আমাদের মুসলমানিত্ব এবং কামড়া-কামড়ির রকমফের-১
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১৩ মে, ২০১৪, ১১:৪২:৩৫ সকাল
এই লেখার শিরোনামটা যুক্তিযুক্ত হইলো কিনা জানিনা, তবে আমার মতোন নাদান লোকের পক্ষে ইহার চাহিতে ভালো শিরোনাম রচনা করা সম্ভবপর হইলোনা বলিয়া আমি আপনাদের নিকট করজোরে ক্ষমাপ্রার্থনা করিতেছি। পাঠক, ইহাতে কাহারো গাত্রদাহ শুরু হইয়া থাকিলে আমার করিবার কিছুই নাই বলিয়া আমি দুঃখিত!
অবশ্য আমি সবাইকে এইমর্মে আশ্বাস দিতে চাহি যে, আমি কোনো বেকুব নাস্তিক নহি কিংবা ধর্মবিরোধী বা ধর্মনিরপক্ষও নহি। আমি ফতোয়াবাজ বা গালিবাজও নহি যে, ধর্মের বিষয়ে যোগ্যতা না থাকিলেও ফতোয়া দিয়া বসিবো বা মুসলিমদের গালিগালাজ করিতে বসিবো।
তবে একজন সচেতন মুসলিম হিসাবে সরাসরি কুরআন-হাদিস এবং ইসলামী বই-পুস্তক পাঠ করিয়া যাহা শিখিয়াছি এবং বাস্তবে আমাদের মুসলিম ও আলেম ভাইদের অবস্থা-দুরবস্থা দেখিয়া-শুনিইয়া বিবেকের তাড়নায় এই প্রবন্ধ লিখিতে বসিলাম আরকি? তাই কেহ ইহাতে আঘাত পাইলে বা দুঃখ পাইলে নিজগুণে ক্ষমা করিয়া দিবেন; কিন্তু দোহাই, আমাকে গালিগালাজ করিবেন না।
কারণ আমাদের সংবিধান বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পূর্ণ অধিকার আমাকে দিয়াছে কিন্তু কাহারো মানহানি করিবার অধিকার কাহাকেও দেয় নাই। এমনকি ব্লগের নীতিমালাও আমাকে এমন লিখনীর সুযোগ করিয়া দিয়াছে। আর ইসলামতো গালিগালাজকে হারাম বলিয়াই ঘোষণা করিয়াছে যদিও অনেক অতিমুসলমান তাহার মতের বিরুদ্ধে কোনো লেখা পড়িলেই যুক্তি ছাড়িয়া এমন ভাষায় গালিগালাজ শুরু করিয়া দেন যে, শয়তানও হার মানিয়া পালাইয়া যায়!!
তাহাছাড়া, আমার আবার হাইপার টেনশন ও স্ট্রকের ব্যামো আছে কিনা–আপনাদের কোনো আক্কেল আলীর বেআক্কেল গালমন্দ খাইয়া হঠাৎ অক্কা পাইলে, তাহার দায়ভার কিন্তু আপনাদেরই লইতে হইবে-তাহাও সরাসরি অছিয়ত করিয়া গেলাম।
যাক, আসল কথায় ফিরিয়া আসি। নতুবা আবার আমার এতোসব ভূমিকা শুনিয়া কেহ আমার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করিতে লাগিয়া গেলে আমি তাহা আদৌ সহ্য করিতে পারিবোনা! তাই আমার ফালতু বাতচিত হইতে এক্ষণে আমি বিরত হইলাম এবং আসল আলোচনা শুরু করিলাম।
ইসলামে কোনো জবরদস্তি নাই
আমাদের নবী সাঃ এমন এক গোত্র ও পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন যাহারা আদৌ মুসলিম ছিলেন না। তাই ৪০বছর বয়স পূর্ণের আগে তিনি নবী হিসাবে প্রকাশিত হইতে পারেন নাই বলিয়া আপন আত্মীয়দেরও তখন ইসলামের দিকে ডাকিতে পারেন নাই। ৪০ বছর ইসলাম এবং জনসেবার সুযোগ তাহাকে আল্লাহই দেন নাই বিশেষ কারণে, তাহা পরবর্তীতে আলোচনার চেষ্টা করিবো ইনশাআল্লাহ।
”হাদিসে আছে যে, প্রত্যেকটি শিশুই ইসলামের ফিতরাত বা ন্যাচার বা প্রকৃতির উপর জন্মগ্রহণ করিয়া থাকে। কিন্তু তাহার মাতাপিতাই তাহাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা মুসলিম বানাইয়া ফেলে।”
যদি না আল্লাহ তাহাকে নবী হিসাবে মনোনীত করিতেন, তিনিও কিন্তু তাহার মাতাপিতার ধর্মই গ্রহণ করিতেন, এটাই স্বাভাবিক ছিলো! কারণ পৃথিবীতে ধর্মবিরোধী পরিবার খুঁজিয়া পাওয়াই মুশকীল? একজন শিশুকে যেকোনো ধর্মে বড় হইয়াই উঠিতে হইবে ইহাই স্বাভাবিক ঘটনা। অবশ্য সাবালকত্ব অর্জনের পর কাহারো স্বেচ্ছায় ধর্মপরিবর্তন কিংবা নাস্তিকতাগ্রহণ হইলো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
যাহাই হউক, নবী সাঃ নবুয়ত পাইবার পরই প্রথম মুসলিম হিসাবে ইসলামপ্রচার শুরু করিলেন, যদিও তাহাকে আল্লাহর নিকটই ঈমান গ্রহণ করিতে হইয়াছে। কিন্তু কাহাকেও তাহার মতের পক্ষে আনিতে কখনোই তিনি জোর-জবরদস্তি করেন নাই। বরং তাহার এবং নওমুসলিমদের চরিত্র এবং সদ্ব্যবহার দেখিয়াই কাফির-মুশরিকগণ ইসলামগ্রহন করিতে লাগিলেন। ইহাই প্রকৃত ইতিহাস, ইহাই বাস্তবতা। কিন্তু এখন আমরা কী দেখি? আমরা কি নিজেদের তদ্রূপ পবিত্র চরিত্রগঠন করিতে পারিয়াছি; নাকি নিজেদের শুধরাইবার লক্ষে্ নিয়মিত আত্মসমালোচনাও করিয়া থাকি?
ইসলাম কি শরীরে ধারণ করিবার কোনো বস্তু!
ইসলাম হইলো দৃঢ় আস্থা, বিশ্বাস আর বাস্তব কর্মের অপর নাম। নবী করীম সাঃ নবী হইবার পূর্বে নামাজ-রোজা, হজ্জ, যাকাতের বিধান কিছুই পান নাই বলিয়া তাহা পালনও করেন নাই বটে; তবে দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানবতা বা মানুষের সেবা করিতে তিনি আদৌ পিছুপা হন নাই। নবী হইয়াও নামাজ-রোজা কিছুই রাখেন নাই–ইহা শুনিতে কেমন লাগে অতি ঈমানদারদের, বলুন তো!! এমনকি তাহার সঙ্গী সাহাবারাও তো মিরাজের পূর্বে নামাজ নাজিল হইবার পূর্বে ৫ ওয়াক্ত নামাজের নামও শোনেন নাই, তাহা আদায় করিবার প্রশ্নও কি আসে? তাহা হইলে আলেমগণ ইহার কী ব্যাখ্যা দিবেন? নবীসহ তাহাদের কি অমুসলিম বা জাহান্পানামী বলিয়া সস্তা ফতোয়া দিয়া বসিতে হিম্মত রাখিবেন!
এমনকি নবুয়ত পাইবার পরেও তিনি শুধু কলেমার দাওয়াত প্রদান করিতে করিতে কিংবা ইসলামী আন্দোলনের নামে মানবসেবার দায়িত্ব ভুলিয়া নিজেকে বড় মুসলিম ভাবিয়া সময় কাটান নাই। বরং নবুয়তপূর্ব জীবনের মতো সমান্তরালভাবে মানবতার সেবাও করিয়া গিয়াছেন যেমন বর্তমানে খ্রিষ্টান মিশনারীরা করিয়া থাকে। এমনকি তিনি তাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে পোশাকী ইসলাম কায়েমের চেষ্টাও করিয়াছেন বলিয়া ইতিহাসে কোনো তথ্য এই অভাগা অন্তত খুঁজিয়া পান নাই। তাহা হইলে ঈমানের আগে ও পরে ইসলামের ৫টি ভিত্তিরও আগেই কি হক্কুল ইবাদ পালন করাই সব চাহিতে বড় ফরজ নহে? কিন্তু আমরা কী করিতেছি, ভাবুনতো?
শিশু ইসলামের যুগে কিংবা অপূর্ণাঙ্গ ইসলামের জমানায় তিনি এই ধরণের দাঁড়িটুপি, পোশাক, সুন্নত-নফল ইত্যাদি পালনের কোনো হাদিসও বলিয়া যান নাই কিংবা এই বিষয়ে অযথা সময়ও নষ্ট করেন নাই। তাহা হইলে এই বর্তমান জাহিলিয়াতের যুগে আমরা কি নবীর চাহিতেও বড় মুসলিম হইয়া গিয়াছি? অথচ নবুয়ত পাইবার আগেই সেই অন্ধকার যুগে তিনি আল আমীন (বিশ্বস্ত), আস সাদিক (সত্যবাদী) ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী হইয়াছিলেন, যাহা আমরা কল্পনাও করিতে পারি কি? তখন তিনি পোশাক-আশাক, দাঁড়ি-টুপি নিয়া টুঁশব্দও করেন নাই, কিন্তু কেনো তাহা জানেন কি? কারন আল্লাহ তাহার গড়া এই দুনিয়ায় মহাঠাণ্ডা এবং মহাগরমের পরিবেশে আর বহু সূর্যোদয়-বহু সূর্যাস্তের মাঝখানে নির্দিষ্ট কোনো পোশাকের নমুনা ঠিক করিয়া দেওয়া বেওকুবী বলিয়া মনে করিয়াছেন।
এমনকি হরমোনজনিত সমস্যার কারণে দাঁড়ী-নিদাঁড়ী মানুষ সৃষ্টি হইবে বলিয়া তাহা ফরজ করিয়া দেন নাই!! তাহা না হইলে নবী সাঃ আর মক্কার কাফিররা একই পোশাক পরিয়া কবরে চলিয়া যাইতেন কি? সেইজন্যই ইসলাম কী জিনিস, তাহা তিনি কথায় নহে স্রেফ কাজের মাধ্যমেই বুঝাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা হইলো গিয়া উল্টা বুঝিলো রাম এর মতোই আরকি!!
অসহায়ের সেবা করা আর বিধর্মীর বকরীর দুধ দোহাইয়া দেওয়ার মতো কাজও অবলীলায় তিনি করিয়া দেখাইয়া গিয়াছেন যে, মুসলিমকে এমনই চরিত্রের হইতে হয়। পোশাকে যে ইসলামের আসল রূপ প্রকাশিত হয়না বরং কাজেই তাহার আসল পরিচয়, তাহা তিনিই আমাদের প্রমাণ দিয়াছেন। তাই বলিতে হয়, ইসলাম শরীরে ধারণ করিবার মতো বস্তু নহে বরং সমাজে, রাষ্ট্রে আচারে-ব্যবহারে প্রমাণ করিবার ও ধারণ করিবার জিনিস!
এই নালায়েকের প্রথম নামাজ শুরুর দুঃখজনক কেচ্ছাও এইখানে বলিয়া যাই শোনেন–আমি ১৯৭৭ সালে প্রথম নামাজ শুরু করিয়া আমাদের পাশের মসজিদ ”কালীবাড়ী মসজিদে” প্রথম জামায়াতে নামাজ পড়িতে যাই। ছাত্র মানুষ শার্ট আর লুঙ্গিপরা থাকায় আমার শার্টের অপরাধে আমাকে মসজিদ হইতে বাহির করিয়া দেওয়া হইয়াছিলো। আমি কাঁদিতে কাঁদিতে বাড়িতে চলিয়া আসিয়াছিলাম কিন্তু নামাজপরা ছাড়ি নাই। তবে ইসলাম কী এবং ইসলামে পোশাকের কী অবস্থান এবং আল্লাহ কি এতোই সংকীর্ণমনা ইত্যাদি প্রশ্ন আমার মাথায় চাপিয়া বসায় আমি সরাসরি ইসলাম শিখিতে ও জানিতে শুরু করিলাম। ইহার পর ”নবীর সুন্নত আর ইসলামী পোশাক” লইয়া আমার সাথে অনেকগুলো আলেম-হাফেজ ও মসজিদের ইমামের প্রকাশ্যে বিরাট বাহাসও অনুষ্ঠিত হইয়াছিলো-কিন্তু তাহারা আমার সাথে টিকিতে না পারিয়া পালাইয়া গিয়াছিলো। এই কাহিনীও সময় পাইলে এইখানে বলিতে চাহি।
সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েম?
আসলে ইসলাম হইলো একটা ধারাবাহিক আন্দোলন এবং পদ্ধতির নাম, যাহা আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ বিধান হিসাবে আত্মপ্রকাশিত হইয়াছে। নবী সাঃ এবং তাহার মহান সাহাবীদের মাধ্যমে তাহা দীর্ঘ ২৩ বছরেই বাস্তবায়িত হইয়াছে। ২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে নাজিল হওয়া এমন পরিপূর্ণ একটা জীবনবিধান কি কাহারও পক্ষে একেবারে এবং একসাথে ধারণ করা কখনোই সম্ভবপর? ইহা কোনো বস্তু বা পোশাক নহে যে, তাহা তাৎক্ষনিকভাবে হাতে ধারণ করিলেই বা গায়ে পরিলেই দায়িত্ব পালন হইয়া গেলো। নবীও তাহা করিতে পারেন নাই, সাহাবীরাও পারেন নাই।
এমনকি তাহারা আমরণ নিজেদের আদর্শ হিসাবে ইসলামকে পালন করিতেই চেষ্টা করিয়াছেন এবং নিজেদের পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করিবারই অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন মাত্র। তবুও কেহই কখনো নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিবার সাহস প্রদর্শন করেন নাই। হাদিস এবং ইতিহাস হইতে ইহাই জানা যায়। নবীর হাদীসে আছে-যখন দেখিবে ইসলামের কাজ করিতে তুমি মনে আনন্দ পাইতেছো, তখন বুঝিবে তুমি খাটি মুসলিম। আর আল্লাহ তো বলিয়াই দিয়াছেন–হে মুমিনগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। অথবা হে মুমিনগণ তোমরা মুসলিম না হইয়া কখনোই মৃত্যুবরণ করিও না।
তাহা হইলে বর্তমান জাহিলিয়াতের যুগেও নিজেকে কেহ কি পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিতে পারেন নাকি সম্ভবপরও? অথচ আহাম্মক অনেকের মুখেই কতো যে বাহাদুরী শুনিতে পাই। তাহারা নিজেকে সঠিক ইসলামের দাবীদার জাহির করিয়া অন্য আলিম বা মুসলিম কিংবা ইসলামী আন্দোলনকারীকেও ভ্রান্ত, ভণ্ড বা কাহারো দালাল বলিয়া থাকেন এই ভাষায় যে, যাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম নাই বা ইসলাম কায়েম করেন নাই তিনি বা তাহারা কিভাবে ইসলাম কায়েম করিবেন?
তাহাদের কথা শুনিয়া আমার শুধু হাসি পায় যে, তাহারা কতোবড় বোকা !! আসলে তাহারা লম্বা কোর্তা, দাঁড়ি-টুপি বা পাগড়িপরাকেই শুধু পরিপূর্ণ ইসলামপালন বলিয়া ভ্রম করিয়া থাকেন বলিয়া এই নালায়েকের ধারণা। কেননা আমি ইতিহাস হইতে জানিয়াছি যে, আবু জেহেল আর নবী সাঃ, আবুবকর রাঃসহ আরবের সবাই তখন কোর্তাজাতীয় একই লম্বা পোশাক পরিতেন। এখনও তাহাই পরিয়া থাকেন এমনকি মুসলিমদের মতো দাঁড়িও অনেক কাফিরের ছিলো এবং এখনও আছে। তাই বলিয়া আবু জেহেলদের কেহই কিন্তু কখনোই মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত করেন নাই!! ইসলামী পোশাক বলিয়া কোনো নমুনা থালে তিনি কি তাহা বলিয়া যাইতেন না?
আমার বড়ই দুঃখ হয়, চারিদিকের বেশুমার মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ, ধর্ষণ, হারাম, অশ্লীলতা আর পাপাচারের বিষাক্ত বাতাসের সমুদ্রে বসবাস করিয়া আমাদের অনেকেই কী না মহা আত্মতৃপ্তিতেই আছেন আর নিজেকে খাটি মুসলিম ভাবিয়া বেশ প্রসাদ লাভ করিতেছেন? আর ফতোয়াবাজী করিয়া ক্ষেত্রবিশেষে জোরে আমিন আর আস্তে আমিন বলা বা নাভীর ওপরে হাতবাঁধা নাকি নাভীর নিচে হাতবাঁধার ঝগড়ায় লিপ্ত হইয়া ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তিও করিয়া থাকেন?
নিজেদের পাশেই মানবতার লাশ কিংবা কান্না দেখিয়াও চক্ষু বুঝিয়া অথবা অনাহারে-অর্ধাহারে অপুষ্ট মা-শিশুর কাতরানি কিংবা নারী-শিশুদের ধর্ষণের বিরুদ্ধেও কোনো প্রতিবাদ না করিয়া জীবন কাটাইতেছেন। বরং নিজেরা একে অন্যের নিন্দা-গীবত গাহিয়া কিংবা শুধু অতীত ইসলামের উজ্জ্বল ইতিহাসের কিচ্ছা রোমন্থন করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়া যাইতেছেন!!
আমাদের এই স্বার্থপরতার বিষয়টা নিচের দেয়া আমার কবিতায় আমি প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিয়াছি, দেখুন তো আমাদের বিবেক কী বলে?
ঝরাফুলের মতো
শাহ আলম বাদশা
বারান্দাতে শুয়েছিলো ছোট্টশিশু মায়ের সাথে
উদোম গায়ে উপোসপেটে জমকালো এই নিঝুমরাতে!
হাড়-কঙ্কাল মায়ের পেটে একটুওতো ভাত ছিলোনা
দ্বারেদ্বারে ঘুরলো এবং চাইলো কতো, কেউ দিলোনা?
তাই শিশুটির ছটপটানি, জ্বলছিলো পেট ক্ষুধার চোটে
আধমরা মা’র পায়নিকো দুধ হাজার চুষেও একটু মোটে।
মায়ের চোখে জল ছলছল ঝরছিলো তাই বানের বেগে–
ঠিক তখুনি দরজা খোলে ডান্ডাহাতে মনিব রেগে?
নিশুতরাতে তার যে সুখের ঘুমভাঙ্গালো হতচ্ছারী
আচমকা তাই লাঠির ঘায়ে শোধ নিলো সে সত্যি তারি।
অবুঝ শিশুর দোষ কী ছিলো, ফিনকি দিয়ে ফাটলো মাথা-
হায়রে কপাল ’’ভাগ’’ তবুও কটমটিয়ে বললো যা-তা;
দুঃখিনী মা’র গায়েও সেকী লাগলো বিষম, পার ছিলোনা
জ্ঞান হারালো সাথে সাথেই হুঁশ যে মোটে আর ছিলোনা।
মরলো কিনা দেখলো না সে, বীরের বেশেই ঢুকলো ঘরে
ভয় পেয়োনা, খুব সহজেই গরীব কি আর যায়গো মরে?
বাপ মরেছে নেই বাড়িঘর, তাই দুঃখী ওই শিশুর মায়ে
বারান্দাতে রাত কাটিয়ে কাজ করে খায় পেটের দায়ে।
শিক্ষা এবং চিকিৎসা নেই ঠিক যে ঝরাফুলের মতো–
এমনি করেই ধুকে ধুকে মা ও শিশু মরছে কতো।
এই শিশুটা তুমিই হলে, কেমন হতো চিন্তা করো
দুঃখিনীটা তোমার যদি মাতাই হতো কিংবা ধরো–
এমন ছবি তোমার মনে উথাল-পাথাল দেয়কি হানা
‘আমরা মানুষ সৃষ্টিসেরা’ এই কথা কি যায়রে মানা!!
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন