আমাদের মুসলমানিত্বএবং কামড়া-কামড়ির রকমফের-৩
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১৮ মে, ২০১৪, ১১:৪৭:১৯ সকাল
ইসলামের প্রকারভেদ এবং বাংলাদেশী ইসলাম?
বাংলাদেশের বিভক্ত আলিম-উলামাদের কথা বাদ রাখিলে তাহাদের অনুসরণকারী সাধারণ মুসলিমগণ এতোটাই বিভ্রান্ত যে, একদিকে হাজার রকমের পীর আর শত শত মাজারের বাহার, ওরস শরীফ, ফাতিহা শরীফ, চল্লিশা, মিলাদ শরীফসহ কতো যে শরীফ (মানে পবিত্র) কাজ-কারবার চলিতেছে, কোনটা ইসলামসম্মত, কোনটা ইসলামের নামে বাংলাদেশী প্রডাক্ট বা বাংলাদেশী ইসলাম--তাহা বুঝিবার সাধ্য অন্তত তাহাদের নাই?
আমি ইসলামবিরোধী ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দালাল খ্রিস্টান লর্ড ম্যাকলের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় পড়ুয়া তথাকথিত আলিম নই বরং আমার মতোন সাধারণ একজন মানুষও সরাসরি বিভিন্ন ভাষায় কুরআন-হাদিস ও ইসলামী পুস্তক পড়িয়া এমনতর বাংলাদেশী ইসলামের সমর্থনে কিছুই খুঁজিয়া পাই নাই। তাই আমার কাছে মনে হইয়াছে--ইসলামের নামে এইসবই কেবল ভারত উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মনগড়া ইসলাম যাহা ইসলামের পরিভাষায় বিদাতের নামান্তর মাত্র।
ইসলামের হাজার হাজার ফরজ-ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাব বাদ দিয়া এইসব কী চলিতেছে--তাহা ভাবিয়া আমি কুল-কিনারাও পাইনা। নবী-সাহাবীদের সুস্পষ্ট ইতিহাস এবং আদর্শ-কর্ম আমাদের নখদর্পণে থাকিবার পরও এইসব প্রমাণহীন বিষয় লইয়া আমরা কেনো বিভক্ত হইয়া পড়তেছি তাহা আমার বুঝে আসেনা। নবী-সাহাবীদের কেউ এমন কর্মকাণ্ড না করিয়া থাকিলে তাহা আমরাই বা ইসলামের নামে চালাইতেছি কেনো আমার মতোন নাদানের তাহা বোধগম্য নহে!
আবার সবপন্থীরাই আলাদা আলাদাভাবে কতো যে বই লিখিয়াছেন তাহাদের দাবীর সমর্থনে, তাহার ইয়ত্তাও নাই। কুরআন-হাদিস সম্পর্কে লিখা বাদ দিয়া কেহ পীরের পক্ষে, আবার কেহ সহীপীর বা ভণ্ডপী্র, মিলাদ, তরিকা, সুন্নি-শিয়া, মাজহাব, কেহবা নিজেদের পীরের পক্ষেই সাফাইকলম চালাইয়া আমাদের চরম বিভ্রান্তিতে ফেলিয়া দিতেছেন। অথচ উপমহাদেশের বাহিরে অন্য দেশের ইসলামী লিখকদের বই-পুস্তকের মধ্যে বাংলাদেশীদের লিখিত উল্লিখিত তথাকথিত ইসলামী বইয়ে তাহাদের দাবীর পক্ষে আমি কিছুই খুঁজিয়া পাই নাই।
তাই ইসলামের নামে এতোসব বানোয়াট জিনিস বা বিদয়াত দেখিয়া-শুনিয়া আমার মনে হইয়াছে---আমরা যেনো আসল ইসলাম ছাড়িয়া বাংলাদেশী এক আলাদা ইসলাম এবং মুসলিমত্ব চালু করিয়া দিয়াছি। এমনকি ইহাকেই আসল ইসলাম ভাবিয়া ভাইয়ে ভাইয়ে বাহাস, কুতর্ক-বিতর্ক এবং কোথাও কোথাও মারামারি পর্যন্ত করিতে ছাড়ি না? বিভিন্ন দেশে ভ্রমণকালে ইসলামের নামে এতোসব রসম-রেওয়াজও আমার চক্ষে পড়ে নাই!!
নামাজের নিয়তের নামে রচিত যত বানোয়াট ও জটিল নিয়ত!!
যেমন ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই--যখন এদেশের নামাজ শিক্ষা বইগুলো পড়িয়াছি এবং নামাজের নিয়তের নামে চাররাকাত, তিনরাকাত বা দুইরাকাত হইলে কী পড়িতে হইবে অথবা ফরজ বা সুন্নত বা ওয়াজিব নামাজ হইলে কী বলিতে হইবে বা যখন যে ওয়াক্ত তাহার নাম কোথায় পড়িতে হইবে কিংবা একাই পড়িতে নামাজে কী নিয়ত আর ইমামের পিছনে পড়িলে কী নিয়ত করিতে হইবে, এইসব দেখিয়া বিভ্রান্ত হইতাম।
আবার মনে প্রশ্ন জাগিতো যে, ইন্নামাল আ'মালু বিন্নিয়াত মানে কর্মের ফল নিয়তের ওপরেই নির্ভরশীল হইলে নিয়ত করা তো জরুরিই হইবে! কিন্তু তাহা মুখে মুখে বলিতে হইবে কেনো--নিয়ততো মুখের বিষয় নহে বরং অন্তরের বিষয়! তখন ভীষণ খটকা লাগিতো এবং বিষয়টা বেশ জটিল ও কঠিন মনে হইতো শুধুই নহে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হইতো না।
নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা---বলিবার পর কোথায় কী বলিতে হইবে তাহা একজন আরবী পণ্ডিত ও ব্যাকরণবিদ না হইলে রপ্ত করাই মহাকঠিন। এইসব বিষয় শিক্ষিত মানুষের পক্ষে চোখ বুঝিয়া মুখস্থ করা সম্ভব হইলেও নিরক্ষর-অর্ধশিক্ষিত মানুষের পক্ষে তাহা কি রপ্ত করা আদৌ সম্ভবপর??
আমার বৃদ্ধা ও নিরক্ষর মাকে নামাজ শিখাইতে গিয়াই নিয়তের গদবাধা বিষয়টা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হইতে লাগিলো। তাই হাদিস ঘাঁটিয়া দেখিলাম-এমন কোন মৌখিক নিয়তের কথা কোথাও নাই বরং অন্তরের নিয়তের কথাই জরুরি বলা হইয়াছে। বুঝিলাম-- এইসব আমাদের আলেমসমাজের মস্তিষ্কপ্রসূত বানোয়াট নিয়ত, যাহা নতুন নামাজীদের জন্য নামাজ শিক্ষাকেই কঠিন করিয়া তুলিয়াছে মাত্র।
এমন হাজার রকম উদাহরণ দেওয়া যাইবে--যাহা আমাদের আলিমসমাজের বানানো বিষয়, তাহার মধ্যে ঈদ এবং জুম্মার নামাজের খুতবাহও একটি ব্যাপার!
অথচ খুতবাহ অর্থই হইলো ভাষণ বা বক্তৃতা, যাহা হইবে কুরআন-হাদিসের সংমিশ্রণে সময়োপযোগী আলোচনা, যাহার মাধ্যমে মুসল্লিগণ ইসলামী স্প্রিটে চার্জ হইয়া বাসায় ফিরিয়া যাইবে এবং ঈমানের দায়িত্বপালনে আরো তৎপর হইবে যেমন নবী সাঃ এবং সাহাবীদের বেলায় ঘটিয়াছে।
কিন্তু ভাষণ যেইভাবে আমাদের দেশে লিখিত বই হইতে দেখিয়া পড়া হয়-তাহাও কি নবী-সাহাবীদের যুগে ঘটিয়াছে বলিয়া কেহ দেখাইতে পারিবেন? নাহ, পারিবেন না, কারণ ভাষণ তো ভাষণই--বই দেখিয়া আবার ভাষণ হয় নাকি? অথচ আমাদের আলেমরা খুতবাহর নামে বই লিখিয়া ইচ্ছামত বিষয় বসাইয়া দিয়াছেন আর আমরা তাহাই ওয়াজিব বলিয়া নবীর সুন্নত মানিয়া শুনিয়া আসিতেছি; কিন্তু ইহাতে আমাদের কী উপকার হইতেছে? ভাষণ হইতে হইবে সমসাময়িক কথাবার্তায় ভরপুর এবং সমসাময়িক হাদীস-কালামের সংমিশ্রণ!
আবার ইসলাম নাজিল আরবীতে হইয়াছে বলিয়া আমাদের দেশে কি আমরা না বুঝিয়াই আরবী খুতবাহ শুনিতে বাধ্য, এমন কথা কি ইসলামের কোথাও লেখা আছে? নাই--ইসলামের মর্মবাণী আমাদের কর্ণকুহূরে প্রবেশ করাইতে হইবে-ইহাই আল্লাহ-নবীর মিশন ছিলো। তাই খুতবাহ শুনিতে শুনিতে আমাদের নিদ যাহাতে আসিয়া না যায় এবং আমাদের ঈমান যাহাতে বলিয়ান হইয়া যায়, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। তবেই না খুতবাহ সার্থক হইবে?
আমি কুরআন-হাদিসের পক্ষে কিন্তু ইসলামের নামে বানোয়াটের বিপক্ষে। আমার এই লিখায় অনেকেই খুশী হইলেও কেহ কেহ বেজার হইতেছেন বলিয়া আমি অনুভব করিতেছি। আমি আবারো বলি---আমি সওয়াব অর্জনের নিয়তেই আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিতেছি মাত্র। কিন্তু কাহারো বা কোনো দলের বিরুদ্ধে আমার লেখার কোনো গরজ নাই।
তবুও কেহ আঘাত পাইলে তাহা আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল বলিয়াই আমি মনে করি। লিখিতে গিয়া যাহা আমি কুরআন-হাদিসের বিরোধী মনে করিবো-তাহার উদাহরণ দিতেও আমি কার্পণ্য করিবো না; কিন্তু কাহারো নামে বা বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে আমি কিছুই লিখিবো না বা নিন্দাবাদ, গালিগালাজ করিবো না।
সুতরাং অযথাই কাহারো এই লিখা অসহ্য মনে হইলে তাহার পড়িবার দরকার নাই। কিংবা কেহ আমার কিছু বিষয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করিলে বা কিছু ভুল বা অন্যায় মনে করিলে আমার ভুল ধরিয়া দিয়া আমাকে শোধরাইবার সুযোগও আপনারা লইতে পারেন মন্তব্য কলামে। আমি শোধরাইয়া লইবো যদি যৌক্তিক পরামর্শ হইয়া থাকে।
(ধা্রাবাহিক)
পড়ুন--
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১২৩১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নেই। ধন্যবাদ ব্লগার ভাইকে
কিন্তু কাঠমোল্লারা এটাকে জটিল ও রহস্যময় বানিয়ে রেখেছে। আল্লাহ তাদের হেদায়াত দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন