জীবনের প্রথম নদীপথ সফর।
লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১০:০৪ দুপুর
নদীপথে সফরের ইচ্ছা অনেকদিনের। কিন্তু ব্যাটে বলে এক হয়না।কয়েকবার হয় হয় করেও শেষ পর্যন্ত আর হলো না। তাই এবারের সুযোগটা কিছুতেই আর হাতছাড়া করলাম না। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমাদের লঞ্চ।জ্যামে পড়ে খানিক দেরী হলেও লঞ্চ মিস হয়নি। ঘাটে গিয়ে কিছুটা আশ্চর্যই ই হলাম। কোন ঈদ-উৎসব নেই তবুও এত ভিড় ! আর ঈদের মৌসুমে কি অবস্থা হয় আল্লাহ মালুম। জীবনের প্রথম লঞ্চে চড়া। অনেকটা ভয় কাজ করছিলো ভেতরে। যদি ঝড় টড় ওঠে।তাছাড়া সাতারও জানিনা। পরক্ষনেই ভাবলাম তকদীরে যা আছে তা তো আর খণ্ডানো যাবেনা। শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করে সফরের আনন্দটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। যাক লঞ্চে উঠে প্রথমে দোয়া পড়ে নিলাম। দোতলায় আমাদের কেবিন।কেবিনের ঢোকার পর মনে হয়েছে বুঝি ঘরেই বসে আছি। কোন ঘ্রাণ গন্ধ নেই(বাসে যেমনটা থাকে),একেবারেই স্বাভাবিক পরিবেশ। ওঠার পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যেই লঞ্চ ছেড়ে দিলো। প্রথমেই এক ধাক্কা, পুরো লঞ্চ কেঁপে উঠলো। কিঞ্চিত ভয়াতুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে সে বলল – “পাশের লঞ্চের সাথে বাড়ি খেয়েছে। লঞ্চ ঘাটে ভিড়াবার সময় বা ছেড়ে যাবার সময় এটা হয়েই থাকে”
শুরু হল আমাদের যাত্রা। কিছুক্ষণ পর কেবিনের সামনের চেয়ারটায় এসে বসলাম। খোলা আকাশ, ময়লা পানি, চারদিকে অনেক লঞ্চ, ছোট-বড় অনেক নৌকা। পোস্তগোলা পার হওয়ার পর টলটলে পানি, চারদিকে সবুজ গাছগাছালি।যদিও রাতের আঁধারে সবুজটাকে সবুজ মনে হচ্ছিলো না।কেমন শেওলা শেওলা ধূসর একটা রং। আর একটু সামনে গেলেই মুন্সিগঞ্জ ঘাট। তাকালেই দেখা যায় বালুর ট্রলার, জেলেদের মাছ ধরার নৌকা, ছোট-বড় নৌযান। সদরঘাট থেকে চাঁদপুর, মতলব কিংবা মুন্সিগঞ্জ এলাকার চর ।আঁকা বাঁকা নদী, নদীর প্রতিটা বাঁকে লাল বাতির সংকেত দেওয়া আছে-যেন লঞ্চ এর বাঁক কাটতে অসুবিধা না হয়। লঞ্চের বাতির আলোটা পানিতে পড়ে দেখার মতো একটা দৃশ্য হয়েছে।
রাতের নয়নাভিরাম দৃশ্যগুলো বেশ ভালোই উপভোগ করছিলাম। রাত ন’টার মধ্যে কিছুটা নীরব হয়ে এলো ভেতরের পরিবেশটা। তবে পুরোপুরি নীরব হতে রাত এগারোটার পর হয়ে গেলো। আমি তখনো সেই চেয়ারটাতেই বসে আছি।কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় কলরবের গজল শুনছি আর নদীর বয়ে চলা দেখছি। তেমন একটা ঢেউ ছিল না বললেই চলে। মানুষটা বলল বেশী দেরী করো না। কিছুক্ষণ গিয়ে ঘুমিয়ে নিও।নয়তো শরীর খারাপ করবে।মুখে কিছু বললাম না। ইশারায় ঘাড় কাত করে একটু মৌন সম্মতি জানালাম আর মনে মনে ভাবলাম, কত সখের নদী সফর আমার ! ঘুমালে তো সব আনন্দ মাঠেই মারা পড়বে। কিছুতেই ঘুমানো চলবে না আজ। এভাবেই বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। ধীরে ধীরে কুয়াশায় সব সাদা হয়ে যাচ্ছিলো। ভাবলাম ঢাকায় এখন এত গরম আর এখানে কুয়াশা। কতইবা আর দূরত্ব হবে।আল্লাহর নিপুণ সৃষ্টি সবই। বড়ই আশ্চর্য লাগে। তিনি সব পারেন। যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
মাঝে মাঝে উঠে পায়চারি করছিলাম যেন ঘুম চলে না আসে। নদীর এমন হিম শীতল ঠাণ্ডা বাতাসে ঘুম না এসে যাবে কোথায়। আনুমানিক রাত দুইটা কি আড়াইটার দিকে গেলাম লঞ্চের ছাদে। একাকী যেতে একটু ভয় ভয় করছিলো তাই সাথে নিয়ে গেলাম ওদের দুইজনকে। ওহহো ! সফরের মূল কারণটা তো বলাই হয়নি। একটা বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলাম।পাতারহাট মেহেন্দিগঞ্জ জায়গাটার নাম।সাথে ছিল কনের ছোট দুই বোন।ওদেরকে নিয়েই ছাদে গেলাম। সাথে নিয়ে গেলাম একটা কম্বল, যেটা আমাদের গায়ে দেয়ার জন্য কেবিনে দেয়া হয়েছিলো। ছাদের পেছন দিকটায় মানুষ আর মানুষ। সবাই তখন পরম আরামে ঘুমে বিভোর।আর সামনের পাশটা একেবারে খালি। দুই একজন ঘুরাঘুরি করছে। শুনেছি কয়েকজন মিলে পালা করে লঞ্চ চালায়। বোধহয় এরা ওদের কেউই হবে।কম্বলটা বিছিয়ে বসলাম আমরা তিনজন। রেলিংয়ের বাহিরে পা ঝুলিয়ে বসেছিলাম। ঠাণ্ডায় রীতিমত কাঁপছি তখন।তবুও বসে আছি। ওরা গজল গেয়ে শোনালো।গলা ছেড়ে গাইতে পারে নি। কারণ নিস্তব্ধ রাতে ওদের আওয়াজটা অনেকদূর পর্যন্ত চলে যাবে। যেটা আমাদের জন্য দৃষ্টিকটু হতো। কিছুক্ষণ এমন গল্পসল্প করে কম্বলটা উপর নিচ জড়াজড়ি করে ওরা দু’জন সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।
আর আমি ! সাথে করে একটা ডায়রি নিয়ে গেছিলাম। চাঁদের আলোতে ডায়রিটা খুলে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু চাঁদের এই স্বল্প আলোটা আমার সহায় হল না। একটু পরেই চোখ ব্যাথা করতে আরম্ভ করলো। তাই লেখার ইচ্ছাটা আপাতত দমন করতে হল। কি করবো কি করবো ভাবছি। হঠাত মোবাইলটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে – কোথায় তুমি ? সারা লঞ্চ খুঁজেও পাচ্ছিনা তোমাকে। বললাম ছাদে। বলল – ভালোই তো সাহস হয়েছে দেখা যায়।আমাকে একটু বলে গেলেই পারতে। এত হয়রান হতাম না তাহলে। বললাম – চেয়েছিলাম বলে যাবো, কিন্তু এত সুন্দর ঘুমটা ভাঙ্গাতে ইচ্ছা হল না। আচ্ছা ! তাড়াতাড়ি চলে এসো।ছাদে খুব ঠাণ্ডা।
মোবাইলটা রাখতে যাবো তখন মনে হল আরে , মোবাইলের আলো জ্বেলে কেন আমি লিখছি না। যথেষ্ট আলো আছে এতে। যেই ভাবা সেই কাজ। লেখার জন্য ডায়রির কয়েকটা পাতা উল্টাতেই চোখে পড়লো এই কবিতাটার উপর। কবে কখন লিখেছি দিন তারিখ দেয়া নাই। মনে হল এই সময়ের উপযুক্ত কবিতাই এটি । লেখকের নামটাও লেখা নাই এতে। তবে আমার মনে হয়েছে রবি ঠাকুরের ধাঁচে লেখা কবিতাটা।
নদীপথে
গগন ঢাকা ঘন মেঘে ,
পবন বহে খর বেগে ।
অশনি ঝনঝন
ধ্বনিছে ঘন ঘন ,
নদীতে ঢেউ উঠে জেগে ।
পবন বহে খর বেগে ।
তীরেতে তরুরাজি দোলে
আকুল মর্মর-রোলে ।
চিকুর চিকিমিকে
চকিয়া দিকে দিকে
তিমির চিরি যায় চলে ।
তীরেতে তরুরাজি দোলে ।
ঝরিছে বাদলের ধারা
বিরাম-বিশ্রামহারা ।
বারেক থেমে আসে ,
দ্বিগুণ উচ্ছ্বাসে
আবার পাগলের পারা
ঝরিছে বাদলের ধারা ।
মেঘেতে পথরেখা লীন ,
প্রহর তাই গতিহীন ।
গগন-পানে চাই ,
জানিতে নাহি পাই
গেছে কি নাহি গেছে দিন ;
প্রহর তাই গতিহীন ।
বার কয়েক পড়লাম কবিতাটা। খুব ভালো লাগলো।আরও কয়েকটা কবিতা লেখা ছিল। পড়লাম সব। কেন যেন এবার লেখার ইচ্ছাটা দমে গেলো।মনে হচ্ছিলো একটা কবিতার বই নিয়ে আসলে ভালো হতো।যা তাড়াহুড়া করে বেরিয়েছি ! সামনে ছিল বলে কোনরকম ডায়রিটা নিয়েছি।বই নেয়ার আর ফুরসত পেলাম কই। কবিতাটা পড়ে কেমন উদাস হয়ে গেলো মনটা। হাজারো ভাবনারা উঁকি দিচ্ছিল মনের আঙ্গিনায়। হঠাৎ চোখ পড়লো আকাশের দিকে। কি আশ্চর্য ! সেই কখন ছাদে এসেছি, আর মাত্র তাকালাম আকাশের দিকে!
এত বিশাল আকাশ। আগে কখনো দেখার ভাগ্য হয়নি। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে বিশাল আকাশ।মনে হচ্ছে চোখের পাতায় মহাবিশ্বটা ধারন করে আছি।নিবিড় রাতের নিস্তব্ধতা। বিমূর্ত রাত যেন বয়ে চলেছে অনন্ত অনাদিকাল ধরে। হাজার তারার মেলা অবিচ্ছিন্ন চাঁদের বিকিরণ।মনের আকাশে স্মৃতিরা করে বিচরণ।কি শান্ত, সৌম্য রূপ! কি স্নিগ্ধতা! এ কোন মুগ্ধতায় পেয়ে বসলো আমাকে।জোনাক জ্বলা অন্ধকারে আকাশ পানে চেয়ে আছি। মোহনীয় বিস্তীর্ণ অন্ধকার। রাতজাগা কয়েকটি পাখি শন শন করে উড়ে গেল। অবাক লাগে কি সুন্দর এ পৃথিবী। কতো শান্ত কতো কোমল।
ধীরে ধীরে চারিদিকটা ফর্সা হতে লাগলো। সকালের নীলিমা রেখা একটুখানি উঁকি দিচ্ছে।পূবদিকটা হালকা হালকা লাল হতে শুরু করলো। এ যেন নির্মল স্নিগ্ধতার আবেশ জড়ানো একটি প্রভাতের আগমনি বার্তা।দেখলাম নদীর পেট চিরে সূর্য উদয় হওয়া। সূর্যের কিরণটা এসে নদীর পানিতে পড়ে সে এক নজর কাড়া দৃশ্যের অবতারণা।আশ্চর্য সুন্দর একটি দৃশ্য। এ দৃশ্যটা না দেখলে হয়তো জীবনে অনেক বড় কিছুই মিস করে যেতাম।অবচেতন মনে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো “আলহামদুলিল্লা” আল্লাহর কি অপরূপ সৃষ্টি !
এবার দিনের আলোতে নদীর চারিধারের দৃশ্যগুলো স্পষ্ট হয়ে এলো।নদীর বাঁকে বাঁকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য.সবুজ আর সবুজ।
কি অপরূপ, কি মহনীয় সে দৃশ্য। অনিমেষ আমি চেয়ে থাকি সেদিকে। প্রকাশের ভাষা নেই আমার।গন্তব্য যত কাছে আসছিলো ঘাস লতাপাতার গন্ধটাও বাতাসের ডানায় ভর করে আরও স্পষ্টভাবে নাকে এসে লাগছিলো। সে এক অভাবনীয় মাতাল করা গন্ধ। আমি বারবার মোহিত হই সে গন্ধে।
ঘাটে এসে থামল আমাদের লঞ্চ । আমাদের এগিয়ে নেয়ার জন্য লোক আসলো ঐ বাড়ী থেকে। সকাল ৮টা ৪৫মিঃ গিয়ে পৌঁছাই সেখানে। হালকা নাস্তা করে দিলাম একটা ঘুম।ঘুম থেকে উঠে কনের হাতে মেহেদী পরিয়ে দেয়া আর টুকিটাকি গল্প। গ্রাম দেশের বিয়ে সাধারণত মাগরিবের আগে আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। এখানেও তার ব্যাতিক্রম ঘটে নি।কনে বিদায়ের মুহূর্তটা আসলেই কষ্টের।কান্নার রোল পড়ে গেলো এখানেও। কখন যেন আমার চোখের কোণটাও জলে ভিজে উঠলো। কেউ দেখে ফেলার আগেই মুছে ফেললাম সে জল।
সবচেয়ে বেশী খারাপ লেগেছে সন্ধ্যার পর। কনের পিচ্ছি একটা বোন আছে সাওদা। আড়াই তিন হবে বয়স।মা শুধু ওকে জন্ম দিয়েছে এ পর্যন্তই। তারপর থেকে ওর যত্ন আত্তি করা থেকে খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো সবই করতো ওর বড় বোনটা। যার আজ বিয়ে হয়ে গেলো।তাই স্বভাবতই সাওদা ওর বড় বোনের পাগল।কেউ কিছু করলে বা বোকলে দৌড়ে গিয়ে নালিশ করতো “বপ্পুর” (বড়আপু) কাছে। বিদায়ের সময় ও ঘুমিয়ে ছিল। তাই দেখতে পায়নি ওর বোন আর নেই। ঘুম থেকে জেগেই বপ্পু বপ্পু বলে চিৎকার । কারো কোলেই থাকবেনা। সে কি কান্না। আমি কাছে গিয়ে সাওদা বলে ডাক দিতেই এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার কোলে। কারেন্ট ছিল না বলে ও আমার চেহারা দেখতে পায়নি। আর আমার কণ্ঠটা ওর কাছে ওর বপ্পুর মত লেগেছে বোধহয়। শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে আছে আমার গলা। অন্যান্যরা বলছিল এবারের মত না হয় বাঁচা গেলো পরে কি হবে ? বললাম আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন। এছাড়া আর কিইবা বলার ছিল আমার।
এ রাতটাও কেটে গেলো আধো ঘুম আধো জাগরণে। কারেন্ট আর মশার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে গেছিলাম। সেই সাথে গরম তো আছেই। পরের দিন সকালে ফজর পড়েই বেরিয়ে গেলাম গ্রাম দেখতে। এত সুন্দর গ্রাম এত সুন্দর দৃশ্য, দেখে মন ভরছিল না। নিরিবিলি গ্রামীণ মাটির রাস্তা। মাঠের আইল বেয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পথ। দুপাশে ডাল, কালোজিরা, সরিষা ইত্যাদির ক্ষেত। বিশাল বিশাল পানের বরজ। কি সুন্দর সান বাঁধানো পুকুর ঘাট। হাঁটু অব্দি পা ভিজিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ।
ইচ্ছা করছিলো পুরো গ্রামটাকেই ক্যামেরার ফ্রেমে বন্ধি করে আনি। কিন্তু তা তো আর সম্ভব না। তবে মনের ফ্রেমে ঠিকই বন্ধি করে রেখেছি। তবুও শ’খানেক ছবি তুলেছি। দেখতে দেখতে সাড়ে ১০টা বেজে গেলো। ওদিক থেকে বারবার ফোন করছিলো নাস্তা খেতে যাওয়ার জন্য। চলে গেলাম বাসায়। নাস্তা খেয়ে আবারো একটা ঘুম।এক ঘুমে দুপুর দুইটা। গোসল খাওয়া দাওয়া, যোহর পড়ে রওয়ানা হলাম ঢাকা অভিমুখে। ঘাটে বসে ছিলাম প্রায় চার ঘণ্টা। বহু প্রতিক্ষার পর লঞ্চ আসলো। এবারের লঞ্চটা আরও বেশী হাইফাই। খুব সুন্দর এবং বড়। সেবারের তুলনায় কিছুটা আগেই সব নীরব হয়ে গেলো।
কেবিনের সামনে পাতা চেয়ারটায় বসে রাতটা কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা হল। পানির দিকে তাকিয়ে আছি একমনে। হঠাৎ দেখি পানিতে কিছু কিছু জায়গায় লাল হয়ে আছে।কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। প্রথমে অল্প ছিল পরে দেখি যতদূর চোখ যায় সব লাল হয়ে আছে। ভয়ে আঁতকে উঠলাম। মনে হচ্ছে রক্তের সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি। এটা তো গল্প কাহিনীতে পড়েছি। কিন্তু বাস্তবে কি করে সম্ভব। আসলেই আমি ভুল দেখছি না তো ! ভালো করে পরখ করলাম। না ঠিকই তো দেখছি। রক্তটা কিছুক্ষণ পুরনো হলে যেমন খয়েরি খয়েরি হয়ে যায় ঠিক তেমন এর রঙটাও। আতঙ্কে কলিজা শুকিয়ে আসছে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালাম। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবো সেই সুযোগও নেই। আমাদের সবাই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এর রহস্য না জানলেও আমার চলবে না। একটু পেছনে তাকাতেই দেখলাম একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। সাহস করে কাছে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম – চাচা ! পানিটা এমন লাল হয়ে আছে কেন ? গম্ভীর গলায় তিনি উত্তর দিলেন – এগুলো লঞ্চ ষ্টীমারের তেল। ভাবলাম হতেও পারে। কিন্তু সব এখানে এসে কেন জমা হবি? মেলাতে পারছিলাম না। তবুও মেনে নিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে গেছে পানি। কিন্তু সেখানে আর বসে থাকার সাহস হল না আমার। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।একেবারে সদরঘাট এসেই ঘুম ভাঙল আমার। বোধহয় বুড়িগঙ্গার পচা গন্ধেই ঘুমটা ভেঙ্গেছিল।তারপর আবার সেই জ্যাম -যনযাটের যান্ত্রিক ঢাকা শহর।
অবশেষে আমার একটা কথাই মনে হল- বাংলার নদীপথের দৃশ্য যেকোনো দেশেকে হারিয়ে দিবে সৌন্দর্যে।
বিষয়: বিবিধ
২৬৩৩ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কবিতাটিও ভীষণ ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আপনার জন্যও অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইলো।
বুঝেনা হ্যারি বুঝেনা, ভোর ৪টা ৪৫মিঃ এ "সূর্যের কিরণ" কেমনে দেখলেনগো? মনেহয় ওটা "সূর্যের পাশে হারিকেন এর কিরণ" ছিলো
ধন্যবাদ আপু।
মনে বসন্ত আসলে যা হয়। নদীপথে যাত্রার অভিজ্ততাটা দারুণ। আমিও নারায়নগঞ্জ হয়ে চাদপুর, বেলতলী, চেঙ্গারচর, কালীর বাজার সহ অনেক নদীপথ ঘুরেছি। তখন ভ্রমন কাহীনি লিখার গেঞ্জাম মাথায় ছিলনা। ধন্যবাদ।
বলতে পারেন অনেকটা তেমনি।ফার্ম না হলেও ঘর বন্ধি ছিলাম।
হ্যারির জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন