প্রতিশোধে নয়,ক্ষমাতেই ইসলামের বিস্তৃতি।

লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৯:০১:৪৫ সকাল

১.

অষ্টম হিজরী।নবী করীম (সা) দশ হাজার সাহাবী নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেন।সাহাবীদের বলে দিলেন-যদি কাউকে হত্যা করা খুব জরুরী না হয়,তাহলে আক্রমন করার দরকার নেই।

মক্কার নিকটবর্তী হলেন।হঠাৎ হযরত উমর (রা) আবু সুফিয়ানকে টানতে টানতে নিয়ে এলেন।বললেন-হে আল্লাহর রাসুল,সে গোয়েন্দাগিরি করতে মক্কার উপকন্ঠে এসেছিলো।আর সে ইসলামের বড় দুশমন,তার কল্লাটা দু ভাগ করে দেই।

রাসুল (সা) বললেন-থামো।তাকে মুক্ত করে দাও।

আরো বললেন-যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে অবস্হান করবে,তারা নিরাপদ।

মক্কা বিজয়ের দিন।মক্কার সকল লোকদের মনে শংকা,যাকে সারাটি জীবন অসহনীয় নির্যাতন করেছি,কষ্ট দিয়েছি,এমনকি দেশ ছাড়া করেছি,সেই লোকটি আজ মক্কা বিজয় করেছে।না জানি তিনি আজ আমাদের প্রতি কেমন প্রতিশোধ নেন?

হঠাৎ কুরাইশরা স্তম্ভিত হয়ে গেলো।রাসুল (সা) ঘোষণা দিচ্ছেন-হে মক্কাবাসী,তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।তোমরা সবাই মুক্ত ও নিরাপদ।

২.

১১৮৭ সাল।৮৮ বছর পর সালাহউদ্দীন আইয়ুরী (রহ) জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করলেন।খ্রিস্টানরা পরাজয়ে বিপর্যস্ত,ভীত।প্রতিটি খ্রিস্টান পরিবারে দুঃশ্চিন্তার ছায়া।৮৮ বছর পূর্বে আমরা জেরুজালেম দখল করার সময় মুসলমানদের রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলাম।অসংখ্য মুসলিম যুবতীর হরন করেছিলাম।মসজিদে নিরাপত্তার কথা বলে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলাম।কিন্তু আজ??

মুসলমানরা প্রতিটি রক্তফোটার প্রতিশোধ নিবে।আমাদেরকে হত্যা করা হবে,যুবতী মেয়েদের সতীত্ব হরন করা হবে,নিষ্পাপ শিশুদের দাস বানানো হবে।খ্রিষ্টানদের মনে উদ্বেগের ছায়া।

হঠাৎ সালাহউদ্দীন পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো-প্রতিটি পুরুষ খ্রিষ্টান ১০ দিরহাম ও নারীর দিরহাম মুক্তিপনের বিনিময়ে শহর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।তবে বাচ্চাদের কোন মুক্তিপন লাগবেনা।

তবুও পরাজিতদের মনে অজানা শংকা,এটি একটি প্রতারনা,বাহিরে বের করার ফন্দি।বের হলেই সবাইকে একসাথে হত্যা করবে।তবুও জীবন বাচানোর তাগিদে বের হতে হবে।

কিন্তু একি!সবাই দলে দলে শহর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।কাউকেই তো মুসলমানরা কিছুই করছেনা। শহর থেকে বের হয়ে মুক্তির আনন্দে উৎফুল্ল খ্রিষ্টানরা।

সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীকে খ্রিষ্টানদের পক্ষ থেকে উপাধী দেওয়া হলো 'গ্রেট সালাদীন'।

৩.

২০১৩ সালের ১২ ই ডিসেম্বর।রাত ১০ টা ০১ মিনিটে আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলো।

বাংলার মানুষ স্তব্ধ,হতভম্ব।প্রমানাদি জোগাড় করা ছাড়াই একজন মানুষকে এত সহজে হত্যা করে ফেলা যায়।কি আছে জামায়াতে ইসলামীর মাঝে?একটু কাছ থেকে জামায়াতকে দেখি।

রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে আম্মু ফোন দিলেন।কাঁদছেন আর বলছেন-কাদের মোল্লাকে নাকি ফাঁসি দিয়ে দিয়েছে?

-হুম।

-সাইফুল (খালাত ভাই) ফোন দিয়েছিলো।ও কাদতেছে।

-উনি তো জামায়াতের বিরোধী।তাহলে উনি কাঁদছে কেন?

-ওর এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে।জামায়াত নেতাদের রায় দেওয়ার পর থেকে মোটামোটি পক্ষে কাজ করে।

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই শাহাদাতের পূর্বে যে কথাটি বলে গিয়েছেন-আমি যদি শহীদ হয়ে যাই,তাহলে ইসলামী আন্দোলনের কোন ভাই কারো সাথে প্রতিহিংসামূলক আচরন করবেননা।

এই কথাটি বাতিল শক্তির কলিজাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো।যা তাদের সম্ভাব্য বিজয়কে পরাজয়ে রুপান্তর করেছে এবং ইসলামের বিজয়ের পথকে সুগম করেছে।

বিষয়: বিবিধ

৮৫৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188259
০৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৩১
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : ক্ষমা নিসন্ধেহে মহৎগুন । মহান আল্লাহই হচ্ছেন সবচেয়ে বড় ক্ষমাশীল ।
দাগী আসামিরা যেমন জেলখানায় থেকেও সহজে সংশোধন হয়না, চিন্হিত মুনাফিকরাও শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত ক্ষতির চিন্তা করতে থাকে । ক্ষমাকে সূযোগ হিসেবে নিয়ে আবার ছোবল দিতে উদ্ধত হয় ।
০৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
139654
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : (সম্ভবত খন্দক যুদ্ধের পরে)রাসুল (সা) বনু কুরায়জা গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালান।তাদের অপরাধ ছিলো তারা মুসলিমদের সাথে চুক্তি লঙ্গন করেছিলো।যার জন্য ঐ গোত্রের সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিলো।
০৭ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
139739
মাটিরলাঠি লিখেছেন : "যার জন্য ঐ গোত্রের সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিলো।"

সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল – এ ধারনা ঠিক নয়। কুরআনে বলা হয়েছে -একদলকে হত্যা ও একদলকে বন্দী – এ দ্বারা সকল পুরুষ বুঝায় না।

“কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।” (আল-কুরআন; সূরা-৩৩, আয়াত-২৬)।

হাদীসে বলা হয়েছে “সশস্ত্র ব্যাক্তিদের” অর্থাৎ পুরুষ শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করা হয় নাই। (সুত্রঃ মোস্তফা চরিত – মওলানা আকরাম খাঁ)

আরো দেখুনঃ http://www.shodalap.org/snazrul/14775/
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:০৪
140099
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : পুরুষ বলতে বুঝিয়েছি যাদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা ছিলো এবং তারাই চুক্তি লঙ্গন করেছিলো।
188313
০৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৩২
হতভাগা লিখেছেন : ক্ষমা তাকেই করা উচিত যে ক্ষমার্হ ।

খুনীকে ক্ষমা করলে আর কাউকেই সাজা দেওয়ার নৈতিকতা থাকে না ।
188388
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File