রক্তপলাশ এক লাশের মিছিল.

লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ০৭ মে, ২০১৪, ০৪:৫৮:২৮ বিকাল



পর্ব-২

হৃদয়ে আনন্দ আবেগ আর উচ্ছ্বাসের উত্তাল ঊর্মিমালা নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম আমরা।চৌরাস্তায় উঠতেই দেখা মিলল আমাদের মতো আরো ক’জনের সাথে।এভাবে মোড়ে মোড়েই দেখা মিলছিল আমাদের মত দু’চারজনের। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ৬০/৭০বয়সী বৃদ্ধ।কিন্তু কোন ক্লান্তি ছিলোনা তাদের চোখেমুখে।কেমন স্বতঃস্ফূর্ত হাসিখুশি ভাবে তারা এগিয়ে চলছেন সম্মুখপানে এদের হাটার গতি দেখলে নিজের মাঝে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলার স্পৃহা খুঁজে পাই।সবার মুখে কালেমার জিকির। ভাব গম্ভীর একটা সুন্দর নির্মল পরিবেশ। এদিকে ফোনে যোগাযোগ চলছিলো সারাক্ষণই। ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা পৌঁছে গেছেন যার যার নির্ধারিত পয়েন্টগুলোতে। হাজারো বাধা বিপত্তি দু’পায়ে দলে।

খবরটা শুনে চোখ ফেটে কান্না চলে এলো । এ কান্না কোন দুঃখের কান্না নয়,বরং এটা তো শুকরিয়ার কান্না। এ যেন সালাহউদ্দিন আয়ুবীর সেনাদল , তারেক বিন যিয়াদের বীরসেনানী। এতদিন বইয়ে্র পাতায় পড়ে আসছিলাম মুসলমানদের বীরদীপ্ত সাহসিকতার কথা।আজ তা স্বচক্ষে অনুধাবন করছি।মুসলমান আসলেই সিংহের জাতি।যার রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে আছে ওমরের অকৃতিম সাহসিকতা, আবু বকরের মহানুভবতা। আলীর বুদ্ধিমত্তা, আর ওসমানের উদারতা।অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাঁপে না যাদের হৃদয়। তাগুতের মুকাবেলায় যারা সদাই অকুতোভয়। হাজারো শোকর সেই খোদার দরবারে যিনি আমাকে মুসলমানদের কাতারে শামিল করেছেন।

ফজরের আযানের সুরে সম্বিৎ ফিরে পেলাম আমি।ধারে কাছে কোন মসজিদ না থাকায় মাটির একটা প্রশস্ত রাস্তার উপর জামাতে নামায আদায় করে নিলাম সকলে। হাঁটতে হাঁটতে কখন রাত পার হয়ে পৃথিবী আলোকিত করে ভোরের সূর্যটা উঁকি দিলো টেরই পেলাম না।নতুন করে উৎকণ্ঠার উদ্রেক হল মনে।দিনের আলোতে শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশী তাই।

হঠাত মেঘের গর্জন।সূর্যটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো ক্ষণিকের মধ্যেই।ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়ায় মনটা প্রসন্ন হয়ে উঠলো এমনিতেই সকালবেলাটা খুব সুন্দর।তার উপর এমন একটা বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়া। সারারাতের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো একনিমিষেই ।একটু পরেই ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির প্রবল ধারায় সজিবতা ফিরে পেল প্রকৃতি। প্রকৃতির এই মনোহর পরিবেশ ও বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে চলছে একটি অবিশ্রান্ত কাফেলা।

দাউদকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।এরপর থেকেই জায়গায় জায়গায় বাধা বিপত্তি।কখনো লাঠিসোঁটা নিয়ে আবার কখনো ইট পাটকেল নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হচ্ছিলো সরকার সমর্থক গোষ্ঠীরা।গাবতলির কাছাকাছি আসতেই রামদা, গুলি নিয়ে হামলা করে ওরা আর ককটেল তো সেদিন ছিল সরকারী অনুদান।সেদিন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের উপর। কিন্তু তাতেও আমাদের কাফেলা পিছপা হয়নি।বরং নারায়ে তাকবীরের ধ্বনিতে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে চলছিল।যার আওয়াজে প্রকম্পিত হচ্ছিলো গাবতলি সহ আশেপাশের এলাকা।আর তা দেখে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায় হিংস্র হায়েনাগুলো।

ততক্ষনে আবার রোদটা মাথার উপর উঠে এসেছে। বারবার পানি পান করছিলো মুহাম্মাদ।দোকানপাট বন্ধ থাকায় সাথে নিয়ে আসা মুড়ি খেতে বলি ওকে।কিন্তু ও খেতে চাইলো না।একটানা এতোটা পথ হেঁটে কমবেশী সবাই আমরা ক্লান্ত ছিলাম।যার কারণে ওখানেই জায়নামায বিছিয়ে বসে পড়লাম সবাই।অবরোধ মানেই গাড়ী ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগ। এতকাল এটাই জেনে এসেছিলো পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু সেদিনই প্রথম এত সুশৃঙ্খল ভাবে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিলাম আমরা।গাড়ীর যাত্রীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে নামিয়ে দেয়া হচ্ছিলো সাথে এ আশ্বাস ও দেয়া হচ্ছিলো যে, এর জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ আপনাকে জাঝায়েখায়ের দান করবেন। আর এ্যাম্বুলেন্সগুলোকে নির্দ্বিধায় রাস্তা পার করে দিচ্ছিল আমাদের একনিষ্ঠ কর্মীরা।এভাবে করেই কখনো জিকির, কখনো ইসলামী সংগীত, বক্তৃতা ও বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে অতিবাহিত হচ্ছিলো সময়।কতইনা সুন্দর এ দৃশ্য।

তখনো লাখ মানুষ সমাবেত হচ্ছে সমাবেশগুলোতে। লাখ জনতার অবরোধে স্তব্ধ হয়ে গেছে ঢাকা নগরী। মিছিলে মিছিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে ঢাকার প্রত্যেকটা প্রবেশ পথ। যা দেখে বাম চিন্তার কিটগুলোর গায়ে ভীষণ জ্বালা ধরে গেলো। নাস্তিক-মুরতাদদের অন্তর চুপসে গেছে। মরণকামড় দিতে তারা অস্থির বেকারার।

__________________ চলবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

218638
০৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
লোকমান লিখেছেন : মুসলমান আসলেই সিংহের জাতি।যার রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে আছে ওমরের অকৃতিম সাহসিকতা, আবু বকরের মহানুভবতা। আলীর বুদ্ধিমত্তা, আর ওসমানের উদারতা।অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাঁপে না যাদের হৃদয়। তাগুতের মুকাবেলায় যারা সদাই অকুতোভয়।
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২১
166609
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
218645
০৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
166611
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
218650
০৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৩
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : আহারে কোথায় গেলো সেই ধবধবে সাদা পোশাকধারীরা। এক রাতের অভিযানেই তারা উধাও দেশ থেকে। এই না হলে কুরআনের হেফাজতকারী। নিজেরা কুরআন পুড়িয়ে অন্য নিরীহ মানুষের নাম দেয়।
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
166612
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : হুম !
218662
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৭
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সুন্দর হয়েছে অনেক ধন্যবাদ ।
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
166613
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ !
218681
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৭
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মাশাল্লাহ জাজাকাল্লা অনেক ভালো লিখেছেন ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
166969
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
218683
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
আঁধার কালো লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান।
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
166968
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ , চলবে।
218697
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সেদিন ছিল হরতাল আবার সেটাই একটা সময় ছিল যখন রাত্রেও হরতাল আহবান করেছিল স্বয়ং সরকার। অনেক ধন্যবাদ
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫০
166970
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : গিনেজ বুকে নাম লেখানো যেতো !
219020
০৮ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : দুঃখজনক এক ইতিহাস Sad
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫০
166971
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : হ্যাঁ আপু ! যা কখনো ভোলার নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File