পত্রমিতালী।
লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ১৯ মে, ২০১৪, ১০:২১:১৩ রাত
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে চিঠিপত্রের আদান প্রদান বলতে গেলে প্রায় বিলুপ্তির পথে। নেই বললেই চলে। অথচ একটা সময় এই চিঠিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। নিজের অভিমান অনুভূতিগুলো ভালোবাসা ভালোলাগা মনের মতো করে প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যমই ছিল চিঠি।আর মাসের পর মাস চাতক পাখির মতো উত্তরের অপেক্ষায় থাকলে ভালোবাসা বেড়ে দশগুণ হওয়াই স্বাভাবিক।
চাই সেটা মা – ছেলের সম্পর্ক হোক, আর বন্ধু বান্ধবের সম্পর্ক হোক। আর চিঠিতে মানুষ নিজের মনের আবেগ যত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারে, অন্য কোন পন্থায় বোধহয় তার আংশিকও প্রকাশ হয় না। চিঠির প্রত্যেকটা অক্ষরে কেমন যেন ভালোবাসা রাগ অভিমান ঠিকরে ঠিকরে পড়ে। সব কেমন জীবন্ত জীবন্ত হয়ে ওঠে।যদিও এ ব্যাপারে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই।
তবে মাঝে মাঝে মানুষটার সাথে খুব বেশী অভিমান জমে গেলে বিশাল একটা চিঠি লিখে বালিশের পাশে রেখে দেই। আবার কখনো বিশেষ কোন দিন হলেও চিঠি লিখে উইশ করি। তার অবশ্য এসব মনে থাকে না বললেই চলে। কি আর করবো , আমিই মনে করিয়ে দেই। কিন্তু দুঃখের কথা হল সে কখনো আলাদা করে উত্তর লিখে না।শুধু একবার চিঠির অপর পাশে লিখেছিল “ মাঝে মাঝে তোমার এই চিঠি পাওয়ার জন্য হলেও তোমাকে খেপাতে হবে।“
তবে চিঠি লিখতে দেখেছি আমার নানুকে । আমার একটা মাত্রই মামা। তিনি আবার থাকতেন দেশের বাইরে। তো নানুকে দেখতাম কত ছেলের কাছে চিঠি লিখতেন, আগে থেকেই একটা প্রস্তুতি নেয়া থাকতো। তাড়াতাড়ি কাজবাজ শেষ করে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর আরাম করে চিঠি লিখতে বসতেন। কখনো দেখতাম লিখতে লিখতে কেঁদে ফেলছেন।তখন নানুকে কেউ বিরক্ত করতে পারতো না। প্রচণ্ড রেগে যেতেন। মামীর কথা আর নাই বললাম। শুধু এইটুক বলি , যেদিন বিদেশ থেকে মামার চিঠি আসতো সেদিন সারাদিন মামী ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে বসে চিঠি পড়তেন। হাজারবার ডেকেও তাঁকে ঘর থেকে বের করা যেতো না। একদিন পর লজ্জা লজ্জা মুখ করে বের হলে দেখতাম চিঠি পড়ে কেঁদে কেটে নাক মুখ ফুলিয়ে একাকার।সেদিন কবে যেন মামীকে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি খবর এখন আপনাদের প্রেমের ? মামী মুখ টিপে হেসে বলেছিলো মোবাইল আসার পর এখন আর আগের মতো জমে না। আসলে জমে না যে তা কিন্তু না। কিন্তু মোবাইল আসার পর ভালবাসার প্রকাশটা সেভাবে হয়ে ওঠে না, পার্থক্য এই।
আমি নিজে কখনো কারো কাছে সেভাবে চিঠি লিখি নি। মনে আছে ছোটবেলায় শুধু একবার একটা চিঠি লিখেছিলাম। একেবারে প্রথম প্রথম যখন আরবিতে টুকটাক কথা বলতে শিখেছিলাম, তখন ফার্স্ট আমার এক চাচার কাছে একটা আরবি চিঠি লিখেছিলাম। আমার খুব প্রিয় একজন চাচা। সবসময় ভালো লেখাপড়ার তাকীদ দিতেন। অন্যরকম একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক ছিল চাচার সাথে বলে বোঝানো যাবে না। চাচা তখন দেওবন্দ পড়তেন। আর আব্বু কি এক কাজে ইন্ডিয়া যাবেন তো ঠিক হল চাচার সাথেও দেখা করে আসবেন। সেই সুবাদে আব্বুর হাতে চিঠিটা গুঁজে দিয়েছিলাম। আমার জীবনে চিঠির কাহিনী এখানেই শেষ । আর কখনো কারো কাছে চিঠি পাঠাই ও নাই, আর কেউ আমাকে চিঠি দেয় ও নি।
কিন্তু আজ হঠাত এত কথা শুধু একটা চিঠিকে ঘিরেই। বুঝ হওয়ার পর এই প্রথম কেউ আমাকে চিঠি লিখল। কখনো ভাবি নাই কেউ আমাকে চিঠি লিখবে।কি যে আনন্দ লাগছে, অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক অনেক ধন্যবাদ জান্নাতু নাঈম মনি আপু তোমাকে। এত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে তুমি আমাকে দুই কলম লিখেছ সত্যিই আমি বিমোহিত। শিঘ্রই তোমার জবাবটা পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অপেক্ষায় থাকো
বিষয়: বিবিধ
১৪০৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন