মীরজাফর থেকে শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন সোহান আর চৌধুরী ০৩ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৫৩:৪২ দুপুর
পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো দা গামার আগমনের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সাথে ভারতবর্ষের বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো।এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য বিপ্লবের সূত্রপাত মাধ্যমে আগমন ঘটে পর্তুগীজ,ওলন্দাজ,দিনেমার,ফরাসি ও ইংরেজদের। পরবর্তীতে ১৬৬০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানী গঠিত হলে ব্রিটিশরা স্থানীয় শক্তি ও প্রতিদ্বন্দী অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে করে কায়েম করে উপনিবেশ শাসন।ফলস্বরূপ দু'শ বছরের শোসন-নিপীড়নের শিকার হয় পুরো ভারতবর্ষ ।
ইতিহাস আমরা জেনেছি কিন্তু কতটুকু শিক্ষাগ্রহণ করতে পেরেছি ...???? পরাধীনতার ছোবল থেকে আক্ষরিক অর্থে মুক্তি মিলেছে বটে কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। বাণিজ্য চুক্তির নাম করে বন্ধু রাষ্ট্রকে অবাধ প্রবেশাধিকার প্রদান,রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সুন্দরবনের কর্তৃত্ব হস্তান্তর,তেল-গ্যাসের নাম করে বঙ্গোপসাগরে ঘাটি স্থাপনের সুযোগদান তো সেই উপনিবেশিক শাসন কায়েমরই রূপরেখামত্র।
মীরজাফরকে সবাই বিশ্বাসঘাতক বলে কারণ সে নিজের দেশ ভিনদেশী ইংরেজদের
হাতে তুলে দিয়েছিল।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলা-বিহার-উঁড়িষ্যা তার নিজের দেশ ছিলই না। মুঘল আমলের বেশীরভাগ মুসলিম শাসকদের মত তারও পূর্বপুরুষদের নিবাস ছিলো মধ্যপ্রাচ্য। মীরজাফরের বাবার বাবা (মতান্তরে বাবা)ইরাক থেকে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। যার নাড়ী পোঁতা ভীনদেশে তার আবার দেশপ্রেম কিসের।আর ইংরেজরা মীরজাফরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল বিনিময়ে তারা বিনা শুল্কে ব্যবসা করতে পারবে বলে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র ইংরেজরা তাদের রূপ পাল্টে ফেলে এবং বিনা শুল্কে ব্যবসার সাথে ক্ষমতার দিকেও হাত বাড়ায়.......
বর্তমান বাংলাদেশের মসনদ আরোহীদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস এবং বর্তমান কার্যকলাপ আমাদের খুব বেশী শংঙ্কিত করে তোলে। বাংলার রাজপথে এখন পলাশীর প্রান্তর রচিত হয়,সিরাজউদ্দৌলারা প্রাণ হারায় প্রতিনিয়তই। এ বাংলা থেকে মীরজাফররা হারিয়ে যায় নি,তারা শুধু রুপ পাল্টিয়েছে। আর ঘষেটি বেগমের চক্রান্তও থেমে নেই। শুধু পাল্টে গেছি আমরা;আবদ্ধ হয়ে গেছি,বদ্ধ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী। শুধু ১৬৬০ সালে যা ঘটেছে তাই ইতিহাস নয়,বর্তমানে যেসব ঘটছে তা হয়তো নীরবে-নিভৃতে নতুন কোনো ইতিহাসের পটভূমি রচনা করে চলেছে .....
আজ থেকে শতবর্ষ পরে নবম শ্রেণীর এক ছাত্র হয়তো পড়বে একসময় বাংলাদেশ স্বাধীন একটি দেশ ছিলো ;সে হয়তো এমন এক মানচিত্র দেখবে যার লাল বৃত্তে খচিত থাকবে অশোকস্তম্ভ। আফসোস লাগে যখন দেখি দেশবিক্রির নতিপত্র হস্তান্তর হয় আর তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা বসে বসে গুন্ডে ফিল্ম নিয়ে প্যাঁচাল পারে,আল-কায়েদার গল্প শুনে মাথা গরম করে,ভঙ্গুর চেতনা নিয়ে মাতৃভাষা দিবসে জিন্স,টি-শার্ট পড়ুয়া মেয়েদের ফ্যাশান-শো দেখে।
এটাই কি দেশপ্রেমের নমুনা ....????
বিষয়: রাজনীতি
১১২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন