ব্যক্তিগত সমালোচনা।
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ০৬ মার্চ, ২০১৪, ১০:০৬:০৩ সকাল
মুসলিম জাহানের শাসক আমীরুল মোমিনীন উমর ইবনে খাত্তাব (রা) জুমার নামাজে খুতবা দিতে দাড়ালেন।হঠাৎ এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললেন-যতক্ষণ না আপনি আমার প্রশ্নের জবাব না দিবেন,ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার কোন কথা শুনবোনা এবং কোন আদেশও মানবোনা।
খলিফা বললেন-বলো তোমার কি প্রশ্ন?
লোকটি বললেন-গত সপ্তাহে বায়তুলমালের পক্ষ থেকে আমাদের সবাইকে এক টুকরো করে কাপড় দেয়া হয়েছিলো।কিন্তু আপনার গায়ে যে জামাটি রয়েছে,সেটি তৈরী করতে কমপক্ষে দুই টুকরা কাপড় রয়েছে।আপনি বাকি কাপড়টি কোথা থেকে পেলেন?আপনার বায়তুলমালের বাইরে আর কোন আয় নেই বলে জানি।
খলিফা কিছু বললেননা।খলিফার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) দাড়িয়ে গেলেন।বললেন-বাবার পক্ষ থেকে আমিই জবাব দিচ্ছি।বাবার পুরাতন জামাটি গায়ে দেয়ার অযোগ্য হয়ে গিয়েছিলো।তালি দিয়েও আর জামাটি ব্যবহার করা যাচ্ছিলোনা,তাই বাবার যেনো পুরো একটি জামা তৈরী হয় সেজন্য আমার ভাগের কাপড়ের টুকরাটি বাবাটি দিয়ে দিয়েছি।এবং সেই কাপড় দিয়ে তৈরী পোষাক পড়েই বাবা নামাজে এসেছেন।
এই ছিলো তৎকালীন অর্ধ জাহানের শাসক আমীরুল মোমিনীন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) এর জবাবদিহিতার নমুনা।যাকে সামান্য কোন ভুল-ত্রুটির জন্যও একজন ফকিরও সরাসরি সমালোচনা করতে পারতো।
ব্যক্তিগত সমালোচনা থেকে কিছু কথা তুলে ধরবো।
একজন মানুষ হিসেবে আমার যে কোন ভুল হতে পারে।যেহেতু আমি ফেরেস্তা নই এবং কোন নবীও নই।একজন আল্লাহর অসহায় বান্দা। ব্যক্তি হিসেবে আমার যে কারো ভুল ধরারও সুযোগ রয়েছে।কিন্তু সিস্টেমে পার্থক্য থাকতে পারে।আপনার কাজের পলিসী আমার জানা নাও থাকতে পারে,আবার আমার কাজের পলিসীও আপনি নাও জানতে পারেন।
একটি জামায়াতের নামাজে যখন ইমাম সাহেব ভুল করেন,তখন সবাই ভুলটি ধরতে পারেননা।কিন্তু দু-একজন ভুলটি ধরে থাকেন।আবার অনেক সময় কেউ ভুলটি ধরতেও পারেননা।
সেদিন এক কার্যকরী পরিষদের ভাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের শেষদিকে বলছেন-আমাকে কিছু বলো।
-কি বিষয়ে বলবো,ভাইয়া?
-আমার কোন ভুল-ত্রুটি আছে কিনা?এখন তোমরা ভুলগুলো ধরিয়ে না দিলে কেন্দ্রে বা বৃহত্তর সংগঠনে চলে যাওয়ার পরে এই ভুলগুলো কেউ ধরিয়ে দিবেনা।এবং এই ভুলগুলো নিয়েই আজীবন চলতে হবে।
-ভাইয়া,এহতেসাবগুলো সাধারনত খুব কাছের লোকদের কাছ থেকে আসে।আমি আপনাকে প্রোগ্রামে পাই বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কথা হয়।এইটুকুতে কেউ কারো ভুল ধরতে পারবেনা।আমি যদি আপনার সাথে থাকতাম,একসাথে সময় কাটাতাম তাহলে আপনার সমস্যা থাকলে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
এক সদস্য ৪ দিনের জায়গায় ৮ দিনের ছুটি কাটিয়ে আসায় বাধ্য হয়ে শুধু এটুকু বলেছিলাম-যদি সদস্য শপথের আলোকে দায়িত্বশীলের আনুগত্য করতে খারাপ লাগে তাহলে আপনাকে বিদায় দিয়ে দিতে রাজী আছি।এইরকম সদস্য আমার না হলেও কাজের কোন সমস্যা হবেনা।আর যদি ব্যক্তি হিসেবে আমার আনুগত্য করতে খারাপ লাগে,সঠিক নেতৃত্ব পাচ্ছেননা মনে হয়,তাহলে শাখা সভাপতিকে জানান।আমি এখান থেকে সরে যেতে প্রস্তুত আছি।
অনলাইনে যখন সেলিব্রেটী কোন ভাইয়ের সাথে ছোট-খাটো দু-একটা বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য হয়,তখন উনার পক্ষ থেকে প্রথম মন্তব্য হয়,আমি আমার ওয়ালে এই বিষয়ে একটা পোস্ট দিবো।আর উনারা যার বিরুদ্ধে পোস্ট দেন,উনাকে উনার শিষ্যরা মোটামোটি তুলোধুনো করে ছাড়েন।কি কারনে বিষয়টার উদ্ভব হয়েছিলো,ঐটা লাইকার এবং কমেন্টার কেউ জানেননা।কমেন্টারদের কমেন্ট দেখলে মনে হয়,ফেসবুক দায়িত্বশীলের পক্ষে কথা বলা উনার ঈমানী দায়িত্ব।হোক সেটা পক্ষের বা বিপক্ষের লোক।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মানুষ হিসেবে খুব একটা ভালো নই।যেহেতু ডান,বাম,লীগ,দল সবার সাথে সম্পর্ক থাকায় ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু জিনিস পরিমাপের চেষ্টা করি।এবং সুন্দর করে অনেকগুলো ত্রুটি ধরে ফেলতে পারি।এটা সবসময় সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে নেইনা।এইটা সংগঠন থেকে নিতেও নিষেধ করা হয়েছে।
কিছু ভাইদের ভুল-ত্রুটি ওদের জায়গা থেকেই ধরিয়ে দেই।এবং ঐ বিষয়ে যুক্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করি। অনেক এই বিষয়টাকে অসম্ভব রকম কঠিনভাবে গ্রহন করেন।অনলাইনে আপনার কোন স্ট্যাটাস/মন্তব্য আমার উপর বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেনা।এবং আমার কাজের গতিপথও বিন্দুমাত্র বিচ্যুৎ হবেনা।আর আমি যদি ভুল করে থাকি,তাহলে বুঝিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবো।
আমরা সকল স্হানগুলো ইসলামিজম করার কথা বলি।কিন্তু সবগুলো জায়গায় যেতে সক্ষম হইনা। কওমী মাদ্রাসায় বসে উচ্চপদস্হ সরকারী কর্মকর্তা হওয়া যেমন অসম্ভব,তেমনি নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বসে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলে রাষ্ট্র কায়েম করা অসম্ভব।
বিষয়: বিবিধ
২১১৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মিশর, আলজেরিয়া,তিউনিশিয়া, তুরস্কসহ ইসলামি বিশ্ব নিয়ে আমাদের আরো পড়াশুনা করা দরকার । ইসলামি বিশ্ব ব্যবস্হার জন্য কি দরকার তার কিছু ট্রেনিং ও রশদ হয়ত পাওয়া যাবে ।
http://wikipedia.com
যেহেতু ডান,বাম,লীগ,দল সবার সাথে সম্পর্ক থাকায় ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু জিনিস পরিমাপের চেষ্টা করি।এবং সুন্দর করে অনেকগুলো ত্রুটি ধরে ফেলতে পারি।এটা সবসময় সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে নেইনা।
আসলেই নিরপেক্ষভাবে বা সব এংগেল থেকে বিশ্লেষণ করার মত চোখ খুব কম মানুষেরই থাকে-
কিন্তু একজন ভালো মুসলিমের জন্য এটা খুবই জরুরী!!
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবার তেমন চোখ ও মন দিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন