ইসলাম কি পৈত্রিক সম্পত্তি,যখন যেভাবে খুশী নিজের মনমত বিধান বানানো যাবে
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:১২:৫৬ রাত
কিছুদিন পূর্বে একজনের স্ট্যাটাসে তর্কাতর্কি দেখলাম।একজন বলতেছে-আমি যেভাবে ইসলাম বুঝছি,সেভাবেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করবো।
আরেকজন বলতেছে-ইসলাম কি আমার-আপনার জন্য আলাদা আলাদাভাবে নাজিল হয়েছে যে,আল্লাহ আপনার জন্য আলাদাভাবে জবাবদিহী নিবেন আর আমার জন্য আলাদাভাবে জবাবদিহী নিবেন?
ইসলামটাকে মানুষের মনগড়া রুপ দিয়ে বদলে দেয়া হয়েছে।ইসলামের যে প্রকৃত রুপ,সেই রুপটিকে না খুজে মানুষের বানানো ফতোয়া দিয়ে ইসলামকে যাচাই করার চেষ্টা করি।
প্রত্যেকেই নিজেদেরকে ইসলামের দাবীদার বানিয়ে নিয়েছি।নিজে যে ইসলাম মানি,সেই ইসলামটিকেই আসল ইসলামরুপে প্রচারের চেষ্টা করি।কিন্তু নিজে যে ইসলাম মানি,সেই ইসলামটি যে পরিপূর্ণ ইসলাম না,সেটি আমাদের বোধগম্য হয়না।
এলাকাতে এক মদ্যপানের শাস্তি নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার কিছুদিন পর এক ছেলে এক নারী কেলেংকারীতে ধরা পড়ে।সাথে সাথে গ্রামে শালিস বসে হুজুররা ১০-১৫ টি বেত্রাঘাত করে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়।
পরে ছোট ভাই মন্তব্য করে-কিছুদিন আগে হুজুররা এত সুন্দর অনুষ্ঠান দেখে আজ ঐ শাস্তির বিধান কায়েম করতে পারেনা।আর এই হুজুররাই ইসলামের বড় বড় কথা শোনায়।
অনেক কথিত ইসলামিস্টদেরই দেখি,ইসলামের মাঝে নিজের মনগড়া বানী দিয়ে সেটাকে ইসলাম বানিয়ে নিতে।এবং ঐ কাজটিকে ইসলামের অনেক বড় খেদমত দাবী করে নিজেকে অনেক উচু পর্যায়ে নিতে যেতে।প্রতিটা হারামের সাথে সাথে ইসলাম শব্দটিকে জুড়ে দিয়ে হালাল করার প্রানপণ চেষ্টা চলছে।
ইসলামের নামে ব্যক্তিপূজায় নিমজ্জিত হয়েছে এই জাতি।অমুক ব্যক্তি হাত-পা ধরলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দিবেন।অমুক মাজারের দরগায় শিরনী দিলে নিকটাত্বীয়দের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।অমুক পীরকে হাদিয়া দিলে জান্নাতের চাবী হাতে ধরিয়ে দিবেন।
যারাই দায়ীর ভূমিকায় কাজ করছে,তাদের মূলভিত্তিই খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।যাবতীয় সমস্যায় জর্জরিত থেকে ইসলামের বানীকে পৌছে দেয়ার চেষ্টা চলছে,যার কারনে ঐ সমস্যাটি ইসলামের সমস্যা বলে ইসলামপিয়াসী মানুষের কাছে ইসলামটি গ্রহনযোগ্য হচ্ছেনা।
কুরআন-হাদীস থেকে প্রকৃত ইসলাম যাচাই না করে ব্যক্তি থেকে ইসলাম যাচাই করার সুযোগ নাই।প্রকৃত ইসলাম বুঝতে হলে কুরআন-হাদীস থেকেই ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
সরাসরি কুরআন-হাদীস ছাড়া কোন ব্যক্তির কথা,কাজ কোন মুসলিমের জন্য আদর্শের মাপকাঠি হতে পারেনা।যদি মাপকাঠি হিসেবে অন্য কাউকে ধরা হয়,তাহলে সেই ব্যক্তি স্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত।
বিষয়: বিবিধ
১১৩২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু ভাই, একটা জিনিস কি আমাদের অস্বীকারের উপায় আছে যে কুরআন সুন্নাহ হতে সরাসরি মাসআলা, বিশেষ করে যেগুলোর কোন সরাসরি সমাধান দেওয়া হয়নি, সেগুলোকে বের করা সবার সাধ্যের কাজ নয়? যেসব মাসআলা কুরআন-সুন্নাহতে স্পষ্ট ও সরাসরি ভাবে বলা হয়েছে, পঠনসক্ষম যে কেউই তা পাঠ করে মর্মার্থ অনুধাবন ও আমল করার সক্ষমতা রাখে। তেমনি ভাবে ঈমান ও আক্বিদাগত বিষয়ও সরাসরি কুরআন সুন্নাহ হতে আহরণ সম্ভব। ব্যাতিক্রম শুধু সেইসব মাসআলা, সেগুলোর কোন স্পষ্ট বা সরাসরি নির্দেশ নেই। যেমন ধরুন কুরআনে বলা হয়েছে-
"وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ"
"আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন কুরু পর্যন্ত" (সূরা বাক্বরা, আয়াত-২২৮)
উক্ত আয়াতে কুরু শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ পবিত্রতা ও নাপাকি উভয়ই। এখানে এসে এসে স্বাভাবিক ভাবেই একজন সাধারন মুসলমানকে সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। তেমনি ভাবে হাদীস শরীফের ভাষ্য-"বর্গা ব্যবস্থা যে পরিহার না করবে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার ঝুঁকি নিতে হবে" (দারীমি)। অথচ আমরা জানি, বর্গার সবকটি নিয়মই শরীআতে নিষিদ্ধ নয়। তাহলে এখানেও সংশয়ের অবকাশ আছে। এমন ক্ষেত্রে আমার মতো সাধারণ মুসলমান এমন একজন আলেমের সরনাপন্ন হবে যিনি কুরআন হাদীসের উচ্চতর জ্ঞান রাখেন, নাসিখ-মানসূখের হাফেজ, আসারায়ে সাহাবা যার নখদর্পনে, আরবী ভাষার উপর অসামান্য দখল সর্বোপরী বিপরীত অর্থবোধক দলীল থেকে সমাধান বের করতে সক্ষম। খুবই স্বাভাবিক এক্ষেত্রে মতভিন্নতা হতে পারে, কিন্তু এই মতভিন্নতাকে "রহমত"স্বরূপ বলা হয়েছে। (তাফসির আল কুরতুবী, তাফসীরে জালালাইন)
তবে হ্যাঁ, এই মাসআলাগত পার্থক্যকে অবশ্যই দ্বন্দ ও ফিতনার কারণ হিসেবে যে নিবে, সে নিজ হাতে জাহান্নামের রাস্তা তৈরি করে নিবে। কেননা, পার্থক্য শুধু মাসআলায়, আক্বিদা ও ঈমানে কোন পার্থক্য নেই।
জাযাকাল্লাহ খইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন