আমেরিকা এবং রাশিয়ার অস্ত্রের তুলনামুলক চিত্র পর্ব - ৩ (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল-ICBM)
লিখেছেন লিখেছেন বশর সিদ্দিকী ০৯ মে, ২০১৪, ১১:১৩:৪২ সকাল
ICBM শব্দের ইংলিশ মানে হইতেছে intercontinental ballistic missile। যার বাংলা করলে দারায় আন্তমহাদেশিয় ব্যালাস্টিক মিসাইল। এখানে আন্তমহাদেশিয় মিসাইল কথাটার মানে হইতেছে যে মিসাইল এর রেঞ্জ মিনিমাম ৫৫০০ কিমি এর উপরে এবং একই সাথে যেগুলো বিশাল সাইজের পারমানবিক বোমা, রাসায়নিক বোমা অথবা বায়োলজিক্যাল বোমা বহন করতে পারবে। অত্যাধুনি ডিজাইনের ICBM গুলো অনেক গুলো ওয়ারহেড একই সাথে বহন করতে পারে। যেগুলো বিভিন্ন টার্গেটে ক্রমানুসারে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলো প্রধানত বানানো হয় পারমানবিক বোমাগুলো বহন করার জন্য। যাতে রাশিয়া থেকে উৎক্ষেপন করলে আমেরিকায় আঘাত হানতে পারে আর আমেরিকা থেকে উৎক্ষেপন করলে রাশিয়ায় আঘাত হানতে পারে। এইবার আসি দুই দেশের ICBM সক্ষমতার কথায়।
রাশিয়া:- রাশিয়ার মুল ICBM হচ্ছে R-36। এটা মুলত ডিজাইন করা হয় সোভিয়েত আমলে Soviet industry designation নামক কোম্পনি দ্বারা। এই আইসিবিএম তৈরি করা হয়েছিল আমেরিকাকে কাউন্টার করার জন্য। কারন কোল্ড ওয়ারের সময় আমেরিকা একের পর এক লংরেঞ্জ বোম্বার তৈরি করতে থাকে যারা পারমানবিক বোমা বহন হামলা করার মত শক্তিশালি ছিল। এছারা যার মধ্যে বি৫২ এবং এর পরের ভার্সন গুলো অন্যতম। তো এই সময়ে রাশিয়া এমন কিছু একটা বানানো সিদ্ধান্ত নেয় যা তাদেরকে আমেরিকা থেকে একটু এগিয়ে নেবে। ঠিক তখনই তারা তৈরি করে R-36। আমেরিকা আর তার মিত্ররা সাধারনত রাসিয়ার বিভিন্ন অস্ত্রগুলোকে তাদের মত করে বিভিন্ন রকম নাম দেয়। এই মিসাইলটাকে তারা নামদিয়েছে SS-18 Satan। মানে এসএস-১৮ শয়তান। আসেন দেখি কেন আমেরিকার মত বড় শয়তান এই মিসাইলটার নাম রাখল শয়তান।
প্রথমেই এর ফিচার গুলো দেখে নেই।
ভর : ২০৯,৬০০ কেজি (২০০ টন)
উচ্চতা : ১০৬ ফিট( একটা দশতলা বাড়িরর সমান)
ব্যাস: ১০ ফিট
অপারেশনাল রেন্জ : ১০,২০০ - ১৬,০০০ কি.মি
গতি: সেকেন্ডে ৭.৯ কি.মি
ব্যাবহারকারী: Russian Strategic Rocket Forces
R-36 মূলত একটা সাইলো বেজ আইসিবিএম। সাইলো হচ্ছে মাটির নিচে থাকা গর্তের মত একধরনের স্ট্রাকচার যার মধ্যথেকে বিশাকার মিসাইল উৎক্ষেপন করা হয়। এটি একটি ২০ মেগাটন অথবা ১০ টা ৮০০ কিলোটনের MIRV (Multiple independently target-able reentry vehicle) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড(বোমা) বহন করতে পারে। এর ক্ষমতা সম্পর্কে উদারহন দেয়ার জন্য বলি যে হিরোশিমায় ব্যবহৃত আনবিক বোমার ওয়ারহেড ছিলো মাত্র ৮ কিলোটনের। আর এই বোমাটা বহন করতে পারবে ৮০০০ কিলোটন পারমানবিক বোমা।
এইটার ক্ষমতার ব্যাপারে বলা হয় যে আমেরিকার নিউয়র্ক শহর ধংস করে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে(মানে একটা সিঙ্গেল বিল্ডিং দারিয়ে থাকবে না) সময় লাগবে মাত্র ৫ মিনিটের মত। এটা হিসাব বলে তবে বাস্তবে আরো কম সময় লাগতে পারে বলে বিজ্ঞানিদের ধারনা।
R-36 এর মতো ভয়ংকর মিসাইল বর্তমানে পৃথিবীতে নাই । আমেরিকা নিজেও এই মিসাইলকে যথেষ্ট ভয় করে। ১৯৯০ পরবর্তি সময়ে আমেরিকা রাশিয়ার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট গর্বভেচ সাথে START II চুক্তি করেছিলো। চুক্তির মুল বিষয় ছিল এই মিসাইল গুলো ধ্বংসের জন্য। পরে চুক্তিটা বিল আকারে রাশিয়ার সংসদে পেশ করা হয়। কিন্তু রাশিয়ার দুমা (সংসদের নিন্ম কক্ষ) পাশ না করে দীর্ঘদিন ঝুলাইয়া রাখছিল। পরে পুতিন এসে তা প্রত্যাক্ষান করে এবং কমপক্ষে ১৫৪ টা R-36 আইসিবিএম আ্যাকটিভ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়। তখন আমেরিকা জর্জিয়াকে ন্যাটোর সদস্য করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। তার অনেক কাদা ছোরাছুরির পর রাশিয়া জর্জিয়ার যুদ্ধ।
আমেরিকা:
আমেরিকা তাদের প্রথম ICBM এর পরিক্ষা চালায ১৯৬২ সালের দিকে। প্রথম সেই ICBM টির নাম ছিল পিসমেকার। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে সেটি খুব বেশিদিন সার্ভিসে রাখতে পারেনাই। ২০০৫ সালে সেই মিসাইলটি অফসার্ভিসে চলে যায়। এরমধ্যেই তারা লাঞ্চ করে LGM-30 Minuteman নামক ICBM টি। বর্তমানে এর থার্ড ভার্সন তাদের স্টকে আছে। এই মিসাইলটি মুলত উপরে বর্নিত মিসাইলটির মতই তবে সাইজে এবং ক্ষমতায় কিছুটা ডিফারেন্স আছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে আমেরিকা তাদের বি৫২ বোম্বার গুলোই মিসাইলের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় পারমানবিক যুদ্ধের জন্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ICBM গুলো রাডার ফাকি দিয়ে খুব সুক্ষ ভাবে যে কেন স্থানে হামলা আঘাত হানতে পারে কিন্তু বম্বার গুলো কোন ভাবেই এই কাজ করতে পারে না। তাহলে কেন তারা বম্বার বিমানের উপর এত ভরসা করছে আর কেনই বা আবার ICBM বানাচ্ছেঘ
যাইহোক এইবার আসি তাদের এই ICBM টির বিষয়ে।
প্রথমেই এর ফিচার গুলো দেখে নেই।
ভর : ৩৫,৩০০ কেজি (৩৫ টন)
উচ্চতা : ৬০ ফিট( একটা ছয়তলা বাড়িরর সমান)
ব্যাস: ৫.৫ ফিট
অপারেশনাল রেন্জ : ৮,০০০- ১৩,০০০ কি.মি
গতি: সেকেন্ডে ৭ কি.মি
ব্যাবহারকারী: United States Air Force Global Strike Command
এটিও একটি সাইলো মিসাইল। তবে এটিও মোবাইল সাইট থেকে উঃক্ষেপন করা যায় কারন এর ভর অনেক কম। এই মিসাইলটি একসাথে ৩ টির মত ৩০০-৫০০ কিলোটন পারমানবিক বোমা বহন করতে পারে। যা রাশানদেরটার থেকে অনেক গুন কম। আমেরিকা এখন পর্যন্ত ৪৫০ টার মত Minuteman বানিয়েছে যা পৃথিবির বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন আছে। তুরস্ক থেকে আলাস্কা পর্যন্ত ছরিয়ে আছে এই মিসাইল গুলো। আমেরিকানরা এখনপর্যন্ত প্রচন্ড চেস্টা করছে এই মিসাইলগুলো পারমানবিক ধারনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। তবে আন্তর্যাতিক বেশ কিছু বাধানিষেধের জন্য তারা বড়ধরনের কোন পরিক্ষা চালাতে পারছেনা এই বিষয়ের উপর। তুরস্কে মোতয়েন Minuteman গুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত রাশিয়া, ইরান এবং চায়নার সাথে আমেরিকা প্রচন্ড ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। এবং রাশিয়ার সাথে কিউবা ক্রাইসিসের বিষয়টা হয়েছিল যখন রাশিয়া কিউবাতে তাদের মিসাইল মোতয়েনের চেস্টা করে।
চায়না:
চায়নার Dongfeng-41 এখন পর্যন্ত জানা মতে সবচেয়ে আপগ্রেড ICBM। তবে এর মুল ডিজাইন তারা শুরুকরেছিল নব্বই এর দশকের শুরুর দিকে। এবং ২০০০ সালের দিকে তাদের এই মিসাইলটা ICBM এর যুগে প্রবেশ করে। ২০১০ সালে তাদের মিলিটারি যখন এইটা প্রকাশ্যে তাদের সামরিক কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করে তখন বিষয়টা পরিস্কার হয় যে তারা আর পিছনে নাই।
এক নজরে এর ফিচার গুলো দেখে নেই।
ভর : ৮০,০০০ কেজি (৮০ টন)
উচ্চতা :৭০ ফিট( একটা সাততলা বাড়ির সমান)
ব্যাস: ৭.৫ ফিট
অপারেশনাল রেন্জ : ১২,০০০- ১৫,০০০ কি.মি(এইটা শুরুই করে ১২০০ কিমির রেঞ্জ দিয়ে)
গতি: সেকেন্ডে ৮.৫ কি.মি
ব্যাবহারকারী: People's Liberation Army
এইটার স্পিডের কথা শুইনা আমেরিকার এক সিনেটর(রাজনিতিবিদ) টানা ৫ মিনিট হেসেছিলেন। কারন পৃথিবির ইতিহাসে এত ভারি কোন মিসাইল এত স্পিডে উরতে পারছে বইলা রেকর্ড হয় নাই। উনি ভাবছিলেন একটা বোগাস নিউজ। তার উপর আছে এই মিসাইলটা একইসাথে road-mobile TEL থেকে উৎক্ষেপন করা যায়। যেটা আপনারা ছবিতে দেখতে পাইতাছেন। এইটা একই সাথে ২৫০ কিলোটনের ১০ টা ওয়ারহেড বহন করতে পারে। তবে এইটা এখনো আপগ্রেড চলতেছে। মনে হইতেছে ২০২০ সালে এইটা আসলে আমেরিকা আর রাসিয়াকে তাদের ICBM গুলা নিয়া আর একবার ভাবতে হইবে। বিশেষ আমেরিকারে তাদের গুলা লোহালক্করের দোকানে কোজিমুলে বেচতে হবে।
( একটা বিষয় বলে রাখি এই মিসাইল গুলো কোন রাডার, কোন এন্টি মিসাইল বা কোন বিমানে ধার ধারেনা। এগুলো একবার উরাল দিলে এক মাত্র আল্লায় থামাইতে পারবে অন্যকেউ না। এছারা এই সবগুলা মিসাইল মিল্লা পুরা পৃথিবিরে ধংস করতে পারবে মাত্র ৩০ মিনিটে। ধংস মানে অল্প কিছু ব্যাকটেরিয়া ছারা কিছুই আস্ত থাকবে না সেই মাত্রার ধংস)
এছারা ইসরাইলের আছে Jericho III (4,800 to 11,500 km) (Israel)
এছারা বর্তমানে ইরানের সাহাব ক্ষেপনাস্ত্র নিয়া ব্যাপক কানাঘুষা চলতেছে। বিশেষ করে ইজরাইল ব্যাপক টেনশনে আছে ইরানে সাহাব ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে। ধারনা করা হইতেছে ইরানে সাহাব-১০ ক্ষেপনাস্ত্র ১০,০০০ কিলোমিটার এর পাল্লার এবং এটার স্পিড আবারো সারা বিশ্বকে থমকে দিবে।তবে সেটা এখনো এক্সপেরিমেন্টাল পর্যায়ে।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
৩১৩২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবত ওরা করতাছে আমরা কি করছি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন