বাংলাবানান ও শব্দগঠনঃ ভুল শুধু ভুল-১
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:০৫:১২ দুপুর
ইদানিং আমাদের বানানের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা লক্ষ্যনীয়। আমরা যে যেমন পাচ্ছি লিখে যাচ্ছি সঠিক বানান বলে। আমাদের পত্রিকাগুলোও এক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করে চলেছে বাংলাএকাডেমীর প্রমিত বানানের অজুহাতে। একেক পত্রিকার একেক রকম বানানরীতিও গড়ে উঠেছে, যা হাস্যকর।
ফলে আমাদের বানানেও ভুল খুব বেশীই (বেশি) হয়ে যাচ্ছে আজকাল। ১৯৯০ সালের আগের বই-পুস্তক খুঁজে দেখলেই আমার কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে। যাহোক, আমিও এখানে পুরনো রীতির বানানই বেশী ব্যবহার করেছি, যা প্রমিত বানানের সাথে সবক্ষত্রে নাও মিলতে পারে। কারণ আমি বাংলাএকাডেমীর প্রমিত বানানের সাথে সবক্ষেত্রে একমত নই। আমার যৌক্তিক নিজস্ব একটা গবেষণা আছে এ ব্যাপারে।
বিশেষ করে বাংলাএকাডেমীর বিতর্কিত বানানরীতি-প্রবর্তনের বা সংস্কারের দরুণই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি। অনেক বিতর্কই আছে এসব ব্যাপারে। এই বিতর্ক নতুন না হলেও ১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমী প্রথম ''সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান'' প্রণয়ন করার পর একটি বানানরীতিও তৈরী করায় এই জটিলতা বেড়ে গেছে।
তারা ই-কার আর ঈ-কারের বারোটা বাজালেও (বিশেষতঃ বিদেশী শব্দে) ''শহীদ'' বা ''শহীদদিবস'' এবং বাংলা একাডেমীর ''একাডেমী'' বানানগুলো কিন্তু তারা ঠিকই বহাল রেখেছে। কেনো তা আমার বোধগম্য নয়।
অধিকাংশ দেশী (দেশি) শব্দের বানানে ঢালাও ই-কার ব্যবহারের রীতি চালু করায় যেমন সমস্যা তৈরী তৈরি হচ্ছে তেমনই একই জিনিসের একাধিক বানানও তৈরী (তৈরি) হয়েছে, যা এখানে আমি একাধিক বানানের নমুনা কিছু দেখিয়েও দিয়েছি ব্রাকেটে।
ফলে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ঈ-কারকেও অনেকেই ই-কার দিয়ে লিখে সঠিক বানান বলেই আনন্দ পাচ্ছে। যেমন অহরহ দেখছি-অঙ্গীকারকে (অঙ্গিকার), পক্ষীকে (পক্ষি), হস্তীকে (হস্তি) ইত্যাদি লিখে চলেছে। আবার এফএম রেডিওগুলো বাংলিশ নামের এক বিকৃত বাংলা চালু করেছে, যা ভবিষ্যতে ভাষার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে বলে আমার আশঙ্কা। যদিও সম্প্রতি উচ্চ আদালত কর্তৃক সর্বত্র বাংলালিখনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলিশবন্ধকরণসহ, দেখা যাক কী হয়?
মানুষমাত্রে ভুল হতেই পারে--আমিও তার ওপরে নই। যে কারুর ভুল ধরিয়ে দেয়া যেমন ভালো তেমনই তা সংশোধন করে নেয়াও উদারতার লক্ষণ। আমি এখানে কঠিন ব্যাকরণ নয়, কিছু সাধারণ বানান বা শব্দগঠন নিয়ে লিখবো, যা আমরা ভুলভাবে লিখে থাকি।
মনে রাখতে হবে--বাংলাশব্দগঠন বা বানানের ক্ষেত্রে সন্ধি, উপসর্গ, কারক, সমাস ইত্যাদির ভূমিকা অপরিসীম। আমরা বড়ভাইকে অবলীলায় স্পেস দিয়ে বড় ভাই, বিমানবন্দরকে বিমান বন্দর, পাঁচটাকাকে পাঁচ টাকা, বিজয়দিবসকে বিজয় দিবস, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় লিখে থাকি, যা ভুল। এসব নামবাচক শব্দ বা বিশেষ্য পদ একাধিক শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে, যা পৃথক করলে অর্থ ঠিক থাকেনা আর ব্যাকরণের নিয়মও খাটেনা।
উপর্যুক্ত বানানে ব্যাকরণের কারক এর প্রভাব খুব বেশী; যেমন- কলেজের ছাত্র এর সপ্তমী বিভক্তি লোপ পেয়ে হবে কলেজছাত্র, তেমনি বড় যে ভাই-হবে বড়ভাই। বিমান নামে যে বন্দরে-হবে বিমানবন্দর। কিন্তু একে যদি লিখেন বিমান আর বন্দর আলাদা আলাদাভাবে তবে তা আর বিমানবন্দর হিসেবে একটি নামবাচক শব্দ থাকেনা বরং হয়ে যায় আলাদা দুটো শব্দ বিমান এক জায়গায় আর বন্দর আরেকখানে।
প্রধান যে শিক্ষক হবে প্রধানশিক্ষক একশব্দেই, যা ইংরেজীতে আলাদাভাবে হয় হেড মাস্টার। তেমনই বঙ্গোপসাগর গঠিত হয়েছে-বঙ্গ, উপ, সাগর এই তিন শব্দের সন্ধির নিয়মে যা শুনতে ভাল্লাগে। অনেকেই শুনলে অবাক হবেন-এমন কিছু বাংলাশব্দ এতোই লম্বা যে, বিশ্বাসই হবেনা; যেমন- ভারতমহাসাগর, হ-য-ব-র-ল, শাখাপ্রশাখাযুক্ত, জাতিধর্মবর্ণগোত্রনির্বিশেষে ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা লিখতে গিয়ে একাধিক শব্দে গঠিত একটি শব্দকে স্পেস দিয়ে কতো টুকরো যে করে ফেলি। আর বাংলাএকাডেমী বানানের এই জটিলতা সৃষ্টি করায় আমরাও তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। (ক্রমশঃ)
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের মত অনেক আনাড়ি লোকরাও আজ ব্লগিং, ফেইসবুকিংয়ের সুবাদে লেখালেখির সাথে জড়িত হয়ে গেছি। যদিও প্রচলিত সাহিত্য বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমাদের লেখাগুলো বিচার্য কোন সাহিত্যেপাদান নয়। তার পরেও আমরা ফ্রি ল্যান্সিংয়ের সুযোগে নিজের অনুভুতিগুলো প্রকাশ ও প্রচার করেই যাচ্ছি।
আজকাল মোবাইল কোম্পানীগুলো তো আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে তারা ইংরেজী অক্ষর দিয়ে আমাদেরকে বাংলা বানান শিখাতে দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন! অথচ তারা গ্রাহকদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন চটকদার অফারগুলো সরাসরি বাংলাতেই বার্তা পাঠাতে পারতেন। কিন্তু তারা সেদিকে আগ্রহী না।
সাধারণত: এই ধরণের মৌসুমী লেখা বছরের একটা বিশেষ সময়ে-ই দৃষ্টিগোচর হয়। এপ্রিল যাই যাচ্ছি করছে আর এমন (অ)সময়ে আপনার বানান নিয়ে দু:শ্চিন্তা আপনার ভাষার প্রতি মমত্ববোধকে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে !
আপনি যে ভুল লিখতে গিয়ে “ভূল” করেননি সেজন্য সাধুবাদ না জানিয়ে পারছি না ।
অনেকের কম্পিউটারে কিছু বিশেষ বাংলা শব্দ কম্পোজের অক্ষমতা, অজ্ঞতা, যুক্তাক্ষর বর্জন প্রবণতা এমনকি দ্রুত লেখার প্রচেষ্টা-ও বানানের ধর্ষণযজ্ঞ বাড়িয়ে দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না । যেমন, উৎপাদন হয়ে গেছে উতপাদন ।
কোথায় স, শ, ষ লিখতে হবে আমাদের সে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়েছে । ড. না ডঃ হবে সে ঘূর্ণিপাকে আমরা এখনো চক্কর খাচ্ছি । মাদ্রাসা পড়ুয়ারা অনেকে খোদ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাদরাসা লিখছে এবং লেখাপড়ার বদলে লিখাপড়া করছে !
চন্দ্রবিন্দু তো হারিয়ে যাবার পথে...
সামনের দিনগুলোতে হিন্দীর প্রভাবে পড়ে বাংলার অপভ্রংশ হিসেবে বাংদী নামক শংকর জাতীয় ভাষা ও বানানের উদ্ভব হলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না ।
আপনি পরবর্তী পর্বগুলো লিখতে থাকুন । পরে আরো মন্তব্য করা যাবে ।
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : বাংলা বানান নিয়ে খুব টেনশানে আছি । আমার মনে হয় অনলাইনে বাংলা বানানের উপর পাঠশালা থাকা দরকার ।
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত--চলেন আমরা চালু করি এমন সাইট।
আমার কথা হলো আজই করা হোক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন