ইসলামী আন্দোলন ও ক্যারিয়ার।
লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ০৫ মার্চ, ২০১৪, ০৯:০২:৫৭ রাত
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে ইসলামী আন্দোলন ও ক্যারিয়ার একটি আরেকটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।একটি সেক্টর বাদ দিয়ে অন্য সেক্টরটিকে গ্রহন করার সুযোগ নেই।
রাসুলে করীম (সা) এর যুগে যেসব মাক্কী সাহাবীরা ছিলেন,প্রত্যকেই ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ।আবুবকর (রা) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আমলদারদের একজন এবং মক্কার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী।উমর (রা) শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা,উসমান (রা) শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন এবং আলী (রা) জ্ঞানীদের অন্যতম।
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে কেউ পুরোপুরি সংগঠন আঁকড়ে ধরে এবং ক্যারিয়ার ছেড়ে দেয়।আবার কেউ ক্যারিয়ারকেন্দ্রীক ব্যস্ততার জন্য সংগঠন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে।দুইটাই ইসলামী আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর।
অসংখ্য ভাই দেখেছি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সংগঠনের জন্য দিতে দিতে কর্মজীবনে খুবই নিম্নমানের চাকুরীতে জয়েন করেন।পরবর্তীতে যেখান থেকে উনি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করার সাহস পাননা এবং সংগঠনও উনার সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী হয়না।
আবার কিছু ভাই সর্বোচ্চ শপথ নেবার পরেও যখন কর্মজীবনে উচ্চপদস্হ সরকারী কর্মকর্তা বা ভালো কোন চাকুরী পেয়ে যান,তখন সংগঠনের অবদানকে ভুলে যেতে চান।সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করতে চাননা।এবং সংগঠনও তখন উনাকে খুজে পেতে পারেনা।
যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য স্হানীয় দায়িত্বশীলদের নিকট জনশক্তি চাওয়া হয়,তখন দায়িত্বশীল তার সক্রিয় জনশক্তিকে ছুটি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উনি বলেন-ভাই,উনি এই অঞ্চলের সক্রিয় সাথী।উনি চলে গেলে এখানের কাজ অনেক কমে যাবে।তাই উনাকে এখানেই রেখে দিতে চাই।
তখন জবাব দিতে হয়-উনি সক্রিয় দেখেই আমাদের বেশী দরকার।আমরা একজন সাথীকে 6 মাস সময়,শ্রম দিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে করাবো,তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে ইসলামী আন্দোলনের জন্য বেশী ক্ষতিকর।আর একজন কলেজ,মাদ্রাসা ছাত্রের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বেশী দরকার।আর কেন্দ্রীয় শিবির আপনাদের কাছে এটিই চায়।
তখন যেনো মনের গহীন থেকে অনেক কষ্টে ছুটিটা দিয়ে দেন।
একজন সাথীকে যতটা আন্দোলনের জন্য গড়ে তোলা হয়,ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সেভাবে গড়ে তোলা হয়না। সাথী কুরআন ক্লাস,আলোচনা চক্র,সাথী বৈঠকে দেরি করে গেলে বা সাংগঠণিক কাজ খারাপ থাকলে কঠিন জবাবদিহী নেয়া হয় ও অনেক সময় আর্থিক জরিমানা করা হয়।কিন্তু পড়াশুনা না থাকলে বা রেজাল্ট খারাপ হলে জবাবদিহিতা নেয়া হয়না। সাংগঠনিক কাজ বৃদ্ধির জন্য প্রেসার সৃষ্টি করা হয়,কিন্তু পড়াশুনা বৃদ্ধির জন্য প্রেসার দেওয়া হয়না।
সাংগঠনিক নীতিমালা ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য অনেক শপথের কর্মীদের মান বাতিল ও মুলতবী করা হয়,কিন্তু পরীক্ষায় ফেইলের জন্য কোন ভাইয়ের মান মুলতবী বা বাতিল করা হয়না(দুয়েক জায়গায় এই কাজটা করা হয়েছে,ঐটা ব্যতিক্রম)। কিছু ভাই বলবেন,দায়িত্বশীলরা পড়ার কথা বলেন কিন্তু আমরা করিনা।জবাব হচ্ছে,এইটুকু পড়ার কথা এলাকার বড় ভাই ও উপর ক্লাসের ভাইরাও বলেন।
একজন দায়িত্বশীল শুধু সাংগঠনিক দায়িত্বশীল হবেননা।তিনি হবেন একজন সাথীর বন্ধু,বড় ভাই এবং অভিভাবক।তিনি তার সকল হাসি-খুশীর ও দুঃখ-বেদনার সঙ্গী হবেন।যে সমস্যার কথাটি উনি কাউকে বলতে পারবেননা,ঐটা নির্দ্ধিধায় আপনার কাছে বলে দিবেন।
শুধু ইটা-বালি দিয়ে যেমন বিল্ডিং তৈরী হয়না।সিমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।তেমনি ক্যারিয়ারবিহীন আন্দোলন দিয়ে ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।যদি সম্ভব হয়ও,একটি ছোট্ট ঝড়েই সেই বিপ্লব মাটির সাথে মিশে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
৪২১৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন