পর্তুগালের অলৌকিক 'ফাতিমা': কী ছিল গোপন বাণীতে?

লিখেছেন লিখেছেন ইনতিফাদাহ ১৪ মে, ২০১৬, ০২:৩৯:৩০ দুপুর

রেডিও তেহরান-মে ১৪, ২০১৬;১৩:৪৬ এশিয়া/ঢাকা:

৯৯ বছর আগে ১৯১৭ সালের ১৩ মে পর্তুগালের 'ফাতিমা' নামক শহরে ঘটেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত বা অলৌকিক ঘটনাগুলোর অন্যতম ঘটনা।



তিনটি ভাগ্যবান শিশু (দুই বালিকা ও এক বালক) " আমাদের মহীয়সী নারী ফাতিমা" বা " তাসবিহ'র অধিকারী মহীয়সী নারী"র আলোকোজ্জ্বল অবয়ব বা জলজ্যান্ত কাঠামো দেখেছিল বলে দাবি করেছিল। তাদের ভাষায় সেই নুরানি অবয়বটি ছিল " সূর্যের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল ও সর্বোচ্চ মাত্রায় জ্বলজ্বল পানিতে ভরা কাঁচের বা স্ফটিকের বলের চেয়েও বেশী স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আলো বিকিরণকারী এবং আলাদা হয়েছিল সূর্যের আলোর মাধ্যমে"! সেই অবয়ব তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাদেরকে বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই দোয়ার বরকতে অসুস্থ ব্যক্তিরা আরোগ্য লাভ করেছিল। সেই মহীয়সী নারী ওই শিশুদের কাছে প্রতি মাসে একবার করে আরও ৫ বার দেখা দিয়েছিলেন বলে বর্ণনা করা হয়। (তিনি ১৯১৬ সালেও ওই শিশুদের কাছে একবার দেখা দিয়েছিলেন বলে বর্ণনা রয়েছে)

ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় ক্যাথলিক চার্চ বা গির্জার কর্তৃপক্ষ এই তিন শিশুকে শিগগিরই গ্রেফতার করে এবং তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর হুমকি দেয়। পরে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বলে বর্ণনা রয়েছে, যদিও ঠিক সেই শিশুদেরকেই মুক্তি দেয়া হয়েছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। তাদেরকে ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল বলে বর্ণনা রয়েছে। ফলে তাদের অনুরোধে সেই মহীয়সী নারী নুরানি বা আলোকময় অবয়ব নিয়ে আবারও হাজির হয়েছিলেন বলে বর্ণনা এসেছে। প্রায় সত্তুর হাজার মানুষ সেই অলৌকিক উপস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিল। তৎকালীন পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর এই বিশেষ দিনে ফাতিমা শহরে একটি বিশেষ মেলা বসে। সেখানে নানা জাতি ও ধর্মের হাজার হাজার মানুষ ও রোগী তাদের সমস্যা সমাধানের আশায় সমবেত হন। তারা তাসবিহ পাঠ করেন এবং হাঁটু গেঁড়ে ওই ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শন স্থল বা স্মৃতি-চিহ্নের কাছে যান। এ অঞ্চলে একটি বড় হোটেলের নামও ফাতিমা।

সেই মহীয়সী নারীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভকারী ওই তিন সৌভাগ্যবান শিশুর নাম ছিল লুসিয়া সান্তোস, জ্যাসিন্টা ও ফ্রান্সিসকো মার্টোইন। তাদের দুই জন কিছুকাল পর মারা যায়। লুসিয়া সান্তোসের মৃত্যু ঘটে ২০০৫ সালে।

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান কেন্দ্র ভ্যাটিকান এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা স্বীকার করলেও ওই আলোকোজ্জ্বল অবয়বকে মা মেরি বা হযরত মরিয়াম (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র অলৌকিক উপস্থিতি বলে দাবি করে আসছে। ভ্যাটিকান " ফাতিমার তিন গোপন বাণী" নামে সেই মহীয়সী নারীর বক্তব্য প্রকাশ করে। কিন্তু ভ্যাটিকানের মাধ্যমে প্রকাশিত কথিত "ফাতিমার তিন গোপন বাণী"র বক্তব্যে পুরো ঘটনা ও শিশুদের কাছে সেই রহস্যময় অস্তিত্বের বলা কথা বা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিকল্পিতভাবে বিকৃত করা হয়েছে বলে অনেক গবেষক মনে করেন।

এর কারণ, প্রথমত খ্রিস্টানদের লিখিত বর্ণনাগুলোর কোথাও কখনও কুমারী মা মেরি বা বিবি মরিয়ম (সা.)-কে 'ফাতিমা' বলে উল্লেখ করা হয়নি।

দ্বিতীয়ত খ্রিস্টানদের লিখিত বর্ণনার কোথাও কখনও কুমারী মা মেরি বা বিবি মরিয়ম (সা.)-কে তাসবিহ'র অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়নি।

এ ছাড়াও গবেষকদের মতে, পর্তুগালের ফাতিমা শহরটির আরবি 'ফাতিমা' নামও খুবই লক্ষণীয়। এই শহরটির প্রতিষ্ঠাতা ছিল প্রাচীন মুসলিম স্পেন বা ইবেরিয়ার মুসলিম শাসকরা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)'র কন্যা হওয়ার কারণে ফাতিমা নামটি মুসলিম বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় ও সম্মানিত। "ফাতিমা আজ জাহরা" (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র জাহরা শব্দটির অর্থ "সর্বোচ্চ আলোকময়"।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হল, নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন তাসবিহ'র অধিকারী। তিনি তাসবিহ বানিয়েছিলেন মাটি দিয়ে। বিশ্বনবী (সা.) তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনটি তাসবিহ বা আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য শিখিয়েছিলেন যা মুসলমানরা আজো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাহলিল বা পাঠ করে থাকেন। (৩৩ বার সুবাহান আল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবর)

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় দিক হল, ১৫৭১ সালে পোপ পঞ্চম পিয়াস কুমারী মা মেরির সম্মানে " আমাদের মহীয়সী নারীর বিজয়" শীর্ষক এক ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। খ্রিস্টানরা পশ্চিম ইউরোপে তুর্কি মুসলমানদের বিজয় ঠেকাতে সক্ষম হওয়ায় এই ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন পোপ। কিন্তু এর কয়েক বছর পর বা পরবর্তী বছরগুলোতে তুর্কি মুসলিম সেনারা পশ্চিম ইউরোপ দখল করতে থাকলে তৎকালীন ১৩ তম পোপ গ্রেগরি ওই ভোজসভার নাম পরিবর্তন করেন। নতুন নাম দেয়া হয় "তাসবিহর অধিকারী আমাদের মহীয়সী নারী"। আর এভাবেই খ্রিস্টানদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কুমারী মা মেরি বা হযরত মরিয়ম (সা.)'র সঙ্গে তাসবিহ-কে সংশ্লিষ্ট করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় এবং তারা হযরত ফাতিমা (সা.)'র তাসবিহ পাঠ করতে থাকায় এই প্রবণতা ঠোকানোর জন্য প্রোপাগান্ডা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয় ভ্যাটিকান।

তাই এ সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি যে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতিমা শহরের একটি এলাকায় যে তিন শিশু বিশেষ আলোকোজ্জ্বল অবয়ব দেখেছিল তা ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (সা.)'র নুরানি বা আধ্যাত্মিক উপস্থিতি এবং তিনি রহস্যময় গোপন বাণীতে সম্ভবত ইওরোপীয়দের সবাই এক সময় মুসলমান হয়ে যাবে বা এই মহাদেশ মুসলিম-প্রধান মহাদেশে পরিণত হবে বলেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।

এই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে পাশ্চাত্যে ও ইরানে আলাদাভাবে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং লেখা হয়েছে অনেক বই । #

মু. আ. হুসাইন/১৩

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৩৫১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369006
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৪০
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : কোথায় পান এসব আজগুবি ভিত্তিহীন সংবাদ?
369009
১৪ মে ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৪
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ইরানীরা মুলত জরথুষ্ট্রবাদ দ্বারা এমনভাবে পর্যদুস্ত যে, খোদ ইসলামের অনুশাসন তাদেরকে পরিবর্তন করতে পারেনি। পৃথিবীতে সুফিবাদ, বৈরাগ্যবাদের বড় পৃষ্টপোষক এরা। এদের কাহিনী ও ইতিহাসের সাথে সাংঘার্ষিকতা আছে। প্রকৃত এদের সাথে ইসলামী ধ্যান-ধারনার কাছাকাছি তো দুরের কথা কয়েক মাইল দূরের বস্তুর সাথেও সম্পর্ক থাকেনা। এসব কাহিনী এদের সৃষ্টি। রচয়িতাও এরা, সৃষ্টিকর্তাও এরা, প্রচার কারীও এরা। বাস্তবতার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। চিন্তাগত অসারতার দিকে হিন্দুদের পরেই ইরানী-পার্সি ধ্যান ধারনার স্থান। ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নাই, এসব কিসসার। অনেক ধন্যবাদ
১৪ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:২২
306291
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আমাদের বাংলাদেশের ক্ওমীদের বড় একটা অংশ এসব ভিত্তিহীন কারামতিতে বিশ্বাসী।
369011
১৪ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:৩২
মুক্তির মিছিল লিখেছেন : এসব আজগুবি কিস্সা কাহিনী প্রচার না করাই সবার জন্য কল্যানকর। এরদ্বারা অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিতরা বেশী প্রভাবিত হয়।
আর পারসিয়ানরা হল অনেকটা খ্রীষ্টান পাদ্রীদের মত, ইচ্ছামত ধর্মের মধ্যে মনগড়া কাহীনি ঢুকিয়ে দেয়া। এদের বিশ্বাস ও আকিদা প্রকৃত ইসলাম থেকে অনেক অনেক দূরে।
369045
১৪ মে ২০১৬ রাত ০৯:৪১
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম


হি হি
মনে হচ্ছিলো সিনামা দেখচ্ছিলাম Rolling on the Floor
369233
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১১:৪৫
ইনতিফাদাহ লিখেছেন : সম্ভবত আপনারা এখনো মুসলমান হতে পারেননি।
তা নাহলে,এমন ইডিয়টিচ রিঅ্যাকশন কি দেখাতে পারতেন?

পর্তুগালের ফাতিমা সিটির উপর জানতে দেখুন:
https://en.wikipedia.org/wiki/F%C3%A1tima,_Portugal

সারা দুনিয়া এর খবর জানতো।শুধু আপনারা কয়েকজন ইসলামের খোদ নিয়োজিত মালিক বলেই হয় তো জানতেন না!

এই রচনায় কোথাও খ্রিষ্টীয় আকায়েদ সাপোর্ট করা হয়নি।

শুধু 'ফাতিমা' নামটির উপর একটি অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে:"তাই এ সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি যে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতিমা শহরের একটি এলাকায় যে তিন শিশু বিশেষ আলোকোজ্জ্বল অবয়ব দেখেছিল তা ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (সা.)'র নুরানি বা আধ্যাত্মিক উপস্থিতি এবং তিনি রহস্যময় গোপন বাণীতে সম্ভবত ইওরোপীয়দের সবাই এক সময় মুসলমান হয়ে যাবে বা এই মহাদেশ মুসলিম-প্রধান মহাদেশে পরিণত হবে বলেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন"।

ইসলামের নামে মোনাফেকি করা বা মুসলমানদের ইমান নিয়ে বাজে কথা বলার চেয়ে এটা কি খারাপ হল?

সারা দুনিয়ায় বহু স্কুল আছে আওয়ার লেডী ফাতিমা - র নামে।বাংলাদেশেও আছে।

তাদের কনসেপ্ট্ :
https://en.wikipedia.org/wiki/Our_Lady_of_F%C3%A1tima

سب تیرے سوا کافر
آخر اس کا مطلب کیا؟

سر پھر دے انسان کے
ایسا كھبت ای مذہب کیا؟

[সব তেরে সেওয়া কাফির
আখের ইস কা মতলব কেয়া?
সার ফিরা দে ইনসান কা
এইসা খাব্তে মযহাব কেয়া?]

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File