তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই-৩ (ছন্দ প্রকরণ)
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১৯ মে, ২০১৪, ০১:১৯:১৬ দুপুর
মুক্তছন্দ ও গদ্যকবিতা
তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই
ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি- ডার্লিং !!!!
ওপরের লাইনদুটো উচ্চাংগের আধুনিক কবিতাংশ, যা মুক্তছন্দে লেখা। এটি মুক্তছন্দে লেখা হলেও কিন্তু ছন্দোবদ্ধ লাইন। এখানে ছন্দ আছে তবে অন্তমিল নেই। অল্পকথায় এই হলো মুক্তছন্দের বৈশিষ্ট্য।
অনেকেরই মনে উপর্যুক্ত লাইন দুটোর অর্থ বা পটভূমিকার বিষয়ে আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক; আজ তা বলছি---একতরফা প্রেম বা ব্যর্থ প্রেমিকদের হতাশার প্রকাশ ঘটেছে এতে। সে ভাবছে--হে নারী, পাত্তাতো পাচ্ছিই না তোমার কাছে বরং পিছু পিছু ঘুরে ঘুরে তোমার হৃদয়ে যেনো গরু হয়ে ঘাস খাচ্ছি।তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমার দিকে তাকাও না পর্যন্ত। তাই তোমাকেই মনে করে কখনো আমি ল্যাম্পোস্টকে আবেগে জড়িয়ে ধরে ভুল করে ডার্লিং বলে ডাকি।
যাহোক, আগেই বলেছি-ছন্দ ছাড়া কবিতা-ছড়া-গান ইত্যাদি প্রাণহীন এবং মূল্যহীন পদ্যমাত্র। ছন্দোবদ্ধ ছড়ার অর্থ থাক আর না থাক, তা পাঠকের মনকে শুধু আন্দোলিত-ছন্দায়িত পন্থায় আকর্ষণই করেনা, তা ছেলেবুড়ো সবার সহজেই মুখস্ত হয়ে যায়। যেমন-''আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক-ঢোল ঝাঁঝর বাজে
বাজতে বাজতে চললো ঢুলি/ ঢুলি গেলো কমলাফুলি।''
এবার আমার একটি শিশুতোষ ছড়া পড়ুন-
দূরছাই
আম আর জামগাছে
টুনটুনি অই নাচে
লেজতুলে অই নাচে অই;
তা-ই দেখে জাফরিন
নাচে তাক তাক ধিন
নেচে নেচে করে হই-চই।
ডাকাডাকি আম্মার--
কানে যায় নাকো তার
''নেই পড়া নেই কাজ তোর?''
শেষ-মেষ রেগে তাই
আম্মাটা দূরছাই
কান ধরে টান দেয় ওর!
ছন্দোবদ্ধ ও অন্তঃমিলযুক্ত কবিতাও কীযে মজাদার এবং সহজেই মুখস্তযোগ্য দেখুন। যেমন-আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখমাসে তার হাঁটুজল থাকে।এমন কে আছে যার মুখস্থ নেই রবিঠাকুরের এই কবিতাটি?
আধুনিক গদ্যকবিতা বা বর্তমানের মুক্তছন্দভিত্তিক কবিতায় কি এই স্বাদটা পাওয়া যায় নাকি সহজেই তা মুখস্থও করা যায়! গদ্যকবিতার পাঠক-লেখকমাত্রই আমার সাথে একমত হবেন বলে আমি আশা করি। তবে আল মাহমুদ বা শামসুর রহমানসহ বিখ্যাত কবিদের কিছু মানসম্মত চমৎকার আধুনিক গদ্যকবিতা আছে, যা পড়তে মজা পাওয়া যায় এবং মুখস্থও করা যায়। যেমন--
শামসুর রহমানের ''স্বাধীনতা তুমি''
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
এবং আল মাহমুদের একটি চমৎকার কবিতা যার নামটি এ মুহূর্তে সঠিক মুখস্থ নেই। সন্ত্রাসকবলিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই কবিতার একটি লাইন এমন ''তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ডাকাতদের গ্রাম?''কবিতাটি কারো সংগ্রহে থাকলে আমার সাথে শেয়ার করতে অনুরোধ করছি। (চলবে)
যারা মিস করেছেন-
একনম্বর পর্ব
দু'নম্বর পর্ব [b]
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ অাপনাকে হে সাহিত্যিক!
এরপর জনতার ভাল্লাগলে চলে যাবো ছন্দ প্রকরণে। আপনি সাথে আছেন বলে খুশি
তাই সম্বোধনে সমস্যায় ভুগি---
মন্তব্য করতে লগইন করুন