তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই-১ (ছন্দ প্রকরণ)
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ০৯ মে, ২০১৪, ১২:৪১:০৪ দুপুর
তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই
ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি- ডার্লিং !!!!
ওপরের লাইনদুটো উচ্চাংগের আধুনিক কবিতা, যা মুক্তছন্দে লেখা। এটি মুক্তছন্দে লেখা হলেও কিন্তু ছন্দোবদ্ধ দু'টি লাইন। এখানে ছন্দ আছে কিন্তু অন্তমিল নেই। অল্পকথায় এই হলো মুক্তছন্দের বৈশিষ্ট।
আমরা যখন ছড়া-কবিতা লিখতাম সেই ৭০ এর দশকে; আমার প্রথম ছড়া ছাপা হয় ১৯৭৭ সালে। আমার ছড়া/কবিতা ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলা, সংগ্রাম, আজাদসহ জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হতো--রুকুনুজ্জামান খান দাদাভাই আমার ছড়া প্রথম ছাপেন ইত্তেফাকে।
তখন অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ইত্যাদি ছন্দই ছিল প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত। কিন্তু মুক্তছন্দের নামে পরে আস্তে আস্তে যা এসেছে---তাতেও কিন্তু ছন্দ থাকবেই। ছন্দ ছাড়া ছড়া-কবিতা, গান হয়, তা ইদানিং শুনছি আমি।
আসলে ছন্দ হলো এসবের প্রাণ। সুলিখিত ও উপযুক্ত শব্দ-বাক্যে গঠিত ছড়া-কবিতা-গানকে আবৃত্তি বা পাঠের সময় যে রিদম ও দ্যোতনার ঢেউ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের হৃদয়-মনকে উদ্বেলিত-আন্দোলিত করে, তাইতো ছন্দ। ছন্দের আকর্ষণেই ছড়া-কবিতা পড়তে মজা পাওয়া যায়।
অথচ অন্তমিলবিহীন মুক্তছন্দের নামে অনেকেই আজকাল রাতারাতি কবি বনে যাচ্ছেন দেখে আমার মাঝে মাঝে হাসিও পায়। আবার যারা শুধু অন্তমিলকেই ছন্দ মনে করে--কবি মধুসুদনের ভাষায় ''শব্দে শব্দে বিয়ে দিলেই কবিতা হয়না'' তারাও বোকামী করেএদের উচিৎ আধুনিক বা গদ্যকবিতা মুক্তছন্দের কবিতা কী বা কাকে বলে তা মধু কবির লেখা থেকে শিখে নেয়া। তার অন্তমিলবিহীন অনেক সনেট অথবা অমিত্রাক্ষর ছন্দের কবিতাগুলো পড়লেই তারা বুঝবে অন্তমিল ছাড়াও দারুণছন্দের কবিতা হয়।
আসলে ছন্দছাড়া ছড়া-কবিতা ও গানের অস্তিত্বই নেই-এটা এরা জানেই না। ছন্দ ছাড়া যা হত--তা আর পদ্য নয় স্রেফ গদ্যই হয়ে যায়; তাকে কবিতার আকারে বা পত্রিকার কলামের আকারে সাজালেই তা কবিতা হয়ে যায়না। তাই যারা ভাবে--পত্রিকার কলামের মত কিছু লাইন কবিরার আকারে সাজিয়ে লিখলেই আধুনিক মুক্তছন্দের কবিতা হয়ে গেলো, তারা ভুল করে!
তাইতো দেখি-- এক্ষণএমন কবিতার নামে পত্রিকার পাতা আজকাল ভরেই যায়খন্নো দেশের সবাই কবি এবং কবিতা লেখা কতোইনা সহজ?? এসব লেখায় না থাকে পড়ার আকর্ষণ আর না থাকে মুন্সিয়ানা। পড়তে চরম বিরক্তি লাগে। সংশ্লিষ্ট কবি ছাড়া এসব লেখা আজকাল কেউ পড়ে বলে আমার মনে হয়না। তবে এর ফাকে কিছু কিছু ভাল কবির ভাল কবিতাও যে ছাপা হয়না, তা কিন্তু নয়। আমি নিজেই সেসব পড়ে রসাস্বাদন করি।
আমাদের সময় পত্রিকায় সাহিত্যপাতা দেখতেন একজন করে প্রকৃত সাহিত্যিক এবং অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে সেসব পত্রিকায় আমাদের লেখা ছাপা হতো। তখন দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুতোষ পাতা দেখতেন রুকুনুজ্জামান খান দাদাভাই, দৈনিক বাংলা দেখতেন কবি আফলাতুন, দৈনিক আজাদ দেখতেন আবু নসরত মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, সংগ্রাম দেখতেন জয়নুল আবেদীন আজাদ, ছড়াকার সাজ্জাদ হোসাইন খান প্রমুখ। কিন্তু এখন তার তেমন বালাই নেই। শিশু বা সাহিত্যপাতার বিভাগীয় সম্পাদক প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক না হলেও সমস্যা নেই। মুক্তছন্দের নামে তথকথিত কবির যেমন অভাব নেই তেমনই প্রকৃত সাহিত্যিক একজন বিভাগীয় সম্পাদক না হলেও সমস্যা হয়না; সেই পাতাগুলো চালানোর লোকের অভাব এখন নেই।
আমি মনে করি, মুক্তছন্দের নামে যারা পত্রিকার কলামের মত করে ছন্দহীন কিছু লাইন সাজিয়ে কবিতা লেখে, তারা কোনোদিনই ভাল কবি হবেন না। আর তা পত্রিকায় ছাপা হলেই খুশি হবারও কারণ নেই। তাই লিখতে হলে ছন্দ শিখতেই হবে। নতুবা কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব, থেকেই যাবে??(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২৩৯৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিষয়টি সুন্দর করে উপস্থান করার জন্য ধন্যবাদ বাদশা ভাই।
আমি একটা কবিতা লিখতে চাই।
মনের কথাগুলো বলেছেন। ছন্দ ছাড়া যদি কবিতা হয় তাহলে পৃথিবীতে প্রেয়সীকে লক্ষ্য করে লিখা ভালবাসার সব চিঠিই পদ্য কবিতা।
গভীর রাতে তোমাকে স্মরণে আতকে উঠি। হারিয়ে যাই তোমার ভালবাসার অচিনপুরে। যেখানে শুধু আমি আর তুমি।
এ চিঠিটিই বর্তমানে পদ্য কবিতা। শুধু মাত্র প্রত্যেকটি লাইনকে আলাদা করে দেয়া।
এসব কবিতা কোন ভাল আবৃত্তিকারকে দিয়ে ঢং করে না পড়ালে মজা নেই। কাজেই যারা এ আবৃত্তি জানেনা, তাদের কাছে এসব কবিতার কোন রস নেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন