আমার বাবা।
লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৬:২৫:৩৪ সন্ধ্যা
সকাল নয়টার দিকে মা ফোন করে বললেন, তোর বাবা আসছেন আজ তোদের বাসায়। আমি তো মহাখুশি। অনেকদিন পর আজ আবার বাবা আসছেন আমাদের বাসায়। ব্যবসা বানিজ্য ও বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে তেমন একটা আসতে পারেন না আমার কাছে। অথচ আগে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও এসে আমায় দেখে যেতেন বাবা। অবশ্য আর কত! বয়স তো তাঁর আর কম হল না। আমিও আর আগের মতো ছোট্ট খুকিটি নই। আমিও বেশ বড় হয়েছি। মায়ের বাসায় যাওয়ার জন্য এখন আর রাত-বিরাতে পাগলামি করিনা। ফোন করে কান্না-কাটি করিনা।
তো সেই সকাল থেকে অপেক্ষা ......।বাবার পছন্দের কয়েকটা আইটেম করে সেই যে বসে আছি। এখনো তাঁর আসার খবর নেই। অথচ এত সময় লাগবার কথা নয়।একটু দুশ্চিন্তাও হচ্ছে এখন। কলিংবেল বাজলেই ছুটে যাচ্ছি এই বুঝি বাবা এলেন। না এখনো তিনি আসেননি। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম কেবল কাকরাইল মোড়। বললেন আসতে আসতে জুম্মার সময় হয়ে যাবে। নামাযটা পড়েই ঘরে ঢুকবো। বাসায় আসলে জামাত ছুটে যেতে পারে।বললাম আচ্ছা। তবে নামাজ পড়ে কিন্তু দেরী করা চলবে না হুম...... মগবাজার থেকে পুরান ঢাকা। রাস্তায় এত জ্যাম ! ছুটির দিনগুলোতেও ঢাকাবাসী একটু শান্তিতে কোথায় যেতে পারে না। এ জ্যাম যেন জন্ম জন্মান্তরের......।
এদিকে অপেক্ষা করে করে আমি অস্থির।
ধ্যাত ! কতদিন পর আসছেন। বাপবেটি মিলে একটু গল্প করবো তাও বুঝি আর হবে না। কারণ দুপুরে খেয়েই বাবা আবার কোথায় যাবেন। আগে থেকেই কথা দিয়ে রেখেছিলেন। যাই হোক! নামায শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সবাই খাবার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করছি আমরা।এখনো বাবা আসছেন না। আবার কোথায় আটকে গেলেন। এসব বলাবলি করছিলাম। এসময়ই দরজায় বাবার সালাম। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই একরাশ অভিমান নিয়ে বললাম – এমনিতেই দেরী, আবার কোথায় গিয়ে সময় পার করলেন? বললেন তোর জন্য টক বরই আর চিপস খুঁজতে খুঁজতে দেরী হয়ে গেলো। আমারই ভুল হয়েছে। এমনিতেই আজ শুক্রবার, নামাজের পরপরই দোকানপাট খোলা না থাকারই কথা।ওমনি সে বলে উঠলো টক বরই আর চিপস(!) এদু'টোকে বিশেষিত করার দরকার কি ছিল আব্বা ? তাছাড়া ও তো এখন আর ছোট নেই যে চিপস খাবে।
বাবা বললেন ! ও তো মিষ্টি বা ফলফলাদি কিছু খেতে চায় না। তাই তোমার মা এগুলো নিয়ে আসতে বলল।
বাবার কথা শুনে ভেতরটা কেমন মুচড়ে উঠলো। চোখের কোণটাও বোধহয় জলে ভিজে উঠছিল।এত বড় হয়েছি, এখনো বাবা-মায়ের কাছে ছোটোই রয়ে গেছি। সেই ছোটবেলার মতই খেয়াল করেন আমার পছন্দ –অপছন্দের বিষয়গুলো।আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী সন্তানের জন্য স্বীয় বাবা- মায়েরা। কেউ এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসে না পৃথিবীতে একমাত্র বাবা- মা ছাড়া।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৩ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ শেখের পাল আপনাকে। আমার মত নগন্যের লেখায় মন্তব্য করার জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ ।
আমি আসলে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কটা অনেক ভালো বুঝি।
অনেক ধন্যবাদ
এই হল আমাদের বাপ বেটির সম্পর্ক।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন