বিশ্বাস ও ভালোবাসা।
লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ১৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:২৪:১৬ সন্ধ্যা
বিশ্বাস আর ভালোবাসার সমন্বয়ে মানুষের জীবন। এ দু’টির মধ্য হতে একটিতেও যদি ঘুণে ধরে তাহলে সেটা কোন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হতে পারে না।বিশ্বাসের কয়েকটা স্তর রয়েছে। (এক) নিজের প্রতি বিশ্বাস। (দুই) অপরের প্রতি বিশ্বাস।
হিসেব করলে দেখা যায় পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী বস্তুটার নাম হচ্ছে “বিশ্বাস” এই বস্তুতা না হলে পৃথিবীর সব কিছুই যেন মূল্যহীন। জীবনের প্রথম চোখটা মেলে যখন মা’কে দেখেছিলাম তখন জানতাম না তিনিই আমার মা। মহান রাব্বুল আলামীন ছোট্ট মনটার ভেতর এমন একটা বিশ্বাসের অঙ্কুর একে দিলেন যে অনায়েসেই মেনে নিলাম তিনিই আমার মা। তাইতো পরম নির্ভরতায় মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকতাম। মায়ের কোলটা ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিরাপদ স্থান। কেমন যেন বুঝতে পারতাম, মা নিজে কষ্ট করবেন কিন্তু আমার শরীরে একটা ফুলের আঁচড়ও কাটতে দিবেন না। কারণ ফুলের মধ্যেও যে জীবাণু থাকতে পারে। প্রথম যেদিন বাবাকে দেখেছিলাম, কেমন ভয়াতুর , প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে মায়ের দিকে চেয়েছিলাম। মা মুচকি হেসে আমার প্রশ্নের আধা জবাব দিয়ে দিলেন।কারণ মায়ের হাসি দেখে ততক্ষনে ভয়টা কেটে গেছিলো আমার। আমিও ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হেসে ফেললাম। এবার মা পরিচয় করিয়ে দিলেন – ইনি তোমার বাবা। এই মানুষটাও তোমার মায়ের সাথে সাথে পাক্কা নয় মাস দশদিন তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনেছন।কতশত স্বপ্ন বুনেছেন তোমাকে নিয়ে।এবার বাবার হাসিটাকেও পরিচিত মনে হল আমার কাছে। দুই তিন মাস পর যখন পিটপিট করে ঘুরে ঘুরে এদিক সেদিক তাকাতে শিখলাম, তখন ছোট্ট মনটায় আরেকটা বিশ্বাসের রেখা অঙ্কুরিত হল। সেটা হল এই আমার পৃথিবী। এই বিছানা , এই চাদর । ঠিক উপরের দিকটায় টুকটুকে লাল একটা কাগজেরফুল। তাইতো ঘুম থেকে জেগেই এখন চিৎকার করে কাঁদি না। মাথার উপর ঝুলে থাকা টকটকে লাল ফুলটার দিকে চেয়ে থাকি, আর হাত পা ছুড়াছুড়ি করে আপন মনে খেলি।কিন্তু খিদে পেলে ঠিকই ওয়া ওয়া করে কেঁদে আমার খিদার জানান দেই।জানতাম না কাঁদলে মা খাবার দিবে না। এই হল আমার নিজের উপর বিশ্বাসের প্রাথমিক স্তর। সেই থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে আমার বেড়ে ওঠা, হাঁটতে শেখা।এবং এই পর্যন্ত এসে পৌছা। নয়তো প্রথম কদমে যখন ধপাস করে পড়ে গেছিলাম, তখন আর উঠে দাঁড়ানো হতো না যদি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস না থাকতো। এসবই হল বিশ্বাস আর ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো।
বিশ্বাস বলতে সাধারণতঃ পারিপার্শ্বিক বস্তুসমূহ ও জগৎ সম্পর্কে ব্যক্তির স্থায়ী প্রত্যক্ষণকৃত ধারণা (উপলব্ধি) বা জ্ঞান এবং তার নিশ্চয়তার উপর আস্থা বোঝানো হয়।
কোন বিষয় সত্য না মিথ্যা তা বিচার করে - সত্য মনে করলে তা "বিশ্বাস করা" হল, মিথ্যা মনে হলে অবিশ্বাস করা হল আর মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশী মনে হলে সন্দেহ করা হল (সন্দেহ অর্থাৎ বিশ্বাসের অভাব)। বিশ্বাস মানে হতে পারে আস্থা ভরসা বা বিশ্বাসের দৃঢ়তা (বিশ্বাস যত বেশী সন্দেহ তত কম) যা খুব বেশী হলে তাকে বলা যায় ভক্তি বা অন্ধবিশ্বাস। আবার বিশ্বাস মানে হতে পারে আশা বা আশ্বাস বা বিশ্বাস করার ইচ্ছা ।
বিশ্বাস হতে পারে কোন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ অনুভুতির সচেতন অনুধাবন এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যাচাই করার পর এই বোধের নিশ্চয়তা সম্বন্ধে প্রত্যয়
বিশ্বাস হতে পারে একজনের ব্যক্তিগত কষ্ট কল্পনা। যেমন রোগীরা অনেক কিছু দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেখালে সেই বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়ে যেতে থাকে। এই ধরণের ভিত্তিহীন বা যুক্তির অতীত বদ্ধমূল অন্ধবিশ্বাসকে বলে ।
আবার বিশ্বাস হতে পারে কোন জনতার সম্মিলিত জনমত। যেমন নানা ধরণের ধর্মবিশ্বাস।
সর্বোপরি , বিশ্বাস মানুষের জীবনের মূল মন্ত্র হওয়া উচিত …….. কারো প্রতি বিশ্বস্ত হও অথবা কারো বিশ্বাস আদায় করা এবং বিশ্বাসের যথাযথ মূল্যায়নই সমগ্রবিশ্বকে তথা প্রত্যেক ব্যক্তিকে আলাদা আলাদা ভাবে শান্তি দিতে পারে। বিশ্বাস কোন খোলা বাজারের পণ্য নয়…. এটা বিক্রয় হয় না এটা অর্জন করতে হয়। আর যখন বিশ্বাস বিক্রয় হয় তখন সেটা আর বিশ্বাস থাকে না।
আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যেন নিজেকে সর্বোচ্চ শিখরে উঠিয়ে নিতে পারে ঠিক তেমনই নিজের ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস মানুষকে স্বর্গের সুখ দিতে পারে। ভালবাসা বাঁচে বিশ্বাসে…. সেখানে যদি একবার অবিশ্বাসের বিষ ঢোকে সেখানে আর ভালবাসা থাকতে পারে না… সেখানে এককী রাজত্ব করে একটি ভালবাসার মৃতকঙ্কাল, যার শরীরে অবিশ্বাসের জ্বালায় জ্বলতে থাকে এক যন্ত্রণা।
সুতরাং স্বাভাবিক সাবলীল সুন্দর জীবন জাপনের জন্য চাই নির্মল বিশ্বাস ও স্বচ্ছ ভালোবাসা।
আজকের লেখাটা উৎসর্গ করলাম সেই মানুষটাকে যার হাত ধরে পরম বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি যুগের পর যুগ।এ যেন স্বর্গ প্রেমের হাতছানি যেখানে ক্লান্তিরা এসে বাসা বাঁধে না। চির অটুট থাকুক এ বন্ধন, এই কামনায়.।.।.।.।.।
বিষয়: বিবিধ
১৯০১ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পৃথিবির সবেচেয়ে বেশি পাওয়ারফূল শব্দ। আচ্ছা এগুলো ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না কিন্তু মানুষকে গিলিয়ে খেয়েফেলতে পারে অদ্ভুত অদ্ভুদ।
কবে যে এসবের দেখা পাবো
লেখা উৎসর্গকৃত সেই মানুষটা'র জন্য আর আপ্নার জন্য
থ্যাকংইউ পুষ্পমণি
হান্ড্রেডে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সহমত
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আমার মত,মতে পৃথিবীতে সেই তত বিশ্বাসী যে যত বেশী সেক্রিফাইস করতে পারে। একজন বিশ্বাসী মানুষ একজন ভাল মানুষ। একজন ভাল মানুষ বা ভাল স্ত্রী বা ভাল স্বামী মানেই হাজারো যাতনা সয়ে থাকা প্রতিবাদহীন একজন বাকহীন মানুষ।
ধন্যবাদ। আপনার ষাথে নিজের মতামতটা শেয়ার করে একটু সেয়ানাগীরি করলাম।
অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।
ভীষণ ভীষণ ভালো লেগেছে লেখাটি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন