ইসলামী জীবনধারা
লিখেছেন লিখেছেন জাকির হোসেন খালেদ ০৬ মার্চ, ২০১৪, ১২:৪০:৪২ দুপুর
ইসলাম কি ?
ইসলাম আমাদের হৃদস্পন্দন, আমাদের আবেগ, আমাদের ভালবাসা সবকিছু l কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো স্থুল আনুষ্ঠানিক কিছু কর্মসূচী ছাড়া এ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুব সীমিত, অনেক ক্ষেত্রে ভুল l
প্রথমতঃ আমাদের ঈমানী চেতনা যেটাকে আমরা আকিদা বলে থাকি সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা অর্জন করতে হবে l একটি বিষয় খুবই সুখের যে আমরা জন্মসূত্রেই ইসলামের আলোয় আলোকিত, মুসলমান - আবার দুঃখের কারনও এটাই আমরা স্রোতে ভাসা পানার মত চলতে থাকি, নিজের পথ খোঁজার চেষ্টা করিনা (সকলেই নয়) l এখনো অনেকে গরুর মাংস খাওয়া-না খাওয়ার মধ্যে ধর্মীয় পার্থক্য তৈরি করেন, অথচ হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঈমানদ্বার আর বেঈমানের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেয়া (আমাদের দেশে একটি রেওয়াজ আছে, কেউ কারু সাথে কোনরূপ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে বেঈমান বলে গালি দেয়া হয় l ওয়াদা রক্ষা করা ঈমানের একটি অংগ, তাই বলে সে কারনে বেঈমান বলা ঠিক নয়, কেননা একজন মানুষ আল্লাহ-রাসূল-ফেরেস্তা-কিতাব ও অন্যান্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করলেই মাত্র তাকে ঈমানদার বলা হয়, তো উল্লেখিত বিষয়ে বিশ্বাস বিদ্যমান অবস্থায় কি করে একজন মানুষকে বেঈমান বলা যাবে ?) তবে গরু নয় কোনভাবেই l
আমাদের মধ্যে একটি ধারনা প্রচলিত আছে, যে একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ উচ্চারন করবে সে এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে l একটি হাদিসে সেইরকমই বর্ননা আছে, কিন্তু বিষয়টা সেই রকম নয় যেমনটা আমরা ভাবি; যদি তাই হত তাহলে সাহাবায়ে কেরামগন এত নির্যাতন সহ্য করার, এত পরিশ্রম করার, জীবনের সাধ-আহ্লাদ ত্যাগ করার কোন প্রয়োজন ছিলনা l আরবি ভাষা খুবই আলংকরিক এবং বিশদ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, শুধু এর আবিধানিক অর্থ বোঝার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা থাকে l যেমন আল্লাহ পাক কুরআনুল কারীমে উত্তম পুরুষে যে সর্বনাম ব্যবহার করেছেন তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'আমরা', কিন্তু এর থেকে কেউ বহুবচন বের করার চেষ্টা করেনা l তো আগের কথায় ফিরে আসা যাক, একটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত সত্তুর ফেরকায় ভাগ হবে, তন্মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে l এবার কি হলো, এই হাদিসটি কি আগেরটিকে রদ করে দিল ? না, আগের হাদিস ঠিক আছে এবং পরেরটাও l কিভাবে সম্ভব, দুটোতো বিপরীতমুখি ? কিন্তু দুটোই ঠিক, দ্বিতীয় হাদিসটির ভাষ্যমতে মুসলমানদের মধ্যে অনেক দল-উপদল (প্র্কৃত অর্থে সত্তুরের চেয়ে অনেক বেশি, কারন আরবি ভাষায় সত্তুর সংখ্যাটি রূপক - অনেক বেশি বুঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়) l আমাদের প্রথম কালেমাতে যে ঘোষনা দেয়া হয়, তাতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছেআল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই - ইলাহ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ l আল্লাহ নেই একথা যারা বলে তাদের সংখ্যা বিশ্বে এত নগন্য আর অপরিমিত যে তাদের নিয়ে আলোচনা করা বৃথা, এখানে তাই বলা হয়েছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারুকে ইলাহ বা ইবাদাতের যোগ্য হিসেবে অস্বীকার করার কথা l ছোট এক লাইনের এই কথায় কি এমন আছে যে তার জন্যে আমরা জান্নাতে যেতে পারব ? আসলে এর মধ্যেই সবকিছু - ইলাহ শব্দটির মানে আরবিভাষীরা জানে বলেই ইসলামের আবির্ভাবের শুরুতে এমন প্রচন্ড বিরোধীতা করেছিল - কারন এই ঘোষনা দেয়া মানে নিজের আর কোন আমিত্ব না থাকা - ইসলাম শব্দের অর্থও তাই, আত্বসমর্পন l এ আত্মসমর্পন কার কাছে ? আল্লাহর কাছে অর্থাত আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাপন হবে শুধুমাত্র তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী l
বিষয়টি তারা হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করত বলেই এত সংকট l এক সময় তারা এমনও প্রস্তাব দেয় যে দুই মতাবলম্বী পালাক্রমে একে অপরের ধর্ম পালন করবে, যার গূঢ় নিহিত অর্থ যেন তারা তাদের খেয়াল খুশিমত চলতে পারে l কিন্তু আল্লাহ সূরা আল-কাফিরূন নাযিল করে তাদের সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন l এর থেকে সহজেই উপলদ্ধি করা যায় শুধু মুখে উচ্চারন করলেই কালেমা পূর্নাংগ হয়না, এটা প্রমান সাপেক্ষ বিষয় l
ধর্ম শব্দটি শুনলেই আমাদের মানসপটে যেরকম চিত্র ফুটে উঠে, সময় ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যার যার ধর্মীয় প্রার্থনা আদায় করবে, কর্মসূচি অনুযায়ী উত্সব পালন করবে এবং ধর্মীয় জটিলতা বা কেউ মারা গেলে ক্রিয়া-কর্মের জন্যে ইবাদাতগাহে ধর্ম নেতাদের কথামত কাজ করবে; আর জীবন যাপনের অন্যান্য সকল বিষয়ে সে স্বাধীন l ইসলামে কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয় মোটেও l আসলে মুসলমানদের জন্যে এরকম দ্বৈত কোন ব্যবস্থাপনাই নেই l তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীতিমালা চুড়ান্ত করেই রাখা হয়েছে l তবে এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয়টি হলোঃ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক কাজ আর ব্যাক্তিক বা পারিবারিক ও সামাজিক কাজের তারতম্য l যেমন খাবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক - এটি জীবনের অপরিহার্য উপাদান, কিন্তু কোন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয় l এখানে ইসলাম কি বলে - কারন উপরের আলোচনা মতে মনে হবার কথা যেহেতু মুসলমানদের স্বাধীনতা নেই........... ইসলাম খাবারের ব্যাপারে যে নীতিমালা দিয়েছে তা হলো প্রথমতঃ সেটি হালাল হতে হবে (হালাল-হারামের বিশদ বর্ননা এই প্রবন্ধের অন্তর্গত নয়), এর আহরন পদ্ধতি বৈধ হতে হবে অর্থাত যে উপার্যিত অর্থ দিয়ে খাবার সংগ্রহ করা হবে তা হালাল হওয়া বাধ্যতামূলক, খাবার অপচয় করা যাবেনা আর অধীনস্ত্যদের খাদ্য সংস্থান করতে হবে - এই হলো মোটা দাগে মূল বিষয়, অন্যান্য সুক্ষ্ম বিষয় আরও আছে l আর স্বাধীনতা হলো খাবারের সময়, তৈরির প্র্ক্রিয়া, পরিবেশন পদ্ধতি ইত্যাদি l এভাবে জীবনের সকল কিছুর ব্যাপারেই ইসলাম নীতিমালা ও ব্যপ্তি তৈরি করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী চলাটাই ইসলামী জীবন - তবে কেউ যদি ইবাদাতের আনুষ্ঠানিকতার বাইরের অংশটুকু আক্ষরিক অর্থে দুনিয়াদারি বলে তা দোষের কিছু নয় l
আনুষ্ঠানিক ইবাদাত ও ইবাদাতের আনুষ্ঠানিকতাঃ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে l পাঁচটি বিষয়কে ইসলামের স্তম্ভ বলা হয়, তা হলো ঈমানের সাক্ষ্য, নামায প্রতিষ্ঠা, যাকাত আদায়, হজ্জ পালন ও সিয়াম পালন - ঈমান গ্রহনের পরে সর্ব প্রথম যে আনুষ্ঠানিক ইবাদাত ফরয হয় তা হলো নামায l আর পরকালে প্রথম হিসেব নেয়া হবে নামাযেরই, তাই ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম - এমনকি নামাযকে জান্নাতে যাওয়ার চাবিও বলা হয় l
আমাদের জান্নাতে যাওয়া কি আমাদের আমলিয়াতের উপর নির্ভর করে ? না, একটি হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সুবহানূ ওয়া তায়ালার অনুগ্রহ ব্যতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা l একজন সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনিও না ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন না, আমিও না l সূরা আল-মায়িদায় আল্লাহ বর্ননা করেছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন l আমরা অনেক ধরনের আমলের কথা শুনে থাকি যেগুলোতে হাজার-লক্ষ নেকি বা সওয়াব পাওয়া যায় - আবার এমন কোন অপরাধ আছে যাতে অনেক গুনাহ আমাদের হিসেবের খাতায় লেখা হয় l এই গুনাহ-সওয়াবের বিষয়টা কিন্তু আপেক্ষিক l আল্লাহ যদি এমন সরলরৈখিক অংকের মত আমাদের হিসেব নেন তাহলে আমাদের পক্ষে কখনই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবেনা l রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি এত ইবাদাত কেন করেন, যেখানে আল্লাহ আপনার সামনে পেছনে সবকিছু ক্ষমা করে দিয়েছেন ? তিনি উত্তর দিলেন আমি কি একজন শোকর আদায়কারি বান্দা হবনা ? জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের বেলায়ও এমন দেখা গিয়েছে l মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহকে খুশি করা l একজন মানুষ যদি কাউকে দেখানোর উদ্দ্যেশে নামায পড়ে তার নামায শুধু বরবাদ হয় তা নয়, বরং জাহান্নামের পথে তার যাত্রা শুরু হয় l
ইসলামের ইতিহাসে আব্দুল্লাহ ইবনে উবায় নামে একজনের পরিচয় পাওয়া যায় - তার নামায বা অন্যান্য আমল, সততা ইত্যাদি বিষয়ে কোন অভিযোগ ছিলনা - কিন্তু তার নিয়ত আল্লাহকে খুশি করা ছিলনা l সে মুনাফিক নামে অভিহিত হয় l তাই আল্লাহকে খুশি রাখার প্রয়োজনে সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতিতে পালন করতে হবে l
আল-কুরআন ও জ্ঞানার্জন এবং হুজুর শ্রেণীঃ
প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর জ্ঞান আহরন ফরয, তবে এখানে বস্তুগত জ্ঞান বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা বলা হয়নি বরং ধর্মীয় বা দ্বীনি শিক্ষার কথা বুঝান হয়েছে l জীবীকার প্রয়োজনে যে শিক্ষা দরকার ইসলাম কখনো অস্বীকার করেনা বা নিরুত্সাহিতও করেনা l কুরআন অবতীর্ন হয়েছে আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য - কিন্তু সে কুরআন আমরা চুমু দিয়ে সযত্নে উঠিয়ে রাখি অথবা খুব বেশি হলে না বুঝে আরবিতে পড়ে অনেক নেকি অর্জন করেছি ভেবে আত্মতৃপ্তি অনুভব করি l সবচে বড় দুঃখের বিষয় হলো আমরা একটা হুজুর শ্রেণী তৈরি করেছি; যেমনটা আমরা দেখি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুরুত ঠাকুর বা খ্রিস্টিয়ানদের পাদ্রি শ্রেণীর মত l প্রতিটি মুসলিম আলেম হতে হবে সে কথা বলিনা, ইসলামের স্বর্ণযুগেও একটা আলেম শ্রেণী ছিল কিন্তু তারা আমাদের এই সময়ের মত পরনির্ভর্শীল ছিলেননা l আমাদের দেশের হুজুর শ্রেনী (সকলের কথা বলছিনা তবে বেশীরভাগ) তাদের জীবীকার জন্য অন্য কোন কাজ না করে পরের দান-ধ্যানের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করেন অথচ আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কায়িক শ্রম করেছেন, ব্যবসা করেছেন এমনকি চুক্তিভিত্তিক চাকুরিও করেছেন l কিন্তু এখন আমরা দেখি আমাদের আলেমরা কুরআন খতম করে সওয়াব বিতরনের মাধ্যমে, মিলাদ পড়িয়ে, কুরআন উচ্চারন শিখিয়ে দেদারসে টাকা কামাচ্ছেন l দ্বীনের শিক্ষা যদি টাকা উপার্জনের মাধ্যম হয় তাহলে সে শিক্ষার আর কি আবেদন থাকে - আর সংগত কারনেই এই সমস্ত আলেমদের কথায় সমাজে কোন পরিবর্তন আসেনা l যেহেতু এটি পয়সা উপার্জনের মাধ্যম তাই অনেক সময় তারা সচেতনভাবে রুঢ় সত্য উচ্চারন করেননা, অনেক সময় দ্বীনের সুবিধাজনক ব্যাখ্যা তৈরি করেন l আমরা যদি জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হই তাহলে বিষয়গুলো ভালভাবে উপলদ্ধি করতে পারব l
ধর্মীয় শুদ্ধতাঃ
ধর্মীয় সুষ্ঠু জ্ঞান ছাড়া বিশুদ্ধতা রক্ষা করা খুব দুরুহ কাজ l আমাদের আনুষ্ঠানিক ইবাদাত কি হবে, কোন বিষয়গুলো আমরা পালন করব বা করবনা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়েই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে - এখানে সংযোজন বিয়োজনের কোন অবকাশ নেই l নতুন ধরনের কোন কর্মসূচি তৈরি করা হলে সেটা জাহান্নামের পথে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারবেনা, তবে যেটাকে আমরা পার্থিব কাজ বলি সে ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয় l একটি হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি খুব সহজে অনুধাবন করা যায়: মদীনার লোকেরা খেজুরের মৌসুমে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করত l এতে খেজুরের ফলন ভাল হত l বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নজরে আসলে তিনি তা করতে নিরুত্সাহিত করলেন l পরের বছর খেজুরের ফলন কম হলে লোকেরা তার কাছে এসে বিষয়টি উথ্থাপন করল l তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জানালেন যে এটি কোন দ্বীনি বিষয় নয়, তিনি তার ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে তারা যেটা ভাল বুঝে সেটাই ঠিক l
আমাদের সমাজ এখন মিলাদ, চেহলাম, তথাকথিত শব-ই-বরাত (শাবান মাসে) হালুয়া-রুটি উত্সব, উরস মুবারাক, মাজার শরীফ, তাবিজ-কবচ, মানত, ঈদে মিলাদুন্নবী ইত্যাদি হাবিজাবি বিদআতি আনুষ্ঠানিকতায় সয়লাব হয়ে পড়েছে l এসব আমাদের কোন রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবলেও শরীর শিউড়ে উঠে - অথচ মজার ব্যাপার হলো আলেম নামধারীরাই এর ধারক-বাহক হয়ে সাধারন মুসলমানদের এপথে নিয়ে অসেছে l
রাষ্ট্র এবং ইসলামঃ
বাংলাদেশ মুসলিম দেশ আর এর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম - এর অর্থ কী ? অনেকে বলেন, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম হয়না l কথা সত্য, ইসলাম কোন দেশ, দল বা সংস্থার জন্য নয়; মানুষের জন্য আর মানুষের জন্য রাষ্ট্র, সমাজ, দল সবকিছু l কাগজে-কলমে রাষ্ট্রধর্ম নয় বরং ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র প্রবর্তন করতে হবে l কিন্তু রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় ইসলাম থাকতে হবে কেন ? শিরকের পরে বড় গুনাহগুলোর একটি হলো সুদ - আমাদের প্রচলিত রাষ্ট্রকাঠামো এর বিহিততো করেই না উল্টো ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য অর্থকরী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একে স্থায়ী করতে সচেষ্ট থাকে, ফলে নাগরিকগন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সুদের সাগরে ভেসে বেড়াতে বাধ্য হয় l এরকম বিবিধ অনুসংগ উচ্ছেদ করে নাগরিকদের পাপের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে আর কিছু বিধি-ব্যবস্থা জারি করে ঐশী আদেশ পালনের পথ সুগম করতেই ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র প্রয়োজন l
ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যার যার অবস্থান থেকে প্রাণপন প্রচেষ্টা করে যেতে হবে - এটি জিহাদ l জিহাদ শব্দটি আমাদের দেশে বিতর্কিত করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন উদ্দ্যেশ্যে l একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, সর্বাত্মক সংগ্রাম বা সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষনার এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রের l কোন গোষ্ঠি বা ইসলামী দল এ ঘোষনা দেয়ার অধিকার রাখেনা l আমরা ইদানীং বাজারে, অফিসে, জনসমাগমস্থলে হামলা দেখি - ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে এটি কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয় l যারা অতি আবেগে বা অতি দায়িত্বশীলতা দেখাতে এ কাজ করে তারা মূলতঃ ইসলামী চেতনা থেকে ছিটকে পড়ে l ইসলামের দা'য়িদের মনে রাখা উচিত বান্দার দায়িত্ব হলো নিয়ত ঠিক রেখে কাজ করা, ফল আল্লাহর হাতে l আল্লাহ বলেছেন তিনি কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না তারা নিজেরা ভাগ্য পরিবর্তনে ব্রতী হয় l তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই কথা বলতে হবে, হাদিসে এসেছে জালিম শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ l আরও একটি বিষয় মনে রাখা জরূরী সেটা হলো সংগ্রামের পক্ষ, একটি হলো হক আর অন্যটি হলো বাতিল l চিরায়ত লড়ায়ে এ দুটি পক্ষই বিবেচ্য l
জাতিয় ঐক্যঃ
জাতিয় স্বার্থে ঐকমত্য থাকা অতিব জরুরী আল্লাহ বলেন, তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা, কিন্ত্তু আমরা এ কথার থোড়াই কেয়ার করি l আমরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য এমন পর্যায়ে নিয়ে যাই যে একে অপরকে কাফির-মুনাফিক বলে দেই অনায়াসে l অথচ এটি খুব মন্দ উদাহরন l মত পার্থক্য সবকালেই ছিল কিন্তু তা নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হওয়া অনুচিত l হযরত উমর ফারুক (রাঃ) একবার এক বেদুঈনকে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে নিয়ে আসলেন, বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে অনুমতি দিন, এর গর্দান কেটে ফেলি l রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন কেন ? তিনি বললেন আমরা যেভাবে কুরআন তেলাওয়াত করি এই লোক সেভাবে না করে অন্যভাবে পড়ে l রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে উমর থাম, কুরআন সাতভাবে তেলাওয়াত করা যায় l তাই ফিকহী ব্যাপার বা দাওয়াতের পদ্ধতি যার যেমনই হোক ইসলাম এর মূল বিষয়গুলোতে যেন আমরা একতাবদ্ধ থাকি l
হাদিসে রাসূলে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুসংবাদ দাও, দুঃসংবাদ দিওনা, আশা দাও, নিরাশ করনা l আমরা যেন পরহেযগার-ধর্মপ্রান বলতে পোষাকি কোন উদাহরন সৃষ্টি করে মানুষকে হতাশ করে না দেই l আধুনিক প্রতিটি মানুষ ধার্মিক-পরহেযগার হতে পারে সেই কামনা করি l
বিষয়: বিবিধ
১২৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাযাকাল্লাহু খাইরান।
(সূরা মায়েদা-৩)
মন্তব্য করতে লগইন করুন