ব্রিটিশ আইনে ইসলামিক শরীয়া ল' প্রথমবারের মতো সলিসিটর্সদের দ্বারা গাইড লাইন পেতে যাচ্ছেঃ আর মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের অবস্থান কী?
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৩২:১৮ দুপুর
ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো ইসলামিক শরীয়া ল ব্রিটিশ আইনের দ্বারা সলিসিটর্সদের জন্য গাইড লাইন পেতে যাচ্ছে বলে ডেইলি টেলিগ্রাফ ২৫ মার্চ এক নিবন্ধে জানিয়েছে।
গ্রাউন্ড ব্রেকিং গাইডেন্সে হাই ষ্ট্রীট সলিসিটির্স ফার্ম এখন থেকে হয়তো ইসলামিক শরীয়া আইনে উইল লিখতে পারবে, যে শরীয়া আইনে নারী পুরুষের সমান ইনহ্যারিটেন্স অধিকার স্বীকার করেনা-আন্ডার দিস গাইডেন্স, এই ডকুম্যান্টস ব্রিটিশ আইনে স্বীকৃত হতে যাচ্ছে বলে টেলিগ্রাফ মন্তব্য করেছে।
টেলিগ্রাফ আরো জানিয়েছে, কেউ চার্চে কিংবা মন্দিরে বিয়ে করে সম্পত্তি ভাগের এই শরীয়া উইল-এর প্রটেকশন পাবেনা, কেননা শরীয়া আইন কেবলমাত্র মুসলিম সমাজের শরীয়া সম্মত বিয়েকে বৈধ স্বীকৃতি দেয়।
ব্রিটিশ ল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস ফক্স টেলিগ্রাফকে বলেছেন, “আন্ডার দ্য গাইডেন্স অব শরীয়া-ল” ব্রিটিশ লিগ্যাল সিস্টেমে “ভেরি গুড” এক প্র্যাকটিস হিসেবে ইসলামিক শরীয়া নীতিমালা এপ্লাই করা হব।
ব্যারোনেস কক্সসহ অনেকেই এই শরীয়া আইনের বিরোধিতা করছেন। কোন কোন সলিসিটর্স বলছেন, শরীয়া আইন ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটিতে প্যারালাল আইন হিসেবেই আছে, গাইড লাইন এতে অনেক জটিলতার সৃষ্টি করবে। ব্যারোনেস কক্স ইসলামিক শরীয়া আইন ব্রিটিশ আইনের সাথে ডিভোর্সসহ চাইল্ড কাষ্টডি ইত্যাদি বিষয়ে অনেক সমস্যাকে চিহ্নিত করে তিনি এর বিরোধিতা করছেন।তিনি বলেন, প্রত্যেকের নিজস্ব স্বাধীনতা ও নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি স্বাধীনতা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত কিন্তু পার্টিকুলারলি যখন আইনি ব্যাপারে এই ধর্মীয় বিশ্বাসকে সার্বজনীন আইনে স্বীকৃত দেয়া হয়, তখন অন্যান্য ভ্যালুজ ও কাস্টমস আহত হয়, যা কারোও কাম্য নয়-ইত্যাদি।
ব্রিটেনের আইনে এখনো শরীয়া আইন রিকগনিশন বা স্বীকৃত নয়, যদিও কিছু কিছু শরীয়া নেটওয়ার্ক, মসজিদ এবং ইসলামিক কাউন্সিল যথেষ্ট স্বীকৃত পন্থায় ইসলামিক ডিভোর্স ও চাইল্ড প্রটেকশন ও চাইল্ড কাষ্টডি নিয়ে ব্রিটিশ আইনের সাথে মিলে কাজ করছে।শরীয়া নেটওয়ার্কের কাজের পরিধির ফলে এবং কিছু কিছুক্ষেত্রে শরীয়াকোর্টের রেফারেন্স অবশ্যিক হওয়াতে ব্রিটিশ ট্র্যাডিশনাল আইনের স্বীকৃত ও সলিসিটর্স গাইড লাইন পেতে মস্কসহ ইসলামিক কাউন্সিল স্থানীয় কাউন্সিলসহ লেজিসলেটিভ সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করার ফলে এমন গাইড লাইনের কথা জাস্টিস ডিপার্টম্যান্ট এখন ভাবছে।
পার্লামেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে অবগত ইসলামিক শরীয়া আইন, ইসলামিক ডিভোর্স ও চাইল্ড কাষ্টডি নিয়ে মসজিদ ও কাউন্সিল শরীয়া আইনে কাজ করার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির জন্য তাই মিডিয়েশনের অফারের কথা ভাবছে, সেজন্যে পার্লামেন্টে সাজেশন এসেছে, শরীয়া ল` এডজাষ্ট এর বিপরীতে মিডিয়েশনের।
টেলিগ্রাফের মতে ব্রিটেনে ৮৫টির মতো শরীয়া বডি এখন কাজ করছে, এবং পার্লামেন্ট বা জাস্টিস সেক্রেটারি এই শরীয়া আইন ব্রিটিশ আইনের মাধ্যমে সলিসিটর্সদের জন্য গাইডলাইন করে দেয়ার মধ্যমে ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো ইসলামিক শরীয়া আইন স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। শরীয়া আইনের ড্রাফটে ১৮৩৭ সালের এক্ট- যা ইসলামিক আইনে স্বীকৃত নয়, সেটার উপর ভিত্তি করে এখন নতুন করে গাইড লাইন আসছে।
ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির কিথ পরর্টোয়াস উড বলেন, শরীয়া গাইড লাইন ব্রিটেনের ডেমোক্রেটিক আইনি ইষ্টাবলিশম্যান্ট এবং সোসাইটিকে আন্ডারমাইন হিসেবে দেখে তিনি বলছেন বিগত ৫০০ বছরে চলে আসা ব্রিটিশ ট্র্যাডিশনাল আইনের উন্নতি ও সেক্রিফাইসকে ম্লান করে দিবে ।
ইসলামিক শরীয়া ল বিষয়ে ব্রিটিশ ল সোসাইটির সলিসিটর্সদের জন্য গাইড লাইন ইস্যুর ঘোষণা দেয়ার ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হোডার্সফিল্ডের লেবার দলীয় এমপি বারী শ্যেরম্যান পার্লামেন্ট ও হোম এফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির যৌথ ইনিকোয়ারির আহ্বান জানিয়েছেন। পার্লামেন্ট মেম্বাররা বলছেন, ল-সোসাইটির শরীয়া আইনের প্রতি লিগ্যাল ষ্ট্যাম্প ব্যাপক ভাবে প্রচারে বরং প্রচলিত আইনের সাথে বিশেষ করে নারী পুরুষের ইকুয়াল শেয়ার রাইটের ক্ষেত্রে ইলিজিটিমেইট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পার্লামেন্ট মেম্বাররা বলছেন শরীয়া আইনের প্রতি ব্রিটিশ ল সোসাইটির সমর্থন ওয়েক-আপ-কল মাত্র, যা তাদের মতে সোসাইটি এই শরীয়া আইন অনুমোদন প্রমোট করেনা।
বারী শ্যেরম্যানের মতে, আমাদেরকে সিরিয়াসলি এখন সিলেক্ট কমিটির সিস্টেম নিয়ে ভাবতে হবে।কেননা এই ইস্যু পলিটিকাল পার্টির উপর আঘাত করবে।এখনি আমাদের সচেতন হতে হবে এবং এ বিষয় অবশ্যই অপেনলি ডিসকাসড হতে হবে।
সাবেক টোরি এমপি লুইস ম্যাঞ্চ বলেন, এটা টোটালি আন-এক্সসেপ্টেবল। তিনি আরো বলেন এটা ক্লিয়ারলি কেবল মাত্র মিনিস্টার, সরকার ও ল সোসাইটির বিষয় নয় যে, শরীয়া আইনের ব্যাপারে সলিসিটর্সদের জন্য গাইডলাইন প্রদান করে ইসলামিক শরীয়া আইনে উত্তরাধিকার আইন ও উইল লেখার অনূমোদন প্রদান করা হবে, যেখানে নারীদের জন্য সমান অধিকার স্বীকার করেনা এবং চাইল্ড কাষ্টডি ও চাইল্ড প্রোটেকশনের ব্যাপারে ট্র্যাডিশনাল আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান।
কমন্স সভার জাস্টিস কমিটির জেরেমি করবিন এমপি বলেন এটা প্রয়োজনের সময়েই এখন সামনে চলে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইনার পিটার টেচ বলেন, ল-সোসাইটি কমপ্লিটলি রঙ।
ল-সোসাইটি বলছে, আমরা মাল্টি-ফেইথ সোসাইটিতে বসবাস করছি। সোসাইটির রিকুয়েস্টের প্রেক্ষিতে ল-সোসাইটি মুসলিম শরীয়া আইনে উইল ড্রাফট লেখা ও ব্রিটিশ আইনে এডপ্ট করার জন্য গাইড লাইন ইস্যু করেছি। ল সোসাইটি পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে এনি ভ্যালিডিটেশন অবশ্যই ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইন অনুযায়ী হতে হবে এবং সেভাবেই ফলো করা হবে।
পার্লামেন্টের ইনকোয়ারি আহ্বানের পর এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখেই ধারণা করা হচ্ছে, এই ইস্যুতে ইংল্যান্ডের রাজনীতি ও পার্লামেন্টে বেশ সরব আলোচনা চলবে, অন্তত: আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। (সংগ্রহঃ)
বিষয়: বিবিধ
১১১৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন