আল-কুরআন ও তার সুমহান মর্যাদা = পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন ইসলামী দৃষ্টিকোণ ২১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৬:২৬ সকাল
প্রশংসা করছি সেই মহান আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেছেন, যা সৃষ্টিকুলের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী। দরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যিনি হিদায়েত ও রহমত নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী, আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তিনি তাঁর পথে আহ্বানকারী এবং আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর ও তার পরিবার পরিজন, সাহাবায়ে কিরাম ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণকারী সকলের উপর সালাত প্রেরণ করুন।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকূলের উপর বিশেষ করে মু’মিনের উপর অনুগ্রহ দান করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। তিনি তার সাথে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা অন্যান্য সব কিতাবের রক্ষক। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪]
সহীহ মুসলিমে এসেছে:
عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: «أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ، مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا، كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَإِنَّ اللهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ، فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ، إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ، وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ، تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ...... »
সহীহ মুসলিমে ‘ইয়াদ ইবন হিমার আল-মুজাশি‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুতবায় বলেছেন, জেনে রাখো, আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যা কিছু জানো না তা যেন তোমাদেরকে শিখিয়ে দেই, যে ইলম আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আজ পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যেসব সম্পদ আমি আমার বান্দাহকে দান করেছি তা হালাল এবং নিশ্চয়ই আমি আমার সকল বান্দাহকে জন্মগতভাবেই নিষ্কলুষ তথা সরল সঠিক পথের অনুসারী করে সৃষ্টি করেছি। এরপরে শয়তান তাদের নিকট এসে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং আমি যা তাদের জন্য হালাল করেছি শয়তান তা তাদের উপর হারাম করে দিয়েছে। তদুপরি শয়তান আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে আদেশ দেয় যে সম্পর্কে আমি কোনো দলিল প্রমাণ অবতীর্ণ করি নি। আর আল্লাহ তা‘আলা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে আরব অনারব সবার প্রতি (তাদের কার্যকলাপের কারণে) ক্রোধান্বিত হলেন। কেবল আহলে কিতাবের কিছু সংখ্যক লোক যারা সঠিক পথকে ধরে রেখেছে (তারা স্রষ্টার রোষ থেকে রক্ষা পেলো)। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে পরীক্ষা করা ও আপনার দ্বারা সৃষ্টিকুলকে পরীক্ষা করা এ দু’উদ্দেশ্যে আপনাকে জগতে প্রেরণ করেছি। এবং আমি আপনার উপর এমন কিতাব নাযিল করেছি যা পানি ধুয়ে মুছে ফেলতে পারে না। তা আপনি শয়নে জাগরণে সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করতে পারেন [1]।
এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের রক্ষাকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ ٨ ﴾ [المائدة: ٤٨]
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে।” [সূরা আল-মায়েদা: ৪৮]
অর্থাৎ এটি পূর্ববর্তী সব কিতাব থেকে সুউঁচু ও মর্যাদাবান। অন্যান্য কিতাবের রক্ষাকারী, ফয়সালাকারী, সাক্ষ্যদানকারী ও মূল্যায়ণকারী।
ইবন জারীর রহ. বলেন, আল কুরআন পূর্ববর্তী সব কিতাবের আমানতদার ও নিরাপত্তাদাতা। সুতরাং যা কিছু কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা সঠিক, আর যা কুরআনের সাথে বিরোধপূর্ণ হবে তা বাতিল।
সব মুসলিমের অন্তরে আল কুরআনের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। এটি নিজেই মহিমান্বিত, সম্মানিত, মর্যাদাবান ও শক্তিশালী।
আমরা এ পুস্তিকাতে ইশারা ইঙ্গিতে সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোকপাত করব। আশা করি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন, সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ ও যার কাছে এ বাণী পৌঁছবে সকলেই উপকৃত হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্বশ্রোতা ও দো‘আ কবুলকারী।
আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতায় শুরু করছি:
القرآن (আল কুরআন) শব্দটি قرأ মূলধাতুর মাসদার। এ শব্দ থেকেই আল্লাহর বাণী:
﴿ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [القيامة: ١٧، ١٩]
“এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমাদেরই দায়িত্ব। অতঃপর আমরা যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব”। [সূরা আল-কিয়ামাহ: ১৭-১৮]
পঠিত বাক্যকে কুরআন বলা হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী:
﴿ فَإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨ ﴾ [النحل: ٩٨]
“অতএব, যখন আপনি কুরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।” [সূরা আন-নাহল: ৯৮]
আল-কুরআন প্রকৃতভাবেই আল্লাহর বাণী, এর শব্দাবলী ও অর্থও আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকেই এসেছে। তিনি তা তাঁর বান্দা মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ওহী আকারে নাযিল করেছেন।
এটা নাযিলকৃত কিন্তু মাখলুক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ تَنزِيلُ ٱلۡكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١ ﴾ [الزمر: ١]
“কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আয-যুমার: ১]
﴿ قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ ١٠٢ ﴾ [النحل: ١٠٢]
“বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা আপনার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করেছেন”। [সূরা আন-নাহল: ১০২]
﴿ حمٓ ١ تَنزِيلُ ٱلۡكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٢ ﴾ [غافر: ١، ٢]
“হা-মীম। কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ”। [সুরা গাফির: ১-২]
﴿ تَنزِيلٞ مِّنَ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٢ ﴾ [فصلت: ٢]
“এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে”। [সূরা ফুসসিলাত: ২]
﴿وَقُرۡءَانٗا فَرَقۡنَٰهُ لِتَقۡرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكۡثٖ وَنَزَّلۡنَٰهُ تَنزِيلٗا ١٠٦﴾ [الاسراء: ١٠٦]
“আর আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ধীরে ধীরে এবং আমরা তা নাযিল করেছি যথাযথভাবে।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ১০৬]
এ ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে। উম্মতের সকল উলামা কিরাম এ মতের উপর ঐকমত্য পোষণ করেছে।
আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন। আবার তিনি সেটাকে নানা বিশেষণে বিশেষিত করেছেন। এর দ্বারাই এ কিতাবের সুমহান সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। কুরআনের নামসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আল কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব, আল-হুদা (হিদায়েতের পথ প্রদর্শনকারী), নূর (আলো), শিফা (আরোগ্যকারী), বায়ান (বর্ণনাকারী) মাও‘য়েযা (সুপদেশ), রহমত, বাসায়ের (অন্তর্দৃষ্টি দানকারী), বালাগ (প্রজ্ঞাপন), আরবী, মুবীন (স্পষ্টকারী), কারীম (অতি সম্মানিত), আযীম (মহান), মাজীদ (সম্মানিত), মুবারক (বরকতময়), তানযীল (অবতীর্ণ), সিরাতুম-মুসতাকিম (সরল সঠিক পথ), যিকরুল হাকীম (প্রজ্ঞাময় বাণী), হাবলুল্লাহ (আল্লাহর রশি), যিকরা (উপদেশ), তাযকিরা (স্মরণিকা), বুশরা (সুসংবাদ), পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী, পূর্ববর্তী কিতাবের রক্ষাকারী, মাসানী, সব বিষয়ের ব্যাখ্যাকারী, সব বিষয়ের বর্ণনাকারী, সন্দেহাতীত ও বক্রহীন কিতাব ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿ قُرۡءَانًا عَرَبِيًّا غَيۡرَ ذِي عِوَجٖ لَّعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ ٢٨ ﴾ [الزمر: ٢٨]
“আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে।”[ সূরা যুমার:২৮]
﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِ ﴾ [الفرقان: ١]
“পরম কল্যাণময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন।” [সূরা আল-ফুরকান: ১]
﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [البقرة: ١، ٢]
“আলিফ লাম মীম, এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা আল-বাকারা: ১-২]
﴿ قُلۡ مَن كَانَ عَدُوّٗا لِّـجِبۡرِيلَ فَإِنَّهُۥ نَزَّلَهُۥ عَلَىٰ قَلۡبِكَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِينَ ﴾ [البقرة: ٩٧]
“আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের এবং মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সুরা বাকারা: ৯৭]
﴿ ذَٰلِكَ نَتۡلُوهُ عَلَيۡكَ مِنَ ٱلۡأٓيَٰتِ وَٱلذِّكۡرِ ٱلۡحَكِيمِ ٥٨ ﴾ [ال عمران: ٥٨]
এটা তো তা-ই যা আমরা আপনাকে পড়ে শুনাই, আয়াত এবং প্রজ্ঞাময় যিকির থেকে।” [সূরা আলে-ইমরান: ৫৮]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُم بُرۡهَٰنٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ نُورٗا مُّبِينٗا ١٧٤ ﴾ [النساء: ١٧٤]
“হে লোকসকল, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট দলীল-প্রমাণাদি পৌঁছে গেছে। আর আমরা তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা আন-নিসা: ১৭৪]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [يونس: ٥٧]
“হে লোকসকল, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে উপদেশবাণী এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলিমদের জন্য।” [সূরা ইউনুস: ৫৭]
﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَبِيرٗا ٩ ﴾ [الاسراء: ٩]
“নিশ্চয় এ কুরআন প্রদর্শন করে সর্বাধিক সরল পথের দিকে এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে রয়েছে মহা পুরস্কার।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَىٰ عَبۡدِهِ ٱلۡكِتَٰبَ وَلَمۡ يَجۡعَل لَّهُۥ عِوَجَاۜ ١ قَيِّمٗا لِّيُنذِرَ بَأۡسٗا شَدِيدٗا مِّن لَّدُنۡهُ وَيُبَشِّرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرًا حَسَنٗا ٢ ﴾ [الكهف: ١، ٢]
“সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেন নি কোনো বক্রতা। সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।” [সূরা কাহাফ, আয়াত ১-২]
﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]
“বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ”। [সূরা বুরূজ, আয়াত ২১-২২]
﴿ إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ تَنزِيلٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ ﴾ [الواقعة: ٧٧، ٨٠]
“নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” [সূরা ওয়াক্বি‘আ, আয়াত ৭৭-৮০]
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াতে এই মহাগ্রন্থের নানা নাম ও গুণাবলীর কথা উল্লেখ হয়েছে, যা এর সুমহান মর্যাদা, সর্বোচ্চ সম্মানের প্রমাণিত হয়। কেনইবা হবে না? এর কথক হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয়ের সর্বজ্ঞানী। তিনি বলেনঃ
﴿ وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٧ ﴾ [لقمان: ٢٧]
“পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা লোকমান, আয়াত ২৭]
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]
“নিশ্চয় আমরা স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমরা নিজেই এর সংরক্ষক”। [সূরা হিজর, আয়াত ৯]
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কুরআনের যে সব নাম বা সিফাত রয়েছে তার প্রত্যেকটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আলোচনা অতিদীর্ঘ হওয়ার ভয় না হলে বাকী নামসমূহ বিস্তারিতভাবে এখানে আলোচনা করতাম। এ সম্মানিত কিতাবের সবচেয়ে বড় মহত্ব হলো এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই নিয়েছেন। কোনো সৃষ্ট জীবের কাছে এর হিফাযতের দায়িত্ব দেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]
“বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ”। [সূরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা নিন্মোক্ত আয়াতে
﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]
“আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।” [সূরা হিজর, আয়াত ৯] কুরআনের সংরক্ষণ ও সূরায়ে বুরুজে সংরক্ষণের জায়গা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে কোনো ধরণের সংযোজন ও বিয়োজন থেকে মুক্ত রেখেছেন, এর অর্থ বিকৃতি, শব্দ পরিবর্তন ও সংরক্ষণ করেছেন। এর হরফসমূহ সব ধরণের বাড়ানো বা কমানো থেকে এবং অর্থসমূহ বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন।
আল্লাহর কিতাব আল কুরআন সব ফিতনা ফাসাদ থেকে মুক্ত, তা মু’মিনের নিত্যসঙ্গী, অন্তরের আলো, হৃদয়ের বসন্ত, দুঃশ্চিন্তা দুর্ভাবনা দূরকারী। আল্লাহর কিতাব আমাদের পূর্ববর্তীদের ও পরবর্তীদের সংবাদদাতা, পরস্পরের মাঝে ফয়সালাকারী। তা চিরন্তন ফয়সালা, কোনোরূপ হাসি তামাশার জিনিস নয়। যেসব আল্লাহদ্রোহীরা তাকে ত্যাগ করেছে আল্লাহ তার প্রতিশোধ নিয়েছেন, কেউ তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোথাও হিদায়াত অন্বেষণ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তা আল্লাহ তা‘আলার শক্ত রজ্জু, প্রজ্ঞাময় উপদেশবাণী, সরল সঠিক পথ, যা কখনো পথভ্রষ্ট করে না, কাউকে দ্বিধা সংকোচে ফেলে না, উলামায়ে কিরামগণ কখনো এর মহাজ্ঞান বিজ্ঞান অর্জনে পরিতুষ্ট হতে পারবে না (তারা আরো বেশি বেশি অর্জন করতে চাইবে), অধিক উত্তর প্রদানের পরও তা পুরাতন হয় না। এর বিস্ময় শেষ হবার নয়, এর উপদেশ চিরন্তন। তা জ্বীন সম্প্রদায়কে বিরত রাখতে পারেনি যখন তারা এর তিলাওয়াত শ্রবন করেছিল, তখন তারা বলেছিল,
﴿ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ ﴾ [الجن: ١]
“আমরা (জ্বিন জাতি) বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি।” [সূরা আল জিন: ১]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدِ اُعْطِيَ مِنَ الْآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকে তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের প্রায় অনুরূপ মু‘জিযা দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর লোকেরা তাঁর উপর ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যে মু‘জিযা দেওয়া হয়েছে তা হলো অহী (আল কুরআন), যা আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর নাযিল করেছেন। আমি আশা করি কিয়ামতের দিবসে তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক হবে।”[2]
কুরআনের শব্দ ও বর্ণনার অলৌকিকতা:
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের শব্দ ও বর্ণনার বিস্ময়করতা সম্পর্কে বলেন,
﴿وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ ﴾ [البقرة: ٢٣]
“এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে যা আমরা আমাদের বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস আর তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।” [সূরা আল-বাকারা: ২৩]
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন