সাহাবীদের নিজেদের প্রচার এবং আমাদের নিজেদের প্রচার

লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৩২:০৪ রাত

হযরত উসমান (রা) এর শাসনকাল । নীল ভূমধ্যসাগর তীরের তারাবেলাস নগরী । পরাক্রমশালী রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী এটা ।এই পরাক্রমশালী রাজা ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে আবদুল্লাহ ইবন

সা’দের নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ।

স্বয়ং রাজা জার্জিস তার বাহিনীর পরিচালনা করছেন । পাশে রয়েছে তার মেয়ে । অপরূপ

সুন্দরী তার সে মেয়ে ।যুদ্ধ শুরু হল । জার্জিস মনে করেছিলেন তার দুধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেবে । কিন্তু তা হল না।মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে পড়ল। উপায়ান্তর না দেখে তিনি সেনা ও সেনানীদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলেন,”যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি আবদুল্লাহর ছিন্ন শির এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো ।” জার্জিসের এই ঘোষণা তার সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করল । তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো।

জার্জিসের সুন্দরী কন্যা লাভের উদগ্র কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠল।তাদের উন্মাদ আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিল।মহানবীর শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের একজন- হযরত যুবাইর

(রা)ও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন । তিনি সেনাপতি সা’দকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের

শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্নমুন্ড এনে দিতে পারবে, তাকে সুন্দরী জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ

দেয়া হবে ।” যুবাইরের পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি সা’দ এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন । তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর

যুদ্ধ সংঘটিত হলো । যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলেন । তার কাটা শিরসহ জার্জিস

কন্যাকে বন্দী করে মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হলো । কিন্তু এই অসীম সাহসিকতার কাজ

কে করলো? এই বীরত্বের কাজ কার দ্বারা সাধিত হলো? যুদ্ধের পর মুসলিম শিবিরে সভা আহূত হলো । হাজির করা হলো জার্জিস- দুহিতাকে । সেনাপতি সা’দ জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের

মধ্যে যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন, তিনি আসুন । আমার প্রতিশ্রুত উপহার তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছি ।” কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী নীরব নিস্তব্ধ । কেউ কথা বললো না, কেউ

দাবী নিয়ে এগুলোনা । সেনাপতি সা’দ বারবার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব ব্যাপার

দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা । তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার পিতৃহন্তাকে । কিন্তু

তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন? টাকার লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ তিনি উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারে জগতের ইতিহাসে এমন জিতেন্দ্রীয় যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনও শুনেননি তিনি । পিতৃহত্যার প্রতি তার যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল, তা যেন মুহূর্তে কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল । অপরিচিত এক অনুরাগ

এসে সেখানে স্থান করে নিল । অবশেষে সেনাপতির

আদেশে জার্জিস দুহিতাই যুবাইরকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন,”ইনিই আমার পিতৃহন্তা,ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত

মহান বীর পুরুষ ।” সেনাপতি সা’দ যুবাইরকে অনুরোধ করলেন তাঁর ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য। যুবাইর উঠে দাঁড়িয়ে অবনত মস্তকে বললেন, “জাগতিক কোন লাভের আশায় আমি যুদ্ধ করিনি ।

যদি কোন পুরষ্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরষ্কৃত করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ।”

***ইদানিং আমাদের ইসলামিস্ট ভাইদের কার্যকলাপগুলো অনেক অদ্ভুত মনে হয়।যেখানে শপথ গ্রহনের সময়-''কুল ইন্না সালাতী,ওয়া নুসুকী,ওয়া মাহইয়া,ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন''এই কথাটি বলে নিয়েছেন,সেখানে সামান্য একটি লেখা নিয়ে পারস্পরিক গালিগালাজ,কাদা ছোড়াছোড়ি শুরু করে দিয়েছেন।

ভাইজান,অনলাইন জগৎটা বিশাল।মূহুর্তের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব ঘুরে আসা যায়।সেখানে একটি লেখা মূহুর্তের ব্যবধানে হারিয়ে যাওয়া বা বেনামে প্রকাশ হওয়া কোন ব্যাপারই নয়।

আমরা আমাদের জীবনটা সপে দিয়েছি রাব্বুল আলামীনের হাতে।যেখানে নিজস্ব দাবি-দাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

আমাদের জীবনের একটাই উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।আপনি লেখালেখির মাধ্যমে সন্তুষ্টি চান,তাহলে আপনার লেখাকে নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আঁটকে রাখবেননা।প্রচারের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।হোক সেটা আপনার নামে,বেনামে বা সংগৃহীত লিখে।

আর যদি বলেন,আল্লাহর সন্তুষ্টি চাইনা।আমার নিজের প্রচার চাই।তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে অনলাইনে লেখা ছেড়ে দিয়েননা।আপনার জন্য আরো বিশজন ভাইকে গোনাহগার বা বিপথগামী করতে পারেননা।

***ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-

একদিন এক ভাই একটা লেখা কপি করার অনুমতি চাইলেন।বললাম-অনুমতির দরকার নেই।নির্দ্ধিধায় কপি করতে পারেন।তবে নামছাড়া লেখাটি দিবেন।

একটা পোস্ট ফেসবুক ও ব্লগে দেওয়ার আধাঘন্টার মধ্যে এক শ্রদ্ধেয় ভাইয়ের ওয়ালে দেখতে পেলাম।সংগৃহীত লিখে পোস্ট দেয়া হয়েছে।অসম্ভব খুশী হয়েছিলাম।আমি পোস্ট দিলে ৩০-৪০ জন দেখবে।আর উনি দেওয়ায় ৫০০-৭০০ লোক দেখতে পাচ্ছে।কিছুটা সওয়াব আমার ভাগে হলেও আসবে।

অসংখ্য ভাইদের এখনো দেখি চোখ বন্ধ করে লিখে যান।যখন বলি-ভাই,আপনার লেখা তো মানুষ কপি করে।জবাব দেন-করুক।আমি তো দাওয়াতী কাজের অনুভূতি থেকেই লিখে যাচ্ছি।

আমরা যেনো নিজেকে সামান্য পরিচিত করার জন্য নিজেদের আমলগুলোকে নষ্ট করে না দেই,আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন।।

বিষয়: বিবিধ

১২১৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

193194
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫১
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:১১
144896
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহুল খাইরান
193226
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৩১
সালাহ খান লিখেছেন : আপনার লিখাটা পড়ে চোখে পানি এসে গেল । সাহাবীদের বীরত্ব শুনলেই কেন যেন সারা শরীরে একটা অন্যরকম রোমান্স কাজ করে বোঝাতে পারব না । সাহাবীরা কতইনা ভাগ্যবান ছিলেন । লিখণী দিবার জন্য অনেক ধন্যবাদ
১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:১১
144897
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : ধন্যবাদ
193263
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৫৯
সাদাচোখে লিখেছেন : ধন্যবাদ।

কপিরাইট ধারনাটা - দুনিয়াবী - যার জন্য দুনিয়াপ্রেমিকরা এ রাইট সংরক্ষনের জন্য সমস্ত নীতি ও নৈতিকতা ও বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক।

১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:১৭
144899
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : ইসলামপন্হীদের জন্য অশনি সংকেত।
193448
১৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
হতভাগা লিখেছেন : ''উপায়ান্তর না দেখে তিনি সেনা ও সেনানীদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলেন,”যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি আবদুল্লাহর ছিন্ন শির এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো ।” জার্জিসের এই ঘোষণা তার সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করল । তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো।

জার্জিসের সুন্দরী কন্যা লাভের উদগ্র কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠল। তাদের উন্মাদ আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিল।

মহানবীর শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের একজন- হযরত যুবাইর(রা)ও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন । তিনি সেনাপতি সা’দকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্নমুন্ড এনে দিতে পারবে, তাকে সুন্দরী জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ

দেয়া হবে ।” যুবাইরের পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি সা’দ এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন । ''

০ '' অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতাই যুবাইরকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন,”ইনিই আমার পিতৃহন্তা,ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত মহান বীর পুরুষ ।” সেনাপতি সা’দ যুবাইরকে অনুরোধ করলেন তাঁর ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।

যুবাইর উঠে দাঁড়িয়ে অবনত মস্তকে বললেন, “জাগতিক কোন লাভের আশায় আমি যুদ্ধ করিনি । যদি কোন পুরষ্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরষ্কৃত করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ।''


***

কিন্তু এই যুবাইর (রাঃ)ই তো সেনাপতি সা'দকে জার্জিসের মত অনুরুপ ঘোষনা দিতে বলেছিলেন যে , ''আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্নমুন্ড এনে দিতে পারবে, তাকে সুন্দরী জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেয়া হবে ।''

যিনি নিজেই সেনাপতিকে এরকম ঘোষনা দিতে উতসাহ দিয়েছিলেন আবার পরে বললেন যে (যুবাইর উঠে দাঁড়িয়ে অবনত মস্তকে বললেন), “জাগতিক কোন লাভের আশায় আমি যুদ্ধ করিনি । যদি কোন পুরষ্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরষ্কৃত করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ।”

তাহলে উনি কি উনার সহযোদ্ধাদের উদ্ভুত করাতেই এরকম একটি ঘোষনা চাইছিলেন সেনাপতির কাছ থেকে ?

তাহলে কি উনারা দুনিয়াবী লাভের আশায় জোশ বাড়িয়ে ফেলেছিলেন ঘোষনা আসার পরপ পরই ?



১৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:১৬
144898
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : জ্বীনা ভাইজান,সাহাবীদের কোন কাজই দুনিয়াবী ছিলোনা।জর্জির তার সৈন্যদের উৎসাহিত করতে ঐ পুরস্কারের ঘোষনা দিয়েছিলেন।কিন্তু যুবায়ের (রা) তাদের সাহসকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য এবং মনোবল নষ্ট করে ফেলার জন্য ও তাদের রাজাকে ভীতির মধ্যে ফেলে দেয়ার জন্য সেনাপতিকে এই পলিসী অবলম্বন করতে বলেছিলেন।
১৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
145165
হতভাগা লিখেছেন : যুবাইর (রাঃ) এর সহযোদ্ধারা তো জার্জিসের মেয়েকে পাবার লোভে আগের চেয়ে বেশী জোশ লাগিয়ে যুদ্ধ করেছে ! আর আগে তো জার্জিসের বাহিনী মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল ধরিয়ে দিচ্ছিল !

কেমন কেমন গোলমেলে মনে হচ্ছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File