হুজুগে বাঙ্গালি ও সমসাময়িক উত্সব প্রীতি

লিখেছেন লিখেছেন জাকির হোসেন খালেদ ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৫৫:১৪ দুপুর

হুজুগে বাঙ্গালি কথাটি কবে কিভাবে প্রচলিত হয়েছে আমার জানা নেই আর বর্তমান আলোচনার বিষয়বস্তুও সেটি নয় l প্রসংগক্রমে এটি চলে আসে বিধায় শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে l বিশ্বকাপ টি-টুয়েন্টি উপলক্ষ্যে একটা থিম সং বানানো হয়েছে আর সাথে সংযোজন করা হয়েছে ফ্ল্যাশ মব নামক এক ধরনের উন্মত্ততা l এই ফ্ল্যাশ মব ক্রমেই দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বানের পানির মত ছড়িয়ে পড়েছে l বিশ্বকাপের আয়োজক-উদ্দ্যোক্তাদের সফলই বলা যায় এক্ষেত্রে, কিন্তু প্রশ্ন হলো এই ফ্ল্যাশ মবের কি খুব প্রয়োজন ছিল? জাতীয়ভাবে আমরা খেলা পাগল দর্শক l রাত জেগে দল বেঁধে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার ইতিহাস আমাদের আছে l দল নিয়ে দলাদলি, দলবাজি এমনকি মারামারি করারও ঐতিহ্য আমরা ধারন করি l বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তারও আগে থেকেই আমরা ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করেছি l অথচ আমাদের গ্রাম্য বা শহুরে জীবনে ছেলে বা মেয়েরা জনসমাগমস্থলে খামোখা নর্তন-কুর্দন করছে এমন নজির নেই l আর ছেলে-মেয়ে একসাথে এসব কীর্তি করারত প্রশ্নই ওঠেনা l

বোদ্ধা নাগরিকগন এ বিষয়ে আমার সাথে একমত হবেন যে, নব্বই দশকের পর থেকে দেশে নৈতিকতার একটা অবঃক্ষয় শুরু হয়েছে l এর জন্যে দায়ি মূলতঃ স্যাটেলাইট টিভির ভারতীয় চ্যানেলগুলি, পরবর্তিতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি l আকাশ সংস্কৃতির ভারতীয় অধ্যায় আমাদের মাঝে যে চিন্তাধারার স্ফুরন ঘটাচ্ছে তা রীতিমত নিন্দনীয় l ভারতের ধর্মাশ্রয়ী যে সংস্কৃতি, তারা আধুনিকতার নামে সবকিছুই অবলীলায় গ্রাস করতে পারে কিন্তু আমাদের এখানে সেটা বেলেল্লাপনা ছাড়া কিছু নয় l বাংলাদেশে নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান l এখানে উত্সব বলতে ছিল ঈদ, আর অন্যদের নিজেদের ধর্মীয় উত্সব l সার্বজনীন বলতে ছিল পহেলা বৈশাখ l কিন্তু এখন আরও অনেকগুলো উত্সব এর সাথে যোগ হয়েছে l

একটি ভোগবাদি সমাজে পরিনত হতে যা যা দরকার আমরা তার ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলেছি l কিন্তু অন্যান্য ভোগবাদি সমাজের প্রচলিত গুনগুলি মোটেও আত্মস্থ করছিনা l হুজুগে পড়ে এখন আমরা বাংলা নববর্ষ, খ্রিস্টিয় নববর্ষ, বসন্ত বরন, ভাষা (শহিদ) দিবস, স্বাধিনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি হরেক রকম দিবসের আবরনে সেগুলির মূল মাহাত্ম হারিয়ে আনন্দ উদযাপনের এক জাতীয় উত্সবের অবতারনা করে চলেছি l একেকটা উত্সবের জন্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আয়োজনে আমাদের অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়, তাতে আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই l স্বীকার করি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে তা বলে যথেচ্ছাচার বিষয়টা ভাল নয় l প্র্কৃতির নিয়মে ঋতু আসে যায়, এখানে বরন করা বা বিদায় দেয়ার কিছু নেই l বৈশাখে নতুন বছর শুরু হওয়ায় হালখাতা বলে একটা বিষয় ছিল সেটা রীতিমত উবে গিয়েছে তার বদলে যোগ হয়েছে পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি l

এভাবে বিভিন্ন ধরনের হুজুগে মাতোয়ারা হয়ে নিজস্ব সত্তা বিসর্জন দিয়ে চলতে থাকলে আমাদের গন্তব্য কোথায় হতে পারে? শেষে কি ময়ূরপুচ্ছ্ধারী কাকের পরিনিতি ভোগ করতে হবে আমাদের? কিছু প্রতিষ্ঠান, কতিপয় ব্যক্তি অপসংস্কৃতি প্রচলন বা আবহমানকাল থেকে চলে আসা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে স্বেচ্ছায় বা অবচেতনে বিনষ্ট করতে চায় l আধুনিকতার নামে এসব বেহায়াপনা বা যথেচ্ছাচার মেনে নেয়া যায়না l

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

194098
১৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
194111
১৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৪১
হতভাগা লিখেছেন : পান্তা ইলিশের সংষ্কৃতি কোনভাবেই বাঙ্গালীর সংষ্কৃতি হতে পারে না ।

এটাকে যদি একসেপ্ট করে নেওয়া হয় তাহলে এমন একসময় আসবে তখন পান্তা ইলিশ এর পরিবর্তে হোটেল রেডিসনের লান্চ হয়ে যাবে পান্তা ইলিশের পরিবর্তে পহেলা বৈশাখে বাঙ্গালীত্ব রক্ষার নতুন ভার্সন ।

এখন যেমন ১লা বৈশাখে নিজেদের বাঙ্গালী প্রমানের জন্য আমরা ৫-৬শ টাকার ইলিশ ৮-১০ হাজার টাকা হালি কিনি ,রমনা তে গিয়ে হাজার টাকার পান্তা ইলিশ খাই ; তখন রেডিসনের লান্চ খেয়ে নিজেকে বাঙ্গালী প্রমাণের জন্য হুজুগে বাংলাদেশীরা আদাজল খেয়ে নামবে ।
১৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৫
144740
জাকির হোসেন খালেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
কিন্তু এক শ্রেণীর মিডিয়া, সংস্কৃতি কর্মি আর বুদ্ধিজীবী সেটাই প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর ।
১৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪
145173
হতভাগা লিখেছেন : শয়তান কি মানুষকে জোর করে পাপ কাজ করায় ? সে মানুষকে পাপ কাজ করতে প্রলুব্ধ করে ।

ফলে ম্যাক্সিমাম মানুষই শয়তানের ফাঁদে পা দেয় আল্লাহর পছন্দের বান্দারা ছাড়া ।

শয়তান ফাঁদে ফেলেছে বলে পাপ কাজ করে ফেলা মানুষের কি বিচার হবে না ?

আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ।
১৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৫
145218
জাকির হোসেন খালেদ লিখেছেন : যথার্থ
194184
১৮ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : একটি ভোগবাদি সমাজে পরিনত হতে যা যা দরকার আমরা তার ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলেছি কিন্তু অন্যান্য ভোগবাদি সমাজের প্রচলিত গুনগুলি মোটেও আত্মস্থ করছিনা
সহমত পোষন করছি। বিকল্প ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
১৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৪১
145160
জাকির হোসেন খালেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File