আমেরিকা এবং রাশিয়ার অস্ত্রের তুলনামুলক চিত্র পর্ব - ১ (বিমান এবং মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা)

লিখেছেন লিখেছেন বশর সিদ্দিকী ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:০২:৪০ রাত



রাশিয়া: এস৩০০ মিসাইল ব্যাটারি সিস্টেম নামক রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রমানিত কার্যকর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা। এই মিসাইল সিস্টেমটিতে অত্যান্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রাডার এবং ইন্সট্যান্স ফায়ারের জন্য সিস্টেম থাকে। এইটার কার্যকরিতার প্রমান হইতেছে সিরিয়াতে। গৃহযুদ্ধ শুরুর পর হইতে ঘন ঘন তুরস্ক আর ইসরাইল সিরিয়ার আকাশ সিমা লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালাইতে শুরু করে। কিন্তু যেই রাশিয়া বাসার আল আসাদরে এস৩০০ দেয়া শুরু করল তার পর হতে এখন সিরিয়াতে বিমান হামল সম্পুর্ন বন্ধ আছে। স্পস্ট বুঝা যাইতাছে এস৩০০ এর ভয়ে দেশ দুইটার বিমান বাহিনি তটস্থ। উপরে এস৩০০ এর তিনটা মিসাইল ব্যাটারির চিত্র। ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন খুব সহজে বহন যোগ্য এই ব্যাটারি গুলো প্রতি সেটে দুটি করে একটি ১৬ চাকার বিশেষ ট্রাকে করে যে কোন স্থানে বহন করে নেয়া যায়। এই ব্যাটারিগুলো সারা বিশ্বের যে কোন স্থানে যে কোন সময় সেট করা যাবে। এগুলো সিরিয়ার মরুভুমি থেকে শুরু করে রাশিয়ার প্রপন্ড ঠান্ডা অঞ্চলগুলোতেও সমান ভাবে কার্যকরি। এই সিস্টেমের একটি রাডার এক সাথে ১০০ টার্গেট এক সাথে লক করতে পারে এবং এক সাথে ৩৬ টা পর্যন্ত মিসাইল ফায়ার করতে পারে। একটা ট্রাক তার স্থানে পৌছার ৫ মিনিটের মাথায় পুরোপুরি সেট হয়ে যায় এবং সাথে ফায়ার করতে পারে। খুবই মজার বিষয় হল এর এক একটা মিসাইল সিস্টেমের ওজন মাত্র ১.৫ থেকে ২ টনের মধ্যে। তাই এগুলো খুব দ্রুত পরিবহন করা যায়। এছারা এই পরিবহন করা ট্রাকগুলো অত্যান্ত উচ্চমানের গাড়ি এবং এগুলো স্পিডও অত্যান্ত চমৎকার। মনে রাখবেন এইধরনের অস্ত্রগ্রলো কোন ভাবেই এক দুই বছরে নির্মান করা সম্ভব হয় না। প্রচুর অর্থ, মেধা এবং সময়ের ফলে এগুলো পুর্নতা পায়। ১৯৬৭ সাল থেকে রাশিয়া এই প্রযেক্ট এর ডেভলপ শুরু করে এবং ২০০৫ সালে এসে সর্বশেষ এই সংস্করনটি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু করে। এখন পর্যন্ত এর আরো আপগ্রেড ভার্সন এস৪০০ এর ডেভলপ চলছে। কারন আমেরিকার সর্বাধুনিক বিমান এফ-৩৫ লাইটনিং এবং অত্যাধুনিক ড্রোনগুলোকে এই সিস্টেমের আওতায় আনার কাজ চলছে। ধারনা করা হচ্ছে সিরিয়াতে মোতায়েন ব্যাটারিগুলো এফ-৩৫ আর ড্রোন নামাইয়া আনতে পারবে। যার কারনে বিদ্রোহিদেরকে আমেরিকা-ইসরাইল-তুরস্ক জোট কোন ভাবেই আকাশ থেকে সহযোগিতা করতে পারছে না। এস৩০০ এর আবার অনেকগুলো ভার্সন আসে যেমন ভুমি থেকে আকাশে, ভুমি থেকে ভুমিতে, ভুমি থেকে সাগরে, সাগর থেকে ভুমিতে। আমি এখানে শুধু ভুমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপনযোগ্য ব্যাটারি গুলো নিয়ে আলোচনা করছি।



আমেরিকা: ইসরাইলের সাম্প্রতিক স্থাপিত আয়রনডোম হচ্ছে আমেরিকার তৈরি সর্বাধুনিক বিমান এবং মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আয়রন ডোম এর পুরো টাকাপয়সা এবং প্রযুক্তি আমেরিকা এবং ইসরাইলে যৌথ উদ্যেগের। মুলত এই সিস্টেমটি করা হয়েছে ফিলিস্তিনের হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর ছোট ছোট রকেট হামলা ঠেকানোর জন্য। মুলত সাইজে খুব ছোট ছোট এই ব্যাটারি গুলোর মধ্যে একসাথে প্রায় ২০ টার মত ইন্টারসেপ্টার থাকে। একসাথে অনেক গুলো মিসাইল থাকাতে এটার কার্যক্ষমতা অনেক বেশি। মাত্র ৯২ কেজি ওজন হওয়াতে এর মুভমেন্ট অনে দ্রুত এবং সেট করার ঝামেলাও অনেক কম। এছারা এরা আকারও রাশানদেরটার থেকে অনেক ছোট। তবে মজার এবং হাসি ব্যাপা হচ্ছে তারা এই প্রযেক্ট দিয়া পুরা একটা ধরা খাইছে হামাসের হাতে। লাস্ট ২০১২ সালে ৮ দেনের যুদ্ধে লাস্ট ২ দিনে হামাসের সামান্য ৭৫ কিমি পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র (যা কিনা অর্ধেক ইরানের বানাইয়া আর বাকি অর্ধেক ফিলিস্তিনে আইনা হামাসের আনকোরা হাতে বানানো) ঠেকাইতে পুরাই ব্যার্থ হইছে। এটলিস্ট ১০ টার উপরে ক্ষেপনাস্ত্র এই সিস্টেম ফাকি দিয়া ইসরাইলে আঘাত হানছে। যার কারনে পরবর্তিতে ইসরাইল খুব দ্রুত যুদ্ধ বিরতিতে যাওয়ার ঘোষনা দেয়। কারন হামাসের হাতে তখন পর্যন্ত আরো ভয়ানক কিছু ক্ষেপনাস্ত্র ছিল যা তারা ব্যাবহার করার হুমকি দিছিল। আরো মজার বিষয় হইতেছে এই ক্ষেপনাস্ত্র গুলো ইরানিদের সবচেয়ে কম দামি এবং তাদের ক্ষেপনাস্ত্র বহরের সবচেয়ে কম গ্রেডের ক্ষেপনাস্ত্র। এর চেয়ে শত গুন ভয়ানক সাহাব শ্রেনির ব্যাপক বিদ্ধংসি ক্ষেপনাস্ত রয়েছে ইরানের হাতে। সেই ইরানকে তারা কিসের ভিত্তিতে সকাল বিকাল হুমকি দেয় আমার মাথায় ঢুকে না। আসল কথায় আসি। মুলত সিস্টেমটার সবচেয়ে দুর্বল হচ্ছে এর রাডার সিস্টেমটা। কারন রাশিয়ানটা যেখানে একসাথে ১০০ টা টার্গেট ক্যাচ করতে পারে সেখানে এটার ক্ষমতা ৬০ টার মত। এছারা টানা মিসাইল ফায়ার করতে থাকলে মাছে মধ্যে ব্যাটারি গুলার অতিরিক্ত কম্পনের ফলে রাডারটার অবস্থা আরো খারাপ হয়। আরো মজার বিষয় হইতেছে এইটা এখনো মিগ বা সুখোইর সামনে পরে নাই। পরলে বুঝা যাইতো বিমান বিধ্ধংসি ক্ষমতা কদ্দুর। তবে ধারনা করা হইতেছে মিগের সামনে এইটা তেমন একটা পাত্তা পাবে না। কারন একটা মিগের অস্ত্রভান্ডার এরকম একটা ছোট ব্যাটারি খালি কইরা দেয়ার জন্য যথেস্ট। হামাসের হাতে মাইর খাওয়ার পরে এখন এইটা নিয়া বাইরে দিয়া তৃপ্তি দেখাইলেও ইসরাইল ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড হতাশ। তাই এখন আর আয়রন ডোম নিয়া খুব একটা তোর জোর করতেছে না।

আমার এই সিরিজটা ভাবতেছি টানা অনেকগুলা করব। তাদের সব শ্রেনির অস্ত্রের ডিটেইলস নিয়া লেখব। আশা করতেছি আপনারা সাথেই থাকবেন এবং লেখার উৎসাহ যোগাবেন। এতক্ষন কস্ট করে পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১১৭৬৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

210421
২০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:০৯
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
210434
২০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:০৯
মাটিরলাঠি লিখেছেন : জ্বী ভাই লিখুন আছি আমরা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
210447
২০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:৪৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
210456
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:২৩
এহসান সাবরী লিখেছেন : লিখে যান ভাই। থামাবেন না কিন্তু!!
ভালো লেগেছে অনেক!!!
210459
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৩১
তহুরা লিখেছেন :
210463
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:০৮
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : নতুন বিষয়ে জানার মঝাই আলাদা, সাথেই আছি লিখতে থাকুন।
210472
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:০৩
হতভাগা লিখেছেন : আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ সেই ছোটকাল থেকেই দেখার স্বপ্ন । বিশ্বকাপ ফুটবলে সবাই যেমন ব্রাজিল - আর্জেন্টিনার ফাইনাল আশা করে ।

খেলাতে তো কোয়ালিফাই করে উঠে আসতে হয় , তাই এরকম ফাইনাল হওয়াটা খুব একটা সহজ ব্যাপার না ।

কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে এরকম কোয়ালিফাই করার তো বাধ্যবাধকতা নাই ।

দুই দেশেই বিশ্বের মধ্যে ভালই দাপট দেখায় । অস্ত্রবাজীতেও সবার চেয়ে এরাই এগিয়ে ।
এদের মধ্যে সবসময়ই তলে তলে খিটিমিটি লেগেই আছে । চোরা মাইরও দিছে এরা একে অন্যকে আরেকজনের দ্বারা ।

কিন্তু একেবারে নিজেরা নিজেদের সাথে কখনও লাগে নাই । ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সবসময়ই এই লাগে , এই লাগে এরকম বেশ কিছু ইস্যুও এসেছিল । তার পরেও দুইজনই পিছলাইয়া গেছে ।

এখন ক্রিমিয়া-ইউক্রেনকে নিয়ে সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।

এবার অন্তত তাদের উচিত হবে না বিশ্ববাসীকে হতাশ করার , আরও অপেক্ষায় বসিয়ে রাখার।
210479
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৩৫
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : গবেষনাধর্মী লেখা,
অনেক অনেক কিছু জানতে পারলাম,
210488
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
নূর আল আমিন লিখেছেন : আরে ভাই মিশাইল টিশাইল থুইয়া প্রিয়তমারে কিছু কন
১০
210507
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:০৩
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : এই বিষয়গুলি আমাকে মাঝে মাঝে নাড়া দিতো। ভাবতাম কোথায় গেলে পাওয়া যাবে বা পড়া যাবে। আপনি তার অবতারণা করে আমার উৎসুক মনকে যেন বৃষ্টির অবগাহনে ভিজিয়ে দিলেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো কিছু থাকলে সেগুলোও তাড়াতাড়ি শেয়ার করেন।
২৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৫
162225
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :
আমিও আপনার মতই ভাবছিলাম
১১
210523
২০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৪৩
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : পডে খুব ভাল লাগলো,শেয়ারে জন্য অনেক ধন্যবাদ
১২
211571
২২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৫৪
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : প্রবন্ধটি ভাল লাগল, অনেক কিছু জানলাম। তবে গবেষনামূলক প্রবন্ধে শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহার করাই বাঞ্ছনীয়। ধন্যবাদ Rose Rose
১৩
213943
২৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৭
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন : ভালো লাগলো
পিলাচ

আমাদের বাংলাদেশ ও এরকম মিজাইল বানাইলে ভারত ইদুরের মত গর্তে ঢুকবে,
সীমান্তে বাংলাদেশিদের বারবে না,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File