এক সমাজ পরিবর্তনকারীর গল্প

লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:০২:৪৪ সকাল

-আসসালামু আলাইকুম।

হুজুর,আসতে পারি?

-কে?উজাইর?আজকেও দেরী করে আসছো?আমার কাছে আসো।

দেরী করে ক্লাসরুমে ঢুকেই হুজুরের তোপের মুখে পড়ে গেলো উজাইর।হুজুর রাগতস্বরে বলছেন.....

-উজাইর,তোমাকে না কতবার বলেছি,আমার ক্লাসে এক মিনিটও দেরী করে আসবেনা।তারপরও দেরী করে এসেছো!

-হুজুর!একটা কাজ করছিলাম তো,তাই কয়েক মিনিট দেরী হয়ে গেলো।

-তোমার তো ঐ একটাই কাজ,মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করা।আর এইজন্য নাকি তোমাকে সমাজ পরিবর্তন করতে হবে।

-জ্বী হুজুর।

-আজকে সমাজ পরিবর্তনের কি কাজ করে এলে?

-হুজুর!কয়েকটি ছেলেকে ধূমপানের কুফল বর্ণনা করে কিছু কথা বলে এসেছি।যেনো তারা ধূমপানের বিরুদ্ধে তাদের সাথের ছেলেদেরকে ও আত্নীয়-স্বজনদেরকে তা বলে দিতে পারে।

-হুম।সমাজের জন্য ভালো কাজ।কিন্তু এর দ্বারা ইসলামের কোন উপকার হবেনা এবং কোন প্রচারও হবেনা।

-জ্বী না হুজুর।এটা সফল হলে মানুষ কিছু খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে।আর তা ইসলামের পক্ষে যাবে।

-(কিঞ্চিত রেগে) বেশী বুঝো!আলিমে না পড়তেই সব ইসলাম বুঝে ফেলছো?আমি তোমার ওস্তাদ হয়ে ইসলাম বুঝিনা।বেশী পন্ডিতি শিখছো!আমার হুজুররা ও এর পূর্ববর্তী হুজুররা ইসলামের কিছুই বোঝেন নাই।তাদের চেয়ে,আমার চেয়ে তুমি বেশী জ্ঞানী হয়ে গেছো?

-জ্বী না হুজুর।আমি তো আপনাদের কোন দোষ ধরিনি।আপনাদের নামে কোন কথা কারো কাছেও বলিনি।

-চোপ রও!বেয়াদবী শিখছো!বড়দের মুখে মুখে কথা!

এত ইসলাম বুইঝোনা।রাসুল (সাঃ) সবাইকে সরাসরি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন,আমরাও ঐ একই পদ্ধতিতে মানুষদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেই।এই দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামী রাষ্ট্র হবে।

এইখানে সমাজ পরিবর্তনের কথা-তথা কিচ্ছু নেই।

-জ্বী হুজুর।

-তোমার মাথায় সম্ভবত কোন সমস্যা হয়েছে।সবার কাছে সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে বেড়াও।আমি তোমার আব্বার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।

-জ্বী হুজুর।

-আর তোমাকে হুশিয়ার করে দিচ্ছি,যদি কোনদিন আমার ক্লাসে দেরী আসো,তাহলে তোমাকে আর ঢুকতে দিবোনা।

-জ্বী হুজুর।

উজাইর মস্তক অবনত করে স্বীয় আসনে বসলো।

উজাইর আলিম প্রথম বর্ষে পড়ে।এলাকার প্রথম সারির ছাত্র।ইসলামিক পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে ছোট সময় থেকেই ইসলামের মৌলিক ধারণাগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়।

এবতেদায়ী পর্যায় পার হওয়ার পরে একটি ইসলামী ছাত্রসংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুবাদে ইসলামকে আরো ভালোভাবে বুঝার সুযোগ পায়।কুরআন,হাদীসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,রাসুল (সাঃ) এর সীরাত অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের মূল পয়েন্টগুলো পেয়ে যায়।

উজাইর ছাত্রসংগঠনটিকে দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কথা ভাবতো।কিন্তু ধীরে ধীরে অনেক কিছু বুঝার সাথে সাথে নিজেকে নিস্ক্রিয় করে ফেলে।কিন্তু সংগঠনটি তাকে ধরে রাখতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

একাই সমাজ পরিবর্তনের কাজে এগিয়ে যায়।পারিপার্শ্বিক প্রচুর বাঁধা,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর হয়রানি,মানুষের বিভিন্ন মন্তব্যকে উপেক্ষা করে এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করেই নিজেকে এগিয়ে নেয় উজাইর।

অনেকে পাগল,ইসলামবিরোধী,মাথায় সমস্যা ইত্যাদি বলে বেড়াতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

এলাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় সবাই কিছুটা সমীহ করে চলে।ছোট বাচ্চাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা ও আদর করা,সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ,বড়দের পূর্ণ শ্রদ্ধা করার জন্য অন্য়দের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে উজাইর।

আজ মাদ্রাসায় হুজুরের সাথে কথা বলা শেষে একটু ভয় পাচ্ছে উজাইর।আব্বু আর হুজুর একই মতের মানুষ।একজন অন্যজনকে যথেষ্ট সম্মান ও বিশ্বাস করেন।হুজুর যদি সত্যিই আব্বুকে কিছু বলে দেয়,তাহলে পরিবারে উজাইরের মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে।

বিকেলে মাদ্রাসা থেকে ফিরে নিজের কাছে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় প্রবেশের কিছু সময় পরেই আব্বুর কন্ঠ ভেসে আসে।উজাইর দ্রুত আব্বুর কাছে উপস্হিত হয়।

আব্বু জিজ্ঞেস করে-তোমার হুজুরের সাথে তোমার কিছু হয়েছে?

-না তো আব্বু।

-উনি তোমার ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করলেন কেন?

-আমি এটা জানিনা।

-উজাইর,তোমাকে নিয়ে অনেক কথাই আমার কানে আসছে।আমি তোমাকে যে সংগঠনে দিয়েছিলাম,তুমি নাকি তাদের সেখান থেকে বের হয়ে এসেছো।তারা সবাই তোমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করছে।

-জ্বী আব্বু।

-অনেকে বলছে,তোমার মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা শুরু হয়েছে।তুমি প্রচলিত ইসলামের বিরোধিতা করছো।অন্যদের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিচ্ছো।

কেউ কেউ তোমাকে মারার হুমকিও দিচ্ছে।

-আব্বু,আমি কারো বদনাম করি নাই।আমি শুধু আমাদের মৌলিক সমস্যাগুলো তুলে ধরছি।

-(ক্ষিপ্ত হয়ে) তুমি সমস্যা ধরার কে?দুনিয়াতে আর কেউ সমস্যা খুজে পায়না।তুমি সমস্যা খুজে পাও।এত বড় পন্ডিত হয়ে গেছো।অন্য সবাইকে মূর্খ মনে করে নিজেকে অনেক বড় জ্ঞানী ভাবো।

কত বয়স হয়েছে তোমার?কয়দিন ধরে কুরআন-হাদীস শিখছো?তোমার জন্মের পূর্বেকার আলেমদের কাজের ভুল ধরো।

উজাইর চুপ করে শুনে যাচ্ছে।

-সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা তোমার করার দরকার নাই।তোমার চেয়ে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন,মেধাবী লোক আছে,যারা সমাজ পরিবর্তন করতে পারবে।

এখন তোমার পড়াশোনার সময়।তোমার রেজাল্ট যদি খারাপ হয়,তাহলে তোমার সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা বুঝিয়ে দিবো।

এখন গিয়ে পড়তে বসো।

আব্বুর ধমক খেয়ে বিষণ্ন মনে পড়ার টেবিলে ফিরে যায় উজাইর।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।পুরো সমাজটা আমার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাচ্ছে।আব্বুও আমার কথা ও যুক্তিকে গ্রহণ করতেন এবং সমর্থন দিতেন।আজ আব্বুও আমাকে বকলেন।

কিন্তু আমি তো ভুল করছিনা।আমার সামনে কুরআন,হাদীস,রাসুল (সাঃ) এর জীবনী,বিভিন্ন ইসলামী মনীষীদের জীবনী স্পষ্ট।তারপরও আমাকে সবাই এমন করছে কেন?

আব্বুর কাছে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য বলা হচ্ছে কেন?অন্যরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার,অপবাদ,অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে কেন?আমার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ানো হচ্ছে কেন?

ইসলামের রাস্তাটিই মনে হয় এমন।রাসুল (সাঃ) এর যুগ থেকে নিয়ে পরবর্তী প্রত্যেক ইসলামী মনীষী ও যারা সমাজ পরিবর্তনের নিমিত্তে নিয়োজিত হয়েছিলেন,তাদের সকলেই এ ধরনের বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে এসেছেন।

আমিও পারবো ইনশাআল্লাহ।

উজাইর মনটাকে পূর্বের চেয়েও অনেক শক্ত করে ফেল ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

সময় গড়িয়ে যায়।এক,দুই করে ছয়টি বছর পেরিয়ে যায়।উজাইর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে পড়াশুনা করছে।এই সময়ের মাঝে সে তার সমাজ পরিবর্তনের কাজ অব্যাহত রেখেছিলো।নিজেকে লক্ষ্যস্হল থেকে এক ইঞ্চি বিচ্যুত হয়নি।

আজ তার এলাকাতে অনেক পরিবর্তন।গ্রামে কোন অশিক্ষিত লোক নেই।অসহায়,দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে।ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।প্রতিটি মসজিদে ফজর নামাজের বাচ্চাদের সুমিষ্ট সুরে আরবী পড়ার আওয়াজ ভেসে আসে।

নিজের উপর দিয়েও কম কষ্ট যায়নি।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কাজের চাপে পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারেননি।ভালো ছাত্র হয়েও ভালো রেজাল্ট রাখতে পারেনি।নকল করার অভ্যাস না থাকার কারনে অন্যান্যদের মত অসদুপায় অবলম্বন করে ভালো করার চেষ্টা করেনি।

এলাকাতে উজাইরের অনেক সম্মান।রাস্তায় বের হলেই আশেপাশে ছেলেদের একটা জটলা জমে যায়।

একদিন বাজার থেকে ফেরার পথে হুজুরের সাথে দেখা হয়ে গেলো উজাইরের।হুজুর বলছেন-উজাইর,তোমাকে অনেক দিন ধরে খুজছি।কিন্তু তোমাকে ব্যস্ততার কারনে ধরতে পারিন।

-জ্বী হুজুর।এলাকাতে আসলে ব্যস্ততার কারণে কোন দিকে নজর দিতে পারিনি।

-তোমার সাথে অনেক কথা ছিলো।একটু নিরিবিলিতে বসতে পারলে ভালো হতো।

-হুজুর,মাদ্রাসা মাঠে বসি।ওখানে আরামে কথা বলা যাবে।

মাদ্রাসার বারান্দায় বসে হুজুর বলা শুরু করলেন--

উজাইর!তুমি যে রাস্তাটি বাছাই করেছিলে,সে রাস্তাটি ছিলো অনেক বেশী কঠিন,কন্টকাকীর্ণ।তোমার কাজের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলো তোমার সর্বাধিক ঘনিষ্ট জনরাই।

আমিও তোমাকে কম অপমান করিনি,কম কথা শোনাইনি।তোমাকে একাধিকবার ক্লাস থেকে বের করেও দিয়েছি।কিন্তু তুমি তোমার কাজের ভুল স্বীকার করোনি।

আজ বার বার মনে হচ্ছে,আমি ভুল পথে সমাজ পরিবর্তনের কথা চিন্তা করেছিলাম।আমার হুজুরদেরকে নির্ভুল ভাবতাম,তাদেরকে নবীর মত সম্মান করতাম,তাদের কথাগুলোকে নবীর চেয়েও বেশী গুরুত্ব দিতাম।

হায়!এটি ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল।আমার জীবনের চল্লিশটি বছর ইসলামী রাজনীতির কথা বলে ইসলামকে সমাজের কারো কাছে গ্রহণযোগ্য করাতে পারিনি।

সবাই আমাকে দেখলেই সালাম দিতো।বাড়িতে এসে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় জেনে যেতো।সামনা সামনি সবাই আমাকে প্রচুর সম্মান করতো।আমার দলের লোকেরা আমার সামনে মাথা নিচু করে থাকতো।

কিন্তু একবারও ভাবিনি,আমার পশ্চাতে কি ঘটেছে।আমার সাথের লোকেরাই আমার বিরুদ্ধে অন্যদের কাছে গীবত করে বেড়াতো।আমার নাম করে অন্যদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতো।

নিজের সন্তানদের সময়-সুযোগের অভাবে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারিনি।অন্য মানুষদের গড়ে তোলায় এত ব্যস্ত ছিলাম,নিজের ঘরের দিকে খেয়াল রাখতে পারিনি।এটিও ছিলো আমার বড় ভুল।

নিজেদের কাজকে সহীহ মনে করেছিলাম।নিজেদের ভুলের কারণে পাওয়া শাস্তিকে আল্লাহর পরীক্ষা বলে চিৎকার করে বেড়িয়েছি।নিজের গুনাহর শাস্তিকে আল্লাহর পরীক্ষা বলে ভাবতাম।কিন্তু একবারও ভাবিনি,আমাদের ভুলের প্রায়শ্চিত্য আমরা ভোগ করছি।

সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারক হিসেবে চিহূত হয়েছি।সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে অনেক মানুষকে দলে টেনে নিয়ে এসেছি।কিন্তু সমাজ পরিবর্তনে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখতে পারিনি।

তুমি সমাজ পরিবর্তন করেছো।মানুষের গালাগালি,কটু কথা শুনেছো,মাইর খেয়েছো,আমার দলের লোকেরা তোমার প্রতিটি কাজে বাঁধার সৃষ্টি করেছে।কিন্তু তুমি সকল প্রতিবন্ধকতা পায়ে ঠেলে তোমার লক্ষ্য ঠিক রেখেছো।

রাসুল (সাঃ) এর সীরাত অসংখ্যবার পড়েছি,ছাত্রদেরকে অনেকবার পড়িয়েছি।মানুষের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বয়ান করেছি।কিন্তু ধরতে পারিনি,রাসুল (সাঃ) যে সমাজ পরিবর্তনকারী ছিলেন।

ষোল বছর বয়স থেকে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত সমাজ পরিবর্তনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।হিলফুল ফুজুল সংগঠন দিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য মক্কায় কাজ শুরু করেন।মানুষের সকল বিপদে-আপদে পাশে দাড়িয়ে গিয়েছেন।মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য নিজেকে বিসর্জন দিয়েছেন।মক্কাবাসীদের কাছ থেকে উপাধি পেয়েছেন আলআমিন,সাদিক বল।

নবুয়্যতের পূর্ব পর্যন্ত সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন।

যখন সকল ধাপগুলো পার হয়ে গেছেন,তখনই আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ) কে দাওয়াতে ইলাল্লাহর কাজে নামার নির্দেশ দেন।

আমরা এটা বুঝতে পারিনি।শুধু রাসুল (সাঃ) এর দাওয়াতকে মেনে নিয়ে দাওয়াতী কাজে নেমে যেতাম।মানুষকে হক কথার উপদেশ দিতাম,অসৎ কাজে নিষেধ প্রদান করতাম।

ভাবতাম,মানুষের কষ্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু কষ্টকর অবস্হার মধ্যে যে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায় ও পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকেনা,সেটা বুঝতে পারতামনা।

কিন্তু কখনো সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা চিন্তা করিনি।সমাজ পরিবর্তনের ধ্বনি তুলেও সমাজ পরিবর্তন করতে সক্ষম হইনি।

মিছিল দিয়ে,মিটিং দিয়ে,বক্তৃতা দিয়ে বাতিল শক্তিকে কাঁপিয়ে তুলতে চেয়েছি,কিন্তু তাতে বাতিল শক্তির গায়ে বাতাসও লাগেনি।

কিন্তু তুমি কাজের মাধ্যমে বাতিল শক্তির ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দিয়েছো।আমরা যেটা শত শত মানুষ পারিনি,সেটা তুমি করে দেখিয়েছো।

আজ সব ধরনের বাতিল শক্তিই তোমার শত্রু।কিন্তু আমরা এমন কাজ করতে পারিনি,যার কারণে বাতিল শক্তি আমাদের শত্রু মনে করবে।

যে স্বপ্নটা আমাদের ছিলো,সেটা তুমি করে দেখিয়েছো।এখন মানুষের ইসলামের প্রতি ঝোক বেড়ে গিয়েছে।যেটা এই জীবনে দেখে দেখে যেতে পারবো বলে আশা করিনি,সেটা তোমার বদৌলতে দেখে যেতে পারছি।

উজাইর,তোমার কাছে অনেক অপরাধ করেছি।আমাকে মাফ করে দিও আর আল্লাহর কাছে এই বুড়োর জন্য দোয়া কইরো।

যদি কখনো এই বুড়োকে তোমার কাজে দরকার হয়,তাহলে নির্দ্ধিধায় আমার কাছে চলে এসো।

উজাইর,আমি যাচ্ছি।তোমার আব্বুকে আমার সালাম জানিয়ো।

চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে বাড়ির পথ ধরলেন হুজুর।

উজাইরের চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু বের হয়ে এলো আর মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরিয়ে এলো-আল্লাহু আকবার।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

274590
১৫ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার

সত্যের বিজয় অনিবার্য,
মিথ্যার বিণাশ অবশ্যম্ভাবী


উজাইর ছাত্রসংগঠনটিকে দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কথা ভাবতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেক কিছু বুঝার সাথে সাথে নিজেকে নিস্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু সংগঠনটি তাকে ধরে রাখতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।


আমি তোমাকে যে সংগঠনে দিয়েছিলাম,তুমি নাকি তাদের সেখান থেকে বের হয়ে এসেছো। তারা সবাই তোমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করছে।
? ?


হায়! এটি ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল। আমার জীবনের চল্লিশটি বছর ইসলামী রাজনীতির কথা বলে ইসলামকে সমাজের কারো কাছে গ্রহণযোগ্য করাতে পারিনি। ? ?



উজাইর যা করেছে তা খুব ভালো- কিন্তু একক ব্যক্তি এমন হতে পারা ও করতে পারাটা অবাস্তব

যদিও বলেননি- কিন্তু যেমন আকারে/প্রকারেই হোক, উজাইরকে কেন্দ্র করে অবশ্যই একটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল- হয়তো তার কোন নাম ছিলনা!

আজ তার এলাকাতে অনেক পরিবর্তন।গ্রামে কোন অশিক্ষিত লোক নেই।অসহায়,দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে।ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।প্রতিটি মসজিদে ফজর নামাজের বাচ্চাদের সুমিষ্ট সুরে আরবী পড়ার আওয়াজ ভেসে আসে।

স্বপ্ন দেখি তেমন দিনের....

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
২০ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
220366
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : এই কাজের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।তাহলেই এরকম স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব করা সম্ভব হবে।

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
274600
১৫ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : ২/৩ অংশ পড়ে হাঁপিয়ে উঠলাম...... এত্ত লম্বা? D'oh D'oh Shame On You

আচ্ছা ........... আপনার নিকটা কিন্তু দারুন। Thumbs Up
স্পেইনের ইতিহাসের গ্রানাডার পতনের যুগের শ্রেষ্ঠ সাহসী বীর যোদ্ধা 'বদর বিন মুগীরা' এর নামে ...... Thumbs Up Rose Rose তাইনা?
২০ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
220367
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : হু...একটু লম্বাই হয়ে গেছে।তারপরও পড়ার জন্য ধন্যবাদ। Happy

জ্বী ঐ নামেই.....
274639
১৫ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:০২
egypt12 লিখেছেন : উজাইর সুন্দর কাজই করেছে...

কিন্তু একা একা এমন সাফল্য গল্পে সম্ভব হলেও বাস্তবে সংগঠন ছাড়া এমন কাজ সম্ভব নয় Rose
২০ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
220368
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : বাস্তবে এখনও এমন কোন সংগঠন এখনও গড়ে উঠেনি।এজন্য একটু কষ্ট হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File