ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক, যৌনতা ও অশ্লীলতার ছড়াছড়ি সর্বত্র
লিখেছেন লিখেছেন ইনতিফাদাহ ০২ মে, ২০১৬, ০২:১৪:৩০ দুপুর
এস আলম
টাইম নিউজ বিডি,০১ মে, ২০১৬
এক সময়ের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন কেন্দ্র টিএসসিতে এখন অবৈধ সংগঠনের ছড়াছড়ি। শুধু তাই নয়, এলাকাটি এখন অশ্লীলতা, যৌনকর্ম ও নেশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
শুধু ঢাবি বা টিএসসিই নয়, সর্বত্রেই যেন যুগের পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে অশ্লীলতা। বিশেষ করে অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে অপরিণত জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এতে করে স্বস্তিতে পথ চলবার ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। এমনকি পশ্চিমা দেশের আদলে গণপরিবহণেও তথাকথিত প্রেমিকযুগলের ঘনিষ্ঠ মেলামেশা নিত্য নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এক সময়ের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রগতিশীলতার নামে প্রতিনিয়ত চলছে অশ্লীলতা, মাদক, প্রকশ্যে নারীদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা।বহিরাগত ছাত্র-ছাত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণীর পতিতা থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষ দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়।সন্ধ্যা হলেই এই এলাকা হয়ে উঠে এক মিলন মেলায়।আর এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় অপরাধ কর্ম।
এর এটাকেই ভাবা হয় প্রগতি হিসেবে। এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কথা বললেই সেটাকে ধর্মীয় গোড়ামি বলে প্রচার করা হয়। অথচ শিক্ষা-সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির কোন চর্চাকেই ইসলাম নিরুৎসাহিত করে না। আর কোনো বিচার-বিবেচনা ব্যতিরেকে ঢালাওভাবে সবকিছুর অনুশীলন ও প্রচার-প্রসারকে শুধু ইসলাম নয়, সব ধর্মই অনুৎসাহিত করে। সংস্কৃতির নামে অশ্লীলতার চর্চা ও প্রচার ইসলামসহ সকল ধর্মেই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সম্প্রতি আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ‘বাংলাদেশের তরুন-তরুনীদের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই যৌন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ তরুন-তরুনী পরোক্ষভাবে প্ররোচিত হয়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। এদের এক তৃতীয়াংশ আবার লিপ্ত হচ্ছেন দলগত যৌনকর্মে।’ মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অবৈধ ব্যবহারের কারণে আমাদের যুব সমাজ খুব দ্রুত চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে। যুবক-যুবতীদের হাতের হ্যান্ডসেট পরিণত হয়েছে পর্নোগ্রাফির ভান্ডারে।
কয়েকমাস আগে ঢাবি পরিচালিত স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি উদ্ধার করা হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক মিনি পতিতা গড়ে ওঠার কথা সচেতন মহলের অজানা নয়। এই অবস্থায় সচেতন মহল নোংরা এই পরিবেশ বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন। অন্যথায় সভ্য সমাজের পতন ঠেকানো যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক সময়ের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন কেন্দ্র টিএসসির বিভিন্ন রুম দখল করে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরো টিএসসিতে মাত্র নয়টি সংগঠনের অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক সংগঠন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নাম নিয়ে পেশী শক্তি খাটিয়ে আসন গেড়ে বসেছে এসব সংগঠন। এমনকি ওসব কক্ষকে কেন্দ্র করেই রাতে মাদক সেবনেরও আড্ডা বাড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তথ্য মতে, অনুমতি ছাড়া টিএসসিতে যেসব সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এগুলোর অন্যতম হচ্ছে, স্লোগান ‘৭১, প্রভাতফেরী, দৃষ্টিপাত নাট্যদল, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমী, স্পন্দন একাত্তর, স্রোত আবৃত্তি একাডেমী, বৈঠকী সঙ্গীত আসর, নন্দন কানন, দৃষ্টি, বিকাশকেন্দ্র, কণ্ঠসুর কর্নার, স্বরচিত ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে যেসব সংগঠন টিএসসিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাবা ক্লাব, রোভার স্কাউট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি, বাঁধন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিনিয়তই টিএসসির অবৈধ সংগঠনের ওই রুমগুলোতে মাদক সেবন চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হল রাত সাড়ে ৯টায় বন্ধ হয়ে গেলেও রাতভর মেয়েরা অবস্থান করেন ওই কক্ষগুলোতে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী না বহিরাগত তা জানেন না কর্তৃপক্ষ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে টিকে আছে অনেক সংগঠন। স্লোগান ‘৭১ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাদকের নিরাপদ জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে টিএসসি। রাজনৈতিক প্রভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সংগঠনের অফিসেই চলে মাদকের কার্যক্রম। টয়লেটে ময়লার ঝুড়ির মধ্যে প্রায় প্রতিদিন সকালেই পাওয়া যায় অসংখ্য ফেনসিডিলের বোতল। টয়লেটের পাইপ আটকানো থাকে ফেনসিডিলের বোতলে। রাতে অনুষ্ঠানের নামে টিএসসিতে চলে মাদকের আসর, আর সুন্দরী রমনিরা হয়ে উঠে লালসার পন্যে।
পুলিশি ভয় নেই বলে টিএসসি থেকেই এখন নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক সরবরাহের কাজ। এ ব্যাপারে একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়তই ছাত্ররা বিভিন্ন রুমে মদ ও ফেনসিডিল খায়। মাঝে মধ্যে অনেক রাতে টিএসসি সুইমিংপুলের পাশে বসেও মদ পান করেন তারা। প্রশিক্ষণের নামে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিরও অভিযোগ আছে অনেকের নামে। টিএসসির বিভিন্ন রুমের দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মচারী বলেন, টিএসসির বিভিন্ন রুমে অশ্লীল কর্মকাণ্ড হয়। আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না।
টিএসসির পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র লেকের পুরো জায়গাই এখন ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিষ্কার না করায় এ অংশটি এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত। বহিরাগত জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এখানে। সন্ধ্যার পর বহিরাগত প্রেমিক প্রেমিকাদের অবৈধ মেলামেশাও চলে এ স্থানটিতে। এটাকে কেন্দ্র করেই মাদক সিন্ডিকেটের বড় একটি অংশ আড্ডা জমায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নৈতিকতার অবক্ষয়, ধর্মীয় অবস্থান থেকে তরুণ তরুণীরা দিন দিন দুরে সরে যাওয়ার ফলেই এ সকল কর্মকান্ড জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর থেকে উত্তরণের জন্য জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকেই। সচেতনতা জাগ্রত করতে হবে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে।
---
সোর্স- http://www.timenewsbd.com/news/detail/78485
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ আসসালাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন