আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়: তাওবা
লিখেছেন লিখেছেন ইসলামী দৃষ্টিকোণ ০৭ মার্চ, ২০১৪, ১০:২০:৫৫ রাত
তাওবার গুরুত্
৮৮
আল্লাহ তা’আলার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন।
আল্লাহ তা’আলা নিজেই মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]
“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তাওবা [প্রত্যাবর্তন] কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা নূর আয়াত: ৩১]
আর যারা তাওবা করে না, তাদের আল্লাহ তা’আলা যালেম বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ١١ ﴾ [الحجرات: ١١]
“যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী”।[1]
উলে¬খিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক- তাওবাকারী, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম। দ্বিতীয়- যারা তাওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এ দুই ভাগের মধ্যে কোন তৃতীয় ভাগ নাই। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন ভাগের অন্তর্ভূক্ত হবো?
বান্দা যখন কোন অপরাধ করে আল্লাহর নিকট ফিরে যায় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অধিক খুশি হন। যেমন, আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان راحلته بأرض فلاة فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه فأيس منها فأتى شجرة فاضطجع في ظلها قد أيس من راحلته فبينما هو كذلك إذ هو بها قائمة عنده فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح : اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح " . رواه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি তার বাহন সাওয়ারী নিয়ে কোন জনমানব শূন্য প্রান্তরে অবস্থান করছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারীটি পালিয়ে গেল। সাওয়ারীটির সাথে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সাওয়ারীটি খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়া-তলে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার সাওয়ারীটি তার পার্শ্বে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে অধিক খুশিতে তার সাওয়ারীর লাগাম চেপে ধরে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টা-পাল্টা বলে ফেলল”।[2]
হে মুসলিম ভাই! মনে রাখবেন, আল্লাহ আমাদের হিসাব নেয়ার আগে আমরা আমাদের নিজেদের হিসাব করে নিব। আল্লাহ আপনার হিসাব করার পূর্বে আপনার হিসাব আপনি করুন। তাতে আপনার হিসাব দেয়া সহজ হবে।
যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করুন এবং আপনি আপনার হিসাব করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন কোন কাজ করছেন কি, যা সঠিক আক্বীদা পরিপন্থী/ দ্বীনের স্তম্ভ সালাত কায়েমে আপনার কোন দুর্বলতা আছে কি? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি যথাযথ ভাবে আদায় করছেন কি/ আপনি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন কি?
এখনো তওবা দ্বারা ক্ষমা করা হয়। তবে তওবা কাকে বলে, তাওবার অর্থ কি এবং তাওবা কবুল হওয়ার শর্ত কি? তা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। তাই আমরা নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো আলোচনা করব। আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।
তাওবার সংজ্ঞা
তাওবা কাকে বলে?
খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায়Ñঅবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক লোকেরা মনে করে, শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ক্ষমা চাওয়া বা তা থেকে ফিরে আসার নাম তাওবা। কিন্তু তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেই ঠিক না। বরং, এ ক্ষেত্রে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ-অন্যায়। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করার চেয়ে আরও বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা মারাত্মক অপরাধ ও বড় গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।
মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী। যেমনÑ আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]
“হে ঈমাদারগণ তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে”।[3] উলে¬খিত আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মানব যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকেও তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবা করাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না।
তাওবাতুন নাছুহা কি?
মনে রাখতে হবে, তাওবা হল মানুষের অন্তরের আন্তরিক প্রচেষ্টা, অনুশোচনা। অর্থাৎ, মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা বা তাওবাকে তাওবাতুন নাছুহা বলা হয়। আরও মনে রাখবে, আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে।
জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ত্যাগ করা এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
"إذا تاب العبد توبة نصوحا، أحبه الله فستر عليه " فقلت: وكيف يستر عليه؟ قال: " ينسى ملكيه ما كانا يكتبان عليه، ويوحى إلى جوارحه وإلى بقاع الأرض أن اكتمي عليه ذنوبه، فيلقى الله ـ عز وجل ـ حين يلقاه وليس شيء يشهد عليه بشيء من الذنوب ".
“যখন কোন বান্দা আল্লাহর কাছে খালেস তাওবা-তাওবায়ে নাছুহা- করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে মহব্বত করেন এবং তার যাবতীয় গুনাহ গোপন করে রাখেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কীভাবে গোপন করে রাখেন? তিনি বললেন, উভয় ফেরেশতা তার বিরুদ্ধে যা লিপিবদ্ধ করত, তারা তা লিখতে ভূলে যায় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি ও জমীনের -ভূ-খণ্ডের-প্রতি নির্দেশ দেন- তোমরা তার গুনাহগুলো গোপন রাখ! তখন তারা গুনাহগুলো গোপন রাখে। ফলে যে দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তার কোন গুনাহ থাকবে না- যা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
যে কারণে তাওবা করতে হবে
আর মনে রাখতে হবে, তোমাকে, যে কারণে তাওবা করতে হবে, তার অন্যতম কারণ হল, যাতে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বন্দেগী করার সৌভাগ্য তোমার লাভ হয়। কারণ, গুনাহের খারাব পরিণতি হল, গুনাহের কারণে বান্দা যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয় এবং অপমান অপদস্থ হয়। গুনাহ একজন মানুষকে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের দিকে অগ্রসর হওয়া ও তাঁর গোলামীর দিকে অগ্রগামী হওয়া থেকে বাধা দেয়। এ ছাড়া যার গুনাহের বোঝা ভারি হয়ে যায়, তার জন্য নেক কাজ করা এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর হওয়া আর সহজ থাকে না। সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকার কারণে মানুষের অন্তরসমূহ কালো হয়ে যায়। ফলে অন্তরসমূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং তা পাথরের মত কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে আর কোন ইখলাস থাকে না ইবাদাত বন্দেগীতে কোন মজা ও স্বাদ উপভোগ করে না। আল্লাহ তা’আলা যদি তার প্রতি অনুগ্রহ না করেন তাহলে গুনাহ গুনাহগার ব্যক্তিকে কুফর ও বেঈমানীর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কী আশ্চর্য! যে গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত তাকে কীভাবে আল্লাহ তার গোলামীর সুযোগ দিবেন। কীভাবে তাকে তার দীনের খেদমতের জন্য ডাকবেন যে সর্বদা তার নাফরমানীতে মশগুল এবং অবাধ্যতায় নিমগ্ন। কীভাবে তাকে মুনাজাতের জন্য কাছে টেনে আনবে যে ময়লা আবর্জনা ও নাপাকীতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
إذا كذب العبد تنحى عنه الملكان من نتن ما يخرج من فيه فكيف يصلح هذا اللسان لذكر الله عز وجل
“যখন কোন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন তার মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয় তাতে তার থেকে দুইজন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। ফলে এ জিব্হা কীভাবে হবে আল্লাহর যিকির করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে?”[4] সুতরাং, এতে বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নাই, যে লোক আল্লাহর নাফরমানী ও তার হুকুমের বিরোধিতার উপর অটল থাকে, সে কখনো আল্লাহর আনুগত্য করা ও ভালো কাজ করার তাওফীক লাভ করতে পারে না এবং তার জন্য নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে আল্লাহর ইবাদাতে কাজে লাগানো সহজ হয় না। সে যদি খরচ করে তবে তাকে অনেক কষ্টে খরচ করতে হয়, তাতে সে মানসিক স্বস্তি ও আন্তরিক তৃপ্তি পায় না এবং ইবাদাতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না। এমন হবার মূল কারণ হচ্ছে, সে সব সময় গুনাহতে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ছেড়ে দেয়। সুতরাং, আপনাকে আল্লাহর দরবারে বার বার তাওবা করতে হবে এবং গুনাহের কাজসমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يا أيها الناس توبوا إلى الله فإني أتوب في اليوم مائة مرة رواه مسلم
“হে মানব! তোমরা আল্লাহর দরাবরে তাওবা কর। আমি দৈনিক আল্লাহর নিকট একশত বার তাওবা করি”।[5] আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি করে তাওবা করার তাওফীক দান করুন।
তাওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলী
মনে রাখতে হবে, তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়ার জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া তা কবুল হয় না।
তাওবা কবুল হওয়ার জন্য চারটি র্শত আছেÑ
এক- পূর্বের কৃত কাজের উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।
দুই- এমন কাজ দ্বিতীয় বার না করার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন- পূর্বকৃত কাজ থেকে এখনই বিরত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা।
চার- অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করার কারণে আপনার উপর যে কর্তব্য বা ঋণের দায়িত্ব বর্তায় তা পরিশোধ করা, যেমন, আপনি কাউকে গালি দিয়েছেন অথবা কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাহলে আপনার কর্তব্য হল, পাওনাদারকে তার পাওনা ফেরত দেয়া এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি অন্যায়টি অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করার সাথে সম্পর্কিত না হয়, তাহলে পূর্বের তিনটি শর্ত পূর্ণ করলেই তওবা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে আশা করা যায় যে, তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হল, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তওবা যেন তিনি কবুল করেন।
তাওবার শর্তসমূহের পরিপূরক বিষয়াবলী
এক:- শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য পাপ ও গুনাহের কাজ ত্যাগ করাকে তাওবা বলা হবে:
অন্য কোন কারণে পাপচার ত্যাগ করাকে তাওবা বলা যাবে না, যেমন;
-অক্ষমতার কারণে পাপ থেকে দূরে থাকা, এসব কর্ম করতে ভাল না লাগা অথবা লোকজন মন্দ বলবে এই ভয়ে পাপ ত্যাগ করা, এমন ব্যক্তিকে তাওবাকারী বলা হবে না।
Ñযে ব্যক্তি মানহানী ঘটা বা চাকুরীচ্যুত হওয়া বা পদ-পদবী হারানোর ভয়ে তাওবা করে, তাকে তাওবাকারী বলা হবে না।
Ñযে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করল তার শক্তি ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য; যেমন কেউ ব্যভিচার করা ত্যাগ করলো যেন দুরারোগ্য ব্যাধি-এইডস থেকে বাঁচতে পারে অথবা তার শরীর ও স্মৃতি শক্তি যাতে দুর্বল না হয়, তাহলে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না।
Ñতেমনিভাবে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে; কোন বাড়ীতে ঢুকার পথ না পেয়ে বা সিন্দুক খুলতে অসমর্থ হওয়ার কারণে কিংবা পাহারাদার ও পুলিশের ভয়ে।
Ñতাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে দূর্নীতি দমন বিভাগের লোকজনদের জোর তৎপরতায় ধরা পড়ার ভয়ে ঘুষ খাওয়া বন্দ করে দেয়।
Ñআর তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি মদ পান, মাদকদ্রব্য বা হেরোইন সেবন ইত্যাদি ছেড়ে দেয় দারিদ্রতার আশঙ্কায়।
Ñতেমনিভাবে তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে সামর্থহীন হওয়ার কারণে গুনাহ করা ছেড়ে দিলো। যেমন মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছে তার কথায় জড়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কিংবা ব্যভিচার করছে না যেহেতু সে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কিংবা চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার কারণে।
বরং এসব থেকে তাওবার জন্য অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে, সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: التوبة الندامة “অনুতপ্ত হওয়াই হল তাওবা”।[6]
মহান আল্লাহ কোন সৎ কর্ম বা অসৎ কর্ম করার আকাংখা পোষণকারী অপারগকে কর্ম সম্পাদনকারীর মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আপনি জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন,
))ِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرَْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلَ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمَ للهِ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ حَقًّا، قَالَ: فَهَذَا بِأفْضَلِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً، قَالَ: فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّة، يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ مَالاً وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْماً يَخْبِطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلاَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ لِلّهِ فِيهِ حَقّاً، فَهَذَا بِأَخْبَثِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالاً وَلاَ عِلْماً فَهُوَ يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ(( رواه أحمد والترمزي وصححه.وانظر صحيح الترغيب والترغيب.
“দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য;
[১] সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন সুতরাং সে এতে তার প্রভূকে ভয় করছে, তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর হক কি তা জানছে, এ হল সর্বোত্তম অবস্থানে।
[২] সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেননি, সে হল সঠিক নিয়তের লোক, সে বলে, যদি আমার টাকা পয়সা থাকতো তাহলে উমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী সমান হবে।
[৩] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে না জেনেই তার টাকা পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হল সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানে।
[৪] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেননি জ্ঞানও দেননি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে উমুকের মতই [খারাপ কাজ] করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান।[7]
দুই:- পাপের কদর্যতা ও ভয়াবহতা অনুভব করা:
অর্থাৎ যদি সঠিক তাওবা করা হয়, তাহলে অতীত পাপের কথা স্মরণ হলেও কখনো আনন্দ ও মজা পাওয়া যাবে না অথবা কখনো ভবিষ্যতে সে সব কাজে ফিরে যাবে, এ কামনা মনে স্থান পাবে না।
ইবনুল কাইয়্যেম রহমতুল্লাহ আলাইহে তার লিখা [الداء والدواء] ‘রোগ ও চিকিৎসা’ এবং [الفوائد] ‘আল-ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থে গুনাহের অনেক ক্ষতির কথা উলে¬খ করেছেন।
তন্মধ্যে রয়েছে: জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, কাজকর্ম কঠিন হয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, রুজি রোজগারের বরকত কমে যাওয়া, কাজ কর্মে সমন্বয় না হওয়া, গুনাহর কাজে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও আল্লাহর ব্যাপারে পাপীর অন্তরে অনাসক্তি সৃষ্টি হয় এবং লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে। জীবজন্তু ও পশু পাখি তাকে অভিশাপ দেয়। পাপী ব্যক্তি সর্বদা অপমানিত হতে থাকে। পাপীর অন্তরে মোহর পড়ে যায়। পাপী ব্যক্তি লানতের মাঝে পড়ে এবং পাপীর দু’আ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। পাপীর আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। লজ্জা চলে যায়, ফলে সে যা ইচ্ছা তাই করে। নিয়ামত হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর আজাব ও বিপর্যয় নেমে আসে। পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় ও আতঙ্ক নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়। তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের উপর এবং ঈমান হারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়। পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
পাপের এই ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে, তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে। কিছু কিছু লোক এক পাপ ছেড়ে আরেক পাপ করতে শুরু করে তার কিছু কারণ হল:
১. মনে করে যে, এর পাপ কিছুটা হালকা।
২. মন পাপের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় এবং এর দিকে ঝোঁক খুবই প্রবল থাকে।
৩. অন্যটির তুলনায় এ পাপ করার জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা সহজ ও সহায়ক হয়, অন্য পাপের জন্য অনেক কিছু জোগাড় করা লাগে।
৪. তার সঙ্গী সাথীরা এ পাপের সাথে জড়িত, তাদেরকে ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়।
৫. কোন কোন ব্যক্তির নিকট বিশেষ পাপ তার তার সঙ্গী সাথীদের মাঝে মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য সে চিন্তা করে যেন তার অবস্থান সে ধরে রাখে এবং এ পাপ অব্যাহত রাখে, যেমনটি ঘটে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানদের বেলায়।
তিন- তাড়াতাড়ি তাওবা করা:Ñ
যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরী করাটাই পাপ।
চার- আল্লাহর হক আদায় করা:-
আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন যাকাত দেয়া যা সে পূর্বে দেয়নি। কেননা এতে আবার দরিদ্র লোকজনের অধিকারও রয়েছে।
পাঁচ- পাপের স্থানকে ত্যাগ করা:-
কারণ যেখানে পাপ করছে, যদি সেখানে অবস্থান করে, আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।
ছয়- স্থান ত্যাগ করা:Ñ
যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করা। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে না পারলে আবারও সে পাপে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
﴿ ٱلۡأَخِلَّآءُ يَوۡمَئِذِۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ إِلَّا ٱلۡمُتَّقِينَ ٦٧ ﴾ [الزخرف: ٦٧]
“আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া”।[8]
খারাপ সাথীরা একে অপরকে কিয়ামতের দিন অভিশাপ দিবে। এজন্য হে তাওবাকারী, আপনাকে এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ও এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যদি আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে অপারগ হন। শয়তান যেন আপনার ঘাড়ে আবার সওয়ার হবার সুযোগ না পায় এবং আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কুপথে নিয়ে না যায়। আর আপনি তো জানেন যে, আপনি দুর্বল তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনেক লোকই তার পুরাতন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার পর আবার পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
সাত- নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা:-
যেমন মাদক দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, হারমনিয়াম, অথবা ছবি, ব্লু ফ্লিম, অশ্লীল নভেল নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই সব জাহেলিয়াতের জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে দেখা যায়, এসব হারাম জিনিসই তাওবাকারীর পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর দ্বারাই সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট সঠিক পথে টিকে থাকার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
আট- ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করা:-
ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করতে হবে, যারা তাকে দ্বীনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবং এরা হবে খারাপ সঙ্গী সাথীর বিকল্প। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ইলমী আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ রয়েছে, যেন শয়তান তাকে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সুযোগ না পায়।
নয়Ñ হারাম বর্জন করে হালাল ভক্ষণ করা:
নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাকে সে হারাম দিয়ে প্রতিপালন করেছে। একে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগাতে হবে এবং হালাল রুজি খেতে হবে যেন শরীরে আবার পবিত্র রক্ত-মাংস সৃষ্টি হয়।
দশÑ গরগরা তথা মৃত্যুক্ষণ আসার পূর্বে তাওবা করা:
তাওবা দম আটকে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাবার [মৃত্যুর পূর্বক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার] পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবার পূর্বে হতে হবে। গরগরার অর্থ হল কণ্ঠনালী হতে এমন শব্দ বের হওয়া যা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হল কিয়ামতের পূর্বেই তাওবা করতে হবে তা ছোট কিয়ামত হোক [মৃত্যু] বা বড় কিয়ামতই হোক [পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া]। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من تاب إلى الله قبل أن يغرغر قبل الله منه “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে গরগরা উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন”।[9]
এগার- সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করা:
কারণ, হাদীসে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها تاب الله عليه “যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবুল করবেন”।[10]
গুনাহের প্রকার ও তার থেকে প্রতিকারের উপায়
গুনাহ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
১. আল্লাহ তা’আলা বান্দার উপর যে সকল ইবাদাত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া। যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় না করাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাফ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদাত ছুটে গিয়েছে তা শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে আদায় করে নেয়া। আর যদি পরে আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যে ক্ষেত্রে তার বিকল্প আছে, যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া, তা আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, কিংবা যে ক্ষেত্রে কোন বিকল্প নেই, তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট হতে তাওবার মাধ্যমে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
২. আল্লাহর হক ও নির্দেশ অমান্য করে গুনাহসমুহে লিপ্ত হওয়া। যেমন: মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
৩. আল্লাহর বান্দা তথা মানুষের অধিকার লংঘনজনিত পাপ ও গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক। এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে-
[ক] ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত অধিকার লংঘন, এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছেন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটির নিকট হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা মাফ করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে, লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ করিয়ে নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন।
[খ] মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমনÑ হত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
[গ] মানুষের সম্ভ্রম হরণ করা। যেমনÑ গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে, তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে যাতে আল্লাহ তাকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে, আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং এভাবে তার জন্য বেশী বেশী দু’আ করবে।
[ঘ] ইজ্জত হরণ: যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা। এ বিষয়ে করণীয় হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অধিকার ফেরত দেয়া এবং তাওবা করা।
গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিক
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, মনে রাখতে হবে, গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও খারাব পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল। যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই।
১- ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া:
ইলম হল নূর বা আলো যা আল্লাহ তা’আলা মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন। আর গুনাহ হল, অন্ধকার, যা ইলমের নুর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়। ফলে, ইলম ও গুনাহ এক সাথে এক পাত্রে সহাবস্থান করতে পারে না। তাই গুনাহের কারণে বান্দা দীনি ইলম হতে বঞ্চিত হয়।
২- রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া:
গুনাহের কারণে বান্দা রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إن العبد ليحرم الزرق بالذنب يصيبه “বান্দা গুনাহের লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়”।[11]
৩- গুনাহ ও পাপাচার মানুষের দেহ এবং আত্মাকে দুর্বল করে দেয়:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চেহারা উজ্জল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায় ও আয় রোজগারে বরকত হয়, দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানুষের অন্তরে অপরের প্রতি মহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ফলে তাকে কেউ ভালো চোখে দেখে না।
৪- আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে পাপী ব্যক্তি বঞ্চিত হয়:
যদিও গুনাহের কারণে দুনিয়াতে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদাত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে। গুনাহকে ঘৃণা করা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং গুনাহ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করে না। এমনকি সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সমালোচনা করে, তারপরও সে কোন অপরাধ বা অন্যায় করতে লজ্জাবোধ বা খারাপ মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বেঈমান হয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين وإن من الإجهار أن الله سترعلى العبد ثم يصبح يفضح نفسه ويقول يا فلان عملت اليوم كذا وكذا وكذا فيهتك نفسه يستره ربه, رواه البخاري والمسلم
‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র প্রকাশ্য পাপী ছাড়া। আর প্রকাশ্যে পাপ করা হল, আল্লাহ কোন বান্দার অপকর্মকে গোপন রাখল কিন্তু লোকটি তার নিজের অপকর্ম প্রকাশ করে নিজেকে অপমান করে এবং বলে থাকে, হে ভাই! আমি আজ অমুক অমুক কাজ করেছি - ইত্যাদি। এভাবে সে তার নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করে অথচ আল্লাহ তার গুনাহকে গোপন রাখে”।[12]
৬- গুনাহ করাকে হালকাভাবে দেখা:
বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। আর এটাই হল ধ্বংসের নিদর্শন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
أن المؤمن يرى ذنوبه كانه في أصل جبل يخاف أن يقع عليه وأن الفاجر يرى ذنوبه كذباب رفع على أنف فقال به هكذا فطار – ذكر البخاري في الصحيح
“একজন মুমিন সে গুনাহকে এমন ভাবে ভয় করে যে, সে যেন একটি পাহাড়ের নিচে আছে আর আশংকা করছে যে পাহাড়টি তার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে একজন বদকার ব্যক্তি সে তার গুনাহকে মনে করে তার নাকের উপর একটি মাছি বসে আছে হাত নাড়া দিল আর সে চলে গেল”।[13]
৭-গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়:
কারণ হল, সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহ আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যা কিছু করা হবে, তাই অপমান অপদস্থের কারণ হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ جَمِيعًاۚ١٠ ﴾ [فاطر: ١٠]
‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহই জন্য”।[14]
অর্থাৎ, ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ সে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাবে না।
৮- গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়:
মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভেয়ে দেয়, ফলে গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়।
৯- গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়।
যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٤ ﴾ [المطففين: ١٤]
অর্থাৎ ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছেন”।[15]
এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
عن أبي هريرة - رضِي الله عنه - قال: قال رسول الله - صلَّى الله عليه وسلَّم -: إنَّ المؤمن إذا أذنَبَ كانت نكتة سوداء في قَلبِه، فإنْ تاب ونزَع واستَغفَر صقل قلبه، وإنْ زاد زادتْ حتى يعلو قلبه ذاك الرين الذي ذكر الله - عزَّ وجلَّ - في القُرآن: ﴿كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴾ [المطففين: ১৪].
অর্থ: যখন কোন মু’মিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। আর যখন মু’মিন আবারো গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘কক্ষনো না, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে।’’[16] (সূরা মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৪)
১০- গুনাহ অভিশাপকে টেনে আনে:
গুনাহ বান্দাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগার ও পাপীদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন - সুদগ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনি ভাবে চোরের উপর অভিশাপ করেছেন। গাইরুল্লাহর নামে জাবেহকারী, ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারী সহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেন।
১১-গুনাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।
কেননা আল্লাহ তার নবীকে নর-নারী সকলের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।
গুনাহ করার পর তাওবার সুযোগ
গুনাহ যত ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না। যদি কোন কারণে আপনার থেকে -ছোট হোক বা বড় হোক- কোন গুনাহ প্রকাশ পায় আপনি সাথে সাথে সে গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে খালেস তাওবা করে নেবেন। অন্যথায় ছোট গুনাহও যখন বার বার করা হয়ে থাকে তখন তা আর ছোট থাকে না, তখন তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং তা আপনার জন্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আপনি জেনে রাখুন [আল্লাহ আপনার প্রতি ও আমার প্রতি দয়া করুন] পরাক্রমশালী আল্লাহ তার বান্দাদের নিষ্ঠার সাথে তাওবা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর [প্রত্যাবর্তন কর]।[17] ’’ আমরা যখন কোন গুনাহ করি, কিরামান কাতিবীন [ফেরেশতা] সাথে সাথে আমাদের গুনাহ লেখেন না। তারা আমাদের কারো গুনাহ্ লিখার পূর্বে আমাদেরকে তাওবা করার জন্য অনেক সুযোগ দেন। যখন বান্দা গুনাহ করার পর তাওবা করে, তখন তার গুনাহ সাথে সাথে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যখন সে তাওবা না করে, তখন তার গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন কোন অপরাধ করে, তাকে সময় দেয়া হয়। তার গুনাহ লিখা হয় না। যখন সে তাওবা করে, তখন তার গুনাহ লিখা হয় না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যদি ক্ষমা না চায়, তখন একটি গুনাহ লিখা হয়। আর একজন মুমিন বান্দা যখন বিশ বছর পরও তার গুনাহের কথা স্মরণ করে তার রবের নিকট ক্ষমা চায়, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর গুনাহ করার পর ব্যক্তি অনেক সময় তার অপরাধ ভুলে থাকে। আল্লাহ বান্দার গুনাহগুলো মাফ করার জন্য অপেক্ষা করেন এবং তিনি তার হাতকে বাড়িয়ে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إن الله ـ تعالى ـ يبسط يدهُ بالتوبة لمسيء الليل إلى النهار ولمسيء النهار إلى الليل حتى تطلع الشمس من مغربها ".
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত পেতে রাখে, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত পেতে দেয়। এটি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।[18]
গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার পরিণতি
বর্তমান যুগের সমস্যা হল, অনেক মানুষই আল্লাহকে ভয় করে না, তারা রাতদিন বিভিন্ন রকমের গুনাহ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ আবার গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এজন্য দেখবেন এদের কেউ কেউ সগীরা গুনাহকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যেমন বলে, একবার খারাপ কিছু দেখলে অথবা কোন বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করলে কি-ই বা ক্ষতি হবে?
অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিস যেমন পত্র-পত্রিকার খারাপ দৃশ্য বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে নজর দেয়, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে এটি হারাম, তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে, এতে কতটুকু গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন নিম্নোক্ত দুটি বর্ণনার সাথে যা ইমাম বুখারী উলে¬খ করেছেনÑ
এক: আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
]إنكم لتعملون أعمالاً هي أدق في أعينكم من الشعر، كنا نعدها على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم من الموبقات[ والموبقات هي المهلكات.
তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।[19]
দুই: ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أن المؤمن يرى ذنبه كالجبل فوقه يخاف أن يقع عليه، والمنافق يرى ذنبه كذباب مر على أنفه فاطاره
“একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়”।[20]
এরা কি বিষয়টির বিপদ উপলব্ধি করতে পারবে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস পাঠ করবে;
"إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوا بِبَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى حَمَلُوا مَا أنْضَجُوا بِهِ خُبْزَهُمْ وَإنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يَأخُذُ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكُهُ" وَفِي رِوَايَةٍ: "إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُـلِ حَتَّى يُهْلِكَنَّهُ"
“তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ হল ঐ লোকদের মত যারা কোন মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি [জ্বালানি কাঠ] সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত এতটা লাকড়ি তারা সংগ্রহ করল যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো হল। নিশ্চয় নগণ্য ছোট ছোট গুনাহতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে যখন সেই নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলো গ্রাস করবে [পাকড়াও করবে] তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, “তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়”।[21]
স্কলারগণ উলে¬খ করেছেন: যখন সগীরা গুনাহর সাথে লজ্জাশরম কমে যাবে, কোন কিছুতে ভ্রƒক্ষেপ করবে না, খোদাভীতি থাকবে না এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভক্তি হবে না তখন একে কবীরা গুনাহতে পরিণত করবে। এজন্যই বলা হয়েছে যে, لا صغيرة مع الاصرار، ولا كبيرة مع الاستغفار “ক্রমাগত পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে, তা আর কবীরা থাকে না”। অর্থাৎ, ক্রমাগতভাবে সগীরা গুনাহ করতে থাকলে তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলে কবীরা গুনাহ আর গুনাহ থাকে না, বরং তা মাফ হয়ে যায়। যার এ অবস্থা তাকে আমরা বলি, গুনাহ ছোট আপনি এদিকে দৃষ্টি দিবেন না, বরং আপনি দৃষ্টি দিবেন এদিকে যে, আপনি কার অবাধ্যতা করছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ال عمران: ١٣٥]
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে বসে অথবা যুলম করে নিজেদের প্রতি, সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে ও নিজদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যে পাপ করেছে জেনে শুনে তা চালিয়ে যাওয়ার জেদ করে না।”
এ কথাগুলো দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ সত্যবাদীগণ, যারা অনুভব করছেন তাদের গুনাহের ব্যাপারটি। তারা নয় যারা তাদের গোমরাহীতে অনড়, তাদের বাতিল অবস্থার প্রতি অবিচল। এটি তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহর এ বাণীকে:
﴿ ۞نَبِّئۡ عِبَادِيٓ أَنِّيٓ أَنَا ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٤٩ ﴾ [الحجر: ٤٩]
“আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن الله ـ تعالى ـ يبسط يدهُ بالتوبة لمسيء الليل إلى النهار ولمسيء النهار إلى الليل حتى تطلع الشمس من مغربها ".
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত বাড়িয়ে রাখেন, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত বাড়িয়ে দেন। এটি ঐ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”। তেমনি যারা ঈমান রাখে এ বাণীর উপর:
﴿ وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ ٱلۡعَذَابُ ٱلۡأَلِيمُ ٥٠ ﴾ [الحجر: ٥٠]
“আর নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হল যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”।[22]
অপরাধ যত বড়ই হোক আল্লাহর ক্ষমা তার চেয়েও বড়
অপরাধ ও গুনাহ যত বড় বা বেশি হোক না কেন, যখন বান্দা তাওবা করবেন, আল্লাহ তা’আলা তার অপরাধকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আমাদের কারো মনে এমন কোন প্রশ্ন জাগে যে, আল্লাহ তা’আলা কি ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করবেন?। অপরাধ যদি বড় হয় তাও কি তিনি ক্ষমা করবেন?। তার উত্তর হল হ্যাঁ যত বড় অন্যায় হোক না কেন আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّئَِّاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥ ﴾ [الشورى: ٢٥]
“আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন”।[23] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ غَافِرِ ٱلذَّنۢبِ وَقَابِلِ ٱلتَّوۡبِ شَدِيدِ ٱلۡعِقَابِ ذِي ٱلطَّوۡلِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ إِلَيۡهِ ٱلۡمَصِيرُ ٣ ﴾ [غافر: ٣]
“তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবূলকারী, কঠোর আযাবদাতা, অনুগ্রহ বর্ষণকারী। তিনি ছাড়া কোন [সত্য] ইলাহ নেই। তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন”। [24]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء : ١١٠]
“আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[25]
যদি আপনি এ পরিমাণ অপরাধ করেন, ফলে আপনার গুনাহ আকাশ ছুঁয়ে গেল, অতঃপর আপনি লজ্জিত হয়ে ফিরে আসলেন এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার তাওবা অবশ্যই কবুল করবেন এবং আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: قال الله تبارك وتعالى: [يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان فيك ولا أبالي، يا ابن آدم لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني غفرت لك ولا أبالي، يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيتك بقرابها مغفرة .
আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমাকে পাওয়ার আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘেœ ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে, তারপরও তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘেœ তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইতে আসলে যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি, আমি জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব”।[26]
عن أنس-رضي الله عنه -عن النبي-صلى الله عليه وسلم -فيما يرويه عن ربه- عز وجل- قال: [إذا تقرب العبد إليّ شبراً تقربت إليه ذراعاً، وإذا تقرب إلي ذراعاً تقربت منه باعاً، وإذا أتاني يمشي أتيته هرولة] رواه البخاري،
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন কোন বান্দা আল্লাহর দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয়, আল্লাহ বলেন, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।[27]
একশজন লোক হত্যাকারীর তাওবা
একজন মানুষ যত গুনাহ করুক না কেন, সে যখন গুনাহ থেকে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। নিম্নে আমরা আগেকার উম্মতদের মধ্য থেকে একজন লোকের কাহিনী উলে¬খ করছি, যিনি একশ লোককে হত্যা করেন।
عن أبي سعيد الخدري أن نبي الله صلى الله عليه وسلم قال كان فيمن كان قبلكم رجل قتل تسعة وتسعين نفسا فسأل عن أعلم أهل الأرض فدل على راهب فأتاه فقال إنه قتل تسعة وتسعين نفسا فهل له من توبة فقال لا فقتله فكمل به مائة ثم سأل عن أعلم أهل الأرض فدل على رجل عالم فقال إنه قتل مائة نفس فهل له من توبة فقال نعم ومن يحول بينه وبين التوبة انطلق إلى أرض كذا وكذا فإن بها أناسا يعبدون الله فاعبد الله معهم ولا ترجع إلى أرضك فإنها أرض سوء فانطلق حتى إذا نصف الطريق أتاه الموت فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب فقالت ملائكة الرحمة جاء تائبا مقبلا بقلبه إلى الله وقالت ملائكة العذاب إنه لم يعمل خيرا قط فأتاهم ملك في صورة آدمي فجعلوه بينهم فقال قيسوا ما بين الأرضين فإلى أيتهما كان أدنى فهو له فقاسوه فوجدوه أدنى إلى الأرض التي أراد فقبضته ملائكة الرحمة قال قتادة فقال الحسن ذكر لنا أنه لما أتاه الموت نأى بصدره
“আবু সাঈদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের জাতির একটি লোক নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে, এরপর সে সবচেয়ে বড় একজন জ্ঞানী লোকের [আলেমের] খোঁজ করে, তখন তাকে একজন আবেদের কথা বলা হয়। সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি নিরানব্বই জন মানুষকে খুন করেছি, আমার তাওবা আছে কি? সে বলল, না তোমার তাওবা নাই। অতঃপর লোকটি তাকেও হত্যা করে এবং সে একশ জন লোক পুরা করে। অতঃপর সে আবারও একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির খোঁজ করলে একজন আলেমের খোঁজ দেয়া হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি একশটি লোক হত্যা করেছি, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। কে তোমার ও তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? তুমি উমুক স্থানে যাও সেখানে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদাত করে, তুমি তাদের সাথে গিয়ে আল্লাহর ইবাদাত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা, তোমার এলাকাটা খুব খারাপ এলাকা। সে তখন যাত্রা শুরু করে। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার ব্যাপারে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতারা বিবাদে লিপ্ত হয়। রহমতের ফেরেশতারা বলে, সে তাওবা করে আল্লাহর পানে ছুটে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতারা বলে, সে কখনো কোন ভালো কাজই করেনি। অতঃপর সেখানে মানুষের বেশে একজন ফেরেশতা আসে। তারা তাকে বিচারক মানে। তিনি বলেন, তোমরা দুদিকটা মেপে দেখ। সে যেদিকে নিকটবর্তী হবে, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। অতঃপর মেপে দেখা গেল যে, সে যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকটাই নিকটে। এর ফলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যায়।[28]
অপর বর্ণনায় এসেছে- সে ছিল ভাল গ্রামটার দিকে এক বিঘত পরিমাণ আগানো যার ফলে তাকে সেদিকের ধরে নেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ অহি করে দেন যেন এদিক দূরে হয়ে যায় এবং ঐদিকটা নিকটে হয়ে যায় এবং বলেন এর মধ্যখান মাপো যার ফলে তারা মাত্র এক বিঘত পরিমাণ এর দিকে আগান পায়, যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়”।
একটু ভেবে দেখুন, লোকটি এত বড় অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। আমরা যারা আজকে তাওবা করতে চাই তাদের কেউ আশা করি এত বড় অপরাধী নই। তাহলে আমাদের ক্ষমা পাওয়া তো আরও সহজ। আমরা যদি খালেস মন নিয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করার জন্য উপস্থিত হই তখন আমার তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। আমাদের গুনাহ তো এ ব্যক্তির চেয়ে বেশী নয় এবং বড় নয় তাহলে হতাশা কেন? আল্লাহতো আমাদের ক্ষমা করবেনই।
তাওবা করার লাভ ও উপকারিতা
১. তাওবা দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়ঃ
কেউ হয়ত বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু তাওবা করলে আমার লাভ কি? এবং কে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি সঠিক পথে চলতে চাই কিন্তু আমার মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, যদি আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন তাহলে আমি তাওবা করতাম?
আমি তাকে বলব, আপনার ভিতরে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সে অনুভূতি ইতঃপূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে নিম্নোক্ত দুটি রেওয়ায়েত পড়েন, তাহলে আপনার মনের প্রশ্ন আশা করি দূর হয়ে যাবে।
প্রথমত: ইমাম মুসলিম আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করেন। তাতে উলে¬খ করা হয়েছে, তিনি বলেন:
فلما جعل الله الإسلام في قلبي أتيت النبي صلى الله عليه وسلم فقلت: ابسط يمينك فلأبايعك، فبسط يمينه فقبضت يديّ قال: مالك يا عمرو ؟ قال: قلت أردت أن أشترط، قال (تشترط بماذا؟) قلت: أن يغفر لي. قال: (أما علمت يا عمرو أن الإسلام يهدم ما كان قبله وأن الهجرة تهدم ما كان قبلها، وأن الحج يهدم ما كان قبله ؟).
“মহান আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামকে পছন্দনীয় করে দিলেন, তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আপনার হাত বাড়ান আমি বাইয়াত করবো। তখন তিনি হাত বাড়ালে আমি হাত গুটিয়ে নেই। তিনি বলেন, হে আমর তোমার কি হল? আমি বললাম, আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন, কিসের শর্ত? বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বললেন, হে আমর! তুমি কি জাননা যে, ইসলাম পূর্বের সবকিছু ধ্বংস করে দেয় এবং হিজরত পূর্বের সমস্ত গুনাহ ধ্বংস করে দেয়।[29]
দ্বিতীয়ত: সহীহ মুসলিমে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أن أناساً من أهل الشرك قتلوا فأكثروا، وزنوا فأكثروا ثم أتوا محمداً صلى الله عليه وسلم فقالوا: " إن الذي تقول وتدعوا إليه لحسن، ولو تخبرنا أن لما عملنا كفارة، فنزل قول الله تعالى: {وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا} الفرقان /68. ونزل: (قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله).
কিছু মুশরিক লোক মানুষ হত্যা করে এবং তারা অনেক হত্যাকান্ড ঘটায়, জিনা করে এবং অনেক ব্যভিচার করে এরপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, আপনি যা বলেন এবং যার দিকে আহ্বান করেন তা অতি উত্তম। এখন আপনি যদি আমাদেরকে জানাতেন যে, আমরা যা করেছি এর কি কাফ্ফারা রয়েছে? তখন আল্লাহর এ বাণী নাযিল হয়:
﴿ وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [الفرقان: ٦٨، ٧٠]
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে [হত্যা করা] হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন।[30] আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়।[31]
এবং এ আয়াতটিও নাযিল হয়:
﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٢، ٥٣]
“আপনি বলে দিন, [আল্লাহ বলেন] হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।”[32]
হে মুসলিম ভাই! আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাওবা দ্বারা শুধু গুনাহ মাপ হয় না বরং তাওবা আরও অনেক ফায়েদা ও লাভ রয়েছে। যেমন-
২. তাওবা দ্বারা আল্লাহর ভালো বাসা ও মহব্বত লাভ হয়:
আল্লাহ তা’আলা তাওবাকারীকে মহব্বত করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ ﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে”।[33]
৩. দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন:
তাওবা দ্বারা একজন বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]
“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”।[34]
৪. গুনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া হয়:
বান্দা যখন তার অপরাধ বুঝতে পেরে সত্যিকার তাওবা করে, তখন আল্লাহ তা’আলা শুধু তার গুনাহকেই ক্ষমা করবেন না, বরং গুনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আপনি মহান আল্লাহ তা’আলার এ বাণীকে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, তাতে আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের কী সু-সংবাদ দিচ্ছেন:
﴿ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [الفرقان: ٧٠]
“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[35]
একটু ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন এ বাণীটি, “তাদের পাপকে আল্লাহ নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন”। এতে আপনার নিকট মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। আলেমগণ বলেন, পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে:
এক: খারাপ গুণকে ভালগুণে পরিবর্তন করে দেয়া। যেমনÑ তাদের শিরককে ঈমানে পরিবর্তন করে দেয়া এবং ব্যভিচারকে পবিত্রতা ও চারিত্রিক সততায়, মিথ্যাকে সত্যবাদিতায় এবং খিয়ানতকে আমানদারীতা দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া।
দুই: তারা যে পাপ করেছে তা কিয়ামতের দিন নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া। আপনি একটু ভাল করে পাঠ করুন, তাদের পাপকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। তিনি একথা বলেননি প্রত্যেক পাপের স্থান নেকীতে পরিবর্তন করবেন। কেননা হতে পারে কম বা সমান অথবা বেশীতে পরিবর্তন করে দিবেন। এটা নির্ভর করছে তাওবাকারীর নিষ্ঠা ও পূর্ণতার উপর। আপনি কি এর চেয়ে উত্তম অনুগ্রহ আরো আছে বলে মনে করেন? আপনি মহান প্রভূর বাণীর উত্তম ব্যাখ্যা দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসে:
عن عبد الرحمن بين جبير عن أبي طويل شطب الممدود أنه أتى النبي صلى الله عليه وسلم - وفي طرق أخرى – " جاء شيخ هرم قد سقط حاجباه على عينيه وهو يدّعم على عصا حتى قام بين يديّ النبي صلى الله عليه وسلم فقال: أرأيت رجلاً عمل الذنوب كلها فلم يترك منها شيئاً وهو في ذلك لم يترك حاجة ولا داجة أي صغيرة ولا كبيرة إلا أتاها، وفي رواية، إلا اقتطعها بيمينه لو قسمت خطيئته بين أهل الأرض لأوبقتهم أي أهلكتهم فهل لذلك من توبة ؟ قال: (فهل أسلمت) قال: أما أنا فأشهد أن لا إله إلا الله وأنك رسول الله. قال: (تفعل الخيرات وتترك السيئات فيجعلهن الله لك خيرات كلهن) قال: وغدراتي وفجراتني، قال: (نعم) قال: الله أكبر فما زال يكبر حتى توارى. قال الهيثمي رواه الطبراني والبزار بنحوه ورجال البزار رجال الصحيح غير محمد بن هارون أبي نشيطة وهو ثقة، المجمع 1/36 وقال المنذري في الترغيب إسناده جيد قوي 4/113 وقال ابن حجر في الإصابة هو على شرط الصحيح 4/149.
“আবদুর রহমান বিন জুবাইর আবু তালীব শাতবুল মামদুদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসূলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কোন লোক সব ধরনের পাপ করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি [ছোট বড় সব ধরনের পাপই করেছে]।
[অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়াবাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হত তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত] এর কি তাওবা করার সুযোগ রয়েছে? তিনি বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন? সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ [পাপ] কাজ পরিত্যাগ করবেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য সব পাপকে ভাল কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, সে বার বার আল্লাহু আকবার [আল্লাহ মহান] ধ্বনি উচ্চারণ করছিল যতক্ষণ না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়”।
এখানে তাওবাকারী হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আমি ছিলাম পথভ্রষ্ট, নামায পড়তাম না, ইসলামের গন্ডির বাইরে ছিলাম, আমি কিছু ভাল কাজও করেছি, এখন তাওবা করার পর এগুলো কি ধরা হবে, নাকি সব হাওয়া হয়ে যাবে?
আপনার প্রশ্নের জবাব হল, উরওয়া ইবনে জুবাইর হতে বর্ণিত হাদীসটি। তিনি বলেন,
أن حكيم بن حزام أخبره أنه قال لرسول الله صلى الله عليه وسلم: أي رسول الله أرأيت أموراً كنت أتحنث بها في الجاهلية من صدقة أو عتِاقة أو صلة رحم أفيها أجر ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (أسلمت على ما أسلفت من خير) رواه البخاري.
হাকীম ইবনে হিজাম তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলিয়াতের যুগে দান-খয়রাত, গোলাম মুক্ত করা, আত্মীয়তা রক্ষা করা ইত্যাদি নেকীর কাজ করতাম। আমি কি এতে নেকী পাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছো, পূর্বেরগুলোকে উত্তম ভাবেই পাবে[36]।” [বুখারী]
সুতরাং, এসব পাপ ক্ষমায় পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং এসব জাহেলিয়াতের যুগের নেকী তাওবার পরে ঠিক রাখা হবে। তাহলে আর কি-ইবা বাকী থাকলো?
৫. তাওবা দ্বারা জান্নাত লাভ হয়:
তাওবা জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়। আল্লাহ তা’আলা তাওবাকারীদের গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত”।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ أُوْلَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَجَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ١٣٦ ﴾ [ال عمران: ١٣٥، ١٣٦]
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!
৬. দুনিয়াতে উত্তম জীবন উপকরণ ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান লাভ হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে করীমে এরশাদ করেন-
﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ يُمَتِّعۡكُم مَّتَٰعًا حَسَنًا إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى وَيُؤۡتِ كُلَّ ذِي فَضۡلٖ فَضۡلَهُۥۖ ٣ ﴾ [هود: ٣]
“আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন”।[37]
অর্থাৎ, দুনিয়াতে তাকে উত্তম ভোগ উপকরণ দান করবেন আর তার ইবাোত ও আনুগত্য অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেবেন।
৭. আসমান থেকে সময়মত বৃষ্টি ও তোমাদের শক্তি দান করবেন:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে হুদ আ. এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, হুদ তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলছিল,
﴿ وَيَٰقَوۡمِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا وَيَزِدۡكُمۡ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمۡ وَلَا تَتَوَلَّوۡاْ مُجۡرِمِينَ ٥٢ ﴾ [هود: ٥٢]
“হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও অতঃপর তার কাছে তাওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না”।[38]
৮. দু’আ কবুল হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে সালেহ আ. এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সালেহ তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলছিল,
﴿ ۞وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَٰلِحٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَٱسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِيهَا فَٱسۡتَغۡفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِۚ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٞ مُّجِيبٞ ٦١ ﴾ [هود: ٦١]
আর সামূদ জাতির প্রতি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই সালিহকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আবাদের ব্যবস্থা করেছেন । সুতরাং তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁরই কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমার রব নিকটে, সাড়াদানকারী’।[39]
৯. তাওবার দ্বারা যাবতীয় বলা-মুসিবত ও আল্লাহর আযাব দূর হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
﴿ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمۡ وَأَنتَ فِيهِمۡۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ مُعَذِّبَهُمۡ وَهُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ٣٣ ﴾ [الانفال: ٣٣]
আর আল্লাহ এমন নন যে, তাদেরকে আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আযাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে। সূরা আনফাল, আয়াত:
তাওবার দ্বারা পেরেশানি দূর হয়, বিপদ থেকে মুক্ত পায় এবং রিযিক বৃদ্ধি পায়:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. এরশাদ করেন
مَن أكثَرَ من الاستغفار جعَلَ الله له مِن كلِّ همٍّ فرجًا، ومن كلِّ ضيقٍ مخرجًا، ورزَقَه من حيث لا يحتَسِب.
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করে, আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত পেরেশানীকে দূর করে দেয়, সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করে এবং তাকে তার ধারণাতীত রিযিক দান করে”।[40]
তাওবার ক্ষেত্রে রাসূল সা. এর অনুসরণ
আল্লাহ তা’আলা রাসূল সা. এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তার তাওবা করা জরুরি নয়। তারপরও তিনি বলেন, হে মানুষ তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। কারণ, আমি দৈনিক একশত বার আর দরবারে ক্ষমা চাই। তিনি আরও বলেন, আমি দৈনিক সত্তুরের অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। আর আমাদের জন্য রাসূলের অনুকরণ করা ও তার সূন্নাতের অনুসরণ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ ও উত্তম আদর্শ। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
একটি মজলিসের মধ্যে রাসূল সা. ‘হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর, আমার তাওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি ক্ষমা কারী ও তাওবা কবুল কারী’ এ কথাটি একশ বারের অধিক বলতেন বলে সাহাবীরা গণনা করেন।
সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর যত সালাত আদায় করতেন, সব সালাতে তিনি এ দুআ পড়তেন।
তিনি আরও বলেন, তোমাদের কাউকে তার আমল নাজাত দেবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনাকেও নাজাত দেবে না? তিনি বললেন, না আমাকেও না, তবে যদি আল্লাহ তা’আলা তার রহমত ও দয়া দ্বারা আমাকে ডেকে নেন।
সুতরাং আমাদের রাসূল এর অনুসরণ করতে হবে এবং তার সাহাবীরা কিভাবে তাওবা করেছে তা অনুকরণ করতে হবে। নিম্নে দুই সাহাবীর প্রসিদ্ধ দুটি ঘটনা উল্লেখ করছি।
সাহাবীদের তাওবা
মনে রাখবেন, সাহাবীরা ছিল উম্মতের আদর্শ। তারা যখন কোন ভুল করতেন, সাথে সাথে তারা তার থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেতেন এবং গুনাহ হতে পবিত্র হওয়ার জন্য তারা অস্থীর হয়ে যেতেন। তারা তাদের নিজেদের অপরাধ স্বীকার করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তা প্রকাশ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করতেন না। আমরা এখানে এ উম্মতের প্রথম যুগের রাসূলের সাহাবীদের তাওবার কয়েকটি ঘটনা উদাহরণ স্বরূপ উলে¬খ করবো।
মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামীর রা. এর তাওবা:
عن بريدة رضي الله عنه: أن ماعز بن مالك الأسلمي أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: (يا رسول الله إني ظلمت نفسي وزنيت، وإني أريد أن تطهرني فرده، فلما كان من الغد أتاه، فقال: يا رسول الله إني زنيت فرده الثانية، فأرسل رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى قومه، فقال: (أتعلمون بعقله بأساً ؟ أتنكرون منه شيئاً ؟) قالوا: ما نعلمه إلا وفيّ العقل، من صالحينا فيما نرى، فأتاه الثالثة، فأرسل إليهم أيضاً، فسأل عنه فأخبره أنه لا بأس به ولا بعقله، فلما كان الرابعة حفر له حفرة، ثم أمر به فرجم، قال: فجاءت الغامدية، فقالت: يا رسول الله إني زنيت فطهرني، وإنه ردها، فلما كان الغد، قالت: يا رسول الله لم تردني ؟ لعلك أن تردني كما رددت ماعزاً، فوالله إني لحبلى، قال: (أما لا، فاذهبي حتى تلدي)، قال: فلما ولدت أتته بالصبي في خرقة، قالت: هذا قد ولدته، قال: (اذهبي فأرضعيه حتى تفطميه)، فلما فطمته أتته بالصبي في يده كسرة خبز، فقالت: هذا يا رسول الله قد فطمته، وقد أكل الطعام، فدفع الصبي إلى رجل من المسلمين، ثم أمر بها فحفر لها إلى صدرها، وأمر الناس فرجموها، فيقبل خالد بن الوليد بحجر فرمى رأسها فتنضخ الدم على وجه خالد فسبها، فسمع نبي الله سبه إياها، فقال: (مهلاً يا خالد ! فوالذي نفسي بيده لقد تابت توبة لو تابها صاحب مكس "وهو الذي يأخذ الضرائب" لغفر له) رواه مسلم. ثم أمر بها فصلى عليها، ودفنت. وفي رواية فقال عمر يا رسول الله رجمتها ثم تصلي عليها ! فقال: ( لقد تابت توبة لو قسمت بين سبعين من أهل المدينة وسعتهم، وهل وجدت شيئاً أفضل من أن جادت بنفسها لله عز وجل. رواه عبد الرزاق في مصنفه 7/325.
এক Ñ বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু তা’আল আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি, আমি জিনা করেছি। আমি চাই আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্প্রদায়ের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে, তার মানসিক কোন সমস্যা আছে বলে তোমাদের কাছে খবর আছে কি? তারা বলল, আমরা তো এ ধরনের কিছু জানিনা। তাকে আমরা পূর্ণ জ্ঞানবানই দেখছি। আমাদের দৃষ্টিতে সে একজন সুস্থ মানুষ। এরপর সে তৃতীয়বার আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে এবং রাসূল আবার তার গোত্রের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা জানায়, তার কোন মানসিক সমস্যা নেই। অতঃপর যখন সে চতুর্থবার আসে তখন তার জন্য গর্ত খুঁড়া হয়, পাথর ছুঁড়ে হত্যার মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়।
দুই- গামেদিয়া [গামেদিয়া গোত্রের জনৈকা মহিলা] এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আপনি আমাকে পবিত্র করুন! রাসূল তার কথার প্রতি কোন কর্ণপাত করলেন না এবং তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনি আমাকে ফেরত পাঠালেন? হয়তো আপনি আমাকে মায়েযের মত ফেরত পাঠাচ্ছেন! আল্লাহর শপথ! আমি অবৈধভাবে গর্ভবতী। তখন তিনি তাকে বললেন, যখন সন্তান প্রসব করবে, তখন এস। সন্তান জন্ম দেবার পর বাচ্চাটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে মহিলা রাসূলের নিকট হাজির হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও যখন সে খাবার খেতে পারবে তখন আসবে। এরপর যখন বাচ্চা খাবার খেতে শুরু করে তখন মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে এসে হাজির হন, তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ধরা ছিল। সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! বাচ্চা এখন খাবার খাচ্ছে। অতঃপর তার বাচ্চাটাকে একজন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া হল। এরপর তার বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়তে নির্দেশ দেয়া হল। এরপর লোকদের নির্দেশ দেয়া হল যেন পাথর ছুঁড়ে হত্যার মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়। খালিদ ইবনে অলিদ একটা পাথর ছুঁড়ে তার মাথায় মারেন, যার ফলে রক্ত ছুটে খালিদের মুখে এসে পড়ে, এজন্য খালিদ তাকে গালি দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গালি শুনতে পেয়ে বলেন, ধীরে, হে খালিদ! আমার জীবন যে সত্ত্বার হাতে রয়েছে তার কসম করে বলছি। এ মহিলা এমন তাওবা করেছে, যদি এ তাওবা কোন অবৈধ ট্যাক্স আদায়কারী করত, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হত। এরপর নির্দেশ দেয়া হয় এবং তার জানাযা পড়ে তাকে দাফন করা হয়।
এক বর্ণনায় এসেছে, উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজম [পাথর ছুড়ে হত্যা] করলেন এরপর তার আবার জানাযা পড়বেন? তখন তিনি বললেন, সে এমন তাওবা করেছে তা যদি মদীনার সত্তর জন লোকের মাঝে বন্টন করে দেয়া হত, তাহলে তা তাদের গুনাহ মাপের জন্য যথেষ্ট হত। তুমি কি এর চেয়ে আর কাউকে উত্তম দেখেছ, যে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজের জীবন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে”?।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না
আপনি হয়তো আমাকে বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশী, আমি আমার জীবনে যত রকমের গুনাহ আছে, তা সবই আমি করেছি। আমি জীবনে অনেক বড় বড় পাপ কামাই করেছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিগত এত বছরের সব পাপ কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?
হে সম্মানিত পাঠক ভাই! আপনাকে আমি বলছি, এটি বিশেষ কোন সমস্যা নয় বরং এটা অনেকেরই সমস্যা যারা তাওবা করতে চায়। গুনাহ যত বড় হোক না কেন, আল্লাহর রহমত ও দয়া তার চেয়ে অনেক বড়। আল্লাহ তা’আলা সব ধরনের পাপকেই ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ তা’আলা কুরানে করীমে স্বীয় বান্দাদের সম্বোধন করে বলেন,
﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٢، ٥٣]
“বলে দাও যে, [আল্লাহ বলেন] হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু। আর তোমরা তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর আযাব আসার পূর্বেই, অতঃপর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না”।[41]
আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করবেনই। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: قال الله تبارك وتعالى: [يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان فيك ولا أبالي، يا ابن آدم لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني غفرت لك ولا أبالي، يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيتك بقرابها مغفرة[
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে ও আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘ্নে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ আসমান পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘ্নে তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি সে অবস্থায় তুমি আমার নিকট আসলে, আমি তোমার কাছে জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।[42] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন,
إن الله ـ تعالى ـ يبسط يدهُ بالتوبة لمسيء الليل إلى النهار ولمسيء النهار إلى الليل حتى تطلع الشمس من مغربها.
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত পেতে রাখেন, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ তা’আলা রাতে হাত পেতে দেন। এটি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য্ পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।
মোট কথা পাপের পরিমাণ যত বেশী হোক না কেন আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই ক্ষমা করবেন। কিন্তু তারপরও আমাদের অন্তরে এ অনুভূতি জাগে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন কিনা? এ অনুভূতি জাগ্রত হওয়া কারণ হচ্ছে:
প্রথমত: আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কে বান্দার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা। এর ব্যাখ্যা হিসেবে মহান আল্লাহর এ বাণীই যথেষ্ট হবে:
﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٢]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু”।[43]
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর রহমত যে কত ব্যাপক সে সম্পর্কে ঈমানে ঘাটতি থাকা। এক্ষেত্রে নিম্নের হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি জানলো যে, আমি গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখি তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেব এ ব্যাপারে কোন কিছুতেই পরওয়া করবো না, যদি সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক [অংশীদার] না করে থাকে”। এটি হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সাথে পরকালে সাক্ষাত করবে।
তৃতীয়ত: তাওবার কার্যকর ক্ষমতা সম্পর্কে এ ধারণা না থাকা যে, তা সব গুনাহকেই ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাসূলের এ হাদীসই যথেষ্ট, “যে ব্যক্তি তাওবা করবে তার যেন কোন গুনাহ থাকবে না।”
ক্ষমাকে যারা খুব কঠিন বলে মনে করে এবং চিন্তা করে, আল্লাহ কঠিন পাপ ক্ষমা করবেন কিনা? তাদের জন্য নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করছি।
তাওবার প্রতিবন্ধকতা
১- শয়তান মানুষের সামনে গুনাহগুলো সু-শোভিত করে তুলে এবং প্রিয় বানিয়ে দেয়। ফলে বান্দার অন্তর গুনাহের কর্মের দিক অগ্রসর ও ধাবিত হয়। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করা হতে পলায়ন করে এবং ইবাদাত বন্দেগী করা তার নিকট কষ্টকর হয়।
২- হারামকে হালাল হিসেবে তুলে ধরে এবং হালালকে হারাম হিসেবে তুলে ধরে শয়তান বান্দাকে ধোকায় ফেলে দেয়। এ ছাড়াও ভালো কাজকে খারাপ এবং খারাপ কাজকে ভালো হিসেবে প্রকাশ করে শয়তান মানুষকে ধোকা দেয়। ফলে তার আর তাওবা করার সুযোগ হয় না। সে যে অন্যায় করছে, তা সে বুঝতেই পারে না।
৩- শয়তান বান্দাকে তাওবা থেকে ফিরানোর জন্য তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের আশা দিয়ে থাকে। শয়তান বান্দাকে বলতে থাকে, তুমি তাওবা করতে এত তাড়াহুড়া করছ কেন? তোমারতো তাওবা করার এখনো অনেক সময় আছে। তুমি এখনো যুবক, পড়া লেখা শেষ করোনি, চাকুরি পাওনি ইত্যাদি। এরপর যখন চাকুরি পায় তখন বলে এখনো বিবাহ করোনি ইত্যাদি বলে শয়তান মানুষকে তাওবা থেকে ফিরিয়ে রাখে। এ ধরনের সমস্য সামনে আসলে মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে। কারণ, মৃত্যু ছোট বড় কাউকেই ছাড়ে না। যে কোন সময় যে কোন বয়সের লোকের মৃত্যু এসে যেতে পারে। তখন আর তাওবা করার সুযোগ থাকবে না।
৪- গুনাহকে ছোট মনে করে তাওবা করা হতে বিরত থাকে। যখন কোন একটি গুনাহ করে, তখন শয়তান এসে বলে, এতো বড় ধরনের কোন অপরাধ নয় যে, তা হতে তাওবা করতে হবে। মানুষ এর চেয়ে আরও বড় বড় গুনাহ করে থাকে।
৫- তাওবা করার পর গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যের উপর অবিচল থাকা কষ্টকর হওয়ার কারণে তাওবা করতে মনে চায় না। কারণ, যখন তাওবা করে তখন সাথীরা বলে তুমি এত কষ্ট করছ কেন? তোমার থেকে তোমার সাথীরা দূরে সরে যাচ্ছে, সবাই তোমার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যাচ্ছে।
৬- হতাশাও মানুষকে তাওবা থেকে ফিরিয়ে রাখে। কারণ, যখন কোন বান্দাহ গুনাহ করার পর তাওবা করতে চায়, তখন শয়তান এসে বলে, তোমার গুনাহ অনেক বড় যা আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবে না। যদি ক্ষমা নাই করে, তাহলে তাওবা করে লাভ কি? ফলে সে তাওবা করা হতে বিরত থাকে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো যখন আপনার সামনে আসবে তখন আমরা আপনাকে বলব, আপনি শয়তানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন। নিশ্চয় শয়তানদের চক্রান্ত খুবই দুর্বল। আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, এসব শয়তান ও তার দোসররা অবশ্যই থেমে যাবে অতঃপর খুব শীঘ্রই তার ষড়যন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়বে এবং মুমিনের ধৈর্য ও দৃঢ়তার সামনে সে পরাজিত হবে।
আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি শয়তানের কথা মত চলেন, তার কাছে মাথা নত করেন, তাহলে সে আরো বেশী বেশী ধোকা আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে। সুতরাং পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতএব তার অনুসরণ না করে আল্লাহর সাহায্য চান এবং বলুন:
﴿ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣ ﴾ [ال عمران: ١٧٣]
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক”।[44] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশংকা করতেন তখন বলতেন:
]اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ وَنَعُوذُبِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ] [مسند أحمد، أبو داود، صحيح الجامع [
“হে আল্লাহ! আমি আপনাকে তাদের গলার উপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনার নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি তাদের খারাপী থেকে”।[45]
অনেক সময় দেখা যায় গুনাহের কর্ম ছাড়ার কারণে তার সাথে তার খারাপ বন্ধুরা যাদের সাথে ইতিপূর্বে বন্ধুত্ব ছিল, তারা যোগাযোগ করে তাকে হুমকি দিয়ে বলে, তুমি এতদিন আমাদের সাথে ছিলে এখন কেন আমাদের থেকে দূরে সরে গেলে? আমাদের কাছে তোমার সব গোপন তথ্য আছে যেগুলো আমরা রেকর্ড করে রেখেছি, তোমার ছবিও আমাদের নিকট রয়েছে, তুমি যদি আমাদের সাথে বের না হও তাহলে তোমার পরিবারের নিকট সব ফাঁস করে দিবো! একথা সঠিক যে, আপনার অবস্থান খুবই নাজুক।
এ ধরনের কোন পরিস্থিতির স্বীকার হলে, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন, তাওবাকারীদের সাথে রয়েছেন এবং তিনি মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না এবং তাদেরকে ছেড়ে দিবেন না। তাঁর নিকট কোন বান্দা আশ্রয় নেয়ার পর সে কখনো অপমানিত হয় না। আপনি জেনে রাখুন, নিশ্চয় কঠিন অবস্থার সাথেই সহজ অবস্থা আসে এবং সংকীর্ণতার পরেই প্রশস্ততা আসে।
হে তাওবাকারী ভাই!
আপনার জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করছি যা আমাদের কথার যথার্থতা প্রমাণ করবে। ঘটনাটি হল, প্রখ্যাত ফেদায়ী [গেরিলা] সাহাবী মারসাদ ইবন আবিল মারসাদ আল গানাবীর, যিনি দুর্বল মুসলমানদেরকে মক্কা থেকে গোপনে মদীনায় নিয়ে আসতেন। তিনি মক্কা থেকে দুর্বল বন্দী লোকদের গোপনে মদীনায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।
মক্কায় একজন নষ্টা মহিলা ছিল যার নাম আনাক এবং সে ছিল তার বান্ধবী। তিনি মক্কার একজন বন্দী লোককে ওয়াদা দিয়েছিলেন মদীনায় পৌছে দেয়ার। তিনি বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি মক্কার এক দেয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আনাক আমার ছায়া দেখে এগিয়ে আসে এবং বলে, মারসাদ? আমি বললাম হাঁ, মারসাদ। সে বলল, মারহাবা, স্বাগতম, এস আমার কাছে রাত কাটাও। আমি বললাম, হে আনাক! আল্লাহ ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। সে তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, হে তাবুবাসীরা! এই লোকটি তোমাদের বন্দীদেরকে নিয়ে ভাগতে চায়।
তিনি বলেন, আটজন লোক আমার পিছু নেয় এবং আমি তখন খান্দামা পাহাড়ে [মক্কার প্রবেশ পথের একটি পাহাড়] ঢুকে পড়ে এক গুহায় লুকিয়ে যাই। এরা আমার সন্ধানে আমার কাছে এসে পড়ে, কিন্তু আল্লাহ আমাকে এদের থেকে আড়াল করে রাখেন। তিনি বলেন, এরপর তারা ফিরে যায় এবং আমিও ঐ লোকটির নিকট গিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে আসি। লোকটি ছিল বেশ ভারী, আমার অনেক কষ্ট হয়ে ছিল। তাকে কিছু দূরে বয়ে নিয়ে গিয়ে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। আমি অনেক কষ্টে তাকে মদীনায় নিয়ে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আনাককে বিয়ে করতে পারি? [কথাটি দুবার বললাম] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে থাকলেন কোন জবাব দিলেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়:
﴿ ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ ٣ ﴾ [النور : ٣]
“ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারিণী মহিলাকেই বিয়ে করে অথবা মুশরিকা মহিলাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলা ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককেই বিয়ে করে থাকে”।[46]
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মারসাদ! ব্যভিচারী পুরুষই কেবল ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিকা মহিলাকে বিয়ে করে থাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলাও একমাত্র ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককে বিয়ে করে থাকে, সুতরাং তুমি তাকে বিয়ে করো না”।
আপনি দেখলেন কিভাবে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারের পক্ষে প্রতিরোধ গড়লেন এবং তিনি মুহসিনদের [সৎকর্মশীল লোকদের] সাথে কি আচরণ করলেন? অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় যে, আপনি যা আশংকা করছেন তাই ঘটে, আর এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনি আপনার অবস্থান বর্ণনা করুন, স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন এবং বলুন, হ্যাঁ, আমি পাপ করতাম। এখন আল্লাহর নিকট তাওবা [প্রত্যাবর্তন] করেছি? এখন তোমরা কি চাও?
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রকৃত কেলেঙ্কারী তো হল আল্লাহর সামনে কিয়ামতের দিন প্রকাশিত কেলেঙ্কারী। সেই ভয়ানক দিনে যেদিন একশ, দু’শ, হাজার, দু’হাজার লোকের সামনে নয় বিশ্বের সকল মানুষের সামনে, সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে, ফেরেশতা, জিন ও ইনসান সবার সামনে আদম থেকে শুরু করে দুনিয়ার সর্বশেষ মানুষের সামনে তা ঘটবে।
আসুন আমরা ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আ পাঠ করি:
﴿ وَلَا تُخۡزِنِي يَوۡمَ يُبۡعَثُونَ ٨٧ يَوۡمَ لَا يَنفَعُ مَالٞ وَلَا بَنُونَ ٨٨ إِلَّا مَنۡ أَتَى ٱللَّهَ بِقَلۡبٖ سَلِيمٖ ٨٩ ﴾ [الشعراء : ٨٧، ٨٩]
েআর যেদিন সকলকে উত্থাপিত করা হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। যেদিন কোন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কাজে আসবে না। একমাত্র কাজে আসবে যদি সঠিক অন্তঃকরণ নিয়ে কেউ উপস্থিত হয়”।[47] সংকট মুহূর্তে নবীর শেখানো দু’আ পড়ে নিজেকে হেফাযত করুন:
]اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا، اللَّهُمَّ اِجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ لاَ تُشْمِتْ بِنَا الأَعْدَاءَ وَلاَ الْحَاسِدِيْنَ[
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ইজ্জত রক্ষা করুন এবং আমাদের নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিশোধ তাদের উপর ফেলুন যারা আমাদের উপর জুলুম করেছে এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন তাদের বিরুদ্ধে যারা আমাদের উপর চড়াও হয়েছে। হে আল্লাহ! আমাদের শত্রুদেরকে ও হিংসুকদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে খুশি হতে দেবেন না।”[48]
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হল আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদের তওবা কবুল করেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয় তিনি শুনেন ও দোয়া কবুল করেন।
তাওবার সালাত
তাওবার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত বা চার রাকাত সালাত আদায় করা যেতে পারে। অথবা ফরয সালাতের পরও তাওবা করা যেতে পারে। সাইয়্যেদ সাবেক রহ. স্বীয় কিতাব ফিকহুস সূন্নাহতে বিষয়টি উল্লেখ করেন। তারপর তিনি এর প্রমাণ হিসেবে দুটি হাদীস উল্লেখ করেন।
عن أبي بَكْرٍ الصديق رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : ( مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ إِلَّا غَفَرَ اللهُ لَهُ ، ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ : ﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ال عمران: ١٣٥] . صححه الألباني في صحيح أبي داود .
“আবু বকর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ করার পর ভালোভাবে ওজু করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে- যেমনটি বর্ণিত ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ও ইবনে খুজাইমার বর্ণনায়- তারপর সে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন –
﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ال عمران: ١٣٥]
‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ব্যতীত গুনাহসমূহের ক্ষমাকারী কেই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না।’’[49] আল্লামা আলবানী সহীহ আবুদাউদে হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
আল্লামা তাবরানী স্বীয় কিতাব আল-কবীরে বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَوْ أَرْبَعًا (شك أحد الرواة) يُحْسِنُ فِيهِمَا الذِّكْرَ وَالْخُشُوعَ ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ ، غَفَرَ لَهُ
“যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে, তারপর সে দাঁড়িয়ে ফরয হোক বা নফল হোক দুই রাকাত অথবা চার রাকাত সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু করে এবং সেজদা করে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। [50]
তাওবা কবুল হওয়ার আলামত
যখন কোন ব্যক্তি তাওবার যাবতীয় শর্তপূরণ করে খালেসভাবে আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন এবং গুনাহ মাপ চান, তখন আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। তবে যখন কোন ব্যক্তি তাওবা করে, তার তাওবা কবুল হল কিনা তার কিছু আলামত আছে। যেমন-
এক- তাওবা করার পর লোকটির মধ্যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, সে এখন পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অধিক নম্র, ভদ্র ও নমনীয়, পূর্বের তুলনায় অধিক নেক আমল করে, খারাপ সঙ্গীদের সাথে মিশে না, আলেম ওলামা ও ভালো লোকদের সাথে উঠা-বসা করে এবং গুনাহের কর্ম ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে।
দুই- সব সময় আল্লাহর পাকড়াও ও আযাবের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। এক মহুর্তের জন্যও সে আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে না। সে মনে করে যে কোন সময় আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করতে পারে। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর ভয় তার অন্তরে বিদ্যমান থাকে। তার ভয় তখন দূর হয়, যখন মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে তাকে বলে-
﴿أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [فصلت:٣٠]
‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সু-সংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’।
তিন- লোকটি সব সময় ইতিপূর্বে যে সব অপরাধ করেছে, তার উপর অত্যন্ত লজ্জা অনুভব করতে থাকে। সে সব সময় আফসোস করতে থাকে আর বলতে থাকে- হায় এ অন্যায় কাজটি আমি কেন করলাম! আমি যদি এ কাজটি না করতাম! কতই না ভালো হত! কারণ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার অপকর্মের উপর লজ্জিত হবে না এবং আফসোস করবে না, আখেরাতে যখন সে আল্লাহর নেক বান্দাদের আমলের সাওয়াব ও বিনিময় এবং অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেখতে পাবে, তখন সে লজ্জিত হবে এবং আফসোস করবে। কিন্তু তখন তার লজ্জা ও আফসোস কোন কাজে আসবে না।
وصلى الله على عبده وسوله سيدنا محمد وآخر دعوانا أن ا لحمد لله رب العالمين.
সমাপ্ত
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন