ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে একজন ভাইয়ের কতিপয় জিজ্ঞাসা এবং আমার সংক্ষিপ্ত জবাব।
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৫:১১:৪০ বিকাল
একজন ভাই উনার ওয়ালে এই প্রশ্নগুলো করেছেন।একজন ভাইদের সহযোগীতায় উনার প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি।
১. কুফরকে মিটিয়ে দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার ইসলামী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নামায কায়েম করা। এবং এ কাজ না করলে হাদীসে শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার অনুমতি আছে।
নামায কায়েমের ব্যাপারে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি? এ ব্যাপারে ইমাম আবু
হানীফার মত হল বেনামাযীকে তওবা না করা পর্যন্ত জেলে বন্দী রাখা হবে আর অন্যান্য
আলেমদের মত হল তওবার আহ্বান জানানো হবে অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে। এখন ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচেয়ে vital একটি element এ
গণতন্ত্র কতটুকু সফল হবে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে দেশের মাত্র ২% মানুষ ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে। এখন
আপনি কি করে আশা করেন যে তারা নামায কায়েমের এ ধরনের বিধানের পক্ষে ভোট দিবে? অর্থাৎ তাদের ভোটে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত হবে এটা একটা আকাশ
কুসুম কল্পনা।
ইনফ্যাক্ট গণতন্ত্রবাদী কোন একটি ইসলামি দল
যদি ভাগ্যক্রমে ক্ষমতায় আসেও, তবুও তারা কখনই নামায কায়েম
করবে না। কেননা এতে পরের নির্বাচনে গদি হারানোর ভয় আছে!!
(এ বিষয়টা আরো একটু পরিষ্কার করিঃ যদি কোন রাষ্ট্রের শতভাগ মুসলিম নামায পড়ে তবুও আমরা ঐ রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র
বলবো না যদি বেনামাযীর শাস্তির বিধান না থাকে। কিন্তু যে রাষ্ট্রে বেনামাযীর শাস্তির বিধান আছে, চাই সে রাষ্ট্রের সবাই নামায
নাও পড়ুক তাও সেটা ইসলামিক রাষ্ট্র। বস্তুত
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্ক সম্যক আইডিয়া না থাকার কারনেই এই
বিভ্রান্তগুলো ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ মনে করে তাদের দল ১৫১ টা সিট
পেলেই রাষ্ট্র ইসলামী হয়ে যাবে।)
***প্রতিউত্তর-
ভুল তথ্য- *যেখানে ২% মানুষ নামাজ পড়ে,সেখানে ৫১%মানুষ ইসলামে ভোট দিবে কিভাবে?
*বাংলাদেশে তিন লক্ষের অধিক মসজিদ আছে,প্রতি মসজিদে গড়ে ২৫ জন করে নামাজ পড়লে ৫% লোক জামায়াতে নামাজ পড়ে।
*অসংখ্য অফিস,কারখানায় নামাজ পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়না।
*লক্ষ লক্ষ কৃষক ভাই জমিতে নামাজ পড়েন।
*মা-বোনদের নামাজ পড়ার হার অনেক বেশী।
পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ৩০-৩৫% লোক।
আর দৈনিক ৩-৪ ওয়াক্ত করে নামাজ পড়েন আরো ৩০% হবে।২০% মাঝে মাঝে নামাজ পড়ে।বাকিরা হয়ত মুসলমানিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জুমআর নামাজটা পড়তে পারে।আর নাস্তিকরা নামাজকে সরাসরি অস্বীকার করে।
সহজ কথায়,একটা কাজ বাধ্যতামূলক করে দিলে জনগন যতটা সহজে পালন করে,হালকা করে দিলে ঐভাবে পালন করেনা। আওয়ামী সরকারও আজ যদি নামাজ পড়া ফরজ ঘোষনা করে দেয়,তাহলেও ৯০% মুসলিম নামাজ পড়বে।তবে ইসলামবিরোধী শক্তি লাফিয়ে উঠবে। এতে ভোটের ক্ষেত্রে খুব-বেশী হেরফের হবেনা।
আর এক সমাজের সবাই যখন নামাজ পড়ে,তখন কেউ একা বাহিরে নামাজ না পড়ে থাকেনা।আর নামাজ অস্বীকারকারীর শাস্তি অবশ্যই আছে।
২. ইসলাম নামক মুক্তির বিহঙ্গ আজ জাতীয়তাবাদের লোহার খাঁচায় বন্দী। গণতন্ত্র কি পারবে এ লোহার
খাঁচাকে ভেঙে ফেলতে???
***প্রতিউত্তর-গনতন্ত্রকে একটি উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।গনতন্ত্র ইসলামী আন্দোলনের জন্য সাময়িক সহায়ক কিস্তু টিকসই নয়।আমরা যদি মিসর ও আলজেরিয়ার দিকে তাকাই,তাহলে এটি আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে।ইসলাম যখন গনতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায়,তখন বিরোধীপক্ষ স্বৈরাচারী হয়ে যায়।এবং গনতন্ত্র অব্যাহত রেখে ইসলামী দল ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব।
আর যদি জনগনের বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী দল ক্ষমতায় আসে,তাহলে ইসলামী দলগুলোর মাঝে গনতন্ত্র অব্যাহত থাকবে।যেটা ইরান করছে।শুধুমাত্র ইসলামপন্হীদের জন্য নির্বাচনের অনুমতি দেয়া হয়।
৩. কোন ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম থেকে ইহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে গেলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল তাকে ক্বতল করা। আপনার কি মনে হয় আমেরিকা আপনাকে এত সহজে এই আইন বাস্তবায়ন করতে দিবে??
***প্রতিউত্তর-বাংলাদেশী মুসলমানের সংজ্ঞার ধরনটা অন্যরকম।পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান।ঈমানী বিশ্বাসে মুসলমান নয়।এটা আলেমদের ইজতিহাদের বিষয়,সবাইকে মুসলমান হিসেবে ঘোষনা দিবেন কিনা?
৪. ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হল তা ইহুদি খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে জিযিয়া আদায় করবে। যারা কারনে অকারনে মার্কিন
দূতাবাসে ধন্যা দেয়, তারা এটা করার সাহস দেখাবে বলে কি আপনার
মনে হয়?? কুফফারদের ফর্মুলায় তাদের স্বার্থবিরোধী আইনের স্বপ্ন
দেখা কি নিছক বিভ্রান্তি নয়??
***প্রতিউত্তর-জিযিয়া কর ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের জন্য।ইসলামী সরকার জিজিয়া করের বিনিময়ে অমুসলিমদের সকল প্রকার ধর্মীয় সহযোগিতা,নিরাপত্তা প্রদান করবেন।যদি এগুলো না করে জিজিয়া কর চাওয়া হয়,তাহলে ঐ জিজিয়া কর দিতে অমুসলিমরা বাধ্য থাকবেনা। দূতাবাসে যারা আছেন,তারা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকলে জিজিয়া কর দিতে বাধ্য থাকবেন। আর যদি নাগরিক না হন,তাহলে জিজিয়া কর দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
৫. ইসলামী রাষ্ট্র ইসলাম
বিরোধী সকল বাতিল দলকে নিষিদ্ধ করবে, চাই তারা বামপন্থী হোক, সেক্যুলার হোক, কিংবা জাতীয়তাবাদী হোক।
তাদেরকে তওবা করার আহ্বান জানানো হবে, অন্যথায় তাদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে হত্যা করা হবে। বহুদলীয়
গণতন্ত্রকে স্বীকার করে নিয়ে এ কাজ করার সুযোগ কোথায়?? জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে তাদের প্রিয় নাস্তিক বুদ্ধিজীবী কবি সাহিত্যিককে হত্যা করার নৈতিক শক্তি ইসলামি দলটি কই পাবে? অন্যান্য দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে গেলে কার্যত গণতন্ত্রকে কবর চাপা দিতে হবে। যে জনগণের কাছ থেকে ভোটভিক্ষার মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় এসেছে তারা এটা মানবে কেন?? আর পশ্চিমারাই আঙুল চুষবে কেন??
***প্রতিউত্তর-দুই নাম্বার পয়েন্টের সাথে সম্পৃক্ত।
৬. মিশর কিংবা আলজেরিয়ার মত পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্য দরকার অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ। গণতন্ত্রবাদীদের এসব পরিস্থিত ট্যাকল দেওয়ার প্রস্তুতি কতটুকু??
আসলে গণতন্ত্র হল পশ্চিমাদের তৈরি করা ফাঁদ। যখন তারা দেখবে একটি ইসলামী দল ক্ষমতায় চলে এসেছে তখন মিথ্যা অভিযোগে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হবে এবং
তখনও গণতন্ত্র রক্ষার দোহাই দেয়া হবে!!
***প্রতিউত্তর-ক্যারিয়ার গঠনের দিকে গুরুত্ব দিন।সরকারের সর্বোচ্চ পদগুলো দখল করুন।সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত লোক ঢুকান।নিজস্ব ইসলামী অর্থনীতি শক্তিশালী করুন।তাহলে দেশের অভ্যন্তরে ইসলামের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার লোক খুজে পাওয়া যাবেনা।
যদি রাষ্ট্রগঠনের পর্যাপ্ত উপায় উপকরন ছাড়া জনবলের দ্বারা ক্ষমতায় যাওয়া যায়,তাহলে ঐ বিপ্লব টিকেনা।
৭. ১ম পর্বে আমরা দেখেছি পৃথিবীতে ব্যাপক
বিস্তৃত একটি খিলাফতের
প্রতিশ্রুতি রাসূল সঃ দিয়েছেন। এবং এটা প্রতিটা মাটির ঘর বা তাবু
পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তাদেরকে ইসলাম বা জিযিয়ার আহ্বান জানাবে। কথিত ভোটাভোটির মাধ্যমে পৃথিবীতে এত বড়
পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করাটা কি বোকামী নয়?
***প্রতিউত্তর-আমি হাদীসটি জানিনা।যদি কথাটি রাসুল (সা) এর হয়ে থাকে,তাহলে এখানে বোকামির কি দেখলেন? পাশ্চাত্যেরা ইসলামের ভয়ে কাঁপছে।ঐ দেশগুলোতে ইসলাম গ্রহনকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই বিষয়ে আরেকটু পড়াশুনার দরকার আছে,ভাইজান।
৮. আমেরিকার র্যান্ড ইন্টস্টিটিউশন
মডারেট মুসলিমদের যে চারটি বৈশিষ্ট্য
বর্ণণা করেছে এবং যেগুলো তারা
আমাদের উপর ইম্পোস করতে চায়, তার দুটি হল-
1. Accepting Democracy as
understood in the liberal western traditions (not in
islamic perspective)
2. Acceptance of non
sectarian source of law. Those who want laws from a particular scriptures are extremist!!!
বিস্তারিত ইমাম আনোয়ার আল আওলাকির 'The Battles of Hearts & Minds' লেকচারটা শুনুন। যারা নিয়মিত আমেরিকার কাছে নিজেদের Moderate প্রমাণের জন্য
ধন্যা দেয়, কিভাবে তারা আমেরিকার দেওয়া Prescription এ ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে??
***প্রতিউত্তর-জামায়াতে ইসলামী কি আমেরিকার হাতে-পায়ে ধরে ইসলাম পালন করতেছে?
৯. প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হবার সবচেয়ে সহজ কৌশল হল Dividation Rule. মোটাদাগে দেখলে এদেশের অল্পকিছু মানুষ ইসলামপন্থী। অতঃপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের ফর্মুলা এই অল্প সংখ্যক ভোট ভাগ হবে এত্ত এত্ত ইসলামী দলের মাঝে। একদলের শাইখুল হাদীস দাড়াবে, অপরদলে দাড়িবিহীন শিক্ষিত তরুণ দাড়াবে। অতঃপর
সমর্থকদের মাঝে শুরু
হবে নোংরা কাঁদা ছোড়াছোড়ির খেলা,
গীবত, অপবাদ, আর পরনিন্দার তুবড়ি ছোড়া। দূর থেকে সেক্যুলার
বামপন্থীরা মজা লুটবে।
***প্রতিউত্তর-একমত।
১০. শেষকথা একটা প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র বিনা আক্রমণে বিশ্বব্যাপী জিহাদ পরিচালনা করবে দ্বীনকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী করার জন্যে। কাজেই কুফফাররা কখনই নিছক টিপসই দিয়ে এরূপ রাষ্ট্র হতে দিবে না। কখনই না।
আর যদি হুদুদই বাস্তবায়ন করা না যায়, তাহলে কিসের ইসলামিক রাষ্ট্র?? কিসের জন্য এত সংগ্রাম, এত আন্দোলন??
***প্রতিউত্তর-এটা কোনসময় কোন কুফফাররাই দেয়নি।অতীতে এরকম অসংখ্য আক্রমনের নজীর আছে।ভবিষ্যতে মুসলমানদের পুনরুথান হলে এর ব্যতিক্রম হওয়া অস্বাভাবিক।
ইসলামী সরকারের জন্য হুদুদ বাস্তবায়ন করা ফরজ।যদি হুদুদ বাস্তবায়ন করা না হয়,তাহলে ইসলামী সরকার কিনা এ বিষয়ে মতভেদ থাকতে পরে।
তবে হত্যার ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে।যদি এমন সমস্যার সৃষ্টির হয় যে,পাথর মেরে হত্যা করলে বা দোররার মাধ্যমে মারলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তবে অন্য কোন মাধ্যমে হত্যা করা যেতে পারে।
তবে হুদুদ মাফ করে দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
তারপরও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি তার বান্দাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দেন,তাহলে দুটি উদ্দেশ্য দিবেন-
১.পরীক্ষা করার জন্য।যেই পরীক্ষা মিসরের ভাইয়েরা দিচ্ছেন।
২.ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের জন্য।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।জান্নাত লাভের চেষ্টা সবারই করা উচিত।ইসলামের বানী প্রচার ,ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য আমি কতটুকু চেষ্টা করেছি,আল্লাহ এটা দেখবেন।কতজনকে দ্বীনের পথে এনেছি এটা শর্ত নয়,আমি কতটুকু চেষ্টা করছি এটা শর্ত।
আমরা শুধুমাত্র আমাদের দাওয়াতী দ্বীনের কাজটা অনলাইনে না রেখে বাস্তব ময়দানে সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করি।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এই চেষ্টা নিশ্চয়ই কবুল করে নিবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২২৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন