আপনার লিভার ঠিক আছেতো? হেপাটাটিস ভাইরাস থেকে বাচুন!!
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ২২ মার্চ, ২০১৪, ১১:০০:৪২ সকাল
হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসঃ এ ভাইরাসটি মলের মাধ্যমে ছড়ায়। মলত্যাগের পর ব্যবহৃত হাত ভালোভাবে পরিষকার না করলে মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাছাড়া দূষিত পানি এবং খাদ্যের মাধ্যমেও ছড়িয়ে থাকে। এটি ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়াতে পারে। এ ভাইরাস সাধারণত শিশু ও কিশোরদের আক্রান্ত করে না। এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় রোগীই স¤পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসঃ এ ভাইরাসটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, ব্লেড, কাঁচি, চায়ের কাপ, পানির গ্লাস, মুখের লালা, অপারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্তগ্রহণ, যৌনসংসর্গ, গভীর চুম্বনের মাধ্যমেও অন্যের দেহে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি রোগীর বুকের দুধ, গায়ের ঘাম, প্রস্রাব ও বীর্যের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এ ভাইরাসটি শিশু-কিশোরদের তুলনায় বড়দের বেশি আক্রান্ত করে। এ ভাইরাসটিকে ঘাতক ভাইরাস বললেও ভুল হবে না। কারণ এটা বেশ বিপজ্জনক এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে বছরের পর বছর ভোগাতে পারে। এমনকি শেষে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারও হতে পারে, যার ফলাফল প্রাণঘাতী।
হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসঃ এ ভাইরাসের সাথে বি ভাইরাসের মিল রয়েছে। এটিও রোগীর রক্তের মাধ্যমে বিস্তারলাভ করে। তাছাড়া যৌনসংসর্গ, রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ইত্যাদির মাধ্যমেও বিস্তারলাভ করে। বি-ভাইরাসের মতো এটাও মারাÍক। এর আক্রমণে রোগী অনেক বছর পর্যন্ত ভুগতে পারে এবং লিভারে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে শয্যাশায়ী বা মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।
হেপাটাইটিস-ডি ভাইরাসঃ একে ডেল্টা ভাইরাসও বলা হয়। এটা সাধারণত রোগীর ব্যবহৃত দূষিত সিরিঞ্জ, ছুরি, কাচি ও অস্ত্রোপচারকৃত যন্ত্রের মাধ্যমে অন্যের দেহে প্রবেশ করে। তবে যকৃৎ বা লিভার বি-ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে কেবল তখনই এই ভাইরাস দেহে প্রবেশ করে বিস্তার লাভ করতে পারে এবং রোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।
হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসঃ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের সাথে যেমন সি-এর কিছু সাদৃশ্য আছে, তেমনি হেপাটাইটিস-এ-এর সাথে হেপাটাইটিস-ই-এর মিল আছে। যেমন দূষিত পানি ও মলের মাধ্যমে ছড়ায়। বাচ্চাদের খুব একটা আক্রমণ করে না। তবে কখনো কখনো এ ভাইরাস বেশি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ Prevention is Better than Cure ] এই কথাটি ভাইরাল হেপাটাইটিসের বেলায় সত্যিকার অর্থে প্রযোজ্য। কারণ এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তাই এর প্রতিরোধে আমাদের উচিৎ নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানীয় পান করা, দূষিত খাদ্য বর্জন করা। যেমন-রাস্তার পাশের বা হোটেল-রেস্তোরাঁর খোলা খাবার গ্রহণ না করা। নিজের বাসা-বাড়িতে তৈরি খাদ্যদ্রব্য যথাসম্ভব ঢেকে রাখা, খাবার আগে ও মলত্যাগ করার পর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, কাঁচি, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা, স্যালুনে যথাসম্ভব সেভ করা থেকে বিরত থাকা, ইনজেকশনের জন্য নতুন ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা, অন্যের শরীর থেকে রক্তগ্রহণের পূর্বে সেই রক্ত ভাইরাসমুক্ত কিনা নিশ্চিত হওয়া, হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত (বিশেষ করে বি ও সি) ব্যক্তির সাথে দৈহিক স¤পর্ক থেকে বিরত থাকা, কখনো হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা এবং সময়মতো হেপাটাইটিস-বি-এর টিকাগ্রহণ করা।
হেপাটাইটিস-বি এক প্রাণঘাতী ব্যাধিঃ হেপাটাইটিস ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা অর্থ লিভার বা যকৃতের প্রদাহ। এই প্রদাহ যখন হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন বলা হয় হেপাটাইটিস-বি। এই রোগটি সাধারণত যৌনমিলন, আক্রান্ত রোগীর রক্ত শরীরে গেলে, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, অশুদ্ধ পানি বা খাবারের দ্বারাও সংক্রমিত হতে পারে।
এর লক্ষণ ও উপসর্গঃ হেপাটাইটিস-বি এমন একটি রোগ যা তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করে শরীরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। যখন রোগীর লিভার বা যকৃৎ অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে-রক্ত পরীক্ষা করলে বোঝা যায় শিরায় বিলিরুবিনের মাত্রা অর্থাৎ জন্ডিস কতটা ও হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আছে কি না, অর্থাৎ এইচবিএসএজি পজিটিভ কি না। এর আগে বুকের ডান পাশে হালকা ব্যথা হতে পারে। অজীর্ণ বা বদহজমের ভাব এমনকি আলসারের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
হেপাটাইটিস-বি-র বিপদঃ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণে লিভারের কোষগুলো তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। এ পর্যায়ে লিভারের প্রায় সব কোষই নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই বলা হয় সিরোসিস অব লিভার। তাছাড়া লিভার ক্যান্সারও এ রোগের অন্যতম প্রধান জটিলতা। অন্যান্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম আর্থ্রাইটিস ও কিডনির সমস্যা। আবার রোগের উপসর্গ প্রদর্শন না করেও এ রোগের বাহক হিসেবে কেউ কেউ অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ ভাইরাস হেপাটাইটিস চিকিৎসায় ওষুধের ভূমিকা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা ভিটামিন জাতীয় কিছু ওষুধ দেন, যা শরীরে কোনো ক্ষতি করে না। আবার রোগও সারায় না। তবে হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে স¤পূর্ণ বিশ্রামে রেখে ওষুধ না খাওয়ালেও রোগটি নিজে থেকেই সেরে যায়। খাওয়ার পানি যেন অবশ্যই ভালো করে ফোটানো হয় এবং টাটকাখাবার খাওয়ানো হয় । এ সময় রোগীকে ভাত, রুটি, সুজি, বার্লি, শাক-সবজি, গ্ল“কোজ, মাখনবিহীন দুধ, ছানা, চর্বিহীন মাছ খাওয়াতে হবে। এ সময় খাওয়ায় অরুচি থাকে বলে রোগীর খাদ্য সহজপাচ্য ও মুখরোচক হওয়া চাই। তবে রোগীকে বেশি করে পানি খাওয়ানো উচিৎ। শিশুদেরও বিশ্রামে রাখুন। এক্ষেত্রে শিশুর যদি রক্তের শিরায় বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি না হয় তাহলে খেলাধুলাও খেলতে দিন যদি চায়। এ রোগ হলে অন্যদেরও সাবধানে রাখুন। রোগীর ব্যবহারসামগ্রী বা বাসনপত্র আলাদা করে দিলে অন্যের সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদা রেখে পুরোপুরি বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাদ্য, বিশেষত গ্ল“কোজ, ফলের রস ও সহজপাচ্য অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়। রোগী যদি একেবারেই খেতে না পারে, সেক্ষেত্রে স্যালাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটাতে হবে।
হেপাটাইটিস-বি এর টিকা ৪টি ডোজ নিতে হয়। প্রথম ৩টি ডোজ ১মাস পরপর এবং ৪র্থ ডোজটি প্রথম ডোজের ১২ মাস বা ১ বছর পর নিতে হয়। অর্থাৎ ০, ১, ২ ও ১২ মাস। এছাড়া আরেকভাবেও এ টিকা দেয়া যেতে পারে। ০, ১ ও ৬ মাস অর্থাৎ ১ম ডোজের ১ মাস পর ২য় ডোজ এবং ৬ মাস পর ৩য় ডোজ দিতে হবে।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, উইকিপিডিয়া এবং ইন্টারনেট)
বিষয়: বিবিধ
১৪৮০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক শুকরিয়া জানাই
++++++++++++++++++
তবে উদ্দেশ্য থাকে জনকল্যাণ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন