আমাদের মুসলমানিত্ব এবং কামড়াকামড়ির রকমফের-৪

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ২২ মে, ২০১৪, ১১:২১:৩৫ সকাল



ইসলাম, মুসলিম এবং ঈমান কী

ইহা অতিশয় সহজ একটা প্রশ্ন এবং ইহার জবাবও হইবে পানির মতোন মানে জলবৎতরলং, তাই নহে কি? যাহারা নিজেকে আলেম-আল্লামা, মাদ্রাসড়ুয়া ইত্যাদি বলিয়া দাবী করেন, তাহাদের কেহ হয়তো আমার শিক্ষার দৌড় লইয়াও ভাবিতে শুরু করিয়াছেন? কারণ আমি শিশুসুলভ প্রশ্নই করিয়া বসিয়াছি কিনা!

ইসলাম একটি ধারাবাহিক কোর্সের নাম

ইসলাম কী তাহা সহজে বলিতে গেলে বলিতে হয়-ইসলাম হইলো আল্লাহ-রসুলের বিধিবিধানের সমষ্টি অর্থাৎ পবিত্র কুরআন-হাদীসের সমন্বয়ই হইতেছে ইসলাম। আরো পরিস্কার করিলে-শরিয়তে আল্লাহ-রসুল নির্দেশিত ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত-নফল-মুস্তাহাব, হারাম-হালাল, মাকরুহ-মুবাহ ইত্যাদির সমন্বয়ই ইসলাম। আরেকটু বলিলে-- কুরআন-হাদীসের বাণী ব্যতীত নবী সাঃ ও সাহাবীদের দেখানো উদাহরণ এবং পথনির্দেশও ইসলামের অংশ।

অনেকে আবার হাস্যকরভাবে বলেন--আলী রাঃ এবং আয়েশা রাঃ এর মধ্যকার যুদ্ধও নাকি ইসলামসম্মত এবং সমালোচনার অযোগ্য। এমনকি মুয়াবিয়া এবং আলী রাঃ এর বিরোধও নাকি ইসলামসম্মত এবং পালনীয় যাহার সমালোচনা করা যাইবেনা!! সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলিতে ইসলাম কোথায় নিশেধ করিয়াছেন, তাহা কি তাহারা দেখাইতে পারিবেন নাকি বিধর্মীদের স্ববিরোধী কথা বলিয়া হাসাইবেন মাত্র? এমনকি সাহাবীদের মধ্যে সংঘটিত রক্তক্ষয়ও নাকি ইসলামসম্মত?? তাহলে আবুবকরের রাঃ ছেলে যে ওসমানকে রাঃ দাঁড়ি ধরিয়া আঘাত করিলেন--এটাও কি অনুসরণীয়/ইসলামসম্মত, যা আমরাও মুরুব্বীদের সাথে ইসলামের নামে করিতেই পারি, কী বলেন?? দুর্ভাগ্যক্রমে সংঘটিত এমন কুরআন-সুন্নাহবিরোধী অন্যায় কাজও নাকি মানিতা লইতে হইবে তাহা হইতে কোনো শিক্ষা না লইয়া! আবার তাহাদের ভালো ভালো কাজগুলিও একইভাবে অনুসরণীয় বলিয়া পালন করিতে হইবে? তাহা হইলে ভালো-মন্দের ফারাক কোথায় রহিলো? ইসলামতো এমন শিক্ষা দিতেই পারেনা।

কিন্তু একটা কথা ভুলিলে চলিবে না যে, ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন মানে ইহা নহে যে, মানুষের চলিবার প্রয়োজনে পবিত্র কুরআনে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সকল বিধানই বিস্তারিতভাবে আল্লাহ লিখিয়া দিয়াছেন। বরং আল্লাহ-রসুল এমন সব সূত্র বর্ণনা করিয়াছেন যাহাতে মানুষ প্রয়োজনে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশিত রাস্তায় সহজেই চলিতে পারে এবং অন্য কোনো ধর্ম বা বিধানের দ্বারস্থ হইতে না হয় মুসলিমদের। এইজন্যই ইসলামকে বলা হইয়াছে--নৈতিকতার বিধান।

বিদায়াত?

ইসলামী শরিয়তে নব আবিষ্কার, নতুন সংযোজন বা নতুন সৃষ্টি, অর্থাৎ নতুনত্ব, অভিনবত্ব বা নজিরবিহীন তথা নতুন কোনো প্রথাপ্রবর্তন করা বা চর্চা করা, যাহার আগের কোনো দৃষ্টান্ত নাই বা ছিলো না, তাহাকে বিদায়াত বলে। বিদায়াত মানে ইসলামের নামে চালুকৃত বা উদ্ভাবিত নতুন কিছু যাহা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী।

ইহার অর্থ হইলো--সওয়াবের আশায় মাগরিবের তিন রাকায়াত ফরজ নামাজের স্থলে চার রাকায়াত ফরজপড়াও হইবে মূলতঃ বিদায়াত এবং মহাপাপ। বিদায়াতের বাকী রূপ কী কী হইতে পারে তাহা এখন আপনারাই খুঁজিয়া বাহির করুন।

প্রসঙ্গত ইহাও না বলিলে নহে যে, কুরআন-হাদীসের বাহিরে এবং সাহাবীদের ইসলামপালন বা শরিয়তচর্চার বাহিরে ইসলামের নামে যাহা কিছু প্রচলিত আছে তাহা ইসলামের মতোন মনে হইলেও ইসলাম নহে বরং বিদায়াত যাহা হারাম ও বর্জনীয়। কেননা ইসলাম বা দীন অন্যান্য ধর্ম বা বিধানের মতোন অপূর্ণাঙ্গ নহে এবং ১০০% পরিপূর্ণ

ইসলামী শরিয়তে রাসূল সা:-এর রাখিয়া যাওয়া দ্বীন ইসলামের সাথে খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করিবার এখতিয়ার বা অধিকার আল্লাহতায়ালা ও তাঁহার রাসূল সা: কাউকে দেন নাই। কারণ আল্লাহতায়ালা তাঁহার রাসূল সা:-কে স্বীয় কর্মকাণ্ডের সার্টিফিকেট প্রদান করিয়া নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের পথ বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করিয়াছেন, আজিকার দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করিয়া দিলাম, আর তোমাদের উপর আমার প্রতিশ্রুত নেয়ামতও পূর্ণ করিয়া দিলাম, তোমাদের জন্য জীবনবিধান হিসাবে আমি ইসলামকে মনোনীত করিলাম (সূরা মায়েদা-৫/৩)।

বিদায়াত সম্পর্কে রাসূল সা: সতর্ক করিয়া বলিয়াছেন, তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ গ্রহণ করো এবং খুব মজবুতভাবে তাহা ধারণ করো। আর সাবধান! নতুন উদ্ভাবিত সব বিষয়ে সতর্ক থাকিও। কেননা নতুন উদ্ভাবিত সব বিষয়ই বিদায়াত, আর সব বিদায়াতই গোমরাহি ও ভ্রষ্টতা (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

তিনি আরো বলিয়াছেন, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হইলো, আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম হিদায়াত হইলো মুহাম্মদ সা:-এর হিদায়াত। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নবপ্রবর্তিত বিষয়, আর প্রত্যেক নবপ্রবর্তিত বিষয়ই বিদাত এবং প্রত্যেক বিদাতই গোমরাহি বা ভ্রষ্টতা’ (সহি মুসলিম)।

তিনি বলিয়াছেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে নতুন সৃষ্ট যেকোনো প্রথাই বিদায়াত, আর সব বিদায়াতই গোমরাহি (আবু দাউদ)।

বিদায়াত শিরক ও কুফরের সাথে সম্পৃক্ত। বিদায়াতে লিপ্ত হইবার অর্থ হইতেছে, আল্লাহতায়ালার উপর অপবাদ বা তোহমত আরোপ করা। আল্লাহ তাঁহার দ্বীনের পরিপূর্ণতা দান করেন নাই বিধায় নতুন কিছু সংযোজন করিয়া বা আইন তৈয়ার করিয়া সমাজ বা রাষ্ট্র চালাইতে হইতেছে (নাউজুবিল্লাহ)।

অথচ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে দ্বীনের পরিপূর্ণতা দান করিবার সার্টিফিকেট দিয়াছেন যাহা সূরা আল মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করিয়াছেন, ‘নিশ্চয়ই (তোমাদের জন্য) আমার মনোনীত দ্বীন বা একমাত্র জীবনব্যবস্থা হইতেছে ইসলাম (সূরা ইমরান-৩/১৯)।/b]

[b]মুসলিম একটি ডিগ্রীর নাম


মুসলিম অর্থ হইলো ইসলামের প্রতি অনুগত বা নিঃশর্ত আনুগত্যকারী ব্যক্তি। তাহাকে আল্লাহ, ফিরিস্তাগণ, নবী-রসুলগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, কিয়ামাত-আখিরাত, ভাগ্যের ভালো-মন্দের ওপর আস্থা রাখার পাশাপাশি তদানুযায়ী দুনিয়াতে আমল বা কর্ম করিতে হইবে। তাই ডাক্তারের পুত্র যেমন জন্মসূত্রে ডাক্তার হইতে পারেনা, তেমনই মুসলিমের ঘরে জন্মিলেই অটোমেটিক মুসলিম হইবার সূত্র অন্ততঃ আমি ইসলামের কোথাও খুঁজিয়া পাই নাই।

তবে ইসলাম যে, দুনিয়ার লোভনীয় ডক্টরেট বা অনুরূপ মহামূল্যবান ডিগ্রী অর্জনের ন্যায় জন্ম হইতে মৃত্যু অবধি একটি মুসলিম ডিগ্রী অর্জনের পূর্ণাঙ্গ আন্দোলন ও কোর্স, তাহা আমি নির্দ্বিধায় বলিতে পারি। সেইজন্যইতো ঈমানের ডিগ্রীর ওঠানামার ওপরই মুসলিমত্বের মূল্যমানের হেরফের হইয়া থাকে বলিয়া আল্লাহও মুসলিমের মানানুযায়ী পুরস্কারস্বরূপ পরকালে ৮ প্রকার জান্নাত প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন।

মুসলিমত্ব অর্জন এবং আলেম হইতে হইলে কি মাদ্রাসায় পড়া জরুরি?

আমি মাদ্রাসার বিরোধী নহি বরং সমর্থক। কিন্তু কিছু মাদ্রাসাপন্থী আলেমের অজ্ঞতা এবং অযোগ্যতার জবাব দিতেই আমাকে এই প্রসংগ তুলিতে হইতেছে এবং তাহাদের বালুর ঘর ভাঙ্গিয়া দিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি মাত্র। আমার মতোন স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিপড়ুয়ারাও যে, কুরআন-হাদীস অনুযায়ী খাঁটি মুসলিম বা ইবাদতগুজার হইতে পারেন এবং আলেম হইতে পারেন, তাহা তাহারা আদৌ মানিতে চাহেন না যদিও তাহাদের দাবীর সমর্থনে আল্লাহ-রসুল এইরূপ হাস্যকর ও বৈষম্যমূলক কোনো বিধান দেন নাই। বরং নিজেদের জ্ঞানের দৈন্যতা ঢাকিতেই তাহারা শেষঅস্ত্র ছুঁড়িয়া মারেন যে, আপনার কি মাদ্রাসার সনদ আছে, আপনি তো আলেম নহেন, ইসলামসম্পর্কে কথা বলিতে হইলে আলেম হইতে হইবে ইত্যাদি। এমনকি এই অজ্ঞরা বিশ্ববিখ্যাত আলেম সাঈদী এবং মওদু্দীরও মাদ্রাসার সনদ খুঁজিয়া থাকেন? আমার কাছে যুক্তিতে হারিয়া বেকুব হইয়া আমাকেও একজন মাদ্রাসার তথকথিত আলেম নামধারী একই কায়দায় এইসব ফালতু প্রশ্ন ছুঁড়িয়া দিয়াছেন।

তাই তাহাদের ঔদ্ধত্যের জবাব দিবার পূর্বে আমিই আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখিতে চাহি যে, নবী সাঃ এবং তাহার সাহাবারা কি আদৌ কোনো মাদ্রাসা বা কলেজ বা ভার্সিটিতে পড়িয়াছেন? ইহার জবাব হইবে নাহ- তাহারা মাদ্রাসায় পড়েন নাই যেহেতু মাদ্রাসাই ছিলোনা? ইহার অর্থই হইলো ইসলাম শিখিবার, আলেম হইবার এবং মুসলিমত্ব অর্জনের জন্য মাদ্রাসা, কলেজ বা ভার্সিটিতে পড়া জরুরি নহে। তাই নবী সাঃ এবং আশারায়ে মুবাশ্বারা সাহাবীরা পর্যন্ত মসজিদস্থাপনের গরজ করিলেও এইরূপ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা মাদ্রাসা গড়িয়া তোলেন নাই; এমনকি তাহা গড়িবার জন্যও তাগিদ দেন নাই!

অন্য ধর্মের পুরোহিতদের হাতের মুঠোয় যেমন তাহাদের ধর্মগ্রন্থ এবং বিধিবিধান কুক্ষিগত থাকে যাহা সাধারণের নাগালের বাহিরে; ইসলাম কিন্তু তেমন কোনো আচারসর্বস্ব ধর্ম নহে। বরং ইসলামকে আল্লাহ-রসুল সকলের জন্য উন্মুক্ত করিয়া দিয়া বলিয়াছেন যে, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ। কিন্তু কিভাবে তাহা করিবে তাহা নির্দিষ্ট করিয়া দেন নাই যাহাতে ইসলাম বৈষম্যদোষ ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবদ্ধ হইয়া না যায়।

যদি মাদ্রাসা বা ভার্সিটিতে জ্ঞানার্জন করা ফরজ করিয়া দেওয়া হইতো তাহা হইলে দুনিয়াসৃষ্টির পর হইতে আজ অবধি কোটি কোটি মানুষ তাহা হইতে বঞ্চিত হইবার দায়ভার কে লইতো? আর এইরূপ ফরজ আদায় না করিতে পারার দরুণ এই মহাপাপের ভাগীই বা কে হইতো বলিতে পারেন?

মাদ্রাসায় না পড়িলে যদি আলেম-উলামা বা ভালো মুসলিম হওয়া না যায়, তাহা হইলে প্রিয়নবীসহ সাহাবীরা এবং মাদ্রাসাতৈয়ারির কোটি কোটি বছর আগের মুসলিমগণ বা আলেম-উলামাগণের কী হইবে? বিগত লাখ লাখ নবী-রাসুলের কী হইবে এবং তাহারা কি মাদ্রাসায় না পড়িয়া মহাপাপ করিয়াছেন!




মাদ্রাসা হচ্ছে খ্রিস্টানদের শিক্ষাপদ্ধতি

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ইসলামী ও মুসলিমশাসন ধ্বংসকারী ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দালাল খ্রিস্টান লর্ড ম্যাকলে ১৮৩৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে বক্তৃতা দিয়েছিলো তা লক্ষ্যণীয়।

“আমি ভারত উপমহাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থবরাবর একমাথা থেকে অপর মাথা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি এবং আমি সেখানে একটি চোর অথবা একটি ভিখারীও দেখিনি। কিযে সম্পদশালী সেই দেশ! সেখানকার মানুষ এত উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, কিযে তাদের ধীশক্তি! আমি মনে করি যে, এই সকল কারণে ঐ দেশ আমরা কোনদিনও জয় করতে পারব না। এটা সম্ভব হবে কেবল তখনই, যদি আমরা তাদের মেরুদন্ড ভেঙে দিতে পারি। তাদের মেরুদন্ড হলো তাদের সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এইজন্য আমি এই প্রস্তাব রাখছি যে, আমাদের করণীয় হবে, তাদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যময় শিক্ষাপদ্ধতি ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ফেলা। এটা এমনভাবে করতে হবে যেন ভারত উপমহাদেশবাসীরা মনে করে যে, যা কিছু পরদেশী ও ইংরেজী তা সবই ভালো এবং তাদের গুলোর চাইতে উন্নততর। এভাবে তারা তাদের আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলবে, আরও হারিয়ে ফেলবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। আর এভাবে তারা গড়ে উঠবে ঠিক তেমনটি করেই, যেমনটি আমরা চাই –একটি সত্যিকারের বশীভুত পরাধীন জাতি.”



(“I have traveled across the length and breadth of India and I have not seen one person who is a beggar, who is a thief. Such wealth I have seen in this country, such high moral values, people of such caliber, that I do not think we would ever conquer this country, unless we break the very backbone of this nation, which is her spiritual and cultural heritage, and, therefore, I propose that we replace her old and ancient education system, her culture, for if the Indians think that all that is foreign and English is good and greater than their own, they will lose their self-esteem, their native self-culture and they will become what we want them, a truly dominated nation.” – Lord Macaulay)





লর্ড ম্যাকলে ভারত উপমহাদেশের আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির ক্ষমতা শনাক্ত করিতে পারিয়াছিলো। বৃটিশ সরকার ম্যাকলের প্রস্তাবকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়াছিলো এবং সেই অনুসারে পলিসিও তৈরী করিয়াছিলএবং আলিয়া মাদ্রাসা এবং স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিপদ্ধতির দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা এইদেশে প্রবর্তন করিয়াছিল, যাহার কুফল আমরা এখনো ভুগিতেছি। ১৮৩৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ ১১২ বছর ছিলো মূলতঃ ঐ পলিসিরই বাস্তবায়নের যুগ। যাহার ফলে আমাদের উপর জোর করিয়া চাপাইয়া দেওয়া ইংরেজীভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে আমরা আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, আদর্শ-আধ্যাত্মিকতা, এককথায় স্বকীয়তা হারাইয়াছি। পাশাপাশি হারাইয়াছি নৈতিক মূল্যবোধ ও ধীশক্তি!

সেই সুযোগে চলিয়াছে আমাদের দেশে প্রচলিত ইংরেজদের চাপানো সেই পুরাতন শিক্ষাব্যবস্থা, জগাখিচুড়ীমার্কা আলেম তৈয়ারীর আলিয়া মাদ্রাসাপদ্ধতি এবং মিস্টার তৈয়ারীর সাধারণ শিক্ষাপদ্ধতি।

অথচ ইংরেজদের মানসিক ও শিক্ষাপদ্ধতির গোলাম হইয়া আমাদের তথাকথিত আলেমগণ কায়েমীস্বার্থবাদী সাজিয়া মাদ্রাসার এইচএসসি'র সমমানের আলেম সার্টিফিকেটকেই ধরিয়া লইয়াছেন ইসলামী পরিভাষার সেই ''আলেম' হইবার সনদ বলিয়াই। তাহারা কি কখনো ভাবিয়া দেখিয়াছেন যে, স্কুল-কলেজের ন্যায় যে মাদ্রাসার নকলের বন্যা বহিয়া চলে, কুরআন-হাদীসের পাতা ছিঁড়িয়া যাহারা পায়খানা-পেসাবখানায় ফেলিয়া লর্ড ম্যাকলের নির্দেশিত সনদের ধান্ধায় পাগল হইয়া যায়--তাহা কী করিয়া ইসলামীশিক্ষা হইতে পারে? আর ইংরেজরা কি আমাদের বন্ধু যে, তাহারা আমাদের এমনতরো সনদ অর্জনের শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম করিয়া দিয়া ইসলামের উপকার করিয়া গিয়াছেন? এমন জঘন্য পাপ ও নকলের তাণ্ডবে আলেম আর জালেমের ফারাক তখন কোথায় উড়িয়া যায়! তাহা হইলে তাহাদের এমন ভূয়া বড়াই করিবার কী আছে?

সুতরাং ইসলাম আর মাদ্রাসাকে একাকার করিয়া মাদ্রাসাশিক্ষার স্রষ্টা ইংরেজদের হাসাইবার পথ পরিহার করাই ভালো হইবে।

ঈমান কী?

পূর্বেই মুসলিমত্ব কী এই পর্যায়ে উল্লেখ করিয়াছি যে, আল্লাহ, ফিরিস্তাগণ, নবী-রসুলগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, কিয়ামাত-আখিরাত এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের ওপর আস্থা রাখার নামই হইলো ঈমান আর যাহারা ঈমানের পাশাপাশি তদানুযায়ী দুনিয়াতে আমল বা কর্ম করিবার ইসলামী সূত্র মানিয়া চলেন, তাহারাই মুসলিম বা ঈমানদার।

ইহার বাহিরে ঈমানের আর কোনো সংজ্ঞা থাকিতেই পারেনা ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী। কিন্তু বাংলাদেশী তথাকথিত ইসলামের ধারক-বাহকগণ অনেকেই তাহাদের ফেরকা, মাজহাব, পীরত্ব বা মতবাদের পক্ষে কাউকে কথা বলিতে না দেখিলে কিংবা বিপক্ষে কিছু বলিতে শুনিলেই তাহাদের ইসলাম ও ঈমানের খাতা হইতেই খারিজ করিয়া দিতে বিলম্ব করেন না। কথায় কথায় মুরতাদ বলিয়া ঘোষণা দিয়া থাকেন যেনো বাংলাদেশ ইসলামীরাষ্ট্রে পরিনত হইয়াছে ! ইহা দেখিয়া-শুনিয়া ইহাও মনে হইবে যেনো বাংলাদেশের ইসলাম নানা প্রকারে বিভক্ত এবং মুসলিমও অনেক প্রকার?

মুরতাদ কাহাকে বলে-তাহা না জানিয়াই তাহাদের কায়েমীস্বার্থে আঘাত লাগিলেই নিজস্বার্থে এতোবড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়া থাকেন; যদিও ঈমানের উল্লিখিত বিষয়ের বিরোধিতা করিলেই কেবল কোনো মুসলিম নামধারী ব্যক্তি মুরতাদ হইয়া যায়, যাহার শাস্তি হইলো মৃত্যুদণ্ডমাত্র। আর সেই মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব হইলো কেবলমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রেরই, কোনো আলেম বা মুসলিমের নহে।

তাহা হইলে ইসলামীরাষ্ট্র না থাকিলে কে মুরতাদ আর কে ঈমানদার তাহার বিচার কে করিবে এবং কাহার অপরাধের শাস্তি কেইবা দেবে, ভাবিয়া দেখিয়াছেন কি? ইসলামী বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কেনো আমরা ভুলিয়া যাই যে, ইসলাম কোনো তথাকথিত ধর্ম নহে বরং পরিপূর্ণ জীবনবিধান এবং ফরজ ও হালাল-হারাম নির্ধারণের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহতায়ালারই আছে, কোনো মুসলমানের নহে। তাই ঈমানের যে সংজ্ঞা আল্লাহ-রসুল সুনির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন, তাহার বাহিরে মনগড়া কথা বা ফতোয়া দিলে শুধু মহাপাপই হইবেনা বরং দলাদলী ও বিভ্রান্তিই বাড়িবে মাত্র।

(চলবে)

যাহার মিস করিয়াছেন পড়ুন--

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225909
২৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আলেম নামের একশ্রেণীর গোঁড়া লোক ইসলামকে নিজেদের ঠিকাদারী ব্যবসা করে নিয়েছে। এরা সহজ সুন্দর ইসলামকে কঠিন ও বিকৃত করেছে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে বিভ্রান্তি হতে হেফাজত করুন। আপনার গবেষণালব্ধ লেখা চালিয়ে যান। সাথেই আছি ইনশাল্লাহ।

২৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
172901
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ২২ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪৫172028
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ||
235545
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
মাজহার১৩ লিখেছেন : একই বসায় ৫টি পর্ব পড়লাম। ধন্যবাদ আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আমীন।
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৪১
182073
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ধন্যবাদ সিরিয়াস পাঠক, Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File