’’সাতক্ষীরা’’একটি রক্তাক্ত জনপদ।ত্যাগের অনন্য নজীর।
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ১১ মার্চ, ২০১৪, ০২:১৬:৫১ দুপুর
১.
বেশ কয়েকমাস পূর্বের ঘটনা।
মাসিক সাথী বৈঠক চলছে।হঠাৎ শাখা সেক্রেটারী প্রোগ্রামে এসে উপস্হিত।সবার পরিচয় জানছেন।এক ভাই বললেন,আমার বাড়ি সাতক্ষীরা।
শাখা সেক্রেটারী সোল্লাশে বলে উঠলেন-আল্লাহ!আপনার বাড়ি সাতক্ষীরা!এখন সাতক্ষীরার ভাইদের অনেক বেশী খুজছি। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন-এখন সাতক্ষীরার ভাইদের দেখলে সওয়ার,উনাদের কথা শুনলেও সওয়াব এমনকি সাতক্ষীরা নাম শুনলেও সওয়াব।সাতক্ষীরা দেখিয়ে দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন কি জিনিস?
২.
এক শুভাকাংখীর সাথে দেখা করতে গেলাম।অনেক্ষণ কথা বললাম।কথা বলতে বলতে হঠাৎ সাতক্ষীরার কথা উঠলো।উনি বলে উঠলেন-সাতক্ষীরার প্রতিটা লোকই মনে হয় জামায়াতের রুকন।
বললাম-এই কথা বলছেন কেন?
বললেন-সেদিন এক রিক্সায় করে অফিসে আসছি।কথায় কথায় দেশের বর্তমান অবস্হা নিয়ে কথা উঠলো।উনি আমাকে অনেক ভালো করে দেশের অবস্হা বুঝাচ্ছেন।সন্দেহ হলো,সাধারন কোন রিক্সাচালক দেশ সম্পর্কে এত গভীর জ্ঞান রাখতে পারেনা।জিগ্গেস করলাম-জামায়াত করেন কিনা?কিছু না বলে চুপ করে রইলো।বুঝলাম,জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট।তাই কথা বলছেনা।পরিচয় দিলাম,আমি শিবিরের সদস্য ছিলাম।এখন জামায়াতের কর্মী।
উনি বললেন-উনি জামায়াতের রুকন।বললাম-আপনি একজন রুকন হয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন?
বললেন-আমার বাড়ি সাতক্ষীরাতে।ওখানে কৃষিকাজ করতাম।কিন্তু এখন ওখানে সবাইকে গনহারে গ্রেফতার করছে এবং অনেককে হত্যা এবং গুম করে ফেলছে।তাই সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকাতে চলে এসেছি।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া বেশী দিলাম।কিন্তু ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে এক টাকা বেশী রাখতে রাজী হননি।
সর্বশেষ ভাইটি বলছেন-আল্লাহ মনে হয়,সাতক্ষীরাবাসীকে ইসলামের জন্য কবুল করে নিয়েছেন।
৩.
বন্ধুর পরীক্ষা শেষ।বন্ধুটি চরম শিবির-বিদ্বেষী।ওর আব্বু-আম্মু বরিশালে থাকে আর দাদা-দাদী সাতক্ষীরা থাকে।
ও বলছে-দোস্ত,খবরেতো সাতক্ষীরার অবস্হা অনেক খারাপ দেখলাম।এই সুযোগে একটু সাতক্ষীরা থেকে ঘুরে আসি।জেলার অবস্হাও জানা যাবে।
বললাম-সাবধানে যেয়ো।সাতক্ষীরাতে সহজে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। প্রায় দু সপ্তাহ পরে ফিরে আসলো।এসেই বলা শুরু করলো-দোস্ত,আর কইসনা।২২ বার চেক কইরা তারপর সাতক্ষীরা ঢুকতে দিছে।ভারতে ঢুকতে গেলেও এতবার চেক করায়না।আর মাগাড় বাংলাদেশে এক জেলায় ঢুকতে গিয়েই লাইফটা তেজপাতা বানাইয়া ফেললো।শালা!কোন দেশে যে বাস করি?পাস করতে পারলেই বিদেশ চলে যাবো।এই দেশে থাইকা কোন লাভ নাই।
৪.
এক জায়গা থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা এসেছে।শুধুমাত্র শহীদ পরিবারের কেউ অধ্যয়নরত থাকলে ঐ পরিবারে সহযোগিতা করা হবে।শাখা সভাপতিকে বললাম-ভাইয়া,সাতক্ষীরা,চাপাইনবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধা অঞ্চল থেকে কিছু শহীদ পরিবারের বিস্তারিত তথ্য দরকার।যাদেরকে কিছু সহযোগিতা করা হবে।
অন্য জায়গাগুলোতে এইরকম কোন পরিবার না পেয়ে শুধুমাত্র সাতক্ষীরা থেকে সবগুলো পরিবারের ঠিকানা জোগাড় করে দিলেন।
যখন ঐ নামগুলো টাইপ করতে বসেছি,তখন যেনো চোখ থেকে ঝরঝর বৃষ্টির ফোটা নামছে।যাতে টেবিল ভেসে যাচ্ছে।কোন পরিবারের উপার্জন ব্যক্তিটি শহীদ হয়ে গেছেন।যার বড় ছেলেটি ক্লাস সিক্সে ও ছোট ছেলেটি ক্লাস ফোরে পড়ে।কোন পরিবারের এইট পড়ুয়া ছেলেটি শহীদ হয়ে গেছে।যে তার বাবার মুদির দোকানে বসে বাবাকে সহযোগিতা করতো।ছোট ভাইদের ক্লাসের পড়াগুলো বুঝিয়ে দিতো।
সেদিন এক আপুর স্ট্যাটাসে দেখেছি,কত সুন্দরভাবে তিনি তার স্ট্যাটাসে সাতক্ষীরার ভয়াবহ অবস্হার কথা তুলে ধরেছেন।যেই লেখাটি পড়লে স্বাভাবিক মানবিকতা সম্পন্ন কোন ব্যক্তির চোখের অশ্রু না ঝরিয়ে থাকা সম্ভব না।
বর্তমানে সাতক্ষীরা যেনো একটি মৃত্যুপরীতে পরিনত হয়েছে।যেনো একাত্তুর এর সময়টি সেখানে বিরাজ করছে।পুরুষ মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে,মা-বোনদের সম্ভ্রম নষ্ট করা হচ্ছে।বুলডোজার দিয়ে বাড়িগুলো গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
এখন ঢাকাতে বসে বসে ভাবি,আমার বাড়ী যদি সাতক্ষীরা হতো তাহলে হয়ত কোন শহীদের ভাই হতাম বা কারো ভাতিজা হতাম।যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর দরবারে নাজাত পাওয়ার একটা সম্ভাবনা খুজে পেতাম।কিন্তু আমার যে সেই সৌভাগ্যবান কারো সাথেই যোগাযোগ নেই।সেই জন্য এখনো অনেক সময় গুমড়ে কাঁদি।
আল্লাহ যদি কোনসময় সাতক্ষীরা যাওয়ার সুযোগ দেন,তাহলে সবগুলো শহীদদের কবর জিয়ারত,তাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও তাদের ভেঙ্গে দেয়া বাড়িগুলো দেখে আসবো।আর পরকালে আল্লাহর দরবারে বিচার দিবো-আল্লাহ!এই লোকগুলোর কোন দোষ ছিলোনা।তাদের একটাই অপরাধ ছিলো,তারা তোমার বানীকে বাংলার মাটিতে বুলন্দ করতে চেয়েছিলো।এই অপরাধে তারা এক স্ত্রীকে বিধবা,এক বাচ্চা ছেলেকে এতিম করেছে।এদেরকে তুমি তোমার নিজের হাতে শাস্তি দাও।
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধার নামও নিয়েছেন, কিন্তু আরো অনেক এলাকার নামই বাকি রয়ে গেছে..
আমরা তাঁদের সবাইকে ভালোবাসি, সবার জন্যই দোয়া করি
আমার কাছে বাংলাদেশের প্রতিটা প্রান্তরের ইসলামী আন্দোলনের ভাইদের গুরুত্ব সমান।
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে আগে সাতক্ষিরা জয্গ দিতে হবে অন্যতে ইতিহাস অপূর্ণ থেকে যাবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন