নারীনির্যাতনঃ শুধু আইন নয়, জীবনবোধ পরিবর্তন এবং আইন মানার মানসিকতা জরুরি
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৭:০৭:১৮ সন্ধ্যা
নারী ও শিশুরা এদেশে-সমাজে খুবই অবহেলিত। কিন্তু তাদেরতো ন্যায্য অধিকার আছে সম্মান পাবার এবং দায়িত্বও আছে সমাজের প্রতি। তবে কেনো আজ নারী-শিশুর নির্যাতন বেড়েই চলছে.... আইন যতই বাড়ছে নারীনির্যাতন ততই বাড়ছে নতুন মোড়কে। তাহলে আইনে কী লাভ?
আবার মানুষের মনগড়া আইনের বৈষম্য দেখুন-- আদালত ফাঁসির রায় দিলেও আমাদের সংবিধানের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এমন নরপিচাশের দণ্ডও মওকুফ করে দিতে পারেন!! তাহলে এতদিন মামলা চালানোর কী দরকার? জজকোর্ট, হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্ট করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে কী লাভ? কার অপরাধ কে ক্ষমা করে দেখুন আমাদের আইন!! যদিও ইসলামে এমনক্ষেত্রে হত্যাকারীর নিকট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কর্তৃক সমঝোতার ভিত্তিতে রক্তঋণ আদায়ের আদায়ের একটা চমৎকার পদ্ধতি দিয়েছে, যেখানে উভয়পক্ষই লাভবান হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের আইন-সংবিধান, একজনের অপরাধ ক্ষমার অধিকার দিয়েছে তৃতীয়পক্ষ আরেকজনকে, যা সরাসরি বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক।
নারীদের শিক্ষিত করার জন্য কতই না চেষ্টা, কতই না শ্লোগান এ সমাজের বড় বড় মানুষদের। কিণ্তু যাদের মাধ্যমে নারীরা শিক্ষার আলো জ্বালাবে, তাদের কেউ কেউ কি প্রকৃতই শিক্ষক নাকি নির্যাতক-দুষ্কৃতিকারী। কেনইবা এমন হচ্ছে-হিতেই বিপরীত এবং রক্ষকরাই ভক্ষক হচ্ছে? শিক্ষক হয়েও ছাত্রীদের প্রতি ফেলছে লোলুপদৃষ্টি, করছে ধর্ষণ, করছে ছাত্রীর ভিডিও-পর্ণ নির্মাণ!!
এর প্রধান কারণ কী? আসলে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা, ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে আমাদের নিদারুণ অজ্ঞতা-এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবেই এমনটি ঘটছে। আল্লাহভীতি না থাকলে মানুষ পশু হতেই বাধ্য, হোক সে পিতা আর শিক্ষক। আরবের জাহিলিয়াত যুগ আর নবীর আগমের পর বদলে যাওয়া সাহাবীদের চরিত্রের দিকে তাকালেই আমার কথা প্রমাণ মিলবে।
যৌতুক, শিশুনির্যাতন, নারীনির্যাতন নিয়ে শুধু মানববণ্ধন, মিডিয়ায় খবর প্রচার করলেই হবেনা, সমাজের মানুষদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শুধু আমাদের আইন কঠোরতর করলেই হবেনা। নতুন আইন তৈরি করলেই চলবেনা। এদেশে প্রায় সাড়ে চারহাজার আইন চালু আছে, যদিও প্রয়োগ তেমন নেই?
তাই আমাদের আগে আইন মানার মানসিকতা দরকার, হজরত ওমর, আবুবকরদের (রাঃ) মতোন চরিত্রবান মানুষই আগে বানাতে হবে। পরকালীন শাস্তির ভয়, জবাবদিহির ভয় ছাড়া কোন অপকর্ম বা নির্যাতনই বন্ধ হবার নয়। এটা আমাদের নবী (সাঃ) প্রমাণ করেই দেখিয়েছেন।
আমি কেনো নারীকে সম্মান করবো এবং এতে আমার কীইবা লাভ? তাই ইসলাম বলে-মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেস্ত। সৎ নারীই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যে পিতা নারীশিশুদের প্রকৃত শিক্ষিত করে যথাযথ লালন-পালন করবে, সে বেহেস্ত যাবে ইত্যাদি। অথচ ইতিহাসে এবং বর্তমানেও বিভিন্ন দেশে ও ধর্মে নারীদের যৌনদেবী, যৌনদাসী, ভোগ্যপণ্য, ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। নারীরা যথাযথ অধিকার আদৌ পাচ্ছেনা। আবার নারীরাও সুযোগ পেলে পুরুষনির্যাতনসহ কতোই না অপরাধ করে থাকে! এটাই আসলে মানুষের একটা স্বভাব সে হোক পুরুষ কি নারী??
যে সন্তান মাকে সম্মান করে, সে কোন নারীকেই অসম্মান করতে পারেনা। মাকে, বউকে বা নারীকে সম্মান না করলে পরকালে শাস্তি হবেই--এমন ভীতি থাকলেই কেবল সম্ভব নারীর সম্মান বাড়ানোর। আমরা বুড়ো মা-বাপকেই অসম্মান করি--বিশেষত বিয়ের পর অসহায় মা-বাবাদের ছুঁড়ে ফেলি দুরে, তারা ভিক্ষে করেও দিন চালায়। আর এমন ধরণের বেকুব পুরুষ কি করবে অন্য নারীকেও সম্মান??
দেখবেন--নারীকে অসম্মান করে, লাঞ্চিত করে, পণ্য বানায়, ভোগ্যযন্ত্র ভাবে শুধু অধার্মিক বা ধর্মবিমুখ লোকেরাই। আলেম ওলামারা সাধারনত নারীদের লাঞ্চিত করেনা। বাপ-মাকে ফেলে দেয়না। আমরা অধিকাংশ সাধারন শিক্ষিতরাই যত অপকর্মের মূল; কারণ আমরা নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং পরকালীন শাস্তিকে পরোয়া করিনা।
ধর্ষক, নির্যাতকরা কোন ধর্মেরই ধার ধারেনা বা জাত-ধর্ম, বর্ণের বিচার করেনা। তাই মুসলিম বা হিন্দুর মেয়ে ধর্ষিত হলেই কোনো বৈষম্যের অজুহাত চলবে না। দল-মত-জাতি-ধরম-বর্ণনির্বিশেষে ধর্ষকের ফাঁসী হওয়াই উচিৎ,নারীনির্যাতনকারীর কঠিন শাস্তি নিশ্চিত হওয়াই দরকার। শুধু আইন চাইনা, চাই আইনের সঠিক বাস্তবায়ন এবং নিরপেক্ষ প্রয়োগ? এটাই ইসলামী আইনের মূলকথা, যা সবার জন্যই উপকারী।
মানুষকে শুধু শাস্তি দিয়ে শুদ্ধ করার পন্থা সঠিক নয়--দরকার জবাবদিহিতামূলক জীবনবোধ, মাইনসেট কিংবা মানসিকতা তৈরি করে দেয়া। এজন্যই চাই ইসলামী শিক্ষা-তা যেভাবেই হোক। দরকার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক ইসলামী নৈতি্কতামূলক শিক্ষা। মানুষের মত মানুষগড়ার মত পাঠ্যসূচি। এ দায়িত্ব কেবল আলেমদের নয় রাষ্ট্রের।
বিষয়: বিবিধ
১১৬১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জীবনবোধ যদি হয়--ইসলামী--সে ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
পুরুষ নির্যাতন হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন