ডাক্তার এবং আমার অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন জাকির হোসেন খালেদ ১৪ মে, ২০১৪, ০১:৪১:২৫ দুপুর
ঘটনা-একঃ সময়কাল ১৯৯৯, ডাক্তার, প্রোফেসর এম আজহার, (বর্তমানে মিটফোর্ড হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান)। এক বন্ধুসহ তাঁর চেম্বারে গেলাম।
ডাক্তার: কি সমস্যা?
রোগী: আংকেল ক'দিন থেকে ঘাড় ব্যাথা, নাড়াচাড়া করতে পারছিনা।
ডাক্তার: এটা কোন সমস্যা না, ঘাড়ের একটা ব্যায়াম শিখিয়ে দিলেন। এটা কর দু'তিন দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
রোগী: ব্যাথার জন্যে ওষুধ দিবেন না?
ডাক্তার: লাগবে না।
রোগী: আপনার ফি.....?
ডাক্তার: ঐ ব্যাটা, ফি কিসের, আমি কি প্রেসক্রিপশান দিয়েছি নাকি? যাও ভাগো।
ঘটনা-দুইঃ সময়কাল ২০০১, ডাক্তার, প্রোফেসর খলিলুর রহমান, তত্কালিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সার্জারী বিভাগের প্রধান। আমার নানা তার অধীনে হাসপাতালে ভর্তি। নানার অবস্থা গুরুতর,অপারেশনের পর পেট ফুলে গেছে, সেলাই ফেটে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ওয়ার্ডের সিওকে জানালাম, তিনি দেখে সাফ বলে দিলেন কিছুই করার নেই। খলিল স্যার কিছু করলে করতে পারেন। উনাকে ফোন দিলাম।
আমি: স্যার, আমার পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ (অবস্থা বর্নণা করলাম)।
ডাক্তার: সিও সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেন।
আমি: স্যার, তার নাকি কিছুই করার নেই।
ডাক্তার: তাহলেতো হলোই, আমি কিছু করতে পারবনা। এখন রেস্টে আছি, ডিস্টার্ব করবেন না।
লাইনটা কেটে দিলেন উনি।
আবার গেলাম সিওর কাছে, তিনি এক-ই কথা শোনালেন।
তখন আমাদের দিক্ভ্রান্ত অবস্থা, রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
আবার ফোন দিলাম ডাঃ খলিল সাহেবকে।
ডাক্তার: (বেশ বিরক্তির সাথে) আপনাকে বললাম না ডিস্টার্ব না করতে।
আমি: স্যার, রোগীর অবস্থাতো আরও খারাপ হচ্ছে...
ডাক্তার: হুম, আমি সিও সাহেবের সাথে কথা বলেছি, আমাদের কিছু করার নেই।
আমি: স্যার, আপনি যদি একবার দেখতেন...
ডাক্তার: বলেছিনা আমি রেস্টে আছি।
আমি: (মরিয়া হয়ে) স্যার, আপনি সরকারি ডাক্তার, আপনার কোন দায়িত্ব নেই?
ডাক্তার: (হুংকার দিয়ে) কি, বে্য়াদব, এতবড় সাহস, আমাকে দায়িত্ব শেখাও, ইডি্য়ট......ইত্যাদি ইত্যাদি।
লাইন কেটে গেল।
কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। গেলাম হাসপাতাল এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে।
কি ব্যাপার খালেদ, এমন দেখাচ্ছে কেন?
তাকে ঘটনা খুলে বললাম।
ঠিক আছে, আমার সাথে চলো।
কোথায়?
ডাক্তারের বাসায়।
গেলাম।
তারপর কি হলো?
বড় ভাইকে দেখে ডাক্তারের ডায়রিয়া শুরু হলো, যদিও দরকার ছিল না, তারপরও তিনি কিছু অশ্রাব্য কথা ডাক্তারকে শুনিয়ে দিলেন।
ডাক্তার বাসার কাপড়েই হাসপাতালে চলে আসলেন আর আমার নানার সুষ্ঠু চিকিত্সা শুরু করলেন। দেখলাম কিছু করার নেই বলার পরেও অনেক কিছু করার ছিল। আমার নানা বিপদমুক্ত হলেন।
ঘটনা-তিনঃ সময়কাল ২০১২, ডাক্তার, জনৈক আর এস, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ। আমার মায়ের কিডনীর প্র্দাহ। কোন ক্লিনিক-হাসপাতালে স্পেসালিস্ট ডাক্তার নেই, সবাই আউটার সার্ভিসে গিয়েছেন। বাধ্য হয়ে সরকারি মেডিক্যালে নিতে হলো।
ওয়ার্ডের ইন্টার্নি ডাক্তার বলল, ভাইয়া, স্যারেরা কেউ নেই। আমি স্লিপে লিখে দিচ্ছি, আপনি আউটডোরে আর এস সাহেবকে আপনার মাকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশান নিয়ে আসেন।
আমার মায়ের ব্যাথায় অচেতন অবস্থা, আমি অসহায়। নির্মমভাবে আমার মাকে বিস্তর হাঁটিয়ে আউট ডোরে নিয়ে গেলাম। আর এস সাহেব তখনও আসেননি। তিনি এলেন বারোটা বেজে, সরকারি চাকরি যেমন হয় আর কি! ডাক্তার-পিওনের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করলাম একটু আগে দেখার জন্য, তারা রাজি হলেন না। অগত্যা মাকে বললাম, আরেকটু কষ্ট করার জন্যে।
প্রায় এক ঘন্টা পরে ডাক এলো। মাকে বসা থেকে উঠিয়ে ধীরে ধীরে ডাক্তারের রুমের দিকে নিয়ে চললাম। গেটের কাছে যেতেই আটকে দেয়া হলো দরজা, ভেতরে যাওয়া যাবে না।
কেন?
ডাকার পর যেতে দেরি হয়েছে তাই।
একি কথা, অসুস্থ মানুষ, যেতেতো একটু সময় লাগবে।
না, কোন কথা শোনা হবে না। অনেক অনুরোধ, অনুনয় কোন কিছুতেই কিছু হলো না। চিত্কার করাতে দেখলাম, ষন্ডা টাইপের ক'জন লোককে ডেকে আনা হলো আমাদের বের করে দেয়ার জন্য।
সেই ডাক্তার, সেই পিওন আর ভাড়া করা গুন্ডাদের উচিত শিক্ষা দেয়ার মত সামর্থ্য আমার ছিল, কিন্তু আমার মাকে সুস্থ করা ছিল তখন প্রধান সমস্যা। বাধ্য হয়ে চলে আসলাম, সবাই এভাবেই চলে আসে হয়ত।
ডাক্তারীপেশা এখন আর পেশা নেই, এটি হয়ে পড়েছে নীতিহীন ব্যবসা। আর এ ব্যবসার মূলধন হয়েছে পেশী শক্তি।
পুনশ্চঃ আমাদের নেতা-নেত্রীদের এদেশি ডাক্তার বা চিকিত্সা ব্যবস্থার ওপর কোন আস্থা নেই বিধায় তারা খুব ঘটা করে বিদেশে চিকিত্সা নিতে যান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ষোল কোটি মানুষকে এদেশের পাজির-পাঝাড়া ডাক্তারদের জিম্মায় রেখে যে ভিন দেশে চিকিত্সার জন্য যান, পরপারে এর হিসেব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেনতো?
বিষয়: বিবিধ
১৫৯১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন