ইসলামী আন্দোলনে ঈমানের পরীক্ষা।
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১২ মার্চ, ২০১৪, ০৫:০৪:০২ বিকাল
১.
২০০৯ সাল।আওয়ামী সরকার টাটকা ক্ষমতার গন্ধ পেয়েছে।ছাত্রলীগের হায়েনাগুলো উন্মত্ত,পাগলপ্রায়।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিকারের খোজে হন্য হয়ে ঘুরছে।
হঠাৎ এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের ফাঁদে পড়ে গেলেন ১০-১২ জন ভাই।সমগ্র ক্যাম্পাস নিস্তব্ধ।এই সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির থাকতে পারে।অবিশ্বাস্য!
রাত ঘনিয়ে আসলো....ভাইদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো হায়েনাদের আবাসস্হলে।এক ভাই ছিলেন বড় দায়িত্বশীল।সারারাত ভাইটিকে নির্যাতন করা হলো।রড দিয়ে পিটিয়ে,সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দিয়ে,পায়ের নখ উপড়ে ফেলে।বের করার চেষ্টা চলছে,ক্যাম্পাসে শিবির কারা?সমগ্র ক্যাম্পাস কাঁদছে।সাধারন ছাত্র-ছাত্রীসহ গাছ-পালা,পশু-পাখি সবাই।হলের কর্মচারীদের চিৎকারে হল স্তব্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু সারারাত নির্যাতন করেও ভাইটির মুখ থেকে একটা কথা বের করতে পারেনি।
ফজর সময়।কাঁদতে কাঁদতে যেনো ক্যাম্পাসটা ঘুম পড়েছে।ভাইকে মৃত মনে করে হাসপাতালের গেটে ফেলে রেখে আসলো হায়েনারা।হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।তারপর হায়েনারা নজর রাখছে,কারা হাসপাতালে যায়?যদি শিবির সন্দেহে আরো কিছু ধরা যায়।
হঠাৎ ছাত্রলীগ স্তম্ভিত।হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ কিডন্যাপ হয়েছে।লোক লাগিয়ে বহু চেষ্টা করা হলো,কারা এর পিছনে জড়িত?কিন্তু কাউকে সন্দেহের কোন অবকাশই পায়নি।
দীর্ঘ ছয়টি মাস গোপনীয় হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্হ হয়ে উঠলেন।
এখনও যখন ঐ কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীয়েট ভাইটিকে জড়িয়ে ধরি,তখন মৃদু কন্ঠে বলেন-আস্তে ধরো।গায়ে চাপ পড়লে ব্যথা লাগে।
ঐ রাতেই আরেক ভাইকে নির্যাতনের একপর্যায়ে মুখে রিভলবার ঢুকিয়ে হায়েনার চিৎকার-বল্,তোদের সাথে আর কে কে আছে?তা নাহলে এই অবস্হাতেই মাথা বিচ্ছিন্ন করে দিবো।
ভাইটি নিশ্চুপ।যেনো তিনি শিবির শব্দটি জীবনে এই প্রথম শুনলেন।হায়েনারা ঝাড়া কয়েক মিনিট ভাইটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।নাহ!আসলেই এই ছেলেটি মনে হয় শিবিরের কিছুই জানেনে।তারপরও সারারাত নির্যাতন করার পর সবগুলো ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হলো।
আজ ঐ ভাইটি একজন বিসিএস ক্যাডার।।
দিস ইজ ঈমান.....
২.
২০১০ সাল।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আন্দোলনের কঠিন সংকটকাল চলছে।আভ্যন্তরীন দলীয় কোন্দলে হত্যা করা হলো ফারুক হোসেনকে।সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেওয়া হলো ইসলামী আন্দোলনের উপর।প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেফতার করা হলো তৎকালীন রা.বি শিবির সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক শামসুল আলম গোলাপ ভাইকে।প্রায় সাড়ে তিনটি বছর জালিমশাহীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে কারারুদ্ধ ছিলেন গোলাপ ভাই।অসংখ্য নাটক করা হয়েছে।অসংখ্যবার গুমের হুমকি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু গোলাপ ভাই নিশ্চুপ।
মিডিয়ার সামনে ভাইকে উপস্হাপন করা হয়েছে ফারুক হত্যার আসামী হিসেবে।কিন্তু গোলাপ ভাইকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক দাবীই আদায় করা সম্ভব হয়নি।কিছুক্ষণ পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জবাব আসে-ফারুক হত্যায় শিবির জড়িত ছিলো বলে স্বীকার করেছে শিবির নেতা।
অসংখ্য হত্যা মামলা,জুলুম-নির্যাতন করেও গোলাম ভাইয়ের মুখ থেকে এক অক্ষর দাবী স্বীকার করাতে সক্ষম হয়নি নব্য রক্ষী বাহিনীরা।
দিস ইজ ঈমান.....
৩.
৩১ মে ২০১৩ সাল।মিছিল শেষে শ্যামলীর একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হলো সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ভাইকে।গ্রেফতার করার সাথে সাথে দিয়ে দেওয়া হলো নাম জানা না জানা অসংখ্য মিথ্যা মামলা।
পরিকল্পনা,শিবির সভাপতিকে নির্যাতনের মাধ্যমে শিবিরের ঈমানী মনোবলকে নিস্তেজ করে দেওয়া হবে।স্তব্ধ করে দেওয়া হবে শিবিরের কর্মীবাহিনীকে।
একের পর এক মামলা দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক তিপ্পান্ন দিনের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হলো সাঈদী ভাইকে।কিন্তু কিসের কি!বিন্দু পরিমান কোন জঙ্গী তৎপরতার তথ্য বের করা যায়নি।আবার রিমান্ড....
কিন্তু না।আদালত বললো-আসামী রিমান্ডে নেওয়ার অনুপযুক্ত।হাসপাতালে ভর্তি করা হোক।
নির্যাতন করে করে গুড়িয়ে দেওয়া হলো সাঈদী ভাইয়ের যৌবন শক্তিকে।শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেওয়া হলো ইলেক্ট্রিক শক।পুরো শরীরকে অবশ করে দেওয়া হলো।কিন্তু সাঈদী ভাই তার ঈমানী মনোবলে অটুট।ঘুমের মাঝেও বিড়বিড় করে বলে চলছেন-ইসলামী আন্দোলনের ভাইদের বলুন ঈমানের পথে অটল থাকতে।বলুন,আমার জন্য যেন বাতিল শক্তির নিকট মাথা নত না করে।বিশ্ব দেখুক,এক সাঈদীকে নিশ্চিহূ করলে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহূ করা যায়না।ভাইয়েরা,আপনারা সরকারবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখুন।।
অনেক সময় নিজের মনকেই প্রশ্ন করি,ঈমান জিনিসটা কি?এখন ভাইদের এই ঈমান দেখে চিৎকার করে বলি-দিস ইজ ঈমান,দিস ইজ ঈমান,দিস ইজ ঈমান।।।
কি চাওয়া-পাওয়া এদের?কি চায় এই অকুতোভয় যুবকেরা?দুনিয়াবী কোন স্বার্থ,ধন-সম্পদ অথবা ক্ষমতার মোহ বা অন্যকিছু?না,এদের চাওয়া একটাই-আল্লাহর এই জমিনে আল্লাহর বানীকে বুলন্দ করার স্বার্থে নিজের বুকের তাজা খুন দিয়ে হলেও বিশ্বের বুকে আল্লাহর বানীকে প্রতিষ্ঠা করা।
মনে প্রশ্ন জাগে,আজকের যুগের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যদি ঈমানী মনোবল এই হয়,তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর সাহাবীদের ঈমানী মনোবল কেমন ছিলো???
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাফেরেরা কুফরীর ব্যাপারে যে দৃঢ়তা ও অবিচলতা দেখাচ্ছে এবং কুফরীর ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে আমরা তাদের মোকাবিলায় তাদের চাইতেও বেশী দৃঢ়তা অবিচলতা ও মজবুতী দেখাতে হবে ইনশাল্লাহ ।
তাদের মোকাবেলায় আমরা দৃঢ়তা অবিচলতা ও মজুবতী দেখাবার ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে অগ্রসর হতে হবে ইনশাল্লাহ ।
.
মন্তব্য করতে লগইন করুন