মূর্তি ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৭:৪৪ সকাল
তাকওয়াবিহীন ইসলাম আসলে পৌত্তলিকতারই একটা খোলসমাত্র। একটা ইসলামী ইমেজ সামনে রেখে পূজা করছে সবাই। এর বড় প্রমাণ ক্বাবা শরীফে গিয়ে সেলফি তোলা। আরো বড় প্রমাণ হলো গরিব ও মজলুম মেয়েদের ধর্ষণ করে তাকে জিহাদ বলে চালিয়ে দেওয়া, মুসলিমদের হত্যা করতে সাম্রাজ্যবাদের ভাড়াখাটাকে ইসলামপন্থা বলা। হ্যা, জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রতি তুমুল আবেগ রয়েছে, তাই ইসলাম নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিচারী ও অন্ধ। একে পুঁজি করেই ইসলামী ইমেজ দেখিয়ে ইসলাম বিরোধী অপকর্ম হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ ঠকছে। আমি এক সময় সিগারেট খাইতাম, ঠিকমতো নামাজ রোজা করতাম না। কিন্তু ইসলামের প্রতি তীব্র মহব্বত অনুভব করতাম। এর ফলে ঠিকমতো যাচাইবাছাই ছাড়া আমি কত ভূল করেছি!ধরেন বোরকা সম্পর্কেই আমরা অন্ধভক্তি পোষণ করি। ভাবি যারা বোরকা পরে তাদের চরিত্র অনেক ভালো, মানসিকতা উন্নত। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে তাকওয়াবান না হয়ে শুধু বোরকা পরায় কিছুই আসে যায় না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ যৌনকর্মী, নটীরাও বোরকা পরে, তাই বলে তাদের চরিত্র নিষ্কলুষ হয়ে যায় না বা তারা আল্লাহকে ভয় করে বলা যায় না। আমি যখন জেলে গেলাম, তখন আমার এই ভুল ধারণা ভাঙল। আমি আগে কখনো দেখিনি, অথচ বোরকা পরা দেখে প্রথম দিনেই বিয়ে করেছি, সেই বিয়ের কাবিননামা নিয়েও প্রতারিত হয়েছি, কিন্তু একজন মেয়ে অনেকবার হজ ও উমরা করেছে, পরপুরুষের সামনে কখনোই চেহারাও উন্মোচন করে না- এসব কিছু ভেবে আমি শুধু সবর করে গেছি। আমি কোন কোন ক্ষেত্রে সবর করেছি তা আল্লাহ ও ওই নারীই জানেন। আমি ইচ্ছা করলে পুরো পরিস্থিতি এড়াতে পারতাম। কিন্তু আমা কিভাবে ববুঝব- পর্দানশীন পরহেযগার মুসলিমার পক্ষেও এত নিচে নামা সম্ভব। ফলে আমাকে যখন রাস্তায় অপমান করা হয়েছে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। থানায় যাওয়ার পর আমি আসমান থেকে পড়লাম। বিয়ের পর কয়েকদিন পরপর আমাদের দেখা হত, তিনি নেকাব পরা থাকতেন তাই তার মুখটাও আমি দেখতে পেতাম না, একটু নির্জন দেখে নেকাব সরালে কয়েক পলকের জন্য আমি তাকে দেখতাম। কিন্তু থানায় দেখলাম ওসিকে দেখামাত্র তিনি নেকাব খুলে ফেলছেন! তারপর দেখলাম তিনি মিথ্যা কথা বললেন, বিয়ের কথা চেপে গিয়ে বললেন আমার সাথে নাকি তার ছয় মাসের অ্যাফেয়ার ছিল।আগে শুনলেও বিশ্বাস করিনি যে বোরকা পরা মেয়েরা অ্যাফেয়ার করে, কারণ তাহলে বোরকা পরার কী মানে থাকে? পরে আমার নামে মামলা হলো, অভিযোগ- আমি তার হাত ধরে টানাটানি করেছি। একরাত হাজতবাসের পরে আমি জেলে গেলাম। সেখানেই জানলাম মামলার কথা। আমি বিয়ের পরও দিনের পর দিন যার স্পর্শ ও গন্ধ নিইনি, আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়নি বলে, সেই আমি কিভাবে হাত ধরে টানাটানি করব? আমি জানলাম মামলার দুজন সাক্ষী, এর মধ্যে একজন আবার বোরকাওয়ালী। আমি রাগে-অপমানে-ঘৃণায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেলাম। যে কয়দিন জেলে ছিলাম পাঞ্জেগানা নামাজ পড়ে, তাহাজ্জুদ পরে হাউমাউ করে কানতাম। বন্দিদশার জন্য কান্দিনি, ঠকার কারণে কেন্দেছি। তবে এই ঠকাটা ওই নারীর কাছ থেকে ঠকেছি এমন না, সে তো উপলক্ষ মাত্র। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পূর্ণ সেক্যুলার জীবন যাপন করেছি। ক্যাম্পাসের চরম খারাপ লোকগুলোও রোজার দিনে কাপড় ঘেরা দোকানে চা-সিগারেট খাইত, অথচ আমি প্রকাশ্যেই খাইতাম।দিনের পর দিন এক ওয়াক্ত নামাজও পড়িনি। কিন্তু এত সব কিছুর মধ্যেও ইসলাম সম্পর্কে এক ধরনের টান ছিল আমার মধ্যে। ফলে একটু একটু করে সেক্যুলার জীবন থেকে সরে আসি আমি। ক্যাম্পাসে থাকতেই আবার নামাজ-রোজা শুরু করি। সিগারেট ছাড়ার জন্যও মন ব্যাকুল ছিল। কয়েকবার ছেড়েছিও। কিন্তু আমি ছিলাম চেইন স্মোকার, আর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অনুকূল ছিল না, তাই পারিনি। কিন্তু আমার ভেতরে প্রত্যাবর্তনের তাগিদ ছিল। আমি যখন এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম, আমার ভেতরে তোলপাড় হয়ে যেত, মনে হত আমি ইসলামের দিকে এক কদম এগুলাম আর এটা অাল্লাহ দেখছেন, তাই আমি নামাজের পর শিশুদের মতো হেসে ফেলতাম। সেই আমি জেলে বসে ভাবতাম ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে চলে আসলাম! আমার বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও সাক্ষী পরহেযগার নারী! আমার পরিচিত সাংবাদিক ও আইনজীবীদের কতজনই তো ইসলামপন্থী, তারা কেউই আমার পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক খোঁজও নেয়নি। আমাকে পুরো দুটি মাস কারা হাসপাতালে রেখেছেন সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ভাই, তিনি খাঁটি আওয়ামী লীগার ও মুক্তিযোদ্ধা, তার কারণে আমি জেলে নিপীড়িত হইনি। সব কিছু মিলে আমি চূড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়লাম। ইসলাম প্রীতি আমার জন্য বড় কষ্টের ব্যাপার হয়ে গেল। আব্বা-মা জেলে দেখতে গেলে বলেই ফেলেছিলাম- “ইসলামের কারণে এই দশা হলো”। এমন একটা জবাব দিল আর কোনো কথা বললেন চুপ করে গেলাম। মা বলছিলেন, “আগে ইসলাম মানছই নাই, এখন বেশি মানতে গিয়া চেল খাটতেছ”। মায়ের কথার কারণে ভাবতে বাধ্য হলাম যে ইসলাম নিয়ে কী বাড়াবাড়ি করছি? কুরআন শরীফের তরজমা পড়তে শুরু করলাম। সত্যিই তো সহজ ইসলাম বাদ দিয়ে ইসলামের মূর্তি নিয়ে বাড়াবাড়িই করেছি। তাকওয়া ও আল্লাহর রাজিখুশি বাদ দিয়ে কথিত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম নামক পৌত্তলিকতার পিছে ছুটছি। যার ফলে ইসলামপন্থা, ইসলামী রাষ্ট্র, বোরকা ইত্যাদি চিহ্ন-পরিচয়ের মূর্তিরই পূজা করে গেছি। বিরোধিতা করলেও পারফেকশন প্রশ্নেই করেছি। জেল থেক বের হওয়ার পর আরেকটু অনুভব হলো যে, মূর্তি ইসলামে সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো হক্ব ও সত্যের পক্ষে না থাকা। তালাক না দেওয়ার কারণে ইসলাম অনুযায়ী যে এখনো আমার স্ত্রী, লোকজন আমাকে বলে তাকে ভুলে যেতে। এই হচ্ছে মানুষের হক্ব সম্পর্কে এদের অবস্থা। এর মধ্যে কয়েকজন আমাকে আবার বিয়ে করার পরামর্শ দিলেন। তাদের বক্তব্য হল, আমি যুবক মানুষ তাই বিয়ে না করে কিভাবে থাকব? আমার আফসোস হলো এই মানুষগুলান যৌন তাড়নার বাইরে মানুষের আর কোনো অস্তিত্বই দেখতে পায় না। অথচ আমার রূহ বিয়েকে কেন্দ্র করে যে অপমানের শিকার হয়েছে তাতে করে মানুষের প্রতি যে ঘৃণা তৈরি হয়েছে তাতে শরীরের প্রতি আর কোনো টান থাকে না। আমি এখন বিশ্বাস করি নারীরা তাদের শরীর ও যৌনতা নিয়ে কসাইদের মত লাভলোকসানের চিন্তা করে, যার ফলে যেকোনো মানুষই নিরামিষাশী হয়ে গোশতকে উপেক্ষা করার মতো অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থেকে নারীসঙ্গ উপেক্ষা করতে পারে। অবশ্য যৌনদাসদের এই বোধ নাই। –খোমেনী এহসান ভাইয়ের লেখাটি পড়ে কান্না পেয়ে গেলো।আমার জীবনেও বেশ কিছু বোরকাওয়ালী নারী ও ইসলামী ব্যক্তিদের দেখেছিলাম,যারা তাদের চরিত্রহীনতা দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়।হয়ত মুসলিমদের প্রতারণা করার জন্য শয়তানেরই একটি মূল্যবান অস্ত্র এই ইসলামী নারী-পুরুষরা।এরা ইসলামের কথা বলে ইসলামেরই ক্ষতিসাধনে নিমজ্জিত হয়েছে।অন্যদেরকে র’,সি আইয়ের এজেন্ট উপাধি দিলেও এরাই ইহুদী,খ্রিস্টানদের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অাল্লাহ আমাদের মুত্তাকি হওয়ার তৌফিক দিন। আমরা যেন মূর্তি ইসলামের পূজা করতে গিয়ে নিজেদের না ঠকাই।
--খোমেনী এহসান ভাই
বিষয়: বিবিধ
১৪২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সমাজ ও আইন যেহেতু তাদের ফেভারে থাকে সব সময় , সেহেতু তারা সেটাকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তোলে ।
আমাদের সমাজে একজন নারীর একটা মিথ্যা কথা হাজারটা পুরুষের হাজারটা সত্যের চেয়েও বেশী গ্রহন যোগ্যতা পায় ।
অথচ ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি যে '' নারীদের ছলনা ভয়ংকর''
বাদশার স্ত্রী জুলেখা ইউসুফকে মিথ্যা বলে ফাঁসাতে চেয়েছিল । অথচ আমরা গান শুনি যে
একজন প্রতারককে একজন ভাল মানুষের সম পর্যায়ে নেবার মানসিকতা শৈশব থেকেই আমাদের মনে সেটআপ করে দেওয়া হয় ।
আমাদের এমন ভাবে গড়ে তোলা হয় যে , নারীরা কখনও এ ধরনের কাজ করতে পারে না । নারীরা মায়ের জাত । তারা এটা কি ভুলে যায় যে পুরুষেরাও বাবার জাত ?
আল্লাহ মানুষ ও জিনকে দিয়ে জাহান্নাম পরাবেন । মানুষের মধ্যে কি শুধু পুরুষেরাই থাকবে ?
মেরাজ থেকে ফেরার পর রাসুল(সাঃ) নারীদেরকে বলেছিলেন যে - জাহান্নামে আমি মেয়েদেরকে বেশী দেখেছি কারণ তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং স্বামীকে বেশী অভিশাপ দেয় ।
একজন ছেলে যদি কোন মেয়েকে চিট করে তাহলে সেটা বিরাট কাভারেজ পায় , মেয়েরা এরকম করলে কেউ এটাকে খবর বলেই মনে করে না । ঠিক যেমনটা হয়েছিল সাঈদ-রুমানার বেলায় ।
তবে রুবেল-হ্যাপীর ব্যাপার থেকে মেয়েদের প্রতি যে মানুষের একটা অন্ধ সমর্থন ছিল তাতে কিছুটা ছেদ পড়েছে ।
অন্যায় অন্যায়ই, সেটা পুরুষ করুক কিংবা নারী । কোন ঘটনার জন্য একজনের বক্তব্যই সঠিক আর অন্যজনেরটা মিথ্যা এবং বিচারের ক্ষেত্রে একপক্ষের দিকেই সব সময় টানলে এবং আইন একপক্ষের জন্য বানিয়ে রাখলে সমাজে কখনই শান্তি আসবে না ।
শুধুমাত্র নিজের একটা ঘটনার জন্য নারী এবং ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে generalization করছেন।
বুঝা যাচ্ছে কোনো বোরকাওয়ালীর প্রেমে পড়ে মুসলমান হয়েছিলেন। বোরকাওয়ালী "ধোকা (আপনার ভাষ্য অনুযায়ী)" দিয়েছে আর তাতেই জামাত শিবির সহ তাদের চৌদ্দগোষ্ঠী খারাপ?
ঐ মেয়ে এখনো সাথে থাকলে জামাত ও ভাল থাকত শিবির ও ঠিক থাকত?
বেকুব ভন্ডের দল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন