নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস , ওই পারেতেই স্বর্গসুখ ছিল ,আছে ,থাকবে আমার বিশ্বাস ।।
লিখেছেন লিখেছেন জুম্মি নাহদিয়া ৩০ মে, ২০১৪, ০৭:৫৬:৩০ সন্ধ্যা
আমাদের মেয়েদের ভেতর নিজেকে সবচেয়ে কষ্টে থাকা মানুষ হিসেবে ভাবার এবং তার চাইতেও বেশি প্রমাণ করার এক ধরণের অদ্ভুত প্রবণতা রয়েছে ।
এই ধরেন দেশে থাকা - বিদেশে থাকা ।
যারা দেশে থাকেন তারা বিদেশবাসিনীদের প্রায়ই এমন বলে থাকেন , তোমাদের কাজ আর আমাদের কাজ কি এক? তোমরা কল ঘুরাইলেই গরম পানি বাইর হয় , আর আমাদের চুলা ধরাইতে হয় , পানি গরম করে সেই পানি ঠাণ্ডা হলে তাপ্পর জগে ভরা লাগে হুম !
বিদেশবাসিনীরা টেলিফোনে নাকের পানি চোখের পানি এক করে করে কাঁদে । ´আমাকে সব কিছু নিজের হাতে করতে হয় , সব কিছু! ´(তারপর বিস্তারিত বিবরণ । যেমন , ফ্রিজ খোলা , ফ্রিজ থেকে গুঁতাগুঁতি করে চিংড়ি মাছ বের করা , তারপর সেই চিংড়ি মাছ বেসিনের কাছে গিয়ে কল মোচড় দিয়ে খুলে ধোয়া ইত্যাদি ) ...´আমি কি এগুলি আগে করছি নাকি? মর্জিনারে ,পানি আন ! বললেই ধোয়া গ্লাসে পানি চলে আসত ...´
তারপর ধরেন , বাচ্চা সিজারে না নরমালে।
তুমি তো বিদেশ থাকো তাই বাচ্চা নরমালে হইসে । আমরা থাকলে আমাদেরও হত । আর নরমালে বাচ্চা হওয়া তো সিজারের মত এত কষ্টের না । ঐ হওয়ার সময় ইটটু ব্যাথা ...
নরমালে বাচ্চা না হলে মা হওয়ার কষ্টই তো বোঝা গেলনা । আরামে শুয়ে থাকো , নো পুশিং, নো পেইন । ঘুম থেকে উঠে কোলে বাচ্চা , ব্যস !
ইয়াল্লাহ ! তোমার হাজব্যনড বাচ্চার ন্যাপীও চেইঞ্জ করতে পারে? এই জন্যই তুমি বাচ্চা পালতে পারতেছ , নাইলে পারতা না ।
তোমার মত একটা ছোট্ট ছেমড়ি যদি আমার থাকত! একটা মানুষও ধরার নাই ।আমি তো গোসলও করি ওর বাবা বাসায় আসার পর ।
বিদেশের বাচ্চারা ক্রেজি হয় , একা থাকতে থাকতে।
দেশের বাচ্চারা ক্রেজি হয় , নানান মানুষের নানান আচরণ দেখে।
বিদেশে একা একা বাচ্চা পালা ইজি। না পারলে , পয়সা আছে কেয়ারার রাখো ।
দেশে বাচ্চা সবাই মিলে বাচ্চা পালা ইজি ।অন্তত পক্ষে কাজের মেয়ে রাখা যায় ।
এ গেল খালি দেশ আর বিদেশ । এই যুগ আর সেই যুগ নিয়েও মানুষের দীর্ঘশ্বাসের কোন শেষ নাই ।
তোমাদের তো সুইচ টিপ দিলেই লাইট জলে... আর আমাদের (সাই) ! সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঘরে হারিকেনের বাত্তি জ্বালাতে হইত ...
আপনাদের কারেন্ট কি সুন্দর আইত ও না ...যাইত ও না । চমৎকার একটা স্থিতিশীল পরিবেশ ! আর আমরা ? গাছ নাই পালা নাই , বাতাস নাই ...আকাশ নাই , পানি নাই। বুঝলেন , যায় দিন ভাল , আসে দিন খারাপ ।
তোমাদের বাচ্চারা কত কি খায় ! (আবার সাই) আমাদের গুলার জুটতো খালি বার্লি - সুজি.
আমরা বাচ্চাদের কি খাওয়াবো ? আপনারা তো ফ্রেশ খেয়ে খেয়ে তাগড়া আছেন এখনো , আর আমরা ভেজাল খেয়েই এরকম অল্প বয়সে বুইড়া হইসি ।
আপনি সেই ৮৭/ ৮৮ র ব্যাচ , তাই ভার্সিটিতে চান্স পাইছেন ...এখনকার মত এত কম্পিটিশন হলে পাইতেন না ।
এখন এত কোচিং ফোচিং , আর মানুষও অনেক সচেতন । তাই তোমাদের জন্য চান্স পাওয়াও সহজ । আমাদের সময়ে আমরা হলে গেছি , বেসিক ভাল ছিল...হয়ে গেছে ।
এক যুগের এক অঞ্চলে বসবাসরত মানুষেরও সে কি আক্ষেপ!
তোমার ঘরের জানলা আমার ঘরের চেয়ে বড় , তুমি বাতাসে ঘুমাও আর আমি গরমে মরি ।
তোমার ঘরের জানালাটা একটু কম চার কোণা হওয়াতে রোদ অতবেশি বড় চারকোনা হয়ে ঢোকে না । রোদে ঘুমানো যে কি কষ্টের ...... -----(চেহারায় প্রচণ্ড কষ্টের একটা ভাব এনে )
ভাই থামেন ।
দুঃখের দেখছেন কি ?
বেঁচে থাকতে হলে দুঃখ সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হয় ।
একেক সময় , এক এক পরিস্থিতি তার নিজস্ব স্টাইলে মানুষকে নাজেহাল করতে পছন্দ করে বটে ! কষ্ট হলে শেয়ার করা এক জিনিস কিন্তু এটা কোন প্রতিযোগিতা করার জিনিস না । এই প্রতিযোগিতা তেমন কোন সুফল আনতে পারে বলে আমার মনে হয়না । কারণ , মানুষ খুব অদ্ভুত ভাবে এখানে জিততে চায় ,আর নিজে যে খেয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষের চেয়ে ভাল আছে সেই শোকর করার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে ।
এত ছোট খাটো ব্যপার নিয়ে দিন রাত তামা তামা করার চেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলার অভ্যাস থাকলে পারিবারিক জটিলতা অনেক কমে যেত বলে মনে হয় । আমি আমার অবস্থা কিভাবে উন্নত করতে পারি , কিভাবে একটা ছোট জানালা থেকে টুক্কুশ করে মাথাটা বের করে গোটা আকাশটাই ক্যাপচার করতে পারি (সাথে বাতাস ফ্রি) সেটা নিয়ে ভাবতে শেখাটা অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ ।
আমি ফর্সা কিংবা কালো আমি যা আছি তাই ভাল ।
বিষয়: বিবিধ
২১৮৫ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমার তো বিয়ে হয়েছ বড়লোক ঘড়ে, না হলে বুঝতো হু।
দারুন লিখেছেন- আলহামদুলিল্লাহ
এখানে ভাল ওখানে খারাপ। না ওখানে ভাল এখানে খারাপ ঠিক বুঝলাম না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন