একটি স্বপ্নের খোঁজে
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ০২ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৫২:৩৮ রাত
১.
গত কয়েকদিন ধরে হাসান উদাসীন।কিছুই ভালো লাগেনা।মনমেজাজ চরম খারাপ,কেউ কাছে আসতে পারেনা।বন্ধুরা শুধু কুশল বিনিময় করে চলে যায়।মানসিকভাবেও চরম বিপর্যস্ত।
কখনো ভাবেনি,জীবনের শুরুতে জীবনযুদ্ধে হেরে বসে থাকবে।জীবনে কত রঙ্গিন স্বপ্ন দেখেছিলো।একদিন অনেক বড় হবে।দেশ ও জাতির জন্য অনেক অবদান রাখবে।আব্বু-আম্মুর মুখ উজ্জ্বল করবে।
কিন্তু আজ এগুলো সুদূর পরাহত বলে মনে হচ্ছে।অনেকের কাছ থেকে জীবনের কঠিনতা সম্পর্কে জেনেছিলো। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা যে কত কঠিন,তা আজ উপলব্ধি করতে পারছে।
জীবনের প্রতি বিতৃঞ্চা বোধ করছে?কি করবে সে?জীবনটা এত্তো কঠিন কেনো?
জীবনটাকে কি এই শেষ মুহূর্তে নতুন করে সাজাতে পারবে.
২.
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে রাত ১০.০০ টায় রুমে ফেরে হাসান।একটু ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে।আনমনে একটা বইয়ের পাতা উল্টায়।আবার বইটি বন্ধ করে রেখে দেয়।
ভাবতে থাকে,একাডেমিক বইয়ের জগৎটি আমার নয়।এরচেয়ে অন্য কোন বই পড়া ভালো।একটা সাহিত্য খুলে বসে।
বইটি শেষ করে রাত ১.০০ টার দিকে ঘুমাতে যায়।আবার জীবনের ব্যর্থতার চিত্রটা চোখের সামনে ভেসে উঠে।যতই রাত গভীর হয়,ততই কষ্টগুলো বড় হয়ে ফুটে উঠে।
আল্লাহ কি আমাকে পরীক্ষা করছেন?এত কঠিন পরীক্ষা কেনো?আমি তো কুলিয়ে উঠতে পারছিনা।মাথায় কিছুই ঢুকাতে পারছিনা।পড়ছি কিন্তু সব কেমন এলোমেলো লাগছে।আবার ভুলে যাচ্ছি।
আমি কি জীবনে হেরে যাবো?কারো কি সাথে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারবোনা?কিন্তু কেনো?
দুশ্চিন্তার মাঝেই গভীর ঘুমে লুটিয়ে পড়ে।
৩.
ঘুমের মাঝে অসংখ্য স্বপ্ন দেখতে থাকে।দুঃস্বপ্নগুলো পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ ঝাপসার একজনের আবির্ভাব হয়।পরিস্কার দেখা যাচ্ছেনা। কেমন চেনা চেনা লাগছে!কোথায় যেনো দেখেছি!হ্যা হ্যা,এই তো এবার দেখা যাচ্ছে।আমার প্রিয় আহমদ ভাই।
-হাসান...
-উউউউউ....
-এরকম করছো কেনো?জীবনটাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছো কেনো?
-ভাইয়া,আপনি তো সবই জানেন।
-হুম...তুমি কি কখনো চিন্তা করছো,তুমি কি করছো?ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এত দ্রুত হতাশ হয়ে গেলে চলবে?তুমি কি রবের সেই বাণী পড়োনি?
তোমরা হতাশ হয়োনা,দুঃখ করোনা,নিশ্চয়ই তোমরা বিজয়ী হবে।
তোমার জীবনটা অনেক ব্যতিক্রম।জীবনটাকে অনেক সহজভাবে নিয়েছিলা,যার মাশুল এখন দিচ্ছো।আল্লাহ হয়ত তোমাকে কিছুটা পরীক্ষা নিচ্ছেন।
হাসান,জীবনটা অনেক বড়।অনেক দীর্ঘসময়ের পথ।আর যারা আলোর দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হয়,তাদের পথ আরো দীর্ঘ হয়ে যায়।
ভাই আমার,জীবন দুই-তিন বছরেই শেষ হয়ে যায়না।জীবনকে অনেকভাবে গড়ে তোলা যায়।
তোমার সামনে এখনো অনেক সুযোগ আছে,নতুন করে স্বপ্ন দেখার।নতুন স্বপ্ন দেখো,স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য এগিয়ে যাও।
সময় নষ্ট করোনা,সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে সময়ের চেয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
হাসানরে,কারো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস?
-না তো ভাইয়া....
-ভালো করে শোন্।আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে এসেছেন।তার খাঁটি বান্দাদের ডাকছেন আর বলছেন-ওহে তোমরা কে কোথায় আছো?কে তার রবের কাছে দুঃখ,কষ্টের কথা বলবে?তার সকল দুঃখ,কষ্ট আমি দূর করে দেবো।
উঠ্,রবের কাছে দোয়া কর।সকল দুঃখ,কষ্টের অবসান চেয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চা।নিশ্চয়ই আল্লাহ তোর দোয়া কবুল করে নিবেন।
-ভাইয়া,একটা কথা শুনে যান।
-না।স্বপ্নপূরন করে আমার কাছে আসিছ।তখন তোর সকল কথা শুনবো।
আহমদ ভাই আস্তে আস্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছেন।
৪.
হাসান ধড়ফড় করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো।সমস্ত শরীর ঘামে জবজব করছে।কোথায় আহমদ ভাই?তিনি এত দ্রুত হারিয়ে গেলেন?
হাসান বালিশের পাশে রাখা মোবাইলে সময় দেখে।ভোর ৪.০০ টা বাজে।
হাসান দ্রুত অজু সেরে নামাজে দাড়িয়ে যায়।সালাম ফিরোনোর পর ভাবছে,নামাজে এত মজা কোনদিন অনুভূত হয়নি।অথচ কতদিন সুযোগ থাকার পরেও নামাজ পড়িনি।
নামাজ শেষে মহান রবের দরবারে হাত তোলে।আল্লাহ!অতীত জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দাও।জীবনের সকল দুঃখ,কষ্ট দূর করে দাও।মানসিক প্রশান্তি দান করো।
আল্লাহ!তোমার দ্বীনের পথে আমাকে কবুল করে নাও।জীবনের যাবতীয় আশা-আকাংখা পূরন করো।তোমার সন্তুষ্টির জন্যই যেনো বেঁচে থাকি।তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেনো স্বপ্নপূরন করতে পারি।
হে রাব্বুল আলামীন!আমাকে মাফ করে দাও।।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন