সিজোফ্রেনিয়া রোগ এবং রোগী শনাক্ত করার উপায়

লিখেছেন লিখেছেন আকরামস বিডি ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৪১:৫২ রাত



সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর নিজস্ব চিন্তা ও আচরণের মধ্যে সমন্বিত ধারা বজায় থাকে না। তাদের ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। নিজেকে তারা গুটিয়ে নেয়। এড়িয়ে চলে যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান। একাকী জীবনের বৃত্তবন্দী চক্রে আটকে পড়ে তারা।এই রোগে মনের নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাঝে সামঞ্জস্যপূর্ণ মিল হারিয়ে যায়, বিশৃঙ্খলার জট তৈরি হয় মনের ভেতর। ফলে ব্যক্তিত্বের কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায়, অধঃপতিত হয় ব্যক্তিত্বের নানা বৈশিষ্ট্য।

যদি চিকিৎসা না করা হয়, বা চিকিৎসা শুরু হতে বিলম্ব ঘটে তবে রোগ ক্রমান্বয়ে জটিল হতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত তীব্রতার কারণেও সিজোফ্রেনিয়া দীর্ঘায়িত ও কমপ্লেক্স হতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়া শনাক্ত করার জন্য রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সব সিজোফ্রেনিয়া রোগের বহিঃপ্রকাশ একই রকম ঘটে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র ধারার উপসর্গ দেখা যায় রোগীর ভেতর। সাধারণত সমস্যা শুরু হয় চিন্তার

অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে। চিন্তাশক্তির অস্বচ্ছতার কারণে ধাঁধার মধ্যে পড়ে যায় রোগী। যে কোনো বিষয়ই তখন তার কাছে জটিলতর মনে হতে থাকে। ধীরে ধীরে চিন্তার বিভ্রান্তির সঙ্গে যুক্ত হয় আবেগীয় সমস্যা-অ্যাংজাইটি কিংবা ডিপ্রেশনেও ডুবে যেতে পারে রোগী। জট পাকতে থাকা চিন্তার শুরু থেকেই দৃঢ় ও বদ্ধমূল ভ্রান্ত বিশ্বাসের আসন গেড়ে বসতে পারে রোগীর ভেতর। নিজের সঙ্গে নিজেই বিড়বিড় করে অনর্গল কথা বলতে পারে, একা একা হাসতে পারে, নতুন নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে, অথবা পুরনো জানা শব্দের নতুন অর্থ বের করতে পারে রোগী। মনের চিন্তা এবং আবেগীয় অবস্থা আক্রান্ত হওয়ার পরই আচরণগত অস্বাভাবিকতা শুরু হয়। হঠাৎই সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণে বিঘ্ন ঘটতে পারে, অতি ধীরগতিতেও আচরণের নেতিবাচক পরিবর্তন চলে আসে সিজোফ্রেনিক্সদের ভেতর। ভয় কিংবা দৃঢ়মূল অলীক বিশ্বাসের কারণে রোগী নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছেড়ে দিতে পারে। ক্রমান্বয়ে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিজেকে সেঁটে ফেলতে পারে, একাকী জীবনের বৃত্তবন্দী চক্রে আটকে যেতে পারে।

এমনও হতে পারে, রোগীর ভেতর আগ্রাসী ধ্বংসাত্মক উন্মাদনা জেগে উঠেছে, জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে, অন্যকে আঘাত করছে। নিজস্ব কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পারে না বলেই রোগীর আচরণের সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্কে ছিন্ন হয়ে যায়, অবাস্তব জগতের গোলকধাঁধায় আটকে যায় রোগী। এ ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতি সাইকিয়াট্টিক ইমারজেন্সি হিসেবে চিহ্নিত হয়। একপর্যায়ে রোগীর প্রত্যক্ষণে সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। একা একা আছে রোগী, আশপাশে কেউ নেই, কেউ কথা বলছে না; কিন্তু রোগী কানে কথা শুনতে পারে। কান খাড়া করে অনেক সময় কথা শোনার চেষ্টা করে। সিজোফ্রেনিয়া রোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে কথা শোনার ব্যাপারে। সাধারণত রোগী দুই-তিনজন বা বহুজনের কথা শুনতে পায়। রোগীর মনে হতে থাকে কথাগুলো তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হচ্ছে। তবে কথা শোনার ব্যাপারে বহু বৈচিত্র্যতা রয়েছে। এমনও হতে পারে, নিজের চিন্তা নিজেই কানে শুনতে পায় রোগী। বিশ্বাস করে, সে যা চিন্তা করছে এগুলো তার চিন্তা নয়।

কারা এই রোগে ভোগে

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিমাত্রায় লাজুক, কিংবা নিজেই নিজের মাঝে ডুবে থাকে এমন ব্যক্তিত্বের মানুষই বেশি ভুগে থাকে এই রোগে। সিজোফ্রেনিয়া রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে, এমন জনগোষ্ঠীও রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ১৫-৪৫ বছরের মধ্যে ব্যাধিটি শুরু হতে পারে। তবে আক্রান্ত রোগীদের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুরুষের ব্যাধিটি শুরু হওয়ার গড় বয়স ২৮ বছর, মহিলাদের ৩২ বছর। ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের সিজোফ্রেনিয়া আরও বিলম্বে শুরু হতে পারে। এটিকে বলে 'লেট অনসেট সিজোফ্রেনিয়া'। দেখা গেছে ৪৫ বছরের পর, এমনকি ৫০-৭০ বছরের মধ্যেও রোগটি শুরু হতে পারে।

মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা বেশি হারে এবং বেশি জটিলতা নিয়ে আক্রান্ত হয়। অত্যধিক মানসিক চাপের মুখোমুখি হলেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং থেরাপী পেলে রোগের উন্নতি ঘটে এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

বিস্তারিতঃ http://www.psychobd.com

বিষয়: বিবিধ

৩৭৭২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188555
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৩
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:২১
139869
আকরামস বিডি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
188564
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ জরুরি পোষ্টটির জন্য।

আপনার লিংক এর সাইটটি ঠিকমত দেখা যাচ্ছেনা।
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:২১
139868
আকরামস বিডি লিখেছেন :
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
লিন্ক কাজ না করার তো কোন কারন দেখি না। তবে http://ptohelp.blogspot.com এই লিন্ক দিয়েও ট্রাই করতে পারেন।
188605
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৩৯
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File