তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই-৪ (ছন্দ প্রকরণ)

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ২০ মে, ২০১৪, ০৬:১৭:৩৬ সন্ধ্যা

তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই

ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি- ডার্লিং !!!!




ওপরের লাইনদুটো উচ্চাংগের আধুনিক কবিতাংশ, যা মুক্তছন্দে লেখা। এটি মুক্তছন্দে লেখা হলেও কিন্তু ছন্দোবদ্ধ লাইন। এখানে ছন্দ আছে তবে অন্তমিল নেই। অল্পকথায় এই হলো মুক্তছন্দের বৈশিষ্ট্য।

ছন্দ প্রধনতঃ মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ নামেই আমাদের দেশে পরিচিত। আমরা সব ছন্দই ছড়া-কবিতা লিখতে ব্যবহার করে থাকি। আমি এ লেখার শুরু করেছিলাম মুক্তছন্দ নিয়ে। একটা বিষয় কি আপনারা খেয়াল করেছেন? অন্য ছন্দগুলোর নামের শেষে আমরা সাধারণতঃ ছন্দ শব্দটা লিখিনা। কিন্তু অন্তমিলবিহীন আধুনিক কবিতার সাথে জড়িয়ে আছে যে নতুন ছন্দের নাম, তার সাথে কিন্তু ছন্দ শব্দটাই জড়িয়ে আছে যেমন ''মুক্তছন্দ''। এর মানে হলো, কানা ছেলের নাম ''পদ্মলোচন''! তাহলে যারা ভাবে আধুনিক বা মুক্তছন্দের কবিতায় ছন্দ নেই, তা কি স্ববিরোধী হয়ে যায় না?

মুক্তছন্দের কবিতা বনাম আধুনিক কবিতা



আরেকটা কথা, আমরা অনেকেই শুধু মুক্তছন্দের কবিতাকেই আধুনিক কবিতা মনে করি, আসলে কি তাই? মোটেই না, মডার্ন বা আলট্রা মডার্ন বলতে আমরা কী বুঝি- সবক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোঁয়া, অগ্রগতি, পশ্চাৎপদহীনতা ইত্যাদি। কুপি,লণ্ঠন, লাঙ্গল, কুয়ার স্থান যেমন যথাক্রমে লাইট, ট্রাক্টর, টিউবল-ডিপটিউবল দখল করেছে তেমনই ছড়া-কবিতা-গানের মাঝেও শব্দবিন্যাস, বাক্যবিন্যাস, শব্দচয়ন, এদের গঠন প্রকৃতিতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তনসহ আধুনিকতার ছোঁয়া।

এর মাত্র একটা উদাহরণ দেই--কবিগুরু যে কবিতায় নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন, বর্তমানে তার সেই স্টাইলের কবিতা কি আপনারা কোথাও দেখতে পান নাকি কেউ লেখে? তার মোর, হেরিয়া, হেরিনু জাতীয় শব্দের ব্যবহার কি আছে নাকি সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য হয়েছে? এখণ কবিতায় সাধুভাষা বা সাধুশব্দের প্রয়োগ হয়না। এমনকি অখ্যাত লেখক হিসেবে আপনি নিজে বা বিখ্যাত কোনো কবিও যদি রবিঠাকুরের অপরিচিত কোনো কবিতা যেকোনো জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যসম্পাদকের নিকট নিজের লেখা বলে পাঠিয়ে দেন--আপনি কি মনে করেন তা ছাপা হবে? আদৌ না।

এখন বলেন মুল কারণটা কী? আপনি বুঝে গেছেন যে, ছড়া-কবিতা-গানের আধুনিকায়নের সাথে এসব লেখা এখন বেমামান বলেই ছাপার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেনা। এটাই কবিতায় আধুনিকতার প্রমাণ। এর মানে কিন্তু এ নয় যে, রবিঠাকুরের লেখা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে এবং এখন অচল? তার যুগের সেরা লেখক হিসেবে তিনি সবসময় সেরাই থাকবেন, তিনি থাকবেন আমাদের শ্রেষ্ঠ পূর্বসূরি হয়ে। কিন্তু তার সময়ের কবিতার আদল বা স্টাইল এখণ অচল হয়ে গেছে মাত্র যদিও তার আবেদন ফুরিয়ে যায়নি।

প্রসঙ্গতঃ বলি--আমি রবীন্দ্রসংগীতের দারুণ ভক্ত যেমন সমান ভক্ত নজরুলসংগীত, লালনসংগীত, হাসনরাজার গানসহ হারানোদিনের গানের।

তাহলে আধুনিক কবিতা সম্পর্কে ভুল ধারণা আশা করি দূর হয়ে গেছে। কাজেই ছন্দের ভেতরে থেকে আধুনিক স্টাইলে আধুনিক ভাষায় রচিত কবিতা-ছড়াই হচ্ছে আধুনিক কবিতা। এর সাথে মুক্তছদের কবিতাকে আধুনিক কবিতা বলে গুলিয়ে ফেলা চরমতম বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। নিচে আধুনিক কবিতার কিয়দাংশ দেখুনঃ

সাত সাগরের মাঝি

ফররুখ আহমদ

কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা।

নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।

দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা।

তবু জাগলে না? তবু, তবু তুমি জাগলে না?

সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকে জাহাজ,

অচল ছবি সে, তসবির যেন দাঁড়ায়ে রয়েছে আজ।


কবিতায় মূলতঃ অন্তমিল না থাকাটাই আসলে মুক্তছন্দের একমাত্র বৈশিষ্ট্য; এছাড়া প্রচলিত কবিতার সাথে এর আর তেমন কোনো ফারাক নেই। আর মজার ব্যাপার হলো যে, মুক্তছন্দে সাধারণতঃ ছড়া লেখা হয়না কবিতা ব্যতীত। আমি আমার মুক্তছন্দের একটি কবিতা নিচে তুলে দিলামঃ

কোনো ভিনগ্রহ

ছুটছি তো ছুটছি আমি অবিরাম

এ ছোটার কোনো শেষ নেই--

পেছনে ফেলে যাচ্ছি একে একে পথ

বাঁকের পথ বাঁক

যেনো ট্রেন থেকে দেখা চলন্ত পরিবেশ;

পেছনে ছুটছে গাছপালা নদী পাখি

হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যাবলী বাড়িঘর সব

হঠাৎ দেখি উধাও হয়ে গেছে

আমার প্রিয় বাংলাদেশ!

এযে দেখি নতুন ভূখন্ড এক

নাকি কোনো ভিনগ্রহ অচেনা জগৎ?

যেদিকে তাকাই ঝাঁকঝাঁক শকুন-ভাল্লুক

ছিঁড়েছূঁড়ে খাচ্ছে সোল্লাসে

নবজাতকেরও রক্তাক্ত পেলব শরীর।

মানুষ খাচ্ছে মানুষের জীবন্ত লাশ

ইয়াসমীনদের খুবলে খুবলে খাচ্ছে অদ্ভুত জীব!

এখানে বসন্ত নেই কলগুঞ্জন নেই

বয়ে চলেছে কোথাও কোথাও অশ্রুনহর--

কখনোবা ধেয়ে আসছে এইডসেরও কীট;

অবাক কান্ড

অদ্ভুতেরা কেবল তখনই হচ্ছে কুপোকাত্

নেতিয়ে পড়ে হয়ে যাচ্ছে একেবারে নির্জীব?

দেখে তাই শিউরে উঠি দেই পেছনছুট--

এ কোথায় এলাম---এরা কারা

একি তবে ইয়াজুজ-মাজুজের দেশ

নাকি কোনো মধ্যযুগ

চিনতে পারিনে,

কোথায় গেলো আমার আপন আবাস ?

(চলবে)

যারা মিস করেছেন--

একনম্বর পর্ব

দু'নম্বর পর্ব

তিননম্বর পর্ব

বিষয়: বিবিধ

১২৪৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

223850
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৭
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আমি তো ঘাস হয়ে গরু খেতে চাই!
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
171178
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : মানুষতো চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় কোনোটাই নয় তবুও বিড়ি খায় বা পান করে? আসলে এটা কি খাওয়া বা পান করার মধ্যে পড়ে? আমরা কতোইনা ভুল করি ও ভুল বলি--আপনি না হয় তেমন উল্টা করলেন!!
223852
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : আপনার পোষ্টগুলো ভালো লাগতেছে কারণ সাহিত্য সম্পর্কে নিত্য নতুন ধারণা পাচ্ছি। চালিয়ে যান আরো নতুন নতুন ভাণ্ডার নিয়ে।
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
171179
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনারা পড়ছেন বলেই উৎসাহ পেয়ে লিখছি ভাই Good Luck Good Luck Good Luck
223862
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ Love Struck Love Struck
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
171184
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনাকেও পিলাস Good Luck Good Luck
223878
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই
ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি- ডার্লিং !!!!
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
171197
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : কী খুব ভালো লেগেছে বুঝি ?
223895
২০ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৮
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : বাহ দারুণ কিছু শিখতে পারলাম। আসলে ব্লগে না আসলে জীবনটাই অপূর্ণ থেকে যেতো আমার। গ্রেট গ্রেট ধন্যবাদ
২০ মে ২০১৪ রাত ১০:১৮
171229
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
223939
২০ মে ২০১৪ রাত ১০:৩৭
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : ভালো ভালো
২০ মে ২০১৪ রাত ১০:৫০
171258
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনিও ভালো বলে ভালো লেগেছে-- Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File