চট্টগ্রামের তাফসির মাহফিলের সেই মাওলানা এবং একজন সাধারন আমি।
লিখেছেন লিখেছেন বশর সিদ্দিকী ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫৮:৩৯ রাত
সে অনেক দিন আগের কথা। আজ থেকে আরো ১০-১২ বছর আগের কথা। চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে মানে চট্টগ্রাম কলেজের পাশের মাঠে তখন প্রত্যেক বছর একটা তাফছির মাহফিল হয়। মাহফিলে অনেক মানুষ হয়। আজব বিষয় হইতেছে আমি এইটাই জানতাম না যে ওই মাহফিলে কে এই তাফসির করেন বা কার এইটার আয়োজক। একদিন ক্লাসে আমাদের ধর্ম স্যার মাহফিলটার কথা উল্লেখ করলেন ইসলামি আলোচনার উদাহরন হিসাবে।
আমি তখন মাত্র ক্লাস টেনে উঠসি। পুরাই অস্থির অবস্থা। এলাকার এমন কোন মাইয়া নাই যার সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। মাত্র বিরি ফুকা শুরু করছি। স্কুল ছিল চট্টগ্রামের একটা স্বনামধন্য স্কুল নাসিরাবাদ বয়েজ হাই স্কুল। সেই সুবাদে যেই মাইয়ারে প্রপোজ করতাম না করত না। গ্রাম থেকেই ছিল ছাত্রলীগে হাতে খরি। জয় বাংলা ছিল আমাদের কাছে একটা ধর্মের মত। এলাকার বড়ভাইরা ছিল আমাদের সেই ধর্মের প্রচারকের মত।
এই যখন অবস্থা ঠিক সেই মুহুর্তে একদিন রাতের বেলায় দুই তিনজন বন্ধুমলে সিদ্ধান্ত নিলাম মহসিন কলেজের পাশেই একটা এলাকায় যাব বিকেলের দিকে। কারন হচ্ছে সুন্দরি মেয়ে দেখা। আমরা একেবারেই জানতাম না যে ওই দিন তাফসির মাহফিলের শেষ দিন।
মাহফিল প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে আমিতো পুরাই হতবাক। এত মানুষ কি পাগল হইয়া গেল নাকি। সামান্য একটা মাহফিল শোনার জন্য এত মানুষ কিজন্য আসছে এইটা ভাবতে ভাবতে হাটতেছিলাম। উল্লেখ্য রাস্তায় কোন গাড়ি চলছিল না কারন মাহফিলে আগত মানুষের স্থান সংকুলানের কারনে।
হঠাৎ করেই মাহফিলের উপস্থাপক ঘোষনা দিলেন এখন এই মাহফিলের প্রধান আলোচক, উপমহাদেশের বিখ্যাৎ আলেমে দ্বিন, আন্তর্যাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তাফসির কারক এবং বক্তা জনাব আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদি। নামটা শুনে আমার কাছে কমন কোন একজন ওয়াজ করা মাওলানা মনে হইলো কারন এই টাইপের মাওলানারা কি ধরনের ওয়াজ করতে পারে তার ভাল আইডিয়া ছিল আমার কাছে। তার উপর আমার গন্তব্য ছিল একেবারেই উল্টা একটা বিষয়। তাই এইসব বিষয়ে খেয়াল দেবার কোন ইচ্ছাই ছিল না আমার।
কিছুক্ষন পরে হঠাৎ করে একটা ভরাট কন্ঠে অত্যান্ত সুন্দর করে কুরআন তেলোয়াত শুরু হল। চারিদিকে মাইক থাকার কারনে কিছুতেই না শুনে থাকা যায় না। কানে আসতে বাধ্য ওই আওয়াজ। এত সুমধুর কন্ঠে আমি খুব কমই কুরআন তেলায়াত শুনেছিলাম আমার জীবনে। হঠাৎ কি মনে হয় আমার বন্ধদের বইলা একটু বিশ্রাম নেওয়ার উছিলায় দারালাম। দেখি কি বলে শুনার জন্য।
তারপরের কাহিনি সব ইতিহাস। আমি সেইদিন আর সেই মাওলানার বক্তব্য শেষ না করে বাসায় যাইতে পারি নাই। প্রত্যেকটা শব্দ মনে হয় আলাদা আলাদা ভাবে কানে বাজতেছিল সারাক্ষন। এত সুন্দর করে গল্পে গল্পে কঠিন সব বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন যে আমার মনে হচ্ছিল ইসলাম এত সহজ আগে তো জানতাম না। আস্তে আস্তে চলে আসলাম ইসলামের শুশিতল ছায়াতলে। জানিনা কতদুর পর্যন্ত যেতে পেরেছি তবে আমার মনে হয় আমি যদি আজকে একটা একজন মুসলমান হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে যাই তাহলে সবার আগে সেই মাওলানার নাম চলে আসে। এছারাও ধন্যবাদ, নুরুল আমিন আজাদ ভাই, ধন্যবাদ শষি ভাইকেও আমার মত একটা নোংরা মানুষকে মানুষ বানাইতে তাদের অসাধারন পরিশ্রমের জন্য।
আমি জানিনা আমার মত এরকম কত নোংরা জীবনজাপন করা মানুষ ওই মাওলানার কন্ঠে সুমধুর সুরে কুরআন তেলোয়াত শুনে আর যুক্তিপুর্ন বক্তব্য শুনে ইসলামের শুশিতল ছায়ায় চলে এসেছেন। আমি এটাও জানিনা কত মানুষ তাদের জীবনকে ইসলামের নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। কত মানুষের জীবনে হিসাব নিকাশ পাল্টে গিয়েছে। কত মাবোন পর্দার মধ্যে এসেছে। কত যুবক তাদের ছন্নছারা জীবনকে গুছিয়ে নিয়েছে। হতে পারে সেটা লাখের উপরে, হতে পারে সেটা হাজারের উপরে, হতে পারে সেটা শয়ের উপরে।
তবে আমি এইটা জানি এই একশ মানুষ সেই মাওলানার জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিতে এক পায়ে প্রস্তুত রয়েছে। এবং সেটা যে তারা করবে তা তারা দেখিয়েও দিয়েছে। আমি এটাও জানি এই মাওলানা শহিদ হলে বাংলাদেশে হাটি হাটি পা পা করতে থাকা ইসলামি আন্দোলন টা তার দু পায়ে ভর করে ক্ষিপ্ত বেগে দৌরাতে থাকবে।
রক্তের বন্যা বলে একটা কথা আছে। বিষয়টা এরকম যে এত মানুষ এর রক্ত ঝরে যে সেই রক্তের ধারা গিয়ে নদির পানিকে পর্যন্ত লাল করে দেয়। মনে হয় সেটা ১৯৭১ এর পরে বাংলাদেশের মানুষ অবলোকন করে নাই। সেই সত্বার কসম যিনি আমাকে, সেই মাওলানাকে এবং তোমাদেরকে(আম্লিগ) সৃস্টি করেছেন। তোমরা এবার সেই রক্তের বন্যা দেখবে যদি সেই মাওলানার কিছু করার সাহসও কর।
এই সেই মাওলানা।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৬৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এভাবে অনেকেই তার কন্ঠস্বরে আকর্ষিত হয়ে ইসলামের শিক্ষা লাভ করেছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন