ব্রাজিল ২০১৪ বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম গুলো (পর্ব-১)
লিখেছেন লিখেছেন বশর সিদ্দিকী ১৬ মে, ২০১৪, ১২:০১:১৬ দুপুর
ঘরের দুয়ারে করা নারছে ব্রাজিল বিশ্বকাপ। দির্ঘ চার বছর পরে আসা এই বিশ্বকাপের এবারের হোস্ট ব্রাজিল। আমরা সবাই প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষ করে আছি কখন শুরু হবে ফুটবলের এই জমজমাট বিশ্বকাপানো আসর। ফেসবুকে অলরেডি শুরু হয়েে গেছে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের তুমুল বাকযুদ্ধ। আমি নিজেই ব্রজিল সাপোর্টার হিসাবে এই যুদ্ধেরে একটা অংশ হিসাবে আছি।কিন্তু আমরা কি জানি কোন কোন স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের খেলাগুলো অনুস্ঠিত হবে বা তাদের অবস্থা অথবা তাদের ডিটেইলস। অথচ খেলা দেখার সময় আমরা মুলত এই স্টেডিয়ামগুলোই বার বার দেখতে থাকবো। আসুন জেনে নেই স্টেডিয়াম গুলো সম্পর্কে।
মোট ১২ টি স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৫ টি পুরোনো স্টেডিয়ামকে নতুন করেে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং বাকি সাতটি একেবারেই নতুন স্টেডিয়াম। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে একজন প্রকৌশনি হিসাবে খুবই আগ্রহি ছিলাম এই স্টেডিয়াম গুলোর ডিজাইন সম্পর্কে। তাই আমি প্রতিটি পর্বে তিনটি করে মোট চার পর্বে এই বারটি স্টেডিয়াম সম্পর্কে ডিটেইলস ছবি সহ লেখবো। এছারা প্রতিটি স্টেডিয়ামের খেলার শিডিউলও থাকবে। চলুন শুরু করা যাক।
Estádio do Maracanã (মারাকানা স্টেডিয়াম): পৃথিবি বিখ্যাত একটা স্টেডিয়াম। গত বছরের ব্রাজিল কনফেডারেশন কাপের খেলা হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে। যেখানে স্পেনকে ঘোলা পানি খাওয়াইয়া কাপটা ব্রাজিল নিজেদের ঘরে তুলে।
ব্রাজিলের দ্বিতিয় সর্ববৃহৎ শহর রিও-ডি-জেরনিরোতে অবস্থিত এই ভুবন বিখ্যাত স্টেডিয়ামটি।
* পুরো নাম: Estádio Jornalista Mário Filho
* অবস্থান: Rio de Janeiro, Brazil
* ভুমি অধিগ্রহন: ২, অগাস্ট ১৯৪৮ সালে
* প্রথম খেলা : ১৯৫০ সালে
* সংস্কার: ২০০০, ২০০৬, ২০১৩
* মালিকানা: Rio de Janeiro স্টেট কর্তৃপক্ষ
* ধারন ক্ষমতা: বর্তমান:- ৮০,০০০ পুর্বে এটা ছিল( প্রায় ২ লক্ষ)
* নির্মান খরচ : ২০৮ মিলিয়ন ডলার( সর্বশেষ র্সস্কারের খরচ)
* মাঠের আকার: 105 m × 68 m (344 ft × 223 ft)
ব্রাজিল যখন ১৯৫০ বিশ্বকাপের প্রথম হোস্ট দেশ হিসাবে নির্বাচিত হয় তখনই তাদের সরকার এমন একটি স্টেডিয়াম নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় যা দেখে পুরো পৃথিবি হতবাক হয়ে যাবে। রিওডিজেনিরোর স্টেট কর্তৃপক্ষ ১৯৪৭ সালে এর টেন্ডারের আহ্বান করে এবং লোকল একজন আর্কিটেক্টের কাছথেকে ডিজাইন নেয়া হয়। লোকশেন হিসাবে নেয়া তখনকার একটি ঘোরার দৌরের মাঠকে। ১৯৪৭ সালে শুরু হওয়া কাজের ধরি গতি দেখে তৎকালিন ফিফা ইউরোপ থেকে একজন কন্সট্রাকশন স্টেসালিস্ট পাঠান তারাতারি কিছু একটা সমাধান দেয়ার জন্য। ১৯৫০ সালের সেই বিখ্যাত উরুগুয়ে-ব্রাজিল ম্যাচে রেকর্ড পরিমান মানে প্রায় ২ লক্ষ লোক দারিয়ে এই পুরো ম্যাচটি উপভোগ করেছিল। এরও প্রায় ১৭ বছর পরে মুল স্টেডিয়ামটির কন্সট্রাকশন কাজ শেষ হয়। কাজ শেষ হবার এক বছর পরে Mário Filho নামক একজন সাংবাদিক যিনি এইরকম একটি স্টেডিয়ামের স্বপ্ন দেখতেন এবং তার অক্লান্ত প্রচেস্টায় স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয় তিনি মারা যান। তাই স্টেডিয়ামটির নাম পরিবর্তন করে তখন তার নামে রাখা হয়
১৯৯২ সালের দিকে এই স্টেডিয়ামটির একদম উপরের একটি ছাদ ভেঙে পরলে ২ জন নিহত এবং ৫০-৭০ জন আহত হয়। এর পরেই স্টেডিয়ামটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে এর সংস্কার কাজ শরু হয়। ২০০৬ সালে আবারও এই সংস্কার করা হয়। এবং ২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আবারও ব্যাপক আকারের সংস্কার করা হয়। প্রত্যেক বারের সংস্কারের ফলে প্রচুর পরিমানে আসন কমে গেছে। তাই আসন সংখ্যা সেই দুইলক্ষ আসন থেকে নেমে মাত্র ৮০০০০ এর চলে এসেছে। বর্তমানে এর উপরের পুরো স্ট্রাকচারটা সরিয়ে নিচের স্ট্রাকচারটি তে নতুন করে বিপুল পরিমানে স্টিল সংযুক্ত করা হয়েছে। এছারা পুরো ছাদটি আবার নতুন করে দেয়া হয়েছে। এখানে ছাদ টেফলন নামক একধরনের কাপর ব্যাবহার করা হয়েছে যা ওজনে অনেক হালকা কিন্তু ছাদ হিসাবে অনেক মজবুত। ছাদটি সাইজেই এতটাই বর যে এটি ৮০০০০ সিটের প্রায় ৯৫% কভার করেছে
এই স্টেডিয়ামে সর্বোমোট সাতটি খেলা অনুস্ঠিত হবে।
June 15, 2014- Argentina vs Bosnia and Herzegovina
June 18, 2014- Spain vs Chile
June 22, 2014- Belgium vs Russia
June 25, 2014- Ecuador vs France
June 28, 2014- Winner Group C vs Runner-up Group D
July 4, 2014 - Quarter-finals
July 13, 2014 - Final
বিশ্বকাপের সমাপ্তি হবে এই স্টেডিয়ামে মানে ফাইনাল ম্যাচটি হবে এই স্টেডিয়ামে। মারাকানা স্টেডিয়ামের পুরো কমপ্লেক্সটাতে আরো একটা ইনডোর স্টেডিয়াম, একটা সু্ইমিং পুল সহ খেলাধুলার জন্য আরো অনেক গুলো একোমেন্ডেশন আছে। এই স্টেডিয়ামে কনসার্ট করে নাই এমন কোন স্টার নাই। আশির দশকের ফ্রাঙ্ক সিনাট্রা হতে শুরু করে বর্তমানের ব্যাক স্ট্রিট বয়েজ এর মত দুর্দান্তর সব গায়ক এবং ব্যান্ড এখানে পারফর্ম করেছেন। ১৯৮৩ সলে কিস ব্যান্ড এক লক্ষ ৩২ হাজার লোকের সামনে পারফর্ম করে। স্টিং এবং ম্যাডোনে পর দুই বার এখানো পারফরর্ম করেছেন যার দ্বিতিয় বার টিকেট সোল্ড হয়েছিল এক লক্ষের উপরে।
Arena Corinthians(করনিথিয়ান্স স্টেডিয়াম): এটি একটি সম্পুর্ন নতুন একটা স্টেডিয়াম। নির্মান করেছে Sport Club Corinthians Paulista নামক একটি ক্লাব। বর্তমান বিশ্বকাপের ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার উদ্ধোদনি খেলাটি এই স্টেডিয়ামে অনুস্ঠিত হবে। স্টেডিয়ামটি ব্রাজিলের সাও-পাওলো শহরে অবস্থিত।
মুলত এর পরিকল্পনার শুরু হয় আশির দশকে যখন এই ক্লাবটি প্রচন্ড ভাবে মাঠের সংকটে ভুগছিল। তখনই তারা সাও-পাওলোর মেয়রের কাছে জমির জন্য আবেদন করলে ৯০ বছরের লিজে একটি জতি তাদের দেয়া হয়। প্রথম পরিকল্পনা হয় একটি ২ লক্ষ সিটের নতুন স্টেডিয়াম নির্মান করার। কিন্তু বাধ সাথে ব্রাজিলের সরকার কারন ব্রাজিল তখন চরম আর্থিক সংকটে ভুগছিল। ফলে পুরো প্রজেক্টটি ডিমে তালে চলতে থাকে। হাঠৎ করে যখন ২০০৯ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ঘোষটা হয় তখনই শুরু হয় এই স্টেডিয়ামটি নিয়ে ব্রাপক তোরজোর। প্রচুর বিদেশি কম্পানি এগিয়ে আসে ইনভেস্টেমেন্টের জন্য। এবং এভাবেই ২০১০ সালে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ি স্টেডিয়ামটির কাজ শুরু হয়। এই পরিকল্পনায় স্টেডিয়মাটিতে ধারন ক্ষমতা রাখা হয় ৪৮ হাজার এর মত। তবে উদ্ধোধনি ম্যাচের জন্য আরো ২০ হাজার এক্সট্রা সিট বসানো হয়েছে যা পরবর্তিতে সরিয়ে ফেলা হবে।
স্টেডিয়ামটির কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ মাসের শেষের দিকে সম্পুর্ন কাজ সম্পন্ন হবে। এর কন্সট্রাকশন কাজ শেষ হলে এটিই হবে দ্বিতিয় সর্ববৃহৎ বেসরকারি স্টেডিয়াম হবে ব্রাজিলের।
* পুরো নাম: Arena Corinthians
* অবস্থান: São Paulo, Brazil
* ভুমি অধিগ্রহন: ২০১০ সালে
* নির্মান কাজ শুরু : ২০১১ সালে
* মালিকানা: Corinthians কর্তৃপক্ষ
* নির্মান খরচ: ৪১২ মিলিয়ন ডলার
* ধারন ক্ষমতা: ৪৮২৩৪ জন
* মাঠের আকার: 105 by 68 metres
২০১৩ এর দিকে এই স্টেডিয়ামে একটা ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে। একটা ক্রেন আস্ত একটা স্টিলের ছাদ উপরে উঠানোর সময় ক্রেনটা ছাদ সহ কলাপস করে। ফলে দুই জন শ্রমিক মারা যায়।
এতে পুরো কাজটি বেশি কিছুদিন দেরি হয়। তবে এখন একেবারেই তৈরি এই স্টেডিয়ামটি। ছবি তোলা ব্যাপারে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের মারাত্মক রেস্ট্রিকশনের কারনে ভালো কিছু ছবি পাওয়া যায় নাই।
এই স্টেডিয়ামে মোট ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। খেলাগুলো হল
June 12, 2014 - Brazil vs Croatia
June 19, 2014 - Uruguay vs England
June 23, 2014 - Netherlands vs Chile
June 26, 2014 - South Korea vs Belgium
July 1, 2014 - Winner Group F vs Runner-up Group E
July 9, 2014 - Semi-Finals
আমি পরিকল্পনা করছি এবার বিশ্বকাপে নোট লিখতে লিখতে আপনাদের জালাইয়া ফেলুম। এর পর শুরু করুম প্লেয়ারদের নিয়া। পুরা বিশ্বকাপ টানা চলবে আমার বিশ্বকাপ সম্পর্কিত নোটগুলা। আশা করি সাথেই থাকবেন। এবং সহোযোগিতা করবেন। ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
১৮২১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন