ছোট্ট বেলার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজা শিরিন ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১২:০৭ বিকাল
ছোট বেলার কিছু স্মৃতি থাকে যা মানুষ ভুলতে পারেনা । তেমনই একটি স্মৃতি আছে যা মাঝে মাঝেই আমার মনকে আন্দোলিত করে ।আমি বড় হয়েছি নাটোর শহরে। নাটোর ষ্টেশনের পাশেই ছিল আমাদের বাসা ।বাসার পাশে ছিল একটি খলা আর তার পাশে ছিল একটি ছোট্ট লিচুর বাগান।প্রতিদিন বিকেলে আমরা কয়েকজন বান্ধবী সেখানে খেলতে যেতাম।একদিন বিকেলে খেলতে যেয়ে দেখি একটি নতুন মেয়ে আমাদের সাথে খেলতে এসেছে ।মেয়েটির গায়ের রং কালো কিন্তু চেহারাটা অদ্ভুত সুন্দর।মেযেটির সাথে পরিচিত হলাম ।তার নাম ছিল লাবনী।মেয়েটি ধর্মে হিন্দু।
আমার সাথে মেয়েটির অল্প সময়ে ভাল ভাব হয়ে গেল।পরের দিনও আমরা একসাথে খেললাম।কিন্তু তার পরের দিন মেয়েটি খেলতে আসলনা।খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারা বাসা বদল করে অন্য বাসায় চলে গেছে।খুব কষ্ট লেগেছিল ও আমাদেরকে কিছু না বলে এভাবে চলে গেল!মাঝে মাঝেই ওর কথা খুব মনে পড়ত।এভাবে কিছুদিন পার হয়ে গেল।আমার ছোট বোন মণি তখন দুনিয়াতে আসার অপেক্ষায়।আম্মা তখন আমাদের নাটোরে যে সরকারি মাতৃ সদন ছিল সেখানে কয়েকমাস পর পর ডাক্তার দেখাতে যেতেন।আমি যেহেতু তখন আম্মার ছোট সন্তান তাই স্বভাবতই আমি আম্মার সজ্গে যেতাম।এমনই একদিন আম্মার সাথে মাতৃ সদন থেকে ফিরছিলাম।পথে একটি হিন্দু পাড়া পড়ে,যার নাম পালপাড়া।রিকশায় আম্মা আর আমি পালপাড়া পার হচ্ছিলাম।এমন সময় পাশ দিয়ে আমার সমবয়সী একটি মেয়ে হেটে চলে গেল।আমি দেখলাম কিন্তু বুঝতে পারলামনা।হঠাৎ শুনি পিছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে কে যেন ছুটে আসছে।রিকশার হুডের মাঝখান দিয়ে পিছনে তাকালাম।দেখি আমার সেই দু’দিনের বান্ধবী।আমি হাত বাড়ালাম,সে ও হাত বাড়িয়ে ছুটতে থাকল। আমাদের রিকশাটা বেশ জুড়েই ছুটছিল।আমি রিকশা ওয়ালাকে দাড়াতে বলছিলাম কিন্তু সে আমার কচি কন্ঠের আওয়াজ শুনতেই পেলনা।একসময় সামনে একটি মোড় পরতেই সে চোখের আড়াল হয়ে গেল।সেও অনেকপথ দৌড়ে ক্লান্ত।তাকে আর দেখা গেলনা।আজো বিশ বছরে তাকে আর কোনদিন দেখতে পাইনি।এই ঘটনাটি এখনো আমার খুব বেশি মনে পড়ে।যা আমাকে খুব বেশি আলোড়িত করে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন