রক্তপলাশ এক লাশের মিছিল..................

লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ০৬ মে, ২০১৪, ০৫:২০:৫১ বিকাল



পর্ব -১

ঘুম থেকে জেগে হুজাইফা বুঝতে পারল এখনো ফজর হয়নি।চারিদিকে কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার।কিন্তু হঠাত এ সময় ঘুম ভাঙল কেন ওর! অথচ শরীরটাও যথেষ্ট ক্লান্ত লাগছে।সারাদিন ক্লাস করা, তাকরার করা মুতলায়া’ আরও বিভিন্ন কাজকামের পর রাতে বিছানায় গেলে ওর আর দিন দুনিয়ার খবর থাকেনা বলতে গেলে।ফজরের সময় সাথী ভাইয়েদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ওর।কিন্তু আজ ? কিছুই মেলাতে পারছেনা হুজাইফা। ধুর যা, এত ভাবাভাবির কি আছে? হতেই পারে, সবসময় যে একি নিয়মে ঘুম ভাংবে তা তো আর নয় ! কখনো নিয়মের এদিক সেদিক হতেই পারে। এসব ভেবে পাশ ফিরে শুতে যাবে তখনই বুঝতে পারল ছোট ভাইদু’টা একেবারে গায়ের উপর পড়ে ঘুমাচ্ছে।আশ্চর্য এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন ওরা? দু’পাশ থেকে কেমন জাপটে ধরে আছে দু’জনে।নড়াচড়ার কোন জো নেই।দিনদিন ওরা বড় হচ্ছে না ছোট হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারেনা ও। বাড়ীতে এলে প্রায় প্রতি রাতেই বড় ভাইয়ার সাথে ঘুমানোর জন্য লড়াই বাঁধে ওদের।ইমেডিয়েট ছোট ভাইটার নাম আহমাদ পরের জনের নাম মুহাম্মাদ। আহমাদ এবার কাফিয়া জামাতে পড়ে।আর মুহাম্মাদ হেফজ পড়ছে।২২পারা হয়েছে কেবল। ও একটু দুষ্ট প্রকৃতির। পড়ালেখা ছাড়া আর সব কাজ ওর জন্য সহজ।ব্রেন ভালো বলে আম্মা এখনো জোর দিয়ে যাচ্ছেন।

সর্ব শক্তি দিয়ে হুজাইফা ওদেরকে গায়ের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। পেরে উঠছে না।কোন অশুরের শক্তি ভর করেছে ওদের উপর? নাহ কিছুতেই পারা গেলো না।এবার নিজে উঠে বসার চেষ্টা করলো।কিন্তু একি ? সমস্ত শরীর ব্যথায় কেমন জমে আছে। কি হয়েছে ওর ? জ্বর টর বাধেনি তো ! এই অসময়ে জ্বর বাধার কারণ কি ? সামনেই পরীক্ষা। এখন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কীভাবে হবে। দরসে বসতে পারবে বলে তো মনে হচ্ছে না। তাহলে হবে কি করে। মেশকাতে পড়ে ও। ক্লাসে যেই পরিমাণ তাকরির হয়, পরে এসব আয়ত্ব করতে খুব ধকল যাবে।এসব ভেবে মনে মনে ও দোয়া করতে লাগলো আল্লাহ মাফ করো, সিহহাতে তাইয়্যিবাহ দান করো আমায়।

ঠিক এসময় পাশের কোথাও থেকে কোঁকানোর মৃদু আওয়াজ ভেসে এলো ওর কানে।এত রাতে আবার কে কোকাচ্ছে। কান খাড়া করে ভালমত শুনার চেষ্টা করছে হুজাইফা। হ্যাঁ তাইতো ! কেউ একজন ক্ষীণ কণ্ঠে আল্লাহ আল্লাহ বলে কোঁকাচ্ছে। কিন্তু এটা তো মায়ের কণ্ঠ নয়। আর বাবা তো ছেড়ে গেছেন সেই কবেই। বাড়ীতে শুধু আমরা তিন ভাই আর পাশের রুমে মায়ের থাকার কথা। তাহলে কোঁকাচ্ছেটা কে ???আর ভাবতে পারছেনা হুজাইফা। মাথার ভেতর যেন কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমি কী অন্য কোথাও।? কোথায় আমি ?প্রাণপণে চেষ্টা করছে কিছু মনে করার।কিন্তু কিছুতেই আজ মেধাটা ওর সঙ্গ দিচ্ছেনা। এরই মধ্যে অনেক কষ্টে বাম হাতটা বের করে হাতড়াতে লাগলো চারপাশটা। কেমন ভেজা আর স্যাঁতসেঁতে লাগছে জায়গাটা।এবার সত্যি ভাবনার চাদরে ছেদ পড়লো ওর। ধীরে ধীরে মনে পড়ছে সব। বুঝতে পারছে আসলে ও বাড়ীতে বা মাদ্রাসায় নয়, পড়ে আছে কোন এক অন্ধকার নিছিদ্র কুঠুরিতে। যার অবস্থান সম্পর্কে ওর কোন ধারনাই নেই।

শেষ পর্যন্ত এতটাই নির্দয় আচরণ করা হল আমাদের সাথে ? কি অপরাধ ছিল আমাদের? আমরা তো কখনো মসনদ দাবী করিনি! রাজনৈতিক কোন অঙ্গ সংগঠন ও নই আমরা ! শুধুমাত্র একটা মেওয়াক আর জায়নামাজ নিয়ে আহমাদ শফি সাহেবের আহবানে সাড়া দিতে ইসলামী সংবিধান বাস্তবায়ন করার জন্য সুশৃঙ্খলভাবে ঢাকার মাটিতে পা রেখেছিলাম। তাও কত বাধা বিপত্তি মাড়িয়ে ঢাকা আসতে হয়েছিলো আমাদের। বাস ট্রেন লঞ্চ সহ ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো সরকার।যার কারণে ৪ই মে পায়ে হেঁটেই সুদুর চাঁদপুর থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম আমরা ক’জন।সাথে ছোট ভাই দু’জন ও ছিল আমার।আহমাদ কিছুটা বুঝের হলেও মুহাম্মাদ তো একেবারেই ছোট। কিন্তু ওর আগ্রহটা মনে হয় যেন আমাদের চাইতেও বেশী।কোনভাবেই ওকে বোঝানো গেলনা যে এখন ও ছোট। কি আর করা ! অবশেষে ওর জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলাম আমরা।সব প্রস্তুতি শেষ করে তিন ভাই মিলে মায়ের কাছে বিদায় নিতে গেলাম।কি বলে বিদায় নিবো, কোন ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।মা’ই বললেন- যাও, ইসলামের বিজয় নিয়েই তবে বাড়ী ফিরো, আল্লাহ তোমাদের সহায় হবেন।আর হ্যাঁ তিনভাই একসাথেই থেকো,মুহাম্মাদের দিকে একটু আলাদা নজর দিও বাবা,জানোই তো ছেলেটা খুব চঞ্চল।একথা বলে মা মুহাম্মাদের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ ছুটে চলে এলো আমার কাছে, পাছে না আবার ওকে যেতে না দেন এ ভয়ে।আচ্ছা ! আর দেরী করো না।আল্লাহর হাওলা করে বেরিয়ে পড়ো এবার। শেষ কথাগুলো বলতে বলতে কেমন যেন মায়ের গলাটা ধরে এলো। বাড়ীর আঙ্গিনা পেরুবার সময় আহমাদ বারবার পিছন ফিরে দেখছিল। শত কষ্টে চেপে রাখা মায়ের অশ্রুটা মনে হয় ধরা পড়ে গেছে আহমাদের চোখেও।কিন্তু মুহাম্মাদের এসব ভাবার সময় কোথায়, ও তো আছে মহা আনন্দে।

_______________চলবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

218181
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৫
ফেরারী মন লিখেছেন : মুসলমান আসলেই সিংহের জাতি।যার রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে আছে ওমরের অকৃতিম সাহসিকতা, আবু বকরের মহানুভবতা। আলীর বুদ্ধিমত্তা, আর ওসমানের উদারতা।অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাঁপে না যাদের হৃদয়। তাগুতের মুকাবেলায় যারা সদাই অকুতোভয়।

এরকমই তো চাই। কিন্তু মুসলমান জাতির কি সেইরকম তেজদীপ্ত সাহস কি আর আছে?
০৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৮
166263
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আছে , কিন্তু ঘুমিয়ে আছে। এখন প্রয়োজন একজন দক্ষ রাহবারের।
218185
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
আহ জীবন লিখেছেন : আমরা বোধহয় আর পারবনা। হারাম মিশে আছে রক্তের প্রতিটা কনায় কনায়।
০৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
166264
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের তৌফিক ডান করুন।
218210
০৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
গ্রাম থেকে লিখেছেন : আমাদের পথচলা শুরু হল সবে
বিজয়ের জন্য এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে
০৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২০
166266
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ ! বিজয় আমাদেরই হবে।
218224
০৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:১৬
166293
নিভৃত চারিণী লিখেছেন :
আপনাকেও ধন্যবাদ!
218240
০৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:৩০
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : হেফাজত সে সময় সবচেয়ে বেশী যে ভুলটা করেছিল তা হলো বিশেষ একটি মহলের সাথে আঁতাত। যদি নিরপেক্ষ থেকে তারা তাদের কর্মসূচী দিয়ে যেতো তাহলে তাদের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
০৭ মে ২০১৪ সকাল ০৮:১৭
166419
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : Good Luck Good Luckবিশেষ কিছু মুনাফিকের বিশেষ দলের সাথে আতাত। Good Luck Good Luck
আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইনা কিন্তু বললাম।
হেফাজতের কিছু মুনাফিকের জন্য আজকে এই পরিনাম।
০৭ মে ২০১৪ সকাল ১১:০০
166428
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আমি এসন জানি না , এসন বুঝি না। আমি শুধু চাই জালিমের বিচার। এবা সে যে-ই হোক। ভিতরের লোক আর বাহিরের।

ধন্যবাদ আপনাকে।
218286
০৬ মে ২০১৪ রাত ১০:০৯
সালমা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ ।কবে হবে জানিনা,তবে ইনশাআল্লাহ,বিজয় আমাদেরই হবে। |
০৭ মে ২০১৪ সকাল ১১:০১
166429
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : সেই অপেক্ষায় আমরা ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
218346
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৪:৩৪
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : কোথায় গেলে বলগো সখি
জুড়াবে আমার প্রাণ,
ঘুমরে কেদে থেমে যাই কেবলী
ভেবে হই হয়রান।
বারুদ গুলি গোলাহীন হাতে
এসেছিল সেদিন যারা
রক্তের বন্যায় ধূয়ে মুচে নিল
মাফ চেয়েও বাচেনি তারা।
কোরানের পাখিকে থেমে দিল রাতে
জাগিবেনা সে প্রাণ আর,
নারকীয় তান্ডবে জেগেছিল নাগীনি
রাজপথ হলো কারবালার।
জুটেনি ভাগ্যো জানাযা তাদের
হল নিয়মহীন দাফন.
চোখের জলে মিলেনি বিদায়
ছিলনা কোন আপন।
ডাষ্টবিন হয়ে মিশে গেল যারা
শুধু কোরআন ছিল বুকে,
আর ভেদিয়া কাদে ফেরেশতা
নীরবতা উধ্বলোকে।
হেফাজন নয় প্রভুর বিধান
কবরস্থ করল যারা
বিবেকহীন সব নিরব দর্শক তাই
মুসলিম পথহারা।
০৭ মে ২০১৪ সকাল ১১:০৩
166430
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : বিবেকহীন সব নিরব দর্শক তাই মুসলিম পথহারা।
Happy>- Happy>- Happy>-

অশেষ ধন্যবাদ এই সুন্দর কবিতাটার জন্য।
218347
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৪:৩৬
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আরশ ভেদিয়া কাদে ফেরেশতা
নীরবতা উধ্বলোকে।
218384
০৭ মে ২০১৪ সকাল ০৯:২৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : কি বলব? বলার ভাষা হারিয়ে গিয়েছে ৫ই মে।
০৭ মে ২০১৪ সকাল ১১:০৫
166431
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : হ্যাঁ আপু! নিষ্পাপ নিরপরাধ মানুষগুলার জন্য এখনো অন্তর কাঁদে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File