও ছিলেন বিশ্বস্ত, যারা এ নীতির অনুসারী হিসেবে কখনোই কুরআন-হাদীসবিরোধী কোনো কথা প্রচার করেননি বা এমন ফালতু কাজ করেননি।

ইতিহাসে দেখা যায়, হজরত আয়েশাসহ রাঃ নামী-দামী অনেক সাহাবাও নবীর যুগে হাদীসপ্রচারের বিরোধী ছিলেন, নবীর নামে ভুল বা ভূয়াকথা প্রচারের ফলে যদি তারা পাপ করে ফেলেন-সেই ভয়ে। কারণ নবী বলেছেন- যারা তার নামে জালহাদীস বা মিথ্যেকথা বলবে, তারা জাহান্নামী হবেন। সুতরাং এ থেকেই এটা প্রমাণিত হয় যে, কোনো আল্লাহভীরু মুসলিম জালহাদীসের প্রবক্তা হতেই পারেন না।

[b]জালহাদীস চেনা ও বোঝার সহজ উপায়


আমি একটা জালহাদীস বলেই আসল কথা শুরু করছি। সুনান আবু দাউদ, বই ১১, হাদিস নং-২১৪২ এ বর্ণিত আছে- ''ওমর বিন খাত্তাব বলেছেন: নবী (দঃ) বলেছেন, “কোন স্বামীকে (পরকালে) প্রশ্ন করা হবেনা কেন সে তার বৌকে পিটিয়েছিল”।

ইংরেজিতে দেখুন- Book 11, Number 2142:

Narrated Umar ibn al-Khattab: ''The Prophet (peace_be_upon_him) said: A man will not be asked as to why he beat his wife.''

মূল হাদীসের বইটি পড়ার সুযোগ হয়নি তবে একটা সাইটে পেয়েছি এ জালহাদীস,দেখুন এখানে

এখন কথা হচ্ছে--ইসলাম অর্থাৎ কুরআন-হাদীস এবং সাহাবাদের ঈমান, চিন্তা-চেতনা, কাজ-আমল এবং আচরণের সাথে কি এমন বাজে ও জঘন্য কথা ও কাজের কোনো সমর্থন পাওয়া যায়? বউ পেটালে আল্লাহ যদি পাপই ধরবেন না এবং পরকালে তার কাছে কোনো জবাবদিহিতাই থাকবেনা, তবেতো ওমরের রাঃ মতো রাগী সাহাবীরাই বেশি করে বউ পেটাতেন, যা আমরা ইতিহাস থেকেও জানতে পারতাম। কই তেমন ইতিহাসতো কেউ জানেনা? আর আল্লাহ-রসুল এমন জালিম (নাউজুবিল্লাহ) হলে তো দুনিয়ায় মুসলিমদের দ্বারাই কথায় কথায় বঊপেটানোর হিড়িক পড়ে যেতো?

তাহলে ''মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত'' কিংবা ''সতী-সাধ্বী স্ত্রী পৃথিবীর উত্তম সম্পদ'' এসব হাদীসের কথা কি পরস্পরবিরোধী হচ্ছেনা? আর নারীদের সম্পর্কে এমন নোংরা ধারণাপোষণ করলে বিদায় হজ্জে নবী সাঃ নারীদের সম্মান ও অধিকারের পক্ষে স্পেশাল ভাষণ দিয়ে সাহাবীসহ বিশ্বমুসলিমকে সতর্ক করতেন কি?

আবার ওমর রাঃ যিনি খলিফা হবার পর জবাবদিহিতার ভয়েই কেঁদে হয়রান; যিনি ''ফোরাত নদীর তীরে একটা কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে তাহলে কী জবাব দেবেন আল্লাহর কাছে'' এমন চিন্তায় পেরেশান--তিনি কি এমন জঘন্য হাদীস বলতে পারেন কিংবা নবী সাঃ বললেও তা মেনে নিতেন!!


আমার খুব দুঃখ হয়, যখন দেখি মুসলিম হয়েও কেউ কেউ হাদীসের নাম শুনলেই, তা বিবেকসম্মত নাকি মানবতাবিরোধী-তা যাচাইর চিন্তাও করেন না। ফলে এমন ধরণের জাল ও ভূয়া হাদীসের প্রচার চালিয়ে ইসলামের গায়ে নিজেদের অজান্তেই তারা কলঙ্কলেপন করে যাচ্ছেন। আর কিছু ইসলামবিরোধী লোক একেই হাতিয়ার বানিয়ে আল্লাহ-নবী এবং সাহাবাদের দুর্নাম রটনার সুযোগ পাচ্ছে।

তাই আমার অনুরোধ, ঈমানের শর্তের সাথে নবীর হাদীসমানার নামে জালহাদীস অনুসরণের কোনো শর্তই যেহেতু নেই, এমনকি জালহাদীস প্রচারের শাস্তির কথাও যখন হাদীসে আছে সেহেতু চোখবুঝেই সব হাদীসমানার দরকার নেই' বিশেষত যেসব হাদীস সন্দেহজনক, তা যাচাই-বাছাই করে মানাই উত্তম এবং ইসলামসম্মত।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237084
২১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:১৩
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে জাল হাদীসের খপ্পর থেকে রক্ষা করুন।

াঅ.ট. জ এর সাথে ‘ব’ যোগ করাতে বিভ্রান্ত হলাম, যেহেতু আপনি লিখেছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কি?
্িাআমার জানা মতে ‘জাল’নকল বা জালিয়াতি,মাছ ‍ধরার যন্ত্র বিশেষ এবং দেবর বা ভাসুরের বউ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। আর ‘জ্বাল’ জ্বালানি অর্থে। ধন্যবাদ।
২১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:২৩
183655
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভাই, এটা বানানগত ভুল হয়েছে-ঠিক করে নিয়েছি অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
২১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৩০
183656
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আশ্বস্ত হলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নিচের কমেন্টটি মুছে দেয়ার অনুরোধ রইল।
২১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
183659
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভাই-আপনার সেই বহুবছর আগের প্রিয় কবিতাটা আবার মডিফাইড করে এ ব্লগেই ফিয়েছি। দেখেননি কি? লিঙ্ক-http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/8603/shahalambadsha/47720 এবং প্রথম আলো লিঙ্ক--http://prothom-aloblog.com/posts/18/205188
237166
২১ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৩৭
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে জাল হাদিসের খপ্পর থেকে রক্ষা করুন।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:২৭
183775
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আমিন--খুবই কঠিন এ যুগ
237199
২১ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মাঝে মাঝে কিছু পুরান পির বা বুজুর্গ এর সম্পর্কে শুনি তারা একেকজন নাকি ১ লক্ষ!! থেকে ১০ লক্ষ!! হাদিস মুখস্ত রাখতেন। অথচ প্রধান দুইটি হাদিস গ্রন্থ সহ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থগুলি একত্র করলেও ৩০০০০ এর বেশি হাদিস হয়না। তাহলে এত হাদিস সেই বুজর্গ রা কোথায় পেতেন।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:২৮
183776
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত Good Luck Good Luck Good Luck
237276
২১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : জাল হাদিসের মাধ্যমে আমাদের মগজ যেন দুলাই না হয় সেই দোয়া আল্লাহর দরবারে করি
২১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
183800
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আসলেই, দেখেন আবু দাউদ সাহেব-যাচাই না করে কতবড় ইসলামবিরোধী একটা থিম ঢুকিয়ে দিয়েছেন হাদীসের নামে??
237450
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : হাদীসের নামে জালিয়াতি হয়েছে/হচ্ছে বিভিন্নভাবে।
সংসারত্যাগী বুযুর্গ, স্বঘোষিত তথাকথিত পীর/ফকিররা ও আর্থিক স্বার্থে অল্পশিক্ষিত আলেমরা এবং ইহুদীদের এজেন্ট উচ্চশিক্ষিত আলেমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কায়দায় হাদীস জাল করেছে।

মুহাদ্দিসগণ জাল হাদীস চিহ্নিতকরণের বিভিন্ন উপায়/মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ
১। কুরআন ও সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী হাদীস পাওয়া গেলে সরাসরি বাতিল।
২। হাদীস এর বক্তব্য ইনসাফ বা ন্যায়বিচার পরিপন্থী হবে না।
৩। সামান্য নেক বা মন্দ আমলের জন্য আজগুবি সংখ্যায়/পরিসংখ্যানে সওয়াব বা পাপের শাস্তি বর্ণিত হবে না।
৪। হাদীসের বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব জাতীয় হবে না ।
ইত্যাদি........।


জালিয়াতরা তাদের জাল ও মনগড়া কথাবার্তা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য রেফারেন্স হিসেবে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এর নামও উল্লেখ করছে। খুব উদ্বেগের বিষয়। সকল মুসলমানদের সচেতন হতে হবে।

২২ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:০৩
184061
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
184109
সাদাচোখে লিখেছেন : এ বিষয়ে আরো লিখালিখি হলে আমার মত সাধারন মুসলিমদের উপকার হবে - যারা অন্য ফিল্ড হতে এসে জানার ও বোঝার চেষ্টা করছি।

আমি লিখক ভাই শাহ আলম বাদশা'র লিখার মেইন থিম এর সাথে পুরোপুরি একমত পোষন করছি - এবং এ বিষয়ে নিশ্চিত আমাদের আরো সচেতনতা বাড়ানো। কিন্তু উল্লেখিত হাদীসটিকে যে সব যুক্তিতে - উনি জাল বলছেন - সেটা আমার কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে কনভিন্সিং মনে হয়নি। বরং আমি যখন লিখকের দেওয়া লিংকের সূত্রে ঐ হাদীসের ফ্যাক্টস সহ বিচার বিশ্লেষন পড়লাম - আমার কাছে তা যৌক্তিক মনে হয়েছে।

যাই হোক ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে - লিটমাস টেস্ট এর ন্যায় ভাই প্রেসিডেন্ট এর উদ্বৃত্ব ৪টি পয়েন্ট - কে বেশ যুৎসই এবং সহজ মনে হয়েছে - হাদীস আমলে নিওয়া এবং না নেওয়া সংক্রান্ত।

সবশেষে লিখককে ধন্যবাদ এ বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য। জাজাক আল্লাহ খায়ের।
২২ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
184121
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভাই--যতোই ব্যাখ্যা পরেন আর কনভিন্স হোও, তাতে কিন্তু হাদীসের নামে এখানে কী বলা হয়েছে-তা কেউ মানবেনা অন্ধবিশ্বাসী ছাড়া।

বউপেটানোর পক্ষে যুক্তিভিত্তিক আরো যেসব হাদীস আছে-সেখানে মুখ-ফেসে মারা নিষেধ বলা হলেও সেখানেও কি নবী বলতে পারতেন যা যে, যোউক্তিক কারণে বউপেটালে পরকালে শাস্তি হবেনা?

এমন কথা না থাকায় বোঝা সহজ যে, এটা পুরো জালহাদীস।

হাদীস মানেই কুরআনের ব্যাখ্যা হলে--হাদীসের এমন ব্যাখ্যাও যদি সবাইকে পরতে হয়--তবে ইসলাম মানা খুব কঠিনই হবে বৈকি।

নবী এভাবে ব্যাখ্যাছাড়া বউপেটালে শাস্তি হবেনে---বলতেই পারেন না।
237557
২২ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : রাসুল (সাঃ)এর সুন্নাহ তথা হাদিস, প্রাচীন আরবী প্রবাদ এবং আরবীতে বিভিন্ন মনিষীদের বিখ্যাত জনপ্রিয় উক্তি বা বাণীগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বুঝার চেষ্টা না করে ওয়াজ নসীহত ও বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিল গুলোতে দেদারসে চর্চা হয়ে আসার কারণে কালক্রমে অনেক জাল হাদিসের উদ্ভব ঘটেছে। বর্তমানে আমাদের দেশের মিলাদুন্নবী, ওয়াজ মাহফিল, জিকির মাহফিলের নামে যেসব দ্বীনি আলোচনা হয়ে থাকে সেখানে কোরআন হাদিসের ইলমী বয়ানের পাশপাশি বিভিন্ন মনীষীদের ইবরত হাসিলকারী কিচ্ছা কাহানীগুলো এমন উদ্ভটভাবে বর্ণনা করে যা একজন সচেতন শিক্ষিত মানুষকে আকৃষ্ট করার পরিবর্তে তার অন্তরে ধর্মীয় বিষয়ে নানান ধরনের সন্দেহজনক মৌলিক প্রশ্ন সৃষ্টিতে অবদান রাখছে।
আজ সকালে একটি যাত্রাবাহী চলন্ত বাসে এক হুজুর কর্তৃক রমজানের ফজিলত বর্ণনার কেসেট শুনতেছিলাম। দশ মিনিটের যাত্রার সময়টা আমি যে অংশটা শুনলাম তাতে মনে হলো যদি বাসের কোন অমুসলিম যাত্রী মনেযোগ সহকারে শুনে তবে সেও চিন্তা করবে আসলে ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের মধ্যে হয়তো তেমন কুনো পার্থক্য নেই!!
২২ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩০
184122
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত ভাই-ইসলামের নামে প্রমাণহীন এসব জঞ্জাল আমাদের সরাতেই এগিয়ে আসতে হবে।
238769
২৫ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৭
আহমদ মুসা লিখেছেন : আপনার লেখাটি যুক্তি সংগত। আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করছি।
২৫ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
185326
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File