''ইনসানিয়াতের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও একটি দৃষ্টান্তমূলক দৃষ্টান্ত ''
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১৬ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৫৮:০২ রাত
১৯৯৬ সালের কথা। আরব আমিরাতের 'শারজাহ' নামক স্থানে ১০ জন সমমনা বাংলাদেশী মিলে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্টা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বহু কষ্টে সঞ্চিত টাকা বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতিজন ১৫,০০০/ দিরহাম করে দিয়ে সর্বমোট ১৫০,০০০ দিরহাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
ব্যবসা শুরুর ৩ মাসের ব্যবধানে আব্দুল্লাহ নামের একজন উদ্যোক্তা পরিচালকের ক্যন্সার ধরা পরে। তিনি দুই বাচ্চা সহ স্বপরিবারে আমিরাতেই থাকতেন।
শেষ পর্যন্ত আমিরাতের চেয়ে স্বল্প খরচের কারণে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ার মাদ্রাজ চলে যান। প্রায় ৭ মাস চিকিৎসা শেষে মাদ্রাজের হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ ক্যান্সার নির্মূল সার্টিফিকেট নিয়ে পুনরায় আমিরাত প্রবেশের দিনেই দুবাই এয়ারপোর্টেই ট্রাজেডিক ভাবে একই ক্যান্সারে কারণেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
শেষ পর্যন্ত উনার পরিবার লাশ নিয়ে চূড়ান্তভাবেই দেশে ফিরে আসেন। আসার সময় সেই ব্যবসার ১৫,০০০ দিরহাম রিফান্ডের জন্য একটা দরখাস্ত করে আসেন।
এরপর বাকি ৯ জন পরিচালক মিলে মরহুম আব্দুল্লাহর ব্যপারে ওনার স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিরেক্টরশীপের বিপরীতে টাকা রিফান্ডের জন্য জরুরী মিটিং আয়োজন করেন।
মিটিং এ সিদ্ধান্ত করেন যে, ''আজ যদি মরহুম আব্দুল্লার স্ত্রী না হয়ে তিনি আমাদের কারো বোন্ হতো আমরা কি করতাম ? ১৫,০০০/ দিরহাম আমরা ঠিকই ফেরৎ দেবো , তবে এইটা ডিরেক্টরশীপের টাকা না। আমরা ৯ জনে সমান হারে লোন দিয়ে ১৫,০০০/ দিরহাম দিয়ে দিবো।
যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাভ শুরু হবে প্রথমে আমাদের লোনের টাকাটা আমরা ফেরৎ নিয়ে নেবো। কিন্ত যতদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে ততদিন মরহুম আব্দুল্লাহর ডাইরেক্টরশীপ থাকবে। আর এসব বিষয় মিসেস আব্দুল্লাহ থেকে সাময়িক গোপন রাখতে হবে''।
মিসেস আব্দুল্লাহ দেশে এসে জীবন রক্ষার্থে ঘরে বসে টিউশনী করেন আর সেলাই মেশিন দিয়ে এলাকার মেয়েদের কাপড় সেলাই করে জীবন নির্বাহ করেন।
দুই বছর পর মিসেস আব্দুল্লাহকে শারজাহ থেকে ফোন করে জানানো হলো , আপনার স্বামীর ডাইরেক্টরশীপের বিপরীতে আপনাকে দেয়া ১৫,০০০/ লোন পরিশোধ শেষে চলতি বছরে আপনার নীট প্রফিট ৫০০০/ দিরহাম। যার বাংলা মুদ্রামান ৭০,০০০ টাকা। (তখন দিরহাম =১৪ টাকা ছিল )
মিসেস আব্দুল্লাহ বললেন আপনারা কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন ? তখন আসল রহস্য ওনাকে সব কিছু খুলে বলা হলো। তখন মিসেস আব্দুল্লার অনুভুতির প্রকাশ হলো '' সকল প্রশংসা বিশ্ব জগতের মালিক একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ এমন লোক ও কি দুনিয়াতে রেখেছেন '' ? বলেই তিনি অনেকক্ষণ কাদলেন।
পরে যতটুকু জেনেছি এখনো প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ১১/১২ হাজার দিরহাম করে মিসেস আব্দুল্লার নাম পাঠানো হয়।
মিসেস আব্দুল্লার দুই ছেলে চট্রগ্রাম কলেজের ছাত্র। আর মিসেস আব্দুল্লাহ একটা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা।
-সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১০৭৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন